বর্তমানে আমি নীল শাড়ী, হাতে কালো কাঁচের চুড়ি পড়ে বেড়িয়ে পড়লাম আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে।
হ্যাঁ, আমার ভালোবাসার মানুষ অভ্র। তার আর আমার সম্পর্ক সেই কলেজ জীবন থেকে।বর্তমানে আমরা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএ -ছাএী।
প্রতিবারের মতো আজও সে দেরী করছে।”ইসস এই মানুষটার যে কবে সময়ের মূল্য বুঝবে।হয়তো দেখা যাবে আমাদের বিয়েতেও সে দেরী করবে।”
“অরু”চিরচেনা সেই ডাকে পিছন ফিরে তাকালাম।হ্যাঁ অভ্র দূর থেকে আমায় ডাকছে। সে আমায় বরাবর “অরু” বলেই ডাকে,যদিও আমার পুরো নাম অরুনিতা।
“কি মহাশয় আজও দেরী? কবে সুদরোবে হুমম?”আমি রাগি সুরে অভ্রকে বললাম।
অভ্রঃ ভুল হয়ে গেছে। চলো গিয়ে বসি।
অভ্র আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো,যেখানে আছে নদী চারপাশে ঘন গাছপালা,পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। আর সবকিছুর মাঝে একটা ছোট ব্রেন্স।এটাই হলো আমার আসন। আমরা প্রতিবার এখানেই এসে বসি।
অভ্রঃ এই যা তোমার বাদাম ভাজাটা
অরুঃ হু ভুলে গেলে বুঝি?
অভ্রঃ তুমি অপেক্ষা করো আমি আসছি( বলেই চলে গেলো)
কিছুক্ষণপর অভ্র ফিরে এলো এতো বেলি ফুলের মালা এবং বাদাম ভাজা নিয়ে।
অরুঃ কি ব্যাপার সবসময়তো একটা মালা নিয়ে আসো আজ এতোগুলো?
অভ্রঃ মন চাইলো আমার সখিরে দেই তাই দিলাম
অরুঃ তাই বলে এতোগুলো?
অভ্রঃ কেনো আমি বেকার বলে কি দিতে পারিনা?
অরুঃ আমি কি তাই বলেছি? সব বিষয়ে ভুল বুঝে( কিছুটা অভিমান করে)
আমি কঠিন মুখ করে বললাম, কাল আমাকে দেখতে আসবে।
অভ্র আমার কথা শুনল বলে মনে হল না।আমি আবার বললাম, আগামী কাল সন্ধ্যায় আমাকে দেখতে আসবে।
অভ্রঃ কে আসবে?
অরুঃ আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। পাত্র দেখতে আসবে।
অভ্রঃ আসুক না।
অরুঃ আসুক না মানে? যদি আমাকে পছন্দ করে ফেলে?
অভ্রঃ পছন্দ করবেনা মানে?তোমাকে যে দেখবে সেই ট্যারা হয়ে যাবে।
অরুঃআজব সব কথাবার্তা
অভ্রঃ আচ্ছা হয়েছে।তাহলে চল কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়া যাক।
আমি সৰু চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, খুব পয়সা হয়েছে দেখি।
অভ্র হেসে বললো, কী ভেবেছ তুমি? রোজ তোমার পয়সায় চা খাব? এই দেখ।
দুটি পঞ্চাশ টাকার নোট বের হল। আমি কোনো কথা বললাম না।
আমরা একটা রেস্টুরেন্ট-এ ঢুকলাম।সাথে সাথেই শুরু হলো বৃস্টি।
অভ্র পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো এবং তা খাওয়া শুরু করলো।
আমি তার দিকে অগ্নি দৃস্টিতে তাকাতেই ইতস্তত করে বলল, “আর সিগারেট খাব না। এটাই শেষ।”
অরুঃ এই কথা বহুবার শোনা।
অভ্র আমার কথার উত্তর দিলোনা শুধু মুচকি হাসলো।
_______________________________________
আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরুল সন্ধ্যার ঠিক আগে-আগে। বৃষ্টি নেই। নিয়ন আলোয় ভেজা রাস্তা চিকমিক করছে।
অভ্র বলল, রিকশা করে একটু ঘুরবে অরু?
বেশ। চল রিকশী করে তোমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
সন্ধ্যাবেলা কে আর দেখবে? একটা রিকশা ডাকি?
রিকশায় উঠতে গিয়ে দেখলাম অভ্রের চোখে পানি
আমি দারুণ অবাক হয়ে গেলাম বললাম,,”কী ব্যাপার অভ্র?”
অভ্রঃখুব খারাপ লাগছে।যেতে দিতে মন চাইছেনা
অরুঃ ফিরতে হবে যে..। কাল যদি ওরা আমায় পছন্দ করে?
অভ্র হেসে উঠল এবং বললো, ” করুক না পছন্দ, আমরা কোর্টে বিয়ে করে ফেলব।”
অরুঃ তারপর আমাকে তুলবে কোথায়, খাওয়াবে কী? দুটি টিউশনি ছাড়া আর কী আছে তোমার?
অভ্রঃ এম.এ. ডিগ্রিটা আছে। সাহস আছে। আর …
অরুঃআর কী?
অভ্রঃ আর আছে ভালোবাসা।
আমি কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এরপর আমরা দুজন যার যার গন্তব্যে গেলাম।
পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে সন্ধ্যাবেলা কিন্তু তোড়জোড় শুরু হল সকাল থেকে। বাসায় আমার বড়খালা,মামা সবাই এসেছে
বড়খালাঃমুখটা এমন হাঁড়ির মতো করে রেখেছিস কেন? তোর জন্যে একটা শাড়ি এনেছি। দেখতে পছন্দ হয় কি না।
অরুঃ শাড়ী কেনো খালা?
বড়খালাঃআনলাম একটা ভালো শাড়ি। এই শাড়ি পরে সন্ধ্যাবেলা যখন যাবি ওদের সামনে …।
আমি মুচকি হেঁসে ঘর ছাড়লাম।
যে পাএপক্ষ আমায় দেখতে এসেছিলো তাদের নাকি আমায় খুব পছন্দ হয়েছে তাই তারা ঠিক করলো ২ মাস পর আমাদের বিয়ের কথা।
আমি নিরুপায় হয়ে শুধু সবকিছু শুধু দেখতে লাগলাম।ঘরে এসে সুযোগ বুঝে অভ্রকে কল করলাম তবে তার ফোন বন্ধ। আমার মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করলো। কারণ তার ফোন কখনোই বন্ধ থাকেনা।
দেখতে দেখতে সময়ের মতো সময়,দিনের মতো দিন চলে গেলো। সেদিনের পর আমার সাথে অভ্রের টানা ১মাস ১০ দিন কোনো যোগাযোগ ছিলো না। এই কয়েকটা দিন আমি পাগলের মতো খুজে বেড়িয়েছি। হঠাৎ কি হলো যে এমনভাবে লুকিয়ে গেলো।
অবশেষে তার গ্রামের ঠিকানা পাই।
বর্তমানে আমি একটা ভ্যান গাড়ী করে চলছি গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে।
Leave a Reply