1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:০২ অপরাহ্ন

# তুমি_রবে_মনের_গহীনে ( ১ ) ও শেষ পর্ব – – লেখনীতে- # হুমায়রা_হাসিব_ঋতু

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৭১ বার
( ১ )
বর্তমানে আমি নীল শাড়ী, হাতে কালো কাঁচের চুড়ি পড়ে বেড়িয়ে পড়লাম আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে।
হ্যাঁ, আমার ভালোবাসার মানুষ অভ্র। তার আর আমার সম্পর্ক সেই কলেজ জীবন থেকে।বর্তমানে আমরা দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাএ -ছাএী।
প্রতিবারের মতো আজও সে দেরী করছে।”ইসস এই মানুষটার যে কবে সময়ের মূল্য বুঝবে।হয়তো দেখা যাবে আমাদের বিয়েতেও সে দেরী করবে।”
“অরু”চিরচেনা সেই ডাকে পিছন ফিরে তাকালাম।হ্যাঁ অভ্র দূর থেকে আমায় ডাকছে। সে আমায় বরাবর “অরু” বলেই ডাকে,যদিও আমার পুরো নাম অরুনিতা।
“কি মহাশয় আজও দেরী? কবে সুদরোবে হুমম?”আমি রাগি সুরে অভ্রকে বললাম।
অভ্রঃ ভুল হয়ে গেছে। চলো গিয়ে বসি।
অভ্র আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো,যেখানে আছে নদী চারপাশে ঘন গাছপালা,পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ। আর সবকিছুর মাঝে একটা ছোট ব্রেন্স।এটাই হলো আমার আসন। আমরা প্রতিবার এখানেই এসে বসি।
অভ্রঃ এই যা তোমার বাদাম ভাজাটা
অরুঃ হু ভুলে গেলে বুঝি?
অভ্রঃ তুমি অপেক্ষা করো আমি আসছি( বলেই চলে গেলো)
কিছুক্ষণপর অভ্র ফিরে এলো এতো বেলি ফুলের মালা এবং বাদাম ভাজা নিয়ে।
অরুঃ কি ব্যাপার সবসময়তো একটা মালা নিয়ে আসো আজ এতোগুলো?
অভ্রঃ মন চাইলো আমার সখিরে দেই তাই দিলাম
অরুঃ তাই বলে এতোগুলো?
অভ্রঃ কেনো আমি বেকার বলে কি দিতে পারিনা?
অরুঃ আমি কি তাই বলেছি? সব বিষয়ে ভুল বুঝে( কিছুটা অভিমান করে)
আমি কঠিন মুখ করে বললাম, কাল আমাকে দেখতে আসবে।
অভ্র আমার কথা শুনল বলে মনে হল না।আমি আবার বললাম, আগামী কাল সন্ধ্যায় আমাকে দেখতে আসবে।
অভ্রঃ কে আসবে?
অরুঃ আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। পাত্র দেখতে আসবে।
অভ্রঃ আসুক না।
অরুঃ আসুক না মানে? যদি আমাকে পছন্দ করে ফেলে?
অভ্রঃ পছন্দ করবেনা মানে?তোমাকে যে দেখবে সেই ট্যারা হয়ে যাবে।
অরুঃআজব সব কথাবার্তা
অভ্রঃ আচ্ছা হয়েছে।তাহলে চল কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়া যাক।
আমি সৰু চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, খুব পয়সা হয়েছে দেখি।
অভ্র হেসে বললো, কী ভেবেছ তুমি? রোজ তোমার পয়সায় চা খাব? এই দেখ।
দুটি পঞ্চাশ টাকার নোট বের হল। আমি কোনো কথা বললাম না।
আমরা একটা রেস্টুরেন্ট-এ ঢুকলাম।সাথে সাথেই শুরু হলো বৃস্টি।
অভ্র পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো এবং তা খাওয়া শুরু করলো।
আমি তার দিকে অগ্নি দৃস্টিতে তাকাতেই ইতস্তত করে বলল, “আর সিগারেট খাব না। এটাই শেষ।”
অরুঃ এই কথা বহুবার শোনা।
অভ্র আমার কথার উত্তর দিলোনা শুধু মুচকি হাসলো।
_______________________________________
আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরুল সন্ধ্যার ঠিক আগে-আগে। বৃষ্টি নেই। নিয়ন আলোয় ভেজা রাস্তা চিকমিক করছে।
অভ্র বলল, রিকশা করে একটু ঘুরবে অরু?
উঁহু।
বেশ। চল রিকশী করে তোমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
হ্যাঁ, পরে কেউ দেখুক।
সন্ধ্যাবেলা কে আর দেখবে? একটা রিকশা ডাকি?
আচ্ছা ডাকো।
রিকশায় উঠতে গিয়ে দেখলাম অভ্রের চোখে পানি
আমি দারুণ অবাক হয়ে গেলাম বললাম,,”কী ব্যাপার অভ্র?”
অভ্রঃখুব খারাপ লাগছে।যেতে দিতে মন চাইছেনা
অরুঃ ফিরতে হবে যে..। কাল যদি ওরা আমায় পছন্দ করে?
অভ্র হেসে উঠল এবং বললো, ” করুক না পছন্দ, আমরা কোর্টে বিয়ে করে ফেলব।”
অরুঃ তারপর আমাকে তুলবে কোথায়, খাওয়াবে কী? দুটি টিউশনি ছাড়া আর কী আছে তোমার?
অভ্রঃ এম.এ. ডিগ্রিটা আছে। সাহস আছে। আর …
অরুঃআর কী?
অভ্রঃ আর আছে ভালোবাসা।
আমি কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এরপর আমরা দুজন যার যার গন্তব্যে গেলাম।
—————————————————————
পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে সন্ধ্যাবেলা কিন্তু তোড়জোড় শুরু হল সকাল থেকে। বাসায় আমার বড়খালা,মামা সবাই এসেছে
বড়খালাঃমুখটা এমন হাঁড়ির মতো করে রেখেছিস কেন? তোর জন্যে একটা শাড়ি এনেছি। দেখতে পছন্দ হয় কি না।
অরুঃ শাড়ী কেনো খালা?
বড়খালাঃআনলাম একটা ভালো শাড়ি। এই শাড়ি পরে সন্ধ্যাবেলা যখন যাবি ওদের সামনে …।
আমি মুচকি হেঁসে ঘর ছাড়লাম।
যে পাএপক্ষ আমায় দেখতে এসেছিলো তাদের নাকি আমায় খুব পছন্দ হয়েছে তাই তারা ঠিক করলো ২ মাস পর আমাদের বিয়ের কথা।
আমি নিরুপায় হয়ে শুধু সবকিছু শুধু দেখতে লাগলাম।ঘরে এসে সুযোগ বুঝে অভ্রকে কল করলাম তবে তার ফোন বন্ধ। আমার মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করলো। কারণ তার ফোন কখনোই বন্ধ থাকেনা।
দেখতে দেখতে সময়ের মতো সময়,দিনের মতো দিন চলে গেলো। সেদিনের পর আমার সাথে অভ্রের টানা ১মাস ১০ দিন কোনো যোগাযোগ ছিলো না। এই কয়েকটা দিন আমি পাগলের মতো খুজে বেড়িয়েছি। হঠাৎ কি হলো যে এমনভাবে লুকিয়ে গেলো।
অবশেষে তার গ্রামের ঠিকানা পাই।
বর্তমানে আমি একটা ভ্যান গাড়ী করে চলছি গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে।
(চলবে)
(শেষ পর্ব)
অভ্র’র এমন আচরণে তার প্রতি আমার আকাশ সমান অভিমান জমে উঠেছে। কেনো সে এমন করলো? কোনো একভাবে আমি জানতে পারি সে গ্রামে চলে আসে। হয়তো আমার বিয়ে খবরে সে নিজে গ্রামে সংসার পেতেছে। “না না আমি এসব কি ভাবছি?”
অভ্রের গ্রামের বাড়ীর সামনে এসে ভ্যানগাড়ীটা থামলো।আমি লোকটিকে টাকা পরিশোধ করে বিদায় জানালাম। একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,,”বাড়ীতে কেউ আছেন? আমি অভ্র’র খোজে আসছি”
ঘরের ভেতর থেকে একজন বুড়ো মহিলা বের হলো।আমি তাকে সালাম দিয়ে আবার বললাম,”আন্টি অভ্র আছে?”
মহিলাটি একটা ছোট বাচ্চাকে ডাক দিলো বললো,” ছোটু অরুনিতাকে অভ্র’র কাছে নিয়ে যাতো।”
আমি কিছুটা অবাক হই এই মহিলাটি কিভাবে আমার নাম জানে? আমি এদিকে না ভেবে ছেলেটার পিছু পিছু চলি। মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন আজ আমি তাকে প্রচুর বকবো, প্রচুর রাগ করবো তার সাথে।কেনো সে এমন করলো তাকে বললো।
ছেলেটি আমায় কারো কবরের সামনে নিয়ে এলো।
আমার মনের ভেতর কেমন জেনো মুচড়ে উঠলো।
অরুঃ তুমি এখানে আনলে কেনো আমায়? অভ্র কোথায়?(ভয়ে ভয়ে বললাম)
মহিলাটিঃ ওখানেইতো আমার অভ্র ঘুমিয়ে আছে মা..। জানো ও যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকে শুধু তোমার কথা বলেছে। মৃ’ত্যু’র আগে পর্যন্তও। আমার ছেলেটা এটাও বলেছে যে তুমি একদিন না একদিন ওর খোজে আসবেই আর সত্যি এলে। তবে অনেক দেরীতে। এই নাও তোমাকে এই চিঠিটা দিতে বলেছে।
এতক্ষণে আমি কবরের পাশেই মাটিতে বসে পড়েছি এবং আমার চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে। আমার শরীর মনে হচ্ছে আমার সাথে নেই। তবুও কাঁপা হাতে কাগজটা নেই। এরপর পড়া শুরু করি,,,,,,
প্রিয় অরু,,,,
আমি ঠিক জানতাম তুমি আসবে। কিগো এখন কি তুমি আমার কবরের পাশে আছো? কবরে একটু হাতটা ছুয়ে দাওনা। (আমি কবরটার দিকে হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেই)
কেমন আছো? নিজের যত্ন নিচ্ছোতো? ও হ্যাঁ তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে হয়তো তাইনা? শোনো বরকে এতো বকুনি দিবা না বুঝছো? এতো অভিমান করবা না।
জানো অরুপাখি সেদিনও আমি চেয়েছিলাম তাড়াতাড়ী পৌছতে তবে হাসপাতাল থেকে ফিরতে দেরী হয়ে যায়। জানো তো আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছিলো। ডাক্তার বলেছিলো আমার সময় শেষ। কি আর করার বলো? তবে যখন শুনি তোমায় দেখতে আসবে তখন শান্তি পাই এটা ভেবে যে, যাক আমার ভালোবাসার পাখিটি সংসার করবে। তাকে আমি হীনা একা থাকতে হবেনা। জানো সেদিন ইচ্ছে করে এতোগুলো বেলী ফুল আনি। কারণ আমিতো আর এভাবে কিনে দিতে পারবোনা তাই। তোমার ওই বকুনিটা শোনার জন্যেই সিগারেটটা খাই। দেখো আমি আর সিগারেট ছুইনা। তোমায় কথা দিয়েছিলাম কথা রেখেছি।
জানো আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে সংসার করবো, আমাদের ছোট্ট একটা মেয়ে হবে আমাদের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখবো ভেবেছিলাম। তবে কি আর করার বলো বেকার মানুষ, তোমার বাবাতো বেকারের হাতে তুলে দিতে পারেনা। এদিকে চাকরিটা পেয়েই জানতে পারি আমার ক্যান্সার তাই বাদ দিয়ে দেই।
শোনোনা তোমার মেয়ে হলে “অভ্রতা” নামটা রেখো ঠিক আছে?
আমার কথা যখন তোমার খুব মনে পড়বে তখন ওই দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে বুঝেছো? আমি কোথাও না কোথাও থেকে তোমায় মনভরে দেখবো।
শোনো একদম কান্নাকাটি করবেনা।
অরু আমি তোমায় খুব ভালোবাসি অরু। তোমায় ছেড়ে যেতে আমার খুব কস্ট হচ্ছে অরু। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম।তোমার হাতে হাত রেখে বাকিপথ চলতে চেয়েছিলাম অরু। কেনো বিধাতা এমন করলো বলতে পারো? আমাদের ভালোবাসাটা অসমাপ্তই রয়ে গেলো। ভালো থেকো…… আমার সময় শেষ।
অরুঃ নাহহহহহহহ(চিৎকার দিয়ে)। অভ্র প্লিজ ওঠো ফিরে এসো। আমি তোমায় বকবোনা অভ্র।প্লিজ অভ্র ফিরে এসো। আমি রাগ করবোনা।তোমার সব কথা মেনে নেবো। আমি তোমায় ছাড়া কিভাবে থাকবো? তুমি এতোটা নিষ্ঠুর কি করে হতে পারো?
আমি তোমায় ভালোবাসি অভ্র,তুমি আমার ভালোবাসাকে হেরে যেতে দিওনা অভ্র প্লিজ ওঠোনা অভ্র…। (সেখানেই জ্ঞান হারাই আমি)
২০ বছর পর,,,,
“আপা বাচ্চাদের খাওয়ার সময় হয়েছে আসুন”
অরুঃআচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি
এতক্ষণ আমি ওই দূর আকাশের দিকে তাকি ২০ বছর আগের কিছু কথা ভাবছিলাম। বিশেষ করে তার বলে যাওয়া সেই কথা,”যখনই আমার কথা মনে পড়বে তখনি আকাশের দিকে তাকি কথা বলবে,আমি মন ভরে কোথাও না কোথাও থেকে দেখবো তোমায়”
অরুঃ কি আমায় দেখতে পাচ্ছো? এই অভ্র তোমার না বেবী পছন্দ, দেখো আজ আমার এই NGO তে ১০০ জনের বেশী বাচ্চা। জানো এই NGO এর নাম কি দিয়েছি? “অভ্র’র শান্তিনগর”। কি ভেবেছিলে আমি বিয়ে করে খুব সুখে -শান্তিতে ঘর করবো? হু..
আচ্ছা যাই পরে আসবো বাচ্চাদের খাওয়ার সময় হলো যে,,,
অভ্র’র চলে যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।আমায় সবসময় ঘরে বন্ধ করে রাখা হতো, দরজা খোলা দেখলেই আমি অভ্র’র জন্যে কান্না করতে করতে বাইরে চলে যেতাম।পুরো ১টা বছর আমি এমন পাগলামি করি। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যখন জীবনে ফিরি তখন বাসা থেকে বলা হয় বিয়ের কথা তবে,আমার রাজি না হওয়ায় আর কেউ কিছু বলেনি। অভ্র’র মা নাকি অভ্র চলে যাওয়ার কয়েকমাসের ব্যবধানে পৃথিবীকে বিদায় দিয়ে চলে যায়। হয়তো মা -ছেলে একসাথে আছে। আমায় এখানে ফেলে রেখে হয়তো তারা খুব আনন্দে আছে।
এরপর আমি অভ্র’র কথা ভেবে একটা ছোট্ট এতিমখানা খুলো তার নাম করে। যা বর্তমানে একটা বড় NGO তে পরিণত হয়েছে। আজ ২০ বছর ধরে আমি এখানেই আছি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস এখানেই ত্যাগ করতে চাই।
আচ্ছা আজ অভ্র আমার সাথে থাকলে সেউ কি আমার মতো বুড়ো হয়ে যেতো? হাহাহা
(সমাপ্ত)
এক অপূর্ণ ভালোবাসার কাহিনী। এমনই করে কিছু মানুষ না জানিয়ে হুট করে চলে যায় আর যারা পৃথিবীতে থেকে যায়,তাদের জন্য ধুকড়ে ধুকড়ে কস্ট পেয়ে থাকতে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..