1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

শ্বশুর বাড়ি কি নিজের বাড়ি হয়? – – – – লেখাঃ (ইফফা তাবাসসুম তালুকদার জান্নাত)

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১৭৫ বার
ভাবতেও অবাক লাগে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষ মেয়েদের সৌন্দর্য্য টা গায়ের রঙ দিয়ে বিচার করে।
গায়ের রঙ সাদা মানেই সেই মা-বাবার তাদের মেয়ের বিয়ে নিয়ে কোনো টেনশন নেই৷ বিয়ের বাজারে তাদের ডিমান্ড বেশি কি না!
মেয়েটা লেখা পড়ায় ভালো। ভালো গান গাইতে পারে। কবিতা লেখারও প্রতিভা আছে তার। এসবের চাইতে বিয়ের বাজারে বেশি ইম্পরট্যান্ট মেয়েটা রাধতে পারে তো? কেননা বিয়ের পরে সবাইকে রান্না বান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব তো সেই মেয়েটাকেই নিতে হবে। দেশে কাজের বুয়ার চওড়া মাইনে কি না!
মেয়েটা খেলাধুলায় ভীষণ ভালো। নাচেও দারুণ পারদর্শী। বিয়ের পরে এসব ধিঙিপনা চলবে না। শ্বশুর বাড়িতে থাকতে হলে মাথা নিচু করে সবার সব কথা, সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে৷
মেয়েটা লেখা পড়ায় ভীষণ ভালো। ইচ্ছে ছিলো পি.এইচ.ডি করবে। অনার্স পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে গেছে তার। শ্বশুর বাড়ি থেকে অনার্স পাশ করার সুযোগ দিয়েছে তাই কতো! বিয়ে হয়ে গেছে, রান্না বান্না করো। বাচ্চা মানুষ করো। সবার সেবা যত্ন করো। মেয়ে মানুষ এতো পড়ে কি হবে?
মেয়েটার লেখালেখির হাত খুব ভালো। গল্প, কবিতা, অনুগল্প সহ আরও সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তার পদচারণা রয়েছে। ফেসবুকে তার ফ্যান, ফলোয়ার্স, ইউটিউবে তার চ্যানেল এর সাবস্ক্রাইবার বেশ ভালো। এইভাবে এগুতে থাকলে হয়তো একদিন আকাশ ছোঁয়ার সম্ভাবনা আছে তার।
কি ব্যাপার! তোমার পোষ্টে এতো ছেলেরা কমেন্ট করে কেন! তুমি তো দেখি লাভ রিয়েক্ট ও দাও। আমার বউ হয়ে থাকতে গেলে এসব চলবে না। ভদ্র সভ্য হয়ে থাকতে হবে। মেয়েটা হকচকিয়ে যায়। কি বলবে, বুঝে উঠতে পারে না সে। তার লেখা গল্প, কবিতার পোষ্ট এ যে শুধু ছেলেরা কমেন্ট করে তা কিন্তু নয়। অনেক মেয়েরাও কমেন্ট করে। ম্যাসেজ দেয়। অনেক আবৃত্তিশিল্পী তার লেখা আবৃত্তি করে। অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু Husband এর মুখে তার স্বপ্ন নিয়ে এমন Negative কথা শুনে একরকম অভিমান করেই হাজার হাজার ফলোয়ার্স এর আইডি টা Deactivate করে দেয় সে। Sacrifice করে তার স্বপ্নগুলো।
মেয়েটাকে মুখ বুজে সকল অন্যায় আবদার গুলো মেনে নিতে হয়৷ স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্খা সব বিসর্জন দিতে হয়। মুখ ফুটে বলতে পারে না নিজের মতামত, ইচ্ছে, অনিচ্ছে, চাওয়া, পাওয়ার কথা। শ্বশুর বাড়ি কি আর নিজের বাড়ি হয় যে তার মতামতের দাম থাকবে?
শ্বাশুড়ি মা কি নিজের মা হয় যে শত বাধা সত্বেও মেয়েটাকে স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে? শ্বশুর মশাই কি নিজের বাবা হয় যে বৌমা কে নিজের মেয়ে ভেবে স্বপ্ন পূরণের পথের কাটা সরিয়ে চলার পথটা মসৃণ করে দিবে?
স্বামী কি বন্ধু হয়? স্ত্রী কে কি সহযাত্রী ভাবতে পারে? যে স্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিবে। যে তার স্ত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্যায়ন করবে? নাকি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে দাঁড়িয়ে নিজে কতটা পুরুষ সেটা প্রমাণ করতেই ব্যস্ত থাকে কখনো বা তার গলার উচ্চস্বরে আওয়াজের মাধ্যমে আবার কখনো বা নিজের পরিবারের ইচ্ছে স্ত্রীর উপর চাপিয়ে দিয়ে।
আমি বলছি না যে পৃথিবীর সব পুরুষ খারাপ বা সব শ্বশুর বাড়ির নিয়ম কানুন একই রকম। এমনও অনেক শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছেন যারা বৌমা কে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। তার ইচ্ছে অনিচ্ছে, চাওয়া পাওয়া, স্বপ্ন এগুলোর গুরুত্ব দেন। এমন অনেক পুরুষ আছেন যারা স্ত্রী কে তাদের প্রাপ্য সম্মান টুকু দেন। স্ত্রীর স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন ভেবে সেটা পূরণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধা জানাই এমন মানুষদেরকে।
একটা মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে একটা পরিবারে বউ হয়ে আসে। তার সবচেয়ে কাছের মানুষ তার মা-বাবাকে ছেড়ে নতুন সংসারে কতোগুলো অচেনা মানুষের সাথে জীবনের বাকি পথ চলা শুরু করে। ছোট থেকে বড় হয় যে বাড়িতে, যে ঘরে যে বিছানায় সে অভ্যস্ত, যে ঘরে না ঘুমালে তার ঘুম আসতো না সেই ঘর, সেই বাড়ি, চিরচেনা মানুষ সবাইকে ছেড়ে এসে একটা মেয়ে নতুন পরিবারে, নতুন পরিবেশে, নতুন বাড়িতে, নতুন ঘরে নিজেকে মানিয়ে নেয়। সেইখানে সবচেয়ে কাছের মানুষ যাকে সে জীবন সাথী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে পরম ভালোবাসায় তার কাছে থেকে একটু ভালোবাসা একটু সহযোগিতা যদি না পায় তাহলে সমাজের রিতী নিতীর চাপে তার সাথে থেকে যায় ঠিকই কিন্তু সেই সম্পর্কে তার মন থেকে কোনো শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে না।
যে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সে নিজের মা-বাবার স্থান দিতে চেয়েছিলো তারা যদি মেয়েটিকে নিজের মেয়ে না ভেবে বাড়ির বৌ হওয়ার অপরাধে হাজারো দায়িত্ব কর্তব্য মেয়েটির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় তাহলে পারিপার্শ্বিক চাপে মেয়েটি সব দায়িত্ব মুখ বুজে সহ্য করে ঠিকই কিন্তু ভালোবেসে শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে নিজের মা-বাবার জায়গাটা মন থেকে কখনোই দিতে পারে না।
ছবিঃ শ্রুতি দাস।
May be an image of 1 person

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..