1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন

# ভালোবাসায়_নীলাভ_আভা # ফারিহা লাবনি – পর্ব-১ ও ২ এবং শেষ পর্ব

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৫৯ বার
বাহিরে কাজ আছে ফিরতে সন্ধা হবে বলে বের হয়েছিলাম একাই। কিন্তু মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে আসি বাসায়। চাবি থাকায় মেইন দড়জা খুলে সোজা নিজের রুমে যাই, দড়জা খুলে দেখি আমর স্বামী শুভ্র একটা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে আছে। আর বলছে I love you babydoll.. You are so hot … কথাগুলো বলে মেয়ে টা কে বেডে শুইয়ে দেয় ওরা নিজেকে নিয়ে এতোটাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে কেউ যে তাদের নষ্টামি দেখছে তার খেয়াল নেই। মেয়েটার জামা খুলতে নিলেই…
তরী ঃমুচকি হাসি দিয়ে বললো আরে আরে আমার সামনেই সব করে ফেলবে নাকি।
শুভ্র আর মেয়েটা ভুত দেখার মতো চমকে উঠে।
শুভ্র ঃ ত তুমি?? তুমি তো ফিরতে সন্ধা হবে বলে গিয়েছিলে??
তরী ঃ হুম কিন্তু ফিরে এলাম, ভালোই হলো
ফিরে এসে নাহলে তোমার এসব নষ্টামির কথা জানতাম কি করে??
শুভ্র ঃ মুখ সামলে কথা বলো, ও আমার গালফ্রেন্ড আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করবো
তরী ঃ আর আমি??
শুভ্র ঃ তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো, এখন আর তোমাকে আমার ভালো লাগে না। যওসব টিপিকাল টাইপ তুমি
তরী ঃ ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলো, একদম আমার মনের কথা বলেছো। এখন আমার ও আর তোমাকে ভালো লাগে না তাই তো নতুন সম্পর্কে জরীয়েছি। ভালোই হলো, তা তোমরা তোমাদের কাজ করো আমি গেলাম
গুন গুন গান করে চলে গেলো তরী
শুভ্র তো পুরাই অবাক, এ কোন তরী?? ওর তো এখন কান্নায় ভেঙে পরার কথা, আমার হাতে পায়ে ধরে বলার কথা আমাকে তারিয়োনা, তোমার পায়ের কাছে একটু জায়গা দাও, বড্ড ভালোবাসি তোমাকে ছাড়া মরেই যাবো অথচ…
সায়না ঃ ওহ বেবি আমাদের রাস্তা ক্লিয়ার তাহলে বলো?? শুধু শুধু চিন্তা করছিলে তুমি । এখন চলো আদোর দিবে আমাকে।
এই শুনতে পাচ্ছো না?
শুভ্র ঃ হুম হ্যা, আচ্ছা আজ তুমি যাও যেহেতু কোনো সমস্যা নেই আমার সবসময়ই ফান করতে পারবো,
তারপর বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয় সায়না কে।
তরী ড্রইং রুমেই ছিলো.. আরে চলে যাচ্ছো যে?
সায়না ঃ পরে আসবোনি,
তরী ঃ সাবধানে যেও
সায়না ঃ তুমি অনেক সুইট। আসি
শুভ্র সবটাই দেখলো, কেমন যেনো খটকা লাগছে।
শুভ্র ছোফায় যেয়ে বসলো তরীর মুখোমুখি…
কতদিন ধরে চলছে তোমার সম্পর্ক??
তরী ঃ তোমার??
শুভ্র ঃ ৩ মাস
তরী ঃ আমার ১ মাস হলো
ছেলেটা অনেক স্মার্ট, ধনি ও… সবচেয়ে বড় কথা ও আমাকে ভালোবাসে। জানো আমার এসব শাড়ি থ্রিপিছ একদম খ্যাত লাগে অনেক আগে থেকেই, সেরম সুজগ পাইনি বলে ওয়েস্টার্ন পড়া হয়নি আর তুমিও জুটলে একটা খ্যাত আমাকে কখনো বলোও নি এসব পরতে।
এখন থেকে আমি ওয়েস্টার্ন ই পরবো…. এই চলো এখনই অনলাইন থেকে অর্ডার করি
দারাজ থেকে পছন্দ করা শুরু করলো…
তরী ঃ এই তুমি একটু হেল্প করোনা
শভ্র কিছু অফ সোলডার টপ, ছেড়া জিন্স পছন্দ করে দিলো, মিনি স্কার্ট, মিনি ফ্রক
তরী ঃ হা হা হা এতো খ্যাত তোমার পছন্দ শুভ্র, জানো এগুলো কতো পুরোনো ফ্যাশন। আর শুনো আমার শরীর এতো টা ও সস্তা নয় যে খুলে খুলে দেখাবো।
তরী কিছু ফুল টপ, লং টিশার্ট, জিন্স, লং গাউন অর্ডার করলো… সাথে কিছু ঘড়ি, হাই সু, সান গ্লাস , আই লেন্স … আরও প্রয়োজনীয় জিনিস
তরী ঃ এই কি খাবে? রাধতে হবে তো???
আচ্ছা শুনো আজকে তো আমরা আমাদের গোপন সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছি তাই পার্টি করবো.. বাহির থেকে খাবার আনি বলো কি খাবে?? ওহ তুমি তো ইটালিয়ানো ফুড..
শুভ্র ঃ আর তুমি নিশ্চই তেল চুপ চুপে কাচ্চি খাবে?
তরী ঃ নাহ, ওসব খাইনা
শুভ্র ঃ কবে থেকে??
তরী ঃ এইতো প্রায় ৪ মাস ধরে,
মনে আছে আমার জন্মদিনে একটা ওয়েসটার্ন লাল গাউন এনে ছিলে, আমার একটু টাইট হয়েছিলো তখন তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে বলেছিলে এসব তোমার জন্য না, তোমার গায়ে ঢিলা কামিজ আর শাড়ী ই মানায়। অবশ্য জানবা কিভাবে তুমি শেষ ৬ মাস ধরে তো বাসায় খাবারই খাওনা এমনকি আমি খেয়েছি না কি তা ও জিগ্যেস করো না।
শুভ্র এর কাছে এই কথা গুলোর কোনো উওর ছিলো না। মাথা নিচু করে বসে আছে।
তরী ওর জন্য স্যুপ আর মাশরুম ওর্ডার করলো।
আজ অনেক দিন পর শুভ্র তরীর দিকে খেয়াল করছে মেয়েটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে অনেক, আগের মতো মিষ্টি হাসি থাকে না ঠোঁটে। গম্ভীর ভাবে থাকে। বাচ্চাদের মত বায়না করে না… হঠাৎ করে আমার বাচ্চা বউ টা কেমন বড় হয়ে গেছে। খুব সুন্দর করে কাটা চামুচ ঘুড়িয়ে ঘুরিয়ে খাচ্ছে। স্যুপ এর চামচে এতো সফট করে সিপ দিচ্ছে যেনো চামুচ টা ও ওর প্রেমে পরে যাবে।
খাওয়া দাওয়া শেষে সব কিছু গুছিয়ে রাখছিলো তরী, তোমার সংসারে তো দাসী দের মতো খাটতে হয় আমাকে, কাজের লোক রাখো না তুমি। জানো তার বাড়িতে মানুষের চেয়ে কাজের লোক বেশি। ও তো এখনই আমাকে বকে কেনো কাজ করি 😅
শুভ্র ঃ সংসারে কাজ কি যে কাজের লোক লাগবে?? তোমার তো শুধু খাওয়া আর ঘুম
তরী ঃ হাহাহা, কি কাজ শুনবে??
তোমার এই বিশাল বাংলো টা পরিষ্কার রাখা, মুছা, ফার্নিচার মুছা, বিছানার চাদর বালিশের কভার, পর্দা, কার্পেট তোমার আমার গাদি গাদি কাপড় চোপড় ধোয়া, সেগুলো ইস্ত্রি করে গুছিয়ে রাখা।
রান্না করা বিভিন্ন পদ, সেগুলো কাটা, ধোয়া রান্না। মসলা বাটা পাটায় , বাজার গুলো গুছিয়ে ফ্রিজে রাখা। এই ফ্রিজ টা ও মাসে ১/২ বার ধুতে হয়। সব কিছুর দিকে খেয়াল রাখা কখন কোনটা প্রয়োজন। এই সংসার টা নিজ হাতে ডেকরেট করেছি আমি।
সব শেষে তোমার খেয়াল রাখা, তোমার পায়ের নখ থেকে মাথার চুলটার ও খেয়াল রাখি আমি শুভ্র যখন অফিসে যাও তোমাকে তৈরি করা, তোমাকে খাবার দেওয়া সকাল ৮ টার মধ্যে, সারাদিন কাজ করে এর মাঝে তোমার কলের অপেক্ষা করা আবার যখন অফিস থেকে ফিরো তোমার ঘামে ভেজা ক্লান্ত তুমি টা কে চেয়ার আপ করা টা ও আমার দায়িত্ব 🙂
এই কাজ গুলো আমাকে প্রতিদিন করতে হয়। আর হ্যা এতো এতো থালা বাটি প্লেট গ্লাস চামচ এগুলো ও আমাকে বছরে অন্তত ২/৩ বার পরিষ্কার করতে হয়।
এর মাঝে নিজের সময় টা কোথায়?? যে তোমার গালফ্রেন্ড এর মতো নিজেকে stylish, shameless attractive product বানাবো।
এসব কিছু আমি তোমাকে ভালোবেসে করি কিন্তু,
এতোসব করে দিন শেষে কি পাই?? তোমার অবহেলা🙂 তাচ্ছিল্যতা ছাড়া আর কিছুই না 😏
আচ্ছা বিয়েটা তো আমরা ভালোবেসে করেছিলাম। ১ বছর প্রেম তার পর বিয়ের ২ বছর এই সময়েই তোমার চোখের বিষ হয়ে গেলাম?? অদ্ভুত তাই না শুভ্র??
শুভ্র শুধু বোকার মতো চেয়ে কথা গুলো শুনছিলো, কোনো উওর যে নেই। বরাবরের মতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আসছে মেয়েটাকে বিয়ের ১ বছর পর থেকেই।
#
বিকেলে চা খাচ্ছিলো ওরা, শুভ্র তরীর হাতের দুধ চা খুব পছন্দ করে।
তরী গ্রিন টি খাচ্ছিলো…
শুভ্র ঃ তুমি গ্রিন টি খাও কবে থেকে??
তরী ঃ হাহাহা শেষ ২ মাষ ধরে তোমার সামনে বসে গ্রিন টি খাই আর তুমি আজ দেখছো??হাসালে😂
রাতে খেতে বসেছে ওরা, আজকে ৩ মাস পর ওরা এক সাথে খেতে বসেছে।
তরী ঃ মনে পড়ে শেষ কবে একসাথে রাতে খেয়েছি??
শুভ্র ঃ মুখ টা কালো করে জবাব দিলো… ৩ মাস আগে। আসলে সায়নার সাথে ডিনার না করলে ও রাগ করে।
তরী ঃ আর আমি তোমার জন্য রান্না করে বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা কখনো না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম আবার কখনো কাঁদতাম .. আমার কথা মনে পড়েনি, একটু খারাপ ও কি লাগতো না ??
শুভ্র ঃ চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছে৷ তরী একটা শুকনো রুটি আর সবজি খেলো।
মনে মনে বলছে, কে বলেছে তোমাকে ডায়েট করতে, তোমার গুলুমুলু গাল গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার তোমার গুলু মুলু গাল গুলো তে ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুমু দিতে অনেক ভালো লাগে… কিন্তু কথা গুলো মুখ ফুটে বলতে পারলো না, কোন অধিকারে বলবে?? গলা দিয়ে আর খাবার নামলো না.. রুমে চলে গেলো শুভ্র… তরী ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।
শুভ্র ঃ যাওয়ার সময় ভাবছিলো, তরী একবার ডাকলো ও না।
শুভ্র অপেক্ষা করছিলো তরীর, ওকে বুকে নিয়ে না শুলে ঘুম আসে না।
শুভ্র চোখ বন্ধ করে ভাবছিলো, তরীর পছন্দ অনেক সাধারন সামান্য ১০ টাকার বেলি ফুলের মালা আর নীল চুড়ি, শাড়ী খুব পছন্দ করে।
মেয়েটাকে মানায়ও দারুণ নীলে। আর সায়না, Branded Cloth, makeup, ডায়মন্ড ছাড়া কথাই নেই, একবার গোল্ড এড় চেইন দিয়েছিলাম হাতে নিয়ে ফেলে দিয়ে বলেছিলো আমার এসব সস্তা জিনিস পড়লে অ্যালার্জি হয় ।
এসব ভাবতে ভাবতেই তরী ঘরে এলো, ড্রেসং টেবিল এর সামনে যেয়ে সাজছে,
শুভ্র ঃ অনেক দিন নীল শাড়ী চুড়ি পড়োনা।
তরী ঃ ওসব আমার ভালো লাগে না। ১০ টাকার বেলি আর ৪০ টাকা ডজন এর নীল চুড়ি একদম ই ফালতু
শুভ্র ঃ বেশ অবাক হয়ে বললো, এতোদিন যে খুব পছন্দ করতে?
তরী ঃ আমি নয় তুমি এসব পছন্দ করতে। তোমার পছন্দ কে আমি আপন করে নিয়েছিলাম আর এতোটাই আপন করেছিলাম যে তুমি ও বুঝতে পারোনি।
সাজা শেষ হলে তরী বালিস নিয়ে চলে যাচ্ছিলো..
শুভ্র ঃ কোথায় যাচ্ছো??
তরী ঃ এতোদিন তো শুধু শুধুই তোমার বুকে শুতাম, আজ যেহেতু জেনে গেছো তাহলে আলাদা থাকাটাই ভালো, আমি একদম হাফিয়ে গিয়েছি এতোদিন অভিনয় করে কিন্তু বিশ্বাস করো আমার একদমই ভালো লাগতো না।
তরী আবার হাটা ধরলো।
শুভ্র ঃ কাম অন তরী তুমি জানো তোমাকে বুকে নিয়ে না শুলে আমার ঘুম আসে না
তরী ঃ হাহাহা, তাই?? তাহলে তো এটাও জানা উচিৎ তোমার যে তুমি আমাকে বুক থেকে সরালে যত গভীর ঘুমেই থাকিনা কেনো আমার ঘুম ভেঙে যায়। এতোদিন যে আমি ঘুমিয়ে গেলে প্রতিদিন আমাকে বুক থেকে শরীয়ে তুমি বারান্দায় যেয়ে প্রেমআলাপন করতে তখন কি তোমার বুকটা একটু কাপতো না শুভ্র?
শুভ্র ঃ তুমি সবটা জানতে?? তাহলে এতোদিন কেনো কিছু বলোনি?
তরী ঃ কি বলবো?? আমার স্বামি তার প্রেমিকার সাথে প্লান করেছে, আমাকে তাদের জিবন থেকে তাড়িয়ে তারা নতুন সংসার করবে। তোমরা আমে দুধে মিলে যাবে আর আমি আটি হয়ে মাঝে গড়াগড়ি খাবো। সেটা বলতাম?? বললেই কি তুমি শুনতে?
শুভ্র ঃ হুম তা ঠিক।
আচ্ছা পাশের ঘরে যাচ্ছো কিন্তু এতো সেজে গুজে যাচ্ছো যে??
তরী ঃ তাকে সবটা বলতে হবে তো, আজকে সারা রাত ভিডিও কলে কথা বলবো। আজ আমরা ৪ জনই শান্তি তে থাকবো তাই না??
গুড নাইট…
শুভ্র ঃ তোমরা কি শারীরিক সম্পর্ক করেছো??
( কথাটা বলতে শুভ্রর গলা কাপছিলো)
তরী ঃ হুম, এটা করেই তো আমাকে সে আরও বেশী পাগোল করেছে, জানো ওর বেড পারফরমেন্স তোমার থেকেও বেশি ভালো। তোমার মতো হিংস্রতা দেখায়না।
শুভ্র এর বুক টা ভেঙে চূরে গুড়িয়ে গেলো একদম। তুমি কিভাবে পারলে তরী??
তরীঃ আজকে তুমিও করতে যাচ্ছিলে,আমি যদি না আসতাম তাহলে হয়তো…
তুমি আমাকে শেষ বার কবে ছুয়েছো?? ৪ মাস আগে। আমারও তো চাহিদা আছে তা যদি তুমি মেটাতে অক্ষম হও তবে বাধ্য হয়েই আমার নিজের ব্যাবস্থা নিজেকে করতে হবে।
তাই তোমার এরকম রিয়াক্ট করাটা ঠিক যাচ্ছে না। হয়তো তুমিও করেছো,এখন আর বিশ্বাস করিনা আমি তোমাকে।
শুভ্র কিছু বলতে যাবে তখন ওর ফোন বেজে উঠলো….
তরী ঃ তোমার সায়না?? আচ্ছা ওকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতো, লাউড স্পিকার এ দিবে, প্রতিউত্তর টা আমিও শুনতে চাই।
শুভ্র ঃ বলো
তরী ঃ বিয়ের পর আমি যেভাবে সংসার সামলাতাম ও ঠিক সেভাবেই করবে, কোনো কাজের লোক থাকবে না..
শভ্র কথাটা সায়না কে বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো…. আমাকে কি তোমার সো কল্ড খ্যাত বউ তরী পেয়েছো?? এতো পড়াশোনা কি তোমার বাড়ির দাসী হতে করেছি আমি??
সারাদিন কোনো খোজ নেই, এতো রাতে কল দিয়ে এসব ফালতু প্যাচাল পারছে এই ফোন রাখো তো মেজাজ টাই বিগড়ে দিলে। যওসব
শুভ্র বোকার মতো ফেল ফেল চেয়ে রইলো তরীর দিকে
চলবে
পর্ব -২
তরী ঃ আমি কিন্ত English এ Master’s pass, First Class 😎 হাহাহা, হায়রে ভালোবাসা এই ভালোবাসার জন্যই আজ আমি নিঃশেষ হতে যেয়ে বেচে গেলাম। All credit goes to my love.
শুভ্র তুমি আমাকে নাহ, তোমরা আমাকে টিপিক্যাল, খ্যাত বোকা আরও কতো কি বলো….
সব দিক থেকে পারফেক্ট হয়েও তোমাকে খুশী করতে পারলাম না 🙂
আচ্ছা আমি কিন্তু আমার সব কাজ কর্মে তোমার ভালো লাগা না লাগা কে প্রকাশ করি যার প্রেমে তুমি খুব খারাপ ভাবেই পরেছো…
আমার জব না করা, বাসায় থাকা, পার্টি তে না যাওয়া, সবসময় বাঙালী সাজে থাকা, হাত পুড়িয়ে তোমার জন্য রান্না করা, নীল রং টা ও কিন্ত তোমারই পছন্দ, নীল শাড়ী চুড়ি,লম্বা চুল, খোপায় বেলি’র মালা পড়া এসব তোমার পছন্দ আর আমি তোমায় ভালোবাসি বিধায় এসব করতাম…
তেলে চুপচুপে কাচ্চি আমি খুব আয়েশ করে খেতাম তোমার সামনে বসে কারন আমার এই বাচ্চামো তুমি পছন্দ করতে। মুগ্ধ হয়ে দেখতে আমাকে
তাহলে এখন বলোতো কে খ্যাত, টিপিক্যাল, আনস্মার্ট, অসামাজিক 😏😏
তরী তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে চলে গেলো পাশের রুমে।
শুভ্র মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, আমি তোমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি তরী ক্ষনিকের মোহ তে পড়ে। তুমি আজ সারাদিনে আমাকে যা যা বলেছো আমি ওসব কিছু তোমার ক্ষেত্রে ভাবতাম কিন্তু তুমি আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে আমি কি হারিয়ে ফেলেছি। আমার তরী… কান্না করছে খুব….চোখ মুছে তরীর রুমের সামনে যেয়ে কান পাতলো দড়জায়….
তরী ঃ হ্য সত্যি সত্যি সত্যি , তিন সত্যি বললাম, আর কোনো বাধা নেই আমাদের মাঝে আমরা খুব তাড়াতাড়ি এক হচ্ছি । ভালোবাসি অনেক অনেক ভালোবাসি, প্লিজ আবার চলে যেও না….
শুভ্র আর দাড়াতে পাড়লো না, এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো হয়তো তরী মিথ্যা বলছে তাই এক বুক আসা নিয়ে এখানে এসেছিলো….😑
**
পরদিন শুভ্র অফিস যাবার সময় তরী কোনো হেল্প করলো না, এমন কি নাস্তা টা ও বানায়নি
শুভ্র ভাবলো হয়তো তরী অসুস্থ, কারণ বিয়ের পর থেকে এমন এক দিন ও যায়নি যে তরী উঠেনি সকালে।
তরীর রুমে যেয়ে দেখে ঘুমিয়ে আছে, জর আছে কিনা চেক করতেই তরী হাতটা ঝারা মেরে ফেলে দেয় , তারপর বলে আমাকে ছুলে কোন অধিকারে তুমি??
শুভ্র ঃ আমি তোমার বর তরী
তরী ঃ বর?? হাহাহা তুমি আমার আত্মার কাছে সেদিন ই মরে গেছো যেদিন আমার যায়গায় অন্য একজন কে ভালোবাসার চোখে দেখেছো। আমি আজ তোমাকে হেল্প না করায় অবাক হলে কেনো?? এতোদিন অভিনয় করে সাহায্য করতাম এক রাশ অসস্তি নিয়ে, এখন তো আমি অন্যের হবু বউ তাই যখন তখন ছুবে না আমাকে আর হ্যা নাস্তা?? তুমি তো গত ৩ মাস ধরে খাওনা সকালে, মনে হয় তোমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে খাও, তাই আজ আর হাত পুরিয়ে রাধিনি, তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে খাও যেয়ে। আমি আজকে সারাদিন তার সাথে থাকবো।
তরীর বলা কথা গুলো শুভ্র এর বুকে হাজার ছুড়ি বিধার মত আঘাত হলো…. এই কষ্ট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তরী আবার পেছন থেকে ডেকে বললো, ডিভোর্স লইয়ার এর সাথে কথা বলবে কবে?? আমাদের দ্রুত ডিভোর্স হওয়াটা জরুরি তাহলে তত তাড়াতাড়ি তোমার থেকে মুক্তি পাবো আর নতুন জীবন শুরু করতে পারবো।
এই কথাটা শুনে, ছুড়ী গুলো বুক চিরে বের হয়ে যাবার মত অনুভূতি হলে। চোখ টলমল করছে, কান্না লুকাতে ঘুরে দাড়ালো
তরী ঃ কি তুমি কথা বলবে নাকি আমি.
শুভ্র ঃনা, আমিই বলবো, আর বেশীদিন সহ্য করতে হবে না আমাকে তোমার, খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি দিবো তোমাকে। সাবধানে থেকো…
তরী ঃ আমি তার কাছে সবচেয়ে বেশী নিরাপদ, চিন্তা করো না।
শুভ্র আর দাড়ালো না, বের হয়ে গেলো…
শুভ্র বের হতেই তরী তৈরি হতে লাগলো, কিছু বিশেষ রান্না বসালো তার প্রিয় মানুষটির জন্য।
#
আজকে অফিসে গেলো না একটা পার্কে যেয়ে বসলো, এখানে অনেক এসেছে তরী কে নিয়ে।
নীল শাড়ী, নীল চুড়ি, কখনো চুলো বেলীর মালা দিতো আবার কখনো চুল খোলা রেখে আসতো। তখন বেলির মালা টা হাতে পেচিয়ে রাখতো।
মেয়েটা অনেক মায়বি, লিপিস্টিক আর কাজল এই দারুন মানায়, বাকি মেক আপ এর দড়কার পরে না।
মেয়েটা আমার হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে প্রকৃতি দেখতে খুব ভালোবাসে। আর সায়না?? ওর কাছে ঘুরতে যাওয়া মানেই মুভি দেখা, রুম ডেট, দেশের বাহিরে যাওয়া, দামি দামি শপিং আর পোশাক আসাক ও বিশ্রি, আমি কি করে ওর মোহে পরলাম ছিহ।
না আমি তরীকে হারাতে পারবো না, আমি একটা সুযোগ চাইবো ওর কাছে। হ্যা ও শুয়েছে অন্য পুরুষের সাথ, ,,. তার জন্য আমিই দায়ী, ক্ষমা চাইবো আমি ওর কাছে….
আরও ১ ঘন্টা বসে থেকে দুপুর এর দিকে
বাসার উদ্দেশ্য রউনা দিলো, তার আগে বেলি ফুলের মালা, আর মল থেকে ডায়মন্ডের গহনা সেট কিনে নিলো।
বাসায় যেয়ে দেখে তরী, সেদিন এর কেনা, জিন্স আর লং ফ্রক পরেছে, বাইরে বের হবে এখন।
শুভ্র কোনো কথা বললো না, তরী কে কোলে করে রুমে নিয়ে গেলো । তারপর খাটে বসিয়ে ও নিজে তরীর পায়ের কাছে বসলো হাটু গেরে , তরীর হাত দুটো ধরে ওর দিকে করুন চোখে তাকালো…
তরী ঃ হচ্ছে টা কি?? তুমি অফিস যাওনি কেনো?? আর আমার দেরি হচ্ছে ছাড়ো।
শুভ্র ঃ আমাকে ক্ষমা করা যায় না তরী??
তরী ঃ অবাক হয়ে তাকালো, কি বলছো তুমি?
শুভ্র ঃ আমি ভুল করেছি, আমি ভুলে গিয়েছিলাম তুমি আমার ভালোবাসা আর সায়না আমার মোহো। একটাবার সুযোগ দাও আমাকে প্লিজ, কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন তোমাকে ঠকাবো না, তোমার সব কথা শুনবো, অনেক ভালোবাসবো। তোমাকে আর কোনো কাজ করতে হবে না, আমি কাজের লোক ঠিক করে এসেছি। এখন থেকে তোমার একমাত্র কাজ হলো শুধু আমাকে ভালোবাসা আর আমার ভালোবাসা নেওয়া। প্লিজ তরী ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমি আর কখনো তোমাকে নিয়ে উপহাস করবো না, তোমাকে ডায়েট করতে হবে না, তোমার গুলুমুলু গাল গুলো কেই আমি বেশী ভালোবাসি জানো তো তুমি তাই না??
তোমাকে মর্ডান হতে হবে না তুমি যেমন আছো তেমন টাই ঠিক আছো একদম পারফেক্ট। ওই সায়না তোমার নখেরও যোগ্য না তরী।
কথাগুলো বলে তরীর হাতে মাথা রেখে হুহু করে কেদে উঠলো শুভ্র।
তরীর বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো, শুভ্র কে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলো। কোথায় যাবো তোমাকে ছেড়ে কলিজা?? তুমিই তো আমার বেচে থাকার অবলম্বন।
শুভ্র অবাক হয়ে তরীর দিকে তাকালো
তরী ঃ হুম, আমি ৭ দিন আগে জানতে পারি তোমার আর সায়নার সম্পর্কের কথা। আর মাঝে মাঝে তুমি উঠে যেতে মাঝরাতে ব্যাপার টাকে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু সেদিন তোমার ফোনে সায়না আর তোমার মেসেজ, ছবি দেখে জেনে যাই। বিশ্বাস করো আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো, ভেবেছিলাম তোমাদের এক করে দিয়ে চলে যাবো তোমরা তাড়ানোর আগেই,। কারন যে ভালোবাসে না তার কাছে থেকে কি লাভ?? বরংচো ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকুক এটাই অনেক বড় পাওয়া।
কিন্তু সায়নার ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানি মেয়েটা ভালো না। তাই তোমার মনে আমাকে নিয়ে যেই বিষের তৈরি হয়েছিলো সেটা দিয়েই তোমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। এর জন্য গতকাল ইচ্ছে করেই বাইরে গিয়েছিলাম।
আমি জানতাম তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো আমাকে ছাড়া তুমি যে অচল তাই গতকাল থেকে তোমাকে আমি বুঝিয়েছি কতটা ভালোবাসো আমাকে তুমি।
তুমি আমাকে সায়নার সাথে মিশিয়ে, সায়নাকেই আপন করতে চেয়েছিলে কিন্তু সায়না যে তোমার অর্থ আর তোমার সুন্দর চেহারাটাই ভালোবাসে।
আমি বেচে থাকতে কোনেদিন অন্যকোনো পুরুষ এর দিকে তাকাতে পারবো না, সেখানে…..
গতকাল থেকে যার কথা বার বার বলছিলাম, সেটা তুমিই ছিলে শুভ্র। এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো, সুদর্শন, স্মার্ট, ধনী একমাত্র তুমি আমার কাছে। তোমার ভালোবাসার কাছে সব কিছুই হার মানে।
শুভ্র ঃ তরীকে জড়িয়ে নিলো, মাফ করে দাও আমাকে, আমি তোমার যোগ্য নই তরী।
তরী ঃ শুভ্রর কপালে চুমু দিয়ে বললো,
তোমার দোষ নেই কারন তোমার
#ভালোবাসায়_ নিলাভ_আভা পরেছিলো, যেটা আমাকে হারানোর ভয়ে কেটে গেছে।
শুভ্র ঃ ভালোবাসি তরী, অনেক ভালোবাসি।
তরী ঃ ভালোবাসি পাগোল বর টা আমার।
দেখলে তো কতটা ভালোবাসো তোমার তরী কে, মাএ একটা দিন পারলে না তাকে অন্য পুরুষ এর সাথে ভাবতে😁
শুভ্র ঃ কিছু বললো না… তরীর হাত ধরে ভালোবাসা মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে রইলো ☺
এখন চলো আজকে আমরা সারাদিন এক সাথে থাকবো। আর তোমার প্রিয় খাবার রান্না করেছি, কারন আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি ফিরে আসবে শুভ্র
শুভ্র ঃ তরীর কপালে চুমু দিয়ে বললো, কি করে না ফিরে থাকতাম বলো?? ভালোবাসি যে ☺☺
আচ্ছা তোমার কি সত্যি নীল শাড়ী চুড়ি পছন্দ নয়?
তরী ঃ অনেক পছন্দ, সেদিন থেকে আরও বেশী পছন্দ করি যেদিন জানতে পেরেছি তোমার এগুলো পছন্দ ।
শুভ্র ঃ আজকে পড়বে প্লিজ??
তরী ঃ হুম কিন্তু একটা শর্তে, শাড়ী টা তুমি পড়িয়ে দিবে 😋
শুভ্র ঃ শাড়ী পরিয়ে ড্রইং রুমে নিয়ে গেলো তরীকে। তারপর এক হাতে বেলির মালা অন্য হাতে ডায়মন্ড এর সেট টা ধরলো।
তরী ঃ বেলির মালাটা হাতে নিয়ে বললো এটারই কমতি ছিলো।
শুভ্র ঃ অবাক হয়ে বললো, এই সেট টা??
তরী ঃ বেলি আমার বর এর পছন্দ, তাই এটাই সবচেয়ে দামী আর সুন্দর আমার কাছে।
শুভ্র ঃ আমি সত্যি ভাগ্যবান তোমাকে পেয়ে
তরী ঃ আর আমি ভাগ্যবতি।
বিকেলে..
তরী ঃএকটা মজার জিনিস দেখবে??
শুভ্র ঃ কি?
তরী ঃ সায়না কে কল দিয়ে বলো তুমি আজকে ওর সাথে যাচ্ছো না।
শুভ্র কল করতেই সায়না চেচিয়ে উঠলো, এই তুমি কোথায়?? আজকে যে আমাদের অফিস এর পর ঘুরার প্লান ছিলো, তারপর সেই ডায়মন্ড সেট টা কিনে দিবা, তোমার খোজ নেই
শুভ্র ঃ আমি আজকে আসবো না, শরীর টা ভালো লাগছে না।
সায়না রাগ করে কল কেটে দেয় একবার জিজ্ঞেস ও করেনা অসুস্থ কেনো কি হয়েছে?
তরী ঃ দেখলে তো ভালোবাসা 😂😂
এখন চলো আসোল জিনিস টা দেখবে।
শুভ্র কে নিয়ে একটা আবাসিক হোটেল এ গেলো তরী। সেখানে সায়না ওদের অফিস এর একজন স্টাফ এর হাত ধরে ভিতরে ঢুকছিলো।
হোটেল এর ম্যানেজার এর সাথে আগেই কথা বলে রেখেছে তরী। এক্সট্রা চাবি নিয়ে সোজা ঢুকে গেলো।
সায়না সেই স্টাফ কে লিপ কিছ করছে 🤣
শুভ্র চুলের মুঠি ধরে দাড় করিয়ে ননস্টপ থপ্পর দিতে লাগলো শাঁকচুন্নি টা কে।
তরীর ভাই পুলিশ অফিসার, আগে থেকেই কথা বলা ছিলো, সায়না কে ধরে নিয়ে যায়। মেয়েটা এগুলো করে বেরায়, সব কিছু শিকার যায়। সব ছেলেদের ফাসিয়ে সর্ব সান্ত করে দেয়।
শুভ্র তরীর কাছে আবার ও ক্ষমা চায়…
তরীঃ ভালোবাসা বাড়াতে মাঝে মাঝে ” ভালোবাসায় নীলাভ আভা ” পরা টা প্রয়োজন , এতে করে বুঝা যায় দুটি মানুষ এর হৃদয়ে একে ওপরের ঠিক কতটা জুড়ে আছে। তুমি আমাকে ভালোবাসো বলেই নীল আভা কাটিয়ে এসেছো নয়তো হারিয়ে যেতে। এখন তুমি আর কখনো যাবে না…. ভালোবাসি শুভ্র
শুভ্র ঃ শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নেয় বউ টা কে।
**
কেটে গেছে দিন, সপ্তাহ, মাস…..
শুভ্র তরী ভালো আছে তাদের সংসারে তবে আগে থেকে শুভ্র এর ভালোবাসা দিন দিন বাড়ছে। তরীকে পুতুল এর মতো রাখে… শুভ্র কথা রেখেছে….
কিন্তু এখনো সে অনুতপ্ত তার কৃতকর্মের জন্য, প্রায় গভীর রাতে কেদে উঠে, তরীর পায়ের কাছে বসে বলে তোমার উপর আমার “” #ভালোবাসায়_নীলাভ_আভা“” পড়ার জন্য আমাকে ক্ষমা করেছো তো বউ??
তরী তখন মুচকি হেসে শুভ্রর কপালে চুমু খেয়ে জবাব দেয়
যদি ক্ষমাই করতে না পারি তবে কেমন ভালোবাসলাম❤
তরী পেরেছে তার শুভ্র কে ফিরিয়ে আনতে 🥰🥰
★★★★ সমাপ্ত ★★★★

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..