1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

# রোগী_কথন_যখন_গল্পঃ # মাতৃত্ব – – – ডা. ছাবিকুন নাহার

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২৪৫ বার
নয়টা মাসই তো। বাড়িতে না যাওয়ার কত বাহানাই তো আছে। পড়াশোনার চাপ বলে চালিয়ে দিতে পারব। তাছাড়া ঘন ঘন বাড়ি যাওয়ার বিলাসিতা আমাদের জন্য না। এতে যাতায়াত ভাড়াটা অন্তত বেঁচে যায়। হোষ্টেলে আছি বলে বাবা মা ও নিশ্চিন্ত। রহমান সাহেব ভালো লোক। তার স্ত্রী আরো ভালো। স্বামীকে বলে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিন লাখ অনেক টাকা। সারোগেসির জন্য বেশিই বলা যায়। সাথে ভালো ভালো খাবার দাবার তো আছেই। নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ। বলতে গেলে রাজরানীর জীবন যাপন! সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে!
আমি তেমন কিছুই দেয়নি শুধু একটা ওভাম ছাড়া। এ আর এমনকি! নষ্টই তো হতো। রহমান সাহেবের বউ ভালো মানুষ! পরীর মতো সুন্দরী! আবার ফেরেস্তার মতো ব্যাবহার। অথচ সে জানত সুন্দরীদের ব্যবহার তেমন ভালো হয়না। আমি আসলে ভুল জানতাম। কত প্রতিপত্তি তাদের! একটুও এসবের অহংকার নেই! অথচ তাকেই কিনা উপরওয়ালা একটা বাচ্চা ধারণ করার ক্ষমতা দিলেন না! আল্লাহর দুনিয়ায় কত রকমের যে কষ্ট। আহারে!
এই দম্পতির বাচ্চা আমি লালনপালন করছি আমার গর্ভে। সারোগেসি পদ্ধতিতে। যদিও আমি অবিবাহিত। তাতে কি? এক নিঃসন্তান বাবা মাকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দিতে যাচ্ছি! কী আনন্দ! কী আনন্দ! আমার অনেক টাকার দরকার। অনেক। বাবার অপারেশন, ভাইটার পড়াশোনা। মায়ের দিকে তাকাতে পারিনা। দুটো কাপড়ে অদল বদল জীবন। একটা ভিজলে আরেকটা গায়ে জড়ায় অবস্থা। আর রহমান সাহেবদের দরকার একটা পরীর মতো সুন্দর মেয়ের ওভাম। সারোগেসির জন্য জরায়ু তো ভাড়া পাওয়াই যায়। সে ই উৎসাহী হয় জরায়ু দিতে। এতে তারা খুশি হয়। মানুষকে খুশি দেখতে তার ভালো লাগে।
জানি, ব্যাপারটা হজম করা সহজ না। অনেকেই হজম করতে পারবেনা। অবশ্য এ ব্যাপারটা সম্বন্ধে তেমন জানেও না লোকজন। তবে পাশের দেশে তো অহরহ সারোগেসি হয়। রীতিমতো বিজ্ঞাপন ও দেয়া হয়। ওহ আগে বলতে ভুলে গেছি! আইভিএফ পদ্ধতিতে বাচ্চা জন্ম দিয়ে অন্যের জরায়ুতে লালনপালন করাকে বলে বলে সারোগেসি। সারোগেসি বিশ্ব নন্দিত একটা চিকিৎসা ব্যাবস্থা। আর আইভিএফকে টেষ্টটিউব বেবিও বলা হয়ে থাকে। সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতিরা এই পদ্ধতিতে বাচ্চা নিয়ে থাকেন। এটা বহুল প্রচলিত একটা পদ্ধতি। নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য আশীর্বাদ সরুপ। সাধারনত স্বামীর স্পার্ম, স্ত্রীর ওভাম ইউজ করা হয় বায়োলজিক্যাল বাচ্চার জন্য। তবে কোন একটা ঘাটতি থাকলে ডোনারের সাহায্য নেয়া হয়। যেমন এই ক্ষেত্রে আমার ওভাম মানে ডিম্বাণু নেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে কিছুটা লিমিটেশন আছে সারোগেসি, ওভাম ডোনেশনের ব্যাপারে। তবে আমার মতো পারুলদের এসব ভাবলে চলে না। অভাবে জীবন যায় যায় দিন অবস্থা। বড় মেয়ে। সংসারে একটা দায়িত্ব আছে না। তাছাড়া রহমান সাহেবের বউ তো সাক্ষাৎ একটা ফেরেস্তা। একটা সন্তানের জন্য কত হাহাকার…কান্না… কষ্ট…সহজেই রাজি হয়ে গেলাম।
কিন্তু আমার এমন লাগছে কেনো! যখনি বাচ্চাটা একটু একটু নাড়াচাড়া করে ওঠে সমস্ত শরীরে সুখ ছড়িয়ে যায়। পুকুরে ঢিল দিলে যেমন করে ঢেউ ওঠে, তেমন করে তার শরীরেও সুখ খেলা করে। ক্ষনে ক্ষনে পেটের উপর হাত চলে যায়। আনমনে পেটে হাত বুলাই। মনেমনে বলি বাবু… বাবু… আমি… আমি…মা…মা… বাবু আমি মা… আদর… আদর…। আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকব? বাবু… পরক্ষনেই চোখ জলে ভরে, বাচ্চা তো অন্যজনের। আমি শুধু বহন করছি। কিন্তু একবার ও মনে হয়না এই বাচ্চা আমার না। একবারও না। মনে হয় জনম জনম ধরে আমি এই বাচ্চাকে লালন করেছি। বুকের খুব গভীরে। যতন করে। এমনটা হবে আমি কল্পনাও করিনি। কি এক সর্বগ্রাসী অনুভূতি আমাকে সব ভুলিয়ে, সব ভাসিয়ে শুধুই মা করে তুলছে। মাতৃত্ব, এমন তার শক্তি!
যতই ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে ততই হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে আসছে মন। পাঁজর ভাংগার অসহ্য কষ্ট হচ্ছে। মাতৃত্বের কাছে হেরে যেতে বসছে সমাজ, সংসার, চুক্তি, টাকা। কেবলি মনে হচ্ছে, বাবু আমাকে মা মা বলে ডাকছে, আমাকে আঁকড়ে ধরতে বলছে। এই ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা উপরওয়ালা আমাকে দেননি।
বিঃদ্রঃ- #রোগীকথন সিরিজ #বই হিসেবে আসবে আগামী একুশের বইমেলায়। পেন্সিল পাবলিকেশন থেকে। ইনশাআল্লাহ।
©
ডা. ছাবিকুন নাহার
এমবিবিএস ( ঢাকা), বিসিএস ( স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস ( অবস & গাইনী)
প্রসূতি ও গাইনীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
চেম্বার – মাদার কেয়ার হসপিটাল প্রাঃ লিঃ
ধানমন্ডি (রাপা প্লাজা সংলগ্ন), ঢাকা
সিরিয়াল – 01974808200, 01920366066

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..