1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

# পবিত্র_সম্পর্ক # সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি – – – # সূচনা_পর্ব, # পর্ব_২, # পর্ব_৩, # পর্ব_৪, # পর্ব_৫, # পর্ব_৬, # সমাপ্তি_পর্ব

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২১৪ বার
্যস্ত কোলাহল পূর্ণ শহর ঢাকা, যানজট নামক শব্দটা সেখানে বসবাসরত প্রায় মানুষের কাছে অতিপরিচিত একটা শব্দ। শ্বাস রুদ্ধ কর মুহুর্ত। কলেজ শেষে মাহেরা ও তার বান্ধবী নিতু বাসায় ফিরছিলো রিকশায় করে! নিত্যদিনের মত আজও রাস্তায় জ্যাম ছিলো অনেক। তাই তারা অপেক্ষা করছিল কখন সামনের গাড়িগুলো আগাবে তারপর তাদের ছোট্ট রিকশাটাও আগাবে। সাথে রয়েছে বাড়ি ফেরার তাড়া। দুজনে বসে প্লাস্টিকের পাখা দিয়ে বাতাস করছে গায়ে এবং নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে।
হঠাৎ নিতুর চোখ যায় অপ্রত্যাশিত কিছুর প্রতি, যা দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে সে দিকেই ক্ষণকাল মুহূর্ত দৃষ্টি তাক করে রাখে। চোখ তার সড়ছেই না! বান্ধবী অদ্ভুদ দৃষ্টিতে কোন কিছু অবলোকন করছে। তাই মাহেরাও কৌতূহল মেটাতে সেদিকেই নিজের দৃষ্টি বুলাই। সেও স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে। দুই মানবীর মুখে কোন কথা নেই তারা এক ধ্যানে সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
নিতু বোধ ফিরে পেতেই মাহেরা’কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মাহেরা! রিনি এখানে কি করছে ওই ছেলের সাথে। আজ কলেজেও আসলো না, তার নাকি শরীর অসুস্থ! কিন্তু এই অচেনা ছেলের সাথে কি করছে মেয়ে। দেখেতো দিব্যি সুস্থ-সবল মনে হচ্ছে। তাহলে আমাদের মিথ্যা বলার কারন কি?”
“তুই শুধু রিনি’কেই খেয়াল করলি! পাশের ছেলেটাকে দেখেছিস কে! ওই ছেলে তো আমার হবু বর, যার সাথে দু’দিন আগে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওয়াটস এ্যাপে তোকে পিক দিলাম দেখসনি? কিন্তু রিনির সাথে ওই ছেলে কি করছে!”
“ওহ্! দেখেছিস কিচ্ছু খেয়াল থাকে না ইদানিং। রাতে দেখেছিলাম কিন্তু চেহারা অতটা মনে নেই। যাইহোক তোর হবু বরের নামটা যেন কি ছিলো, জাবেদ! হ্যাঁ তাই না মাহেরা?”
“হু জাবেদ নাম ছিলো। আমি ছবিতে এক পলক দেখেছিলাম। তোকেতো সব বললামই। তাদের বাড়ির লোকেরা দেখতে এসেছিল কিন্তু ছেলে ব্যস্ত থাকাই আসতে পারেননি। আমাকে ছবি দেখানো হয়েছিল।”
রিনির সাথে মিঃজাবেদ আহসানের কি সম্পর্ক নিতু! আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। গতকাল যখন রিনিকে ছবিটা পাঠালাম তখনো তো কিছু বললো না। চেনাজানা সম্পর্কে!
“মাহেরা, আমিও নিজেও বুজছি না! এককাজ করি রিনি’কে ফোন দিতে পারি! দেখি তিনি কি বলেন!”
“হ্যালো, রিনি! কোথায় আছিস তুই? কি করছিস?”
“আমি অসুস্থ নিতু, তোকে বললাম না তখন। বাড়িতে নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে আছি রে..”
“আচ্ছা! তাহলে বিশ্রাম কর রাখছি।”
কল কেটে দিতেই মাহেরা বলল,
“দেখেছিস নিতু আমাদের কিভাবে বোকা বানালো চা’লা’ক মহিলা! নিতু ছবি তুলে রাখ ওদের দুজনের। আমি বাড়িতে গিয়ে সবাইকে দেখাবো। কোন চরিত্রহীন ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।”____ কেঁদেই ফেলল বেচারী।
কাঁদবে নাইবা কেন, দু’দিন পূর্বে যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হলো, সেই ছেলে ও নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর নিকট হতে এহেন অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড সে আশা করেনি। কষ্ট পাওয়ারই কথা।
বান্ধবীর কথায় সম্মতি জানিয়ে, ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে রাখলো নিতু। এই ছবি এখন মাহেরার জীবনে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।
সামনে থেকে গাড়িগুলো চলতে শুরু করাই, তাদের আরোহনকৃত রিকশাটাও চলতে শুরু করেছে নির্দিষ্ট গতিতে।
এদিকে নিতু ব্যস্ত মাহেরা’কে সামলাতে। সে নিজেও সকড এমন ঘটনায়। এখন বাড়িতে গিয়ে এ ব্যাপারে সবাইকে জানালে, সবকিছু বিস্তারিত জানা যাবে ইনশাআল্লাহ। তাই সে নিজেও জানার জন্য আগ্রহী।
নিতু, মাহেরা, রিনি বেস্ট ফ্রেন্ড বলা যায়। সেই ক্লাস সেভেন থেকে একসাথে পড়াশোনা করছে। আস্তে আস্তে বেশ ভালো বান্ধবী হয়ে গিয়েছে তারা। নিতু, মাহেরা বোরকা, নেকাব পরিধান করে কলেজে আসলেও রিনি শুধু হিজাব পরে আসে বিভিন্ন পোশাকের সাথে। এবার তারা এইসএসসি ২য় বর্ষে পড়ছে।
নিতু ও মাহেরার বাড়ি পাশাপাশি হলেও রিনির বাড়িটা মাহেরা’দের বাড়ি থেকে বিপরীত দিকে অবস্থিত। এজন্য রিনির বাড়িতে তেমন যাতায়াত হয় না তাদের। প্রয়োজনে রিনি’ই বেশি আসে।
বাড়িতে গিয়েই প্রথমে পায়ের জুতা খুলে একটা একেকদিকে ছুড়ে ফেলেছে। জুতার র্যাকে না রেখে। কাধের ব্যাগটাও সোফার দিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু কোথায় গিয়ে পরেছে তা খেয়াল করার সময় কোথায় মাহেরার! সে রেগে লুচির মত ফুলছে শুধু। তারপর রুমে গিয়ে কোনরকম বোরকা, নেকাব খুলেই দ্রুত পায়ে রওনা করেছে কিচেনে। কেননা তার আম্মাকে সেখানেই পাওয়া যাবে এখন। হাতে রয়েছে ফোন, যেখানে বন্দি রয়েছে দু’জন মানব-মানবীর মধুর আলাপন দৃশ্য।
“আম্মা! আম্মা শুনছো কি হয়েছে! তোমাকে আমি এখন এমন একটা কিছু দেখাবো, তুমি সকড হয়ে যাবা দেখেই। “
“আ’বা’লের মত না ডেকে সুন্দর করে আস্তে ডাকলেও তো পারিস। সুন্দর করে আম্মা ডাকলে কি মুখে ফোসকা পরে মা জননি। কি দেখাবি দেখা? দেখি কি সকড হওয়ার মত দৃশ্য।”
মায়ের কথা শেষ হতেই তার মুখের সম্মুখে তুলে ধরল, রিনি ও তাদের ঠিক করা হবু মেয়ে জামাইয়ের অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। চোখের ভুল ভেবে রুজিনা হক আবারও দেখলে ভালো করে আসলেই সে যা দেখছে তা, সঠিক কিনা।
তারপর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আসল কাহিনী কি?”
মাহেরা তার মাকে সব খুলে বললো। তারা কি দেখেছি সাথে রিনি যে মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে আজ কলেজে না গিয়ে ওই ছেলের সাথে দেখা করতে গিয়েছে, সেটাও মা’কে বলতে ভুললো না সে! জীবন পুতুল খেলা নয়। সে কোন গল্প বা সিনেমার ন্যাকামিতে ভরপুর কোন নায়িকা নয়। তাই তো বুদ্ধিমানের মত ছবি তুলে নিয়ে এসেছে এবং মা’কেও এ বিষয়ে অবগত করল। এখন তার সচেতন মা বাকিটা কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
মেয়েকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন রুজিনা হক। মেয়ে তার এত দ্রুত বিয়ে করতে চাইনি, তারাই এক প্রকার ধরেবেধে রাজী করিয়েছে এই বিয়েতে।
“আমার ভালো আম্মুটা কষ্ট পেও না সোনা। আল্লাহর কাছে লাখ শুকরিয়া তিনি এ বিষয়ে আমাদের আগেই অবগত করেছেন। তুমি কিন্তু একদমি মন খারাপ করবে না সোনা। তোমার আব্বু আসুক অফিস থেকে তারপর দেখবে তাদের সুপুত্রের এমন করার কারন কি। তুমি এখন যাও গায়ের ঘাম শুকিয়ে গোসল দিবা। তারপর নামাজ শেষে খেতে আসবা। আজ মা, মেয়ে একসাথে খাবো ঠিক আছে! মাহেরা মা আমার তুমি না ব্রেভ গার্ল, এসব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভেঙে পরলে চলবে সোনা? যাও এবার ফ্রেশ হতে যাও!”
মাহেরার মায়ের কথায় খারাপ লাগাটা যেন কর্পুরের মত উড়ে গেল। মায়েরা সন্তানের মানসিক শান্তি। মাকে পাশে পেলে আর কিছু চাইনা। মাকে বন্ধু হিসাবে পেলে এবং মায়ের সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পারলে জীবনের বহু জটিলতা সহজ হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ্। মায়ের চেয়ে বড় নেয়ামত আর কি হতে পারে সন্তানের নিকট? মাহান আল্লাহর দেওেয়া সবচেয়ে বড় উপহার মানবজাতির জন্য তাদের জননী। মাহেরা মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে মুচকি হেসে চললো রুমের দিকে। এখন মায়ের কথাগুলো অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে।
মাহেরার বাবা আসরের কিছুক্ষণ পরেই বাড়িতে পৌছায়। আসরের নামাজটা তিনি অফিসের মসজিদ থেকেই পড়েন। কেননা বাড়িতে এসে নামাজ পড়তে গেলে নামাজ কাযা হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
মাহেরার বাবা মজিদুর রহমান অফিস থেকে ফেরার পূর্বে ঘটে গিয়েছে আরেক অদ্ভুত ঘটনা। পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে পাত্র অর্থাৎ জাবেদ আহসান দেখা করতে চাই পাত্রীর সাথে। বাড়িতে এসে তাদের ঝামেলা বাড়াতে চাই না। তাই রেস্টুরেন্টে দেখা করতে চাইছে। তারা রাজী থাকলে পরেরদিন জাবেদ গিয়ে নিয়ে আসবে বাড়ি থেকে মাহেরা’কে। তাদের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। বড়লোক বলে কথা!
রুজিনা হক কি উত্তর দিবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, অবশেষে অনেক ভেবে বললেন, “মেয়ের বাবা বাড়িতে আসলে আপনাদের এ বিষয়ে জানাবো ইনশাআল্লাহ।”
এখন কথা হচ্ছে, ছেলের ব্যপারে একটু হলেও অবগত হলেন তিনি। কিন্তু ছেলে কেন দেখা করতে চাইবে।
তিনি ভেবেছেন,স্বামী আসলে তার সাথে আলোচনা করবেন। তারপর তিনি সম্মতি দিলে মাহেরা সাথে তাদের পনেরো বছরের ছেলে মিনহাজ’কে পাঠাবে। নিতু’কে বেশ ভালো জানেন তিনি তাকেও পাঠাবেন। মাহেরার সাথে ওরা দু’জন যাবে। শুধু একটা ছবির উপর নির্ভর করে তো বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কাল দেখা করে আসলে আরও বোঝা যাবে।
[ ইনশাআল্লাহ..চলবে,]
“তাদেরকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলো, রেস্টুরেন্টে গিয়ে কেন দেখা করতে হবে। আমার মেয়েকে আমি রেস্টুরেন্টে গিয়ে পাত্রের সাথে দেখা করতে দিতে চাইছি না!” স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে কথাগুলো বললেন, মজিদুর রহমান।
বিকালে অফিস থেকে ফেরার পরে, রুজিনা হক মজিদুর রহমানকে পূর্ব ঘটিত বিষয়ে জানালেন। তিনিও বেশ উত্তেজিত হয়েছিল, রেগে গিয়েছিল। পরে তিনি শান্ত করেন তাকে। পাত্রের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করার বিষয়ে বলতেই, উক্ত কথাগুলো বললেন মজিদুর রহমান।
“তুমি বলে দাও যা বলার। আমিতো বলেছিলাম, বাড়িতে আসতে! তারা নাকি ঝামেলা বাড়াতে চাই না, তাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করতে চাই। এখন এমনটা প্রায়শই হচ্ছে।”
“এখন কি হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা আমি দেখতে চাইছি না। ওই ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নেই বললেই চলে।”
“তাদেরকে বলেছিলাম, তুমি আসলে জানাবো। তাহলে তুমি ফোন করে তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।”
“আচ্ছা! কল দাও বলছি!”
“আসসালামু ওয়ালাইকুম। কেমন আছেন?”
ওপাশ থেকেও উত্তর আসলো, “ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি ভাই সাহেব। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি! বলছিলাম, জাবেদকে আমার বাড়িতে আসতে বলেন! সে তো এখানে আসেনি। সবার সাথে দেখাও হয়ে গেল সাথে মাহেরার সাথে আলাপচারিতারও হয়ে গেল।”
“আপনি মন্দ বলেননি। কিন্তু কোথাও যাওয়ার মত সময় সুযোগ তার হয়ে উঠছে না। এখন অফিস থেকে ছুটিও পাবে না। তাই চাইছিল অফিস থেকে ফেরার সময়, মাহেরা মায়ের সাথে একটু দেখা করতে। এবার আপনি কি বলেন এ বিষয়ে?”
মজিদুল সাহেব একটু দমে গেলেন! আমতা আমতা করে বললেন,
“আচ্ছা মাহেরা যাবে! সাথে ওর ভাই যাবে আর বান্ধবীকেও নিয়ে যাবে সাথে। মেয়েকে একা কোথাও পাঠায় না।”
“আচ্ছা! অনেক ধন্যবাদ ভাইসাহেব। রাখছি ভালো থাকবেন।”
“আপনিও ভালো থাকবেন আল্লাহ্ হাফেজ।”
_________________________________________
“আম্মা তাদের বলে দাও আমি তার গাড়িতে চড়ে যাব না। রিকশাতে আমারা তিনজন দিব্যি চলে যেতে পারবো। ওই ছেলের সাথে মোটেও দেখা করার ইচ্ছে নেই। আমি সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।”
“থাক এত উত্তেজিত হতে হবে না। তোমার শরীরের রাগের অস্তিত্বই বেশি লক্ষ্য করা যায়। হুটহাট রাগ ভালো না। রাগ কমিয়ে, শান্ত ও ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। তবেই সেটা আমাদের জন্য উত্তম হয়। কিন্তু তুমি তো করবে না! বাপের মত বদমেজাজি একটা।”
দুপুরে খাওয়ার ঘন্টার খানিক পরেই, জাবেদের বলা রেস্টুরেন্টে তার বলা সময় অনুযায়ী রওনা করে তারা। পথিমধ্যে মাহেরা তার ভাই মিনহাজকে বলে দিয়েছে, শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত সব রেকর্ডিং করবি। পারলে ভিডিও করতে পারিস।
“তুই কি আমার আপা! এত কুটিল বুদ্ধি মাথায় আসে কিভাবে? অবাক কন্ঠস্বরে বোনকে বলল, মিনহাজ।”
“কেন! তোর কি আমাকে বোকা মনে হয়? এ কথা কেন বলছিস! উচিত আমাকে ধন্যবাদ জানানো বুঝেছিস।”
“চুপচাপ, নম্র-ভদ্রতার স্বভাবের মাহেরার এত বুদ্ধি। দেখে তো মনে হয় দুনিয়ার বলদ তুই!”
“চুপ থাক! ভাই না শত্রু। চল যায়। চলে এসেছি।”
আগে থেকেই ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল জাবেদ আহসান।
মাহেরাসহ সবাই পরিচয় পর্ব শেষে নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়ল।
জাবেদ প্রথমে মুখ খুললো,
“মিস:মাহেরা আপনাকে কিভাবে কথাগুলো বলবো জানা নেই তবুও বলতেই হবে আজ। প্লিজ কথাগুলো শুনবেন ধৈর্য্য নিয়ে। আমি প্রায় দু’বছর ধরে একটা মেয়েকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনটা নয় যে, আপনাকে অপছন্দ। কিন্তু আপনিও খুব ভালো। আমার মা বাবার খুব পছন্দ হয়েছিল আপনাকে, কিন্তু আমি খুবই দুঃখিত। ওকেও আসতে বলেছি, কিছুক্ষণের মধ্যে এসে যাবে!”
মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় কথাগুলো শুনলো। কিছু বলবে, তার পূর্বেই আগমন ঘটল জাবেদ আহসানের প্রেমিকা ওরফে রিনির।
মাহেরা নিতু ওরা প্রথম থেকেই আন্দাজ করেছিল রিনিই হবে। কিন্তু ভাবনা এভাবে সত্যি হবে কে জানতো।
মিনহাজ আর নিতু পাশের টেবিলে বসে কফি পান করছে নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলছে কিন্তু তাদের এবং মিনহাজের ক্যামেরার দৃষ্টি আপাতত জাবেদদের দিকে।
রিনি এসেই জাবেদের পাশে বসে পড়ল। জাবেদ পরিচয় করিয়ে দিল মাহেরাও অচেনা মানুষের ন্যায় কুশল বিনিময় করলো সাথে রিনিও। বড়ই অবাক করা বিষয় ছিলো মাহেরাদের নিকট।
জাবেদ পুনরায় মাহেরাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“ওকেই আমি ভালোবাসি। ও আমাকে খুব ভালোবাসে। প্লিজ আমার কথাগুলো খারাপভাবে নিবেন না।”
“আপনার কথাগুলো কিভাবে নিব, সেটা আমার বিষয়। আপনি আমাকে ডেকে এসব কথা কেন বলছেন? আপনার পছন্দ আছে অন্যকোথাও বাড়িতে কেন জানাননি? আমাকে এভাবে ডেকে এনে অপমান করার মানে কি?”
“দেখুন মিস:মাহেরা আপনাকে অপমান করার কোন উদ্দেশ্যে, ইচ্ছা কোনটাই ছিলো না। ভুল বুঝবেন না। আপনি একটু সাহায্য করেন। আপনিই বিয়েটা ভেঙ্গে দেন।”
“বিয়েতো আপনাকে এমনিতেই করবো না। বিয়ে ভেঙ্গে যাবে এভাবেই। আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে হয়ে পরিবারের কাছে নিজের পছন্দের কথা বলতে পারলেন না। হাস্যকর কাহিনী! যাইহোক এখানে আমাদের আর কোন প্রয়োজন নেই, আমরা এখন যেতে পারি? আমার কোন কথায় খারাপ লাগলে খুবই দুঃখিত। এই চল তোরা!”
“বুঝলে জাবেদ ছোটলোক বলে কথা! এত বড়লোক দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। ইশ দুঃখ হচ্ছে! বিয়েটা হলো না, বেচারী!”
নিতু উত্তেজিত কন্ঠে জাবেদ, রিনির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“জাবেদ আহসান কিছু বলতে চাই। আপনার জানা উচিত, আপনার প্রেমিকাটি আমাদের প্রানপ্রিয় বান্ধবী ছিলো কালকে পযর্ন্ত। ক্লাস সেভেন থেকে এই পযর্ন্ত একসাথে পড়ছি। সময়ের সাথে সাথে বন্ধুত্বের গভীরতাও বেড়েছে। কালকের আগের দিনে আমাকে আর রিনিকে, মাহেরা আপনার ছবিটা ওয়াটস এ্যাপে পাঠিয়েছিল। রিনির যেহেতু আপনাকে পছন্দ তাহলে এ ব্যাপারে আগেই অবগত করতে পারত। তাছাড়া কাল মিথ্যা অসুস্থতার বাহানা দিয়ে, আপনার সাথে দেখা করতে এসেছিল! সেটাও দেখেছি। আপনার সাথে তার এত বছরের সম্পর্ক অথচ একটাবার আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। সেটা বাদ দিলাম। আপনার মত ছেলেকে মাহেরা কখনও বিয়ে করবে না। রিনি কেন এভাবে মাহেরা কে অপমান করলো, ওর সাহস হয় কি করে। ওকে আমরা কিছু বলেছি। ছোট লোক ত ও। নুন আনতে পান্তা ফুরাই আবার বড় কথা। তোর মত মেয়ের সাথে কখনও কোনদিন কথা বলা তো দুর, তোর জঘন্য চেহারাটাও দেখতে চাই না। মিনহাজ, মাহেরা চল এখানে আসাটাই আমাদের চরম ভুল হয়েছে।”
“তোর কি ক্ষতি করেছি জানিনা! তোর পছন্দের ছেলেকে কখনও বিয়েও করতাম না। আমিতো এখন বিয়েটাও করতে চাইনি। আব্বু-আম্মুর জন্য বাধ্য হয়ে রাজী হয়েছিলাম। জাবেদ সাহেব আমার পূর্বপরিচিত কেউ নন। তুই পছন্দ করিস বললেই পারতিস। কারো পছন্দের জিনিস নেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। এভাবে আমাকে আর আমার পরিবারকে অপমান করে কি শান্তি পেয়েছিস জানিনা! কোন দোষ না করেও এভাবে হেনস্থা হতে হলো আজ। এত বছরের বন্ধুত্বের পুরষ্কার পেলাম এভাবে। জাবেদ সাহেব আসছি। ভুলত্রুটি কিছু বলে থাকলে মাফ করবেন।”
“চল তোরা…”
[ইনশাআল্লাহ…চলবে]
খুটি হীন শুভ্র নীলাভ অন্তরীক্ষে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহেরা। হয়তো, আরশের প্রভুর নিকট মনে জমানো অব্যক্ত কথা একান্তে ব্যক্ত করছে।
জীবন নামক ক্ষণস্থায়ী সময়ের খাতা হতে ফুরিয়ে গেছে আরও দুটি দিন। দুইটা দিন মাহেরার জীবনে ঘটে গিয়েছে অনেক কিছু। হয়তো, সারাজীবন গেথে থাকবে স্মৃতির পাতায়। স্মৃতিচারণ সময়ে কিছু তিক্ত অনুভূতি হিসাবে ধরা দিবে।
__________________________________
সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে আসার পরে, সবাই রুজিনা হক এবং মজিদুর রহমানকে অবগত করেন সম্পূর্ণ ঘটে যাওয়া বিষয়। অবশ্যই রেগে যাওয়ার কথা, এহেন নিচু কর্মকাণ্ডে। বুদ্ধিমান দম্পতি মাহেরার পিতা-মাতা। তারা খবর দিয়েছেন জাবেদের বাড়িতে। আসতে বলে দিয়েছেন। তারাও উপস্থিত হয়েছিল। তারপর রেস্টুরেন্টে ঘটে যাওয়া ক্যামেরায় ধারণকৃত পুরো দৃশ্য তাদের দেখানো হয়। তারা খুবই লজ্জিত হয়, বারবার ক্ষমাও চেয়েছে মাহেরা ও তার পরিবারের নিকট।
প্রতিবেশিদের মধ্যে কিছু কুরুচিপূর্ণ মহিলা থাকে। যারা দায়িত্বের সাথে অন্যের বাড়ির খবরাখবর নেটওয়ার্কের ন্যায় সবখানে ছড়িয়ে দিতে পটু। যেহেতু, মাহেরার বিয়ে অনেকটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল, তাই আশেপাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশি ও নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজন জানতো। অনেক রকম কথা শুনতে হয়েছে তাদের। কেন বিয়ে ভেঙে গেল? ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ে ভেঙ্গে দিল,নাকি তোমরা দিলে না। মাহেরার কোন সমস্যা আছে কি, নাকি কোথাও প্রেম করে তোমার মেয়ে? নানা কথার সম্মুখীন হতে হয়েছে কোন দোষ না করেও। এমনটাও বিধিলিপিতে থাকে।
তাই মাহেরা খুব কম বাসা থেকে বাহিরে যায়। এ দুদিন ঘরবন্দি ছিল বলা যায়। মেয়েকে বুঝিয়েছেন, রুজিনা হক। জীবনে কখন কি পরিস্থিতি আসবে পূর্বে থেকে ধারণা করা সম্ভব হয় না।
______________________________________
~মাহেরা! এই নির্জন বিকালে ছাদে কি করছিস? কথাগুলো পিছেন থেকে বলতে বলতে মাহেরা পাশে এসে দাড়াল নিতু। নিতু প্রায় সময়ই মাহেরার সাথে থাকে এখন। সে নিজেও খুব কষ্ট পেয়েছে। প্রিয় বান্ধবীর এহেন অপমানে তাও আরেক বান্ধবী নামক শত্রুর জন্য। মনে ক্ষণে ক্ষণে ক্ষোভ জমা হচ্ছে রিনির জন্য নিতুর।
~আকাশ দেখছি! কি সুন্দর আকাশ! মন ভরে যায় দেখলেই। আমার আল্লাহর সৃষ্টি কতটা সুন্দর আর নিখুঁত। আলহামদুলিল্লাহ্।
~আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক সুন্দর। আল্লাহর প্রতিটা সৃষ্টিই অনেক সুন্দর তুলনাহীন। আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতিটি নেয়ামত ভোগ করার সময় শুকরিয়া আদায় করা। এতে আল্লাহ্ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। আর সেই নেয়ামতে রহমত ও বরকতপূর্ণ থাকে। আলহামদুলিল্লাহ্।
~ইনশাআল্লাহ! আল্লাহর দয়ার কোন শেষ নেই। তিনি অসীম দয়ালু। যার সাথে মহাবিশ্বের কোন কিছুরই তুলনা হয় না। আমাদের সব সবসময় উচিত আল্লাহ্ ও রাসূল (সা:) এর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। ইসলামের মধ্যেই রয়েছে সমগ্র মানবজাতির কল্যান। আল্লাহর গুনের, রহমতের, বরকতের প্রশংসা হাজার বছর ধরে করলেও শেষ হবে না। এক রহমানুর রহিম পেয়েছি আমরা।
~হ্যাঁ সেটাই! এত ভরসা করিস আল্লাহ্কে তাহলে ওই সামান্য বিষয় নিয়ে এখনো কেন এভাবে আপসেট হয়ে আছিস। অন্যায় ওরা করেছে, তুই না। শাস্তি তো ওদের আল্লাহ্ দিবেন এখন উচিত আল্লাহ্কে ভরসা এবং ধৈর্য ধারন করা।
~দোয়া করিস নিতু আমার জন্য। কথায় আছে না, ধৈর্যের প্রথম অংশ মাকাল ফলের ন্যায় তিক্ত হলেও, শেষের অংশ মধুর চেয়েও মিষ্টি। হয়তো আমার জীবনে ধৈর্যের প্রথম অংশ চলছে। তাই এতো তিক্ততা।
~আন্টি তোকে ডাকতে পাঠিয়েছিল আমাকে! আর আমি কিনা তোকে ডাকতে এসে গল্পে মজে গেলাম। এতক্ষণে বোধহয় আলুর চপ, বেগুনি সব ঠাণ্ডা হয়ে গেছে মাহেরা। তারাতারি চল! এখন না গেলে স্বাদ পাওয়া যাবে না। আমার প্রিয় বেগুনি। মেকি আহাজারি করে কথাগুলো বলল নিতু।
নিতুর কথা শুনে মিষ্টি হেসে মাহেরাও বলল,
~শুধু কি তোর একার প্রিয়? আমারও তো কত প্রিয়। চল এবার যাওয়া যাক।
মাগরীবের নামাজ শেষে মাহেরা গুটিগুটি পায়ে আম্মার রুমে গেল। উদ্দেশ্যে মায়ের সাথে গল্প করা। এই একটা মানুষ যার সাথে কথা বললে, অন্যরকম প্রশান্তি পাওয়া যায়। যা দুনিয়ার অন্য কারো কাছে পাওয়া যায় না।
~আসসালামু ওয়ালাইকুম। আম্মা কি করছো? আজ গল্প করবো তোমার সাথে। এখন আবার বলবে না পড়তে বসতে। আজকে চিল করবো, নো পড়া নামক প্যারা ঠিক আছে।
মেয়ের কথায় হেসে ফেলল রুজিনা হক। বরাবরই মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। দ্বিধা ছাড়াই যেকোন কথা মা-মেয়ে সেয়ার করতে পারে তারা। এটাও আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। অতঃপর তিনিও কোমলতার সহিত বললেন,
ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেন নয় আম্মাজান অবশ্যই আজ আমরা মা-মেয়ে গল্প করব। ঠিক আছে আজ নাহয় পড়া থেকে অবসর নিলে।
~আব্বু কোথায় গেছে আম্মা? মিনহাজও তো রুমে নেই কোথায় গেছে? আমি নামাজে ছিলাম তাই খেয়াল করিনি। তুমি জানো তারা কোথায়?
~তারা মাগরীবের নামাজ আদায় করে এক জায়গাই যাবে। তারপর বাড়িতে আসবে ইনশাআল্লাহ। আর প্রশ্ন করোনা। তোমার জন্য বাকিটা সারপ্রাইজ থাক।
~আচ্ছা। জিজ্ঞেস করলাম না। অপেক্ষায় রইলাম তোমাদের সারপ্রাইজের জন্য।
~মাহেরা আম্মু! তুমি কি এখনো ওসব নিয়ে আপসেট? শোন, তোমাকে কিছু কথা বলি! আমাদের ভাগ্যে যা লেখা আছে সেটাই আমাদের সাথে হবে। তবে কখনও দোয়া আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। এজন্য সবসময়ই আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে সচ্ছ মনে দোয়া করা। আল্লাহ্ অসীম ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি বান্দার দোয়া কবুল না করে, ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। আল্লাহ্ ও রাসূল (সা:) এর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, আল্লাহ্ অবশ্যই কবুল করবেন। হয়তো কখনও দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ্। জীবনে বহু তিক্ততা আসবে। সবসময়ই যে মধুর হবে জীবন এমনটা নয়। আমাদের নবী এবং ইসলামের মহীয়সী নারীগনের জীবনীগ্রন্থ পড়ে দেখলে বুঝবা, জীবন অত সহজ সুন্দর নয়। জীবনে কষ্ট আসবেই তাই ভেঙে পড়লে চলবে না। সর্বাস্থায় আল্লাহ্কে স্বরনে করবা। যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে আল্লাহর সাহায্য চাইবা। আমাদের সকলের অভিভাবক হিসাবে মহান আল্লাহ্ যথেষ্ট আলহামদুলিল্লাহ্।
~জ্বী আম্মু আমি সবসময় আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। তুমি শুধু দোয়া করিও। রিনি আমার জন্য কখনোই উত্তম ছিলো না। তাইতো আজ আমার বিরুদ্ধে এমন জঘন্য কাজ করতে পারলো। এজন্যই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে উত্তম বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। আম্মা তোমাকে একটা কথা বলি?
~অবশ্যই মা! বলো র্নিভয়ে বল, তোমার আম্মাকে!
মাহেরা মনে কিছুটা সাহস যুগিয়ে বলতে চাইলো। কেননা আজকে সে তার মাকে ভিন্নরকম কিছু কথা বলবে। যা ইতিপূর্বে কখনও বলেনি। তবুও আজ তাকে বলতেই হবে। রিনরিনে কন্ঠে আম্মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~আম্মা আমাকে প্লিজ খারাপ ভাববে না। আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি। আম্মা আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমি চাইছি, এইসএসসি পরিক্ষা দিয়ে একটা ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে। অবশ্যই সরকারিগুলোই। আম্মা এখন বিয়ে করলে, আমার পড়াশোনা ঠিকমতো হবে না। তাছাড়া পরিক্ষার পর ভর্তি পরিক্ষার জন্য এক রকম যুদ্ধ করতে হয়। সবমিলিয়ে বিয়ের পরে আমার দ্বারা এতটা কষ্ট করা সম্ভব হতো না। সব পরিবার সাপোর্টিভ হয় না। বিয়ের সময় তাদের মুখে মধু ঝরলেও, পরবর্তীতে দেখা যায় তাদের তিক্ততা কতটুকু। এরপরে তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিবা, আমি ইনশাআল্লাহ বিনা বাক্যে মেনে নিব।
~তোমার কথা অবশ্যই মানবো সোনা। বিয়ে তুমি করবে, সংসার তুমি করবে। সেক্ষেত্রে তোমার সিদ্ধান্ত সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। আমি এবং তোমার বাবা আগের মত ভুল কাজ কখনোই করব না ইনশাআল্লাহ। তবে তোমাকেও কথা দিতে হবে, বর্তমানের প্রেম নামক ফালতু, হারাম সম্পর্কে কিছুতেই জড়াতে পারবা না। নিজের নফসকে লাগাম দিতে হবে শক্ত হাতে। তুমি আমাদের দায়িত্ব। তোমাকে সৎ অবস্থায় তোমার স্বামীর নিকট আমাদের পাঠানো বড় দায়িত্ব। তুমি তোমার অর্ধাঙ্গের অর্ধাঙ্গিনি। তার আমানত। তার খেয়ানত কিছুতেই করা যাবে না। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে, তোমার প্রতি।
~আম্মা তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো। আমি আল্লাহকে ভরসা করি। তিনি আমাকে উত্তম পথ দেখাবেন। দোয়া করিও, এই ভয়ংকর আবেগের বয়সে আমি যেন পরিপূর্ণ দ্বীন মেনে চলতে পারি ইনশাআল্লাহ। কোন ফিতনায় জড়াতে না পারি।
[ইনশাআল্লাহ…চলবে]
“হায় রে হৃদয়,
তোমার সঞ্চয়,
দিনান্তে, নিশান্তে শুধু পথ প্রান্তে ফেলে যেতে হয়,
নাই নাই, নাই যে সময় “।
( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
জীবনের এই সীমাবদ্ধ অবসরে দুর্লভ সময়ের যে অংশটুকু পাওয়া যায় তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সার্থক এবং সুখময় হয়ে ওঠে। কাজেই জীবনের সংক্ষিপ্ত সীমায়তনের মধ্যে যে পরম মূল্যবান সময় আমরা হাতে পাই, তা যদি অবহেলা করি, যদি অলসতার জন্য সেই দুর্লভ সময় কাটিয়ে দিই, তাহলে তা হবে সময়ের নির্বোধ অপচয়মাত্র। সেই অপচয়ের পরিণাম আমাদের জীবনে একদিন মর্মান্তিক দুঃখ আর অনুশোচনা নিয়ে আসবে। তখন বুকফাটা আর্তনাদ কিংবা এক সমুদ্র অশ্রুবর্ষণে কিংবা অনুতাপে দগ্ধ হলেও সে আলস্যে অতিবাহিত সময় আর ফিরে পাওয়া যাবে না। প্রবাদে আছে—
“সময় কারো হাতধরা নয়
সময় হয় পানির মত”
মাহেরার জীবন থেকে চলে গিয়েছে দুইটা বছর। বেড়েছে বয়স, অভিজ্ঞতা আরও কত কি! এইসএসসি পরিক্ষা শেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হয়ে ঢাকার একটা ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে চান্স পেয়েছে। এখন সে অনার্স প্রথম বর্ষের মাঝামাঝিতে আছে। কয়েকমাস পরেই পরিক্ষা। শুধু তার সময় পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। সে এলাকার একটা কিন্টারগার্টেনে বাচ্চাদের পড়ানোর দায়িত্বও নিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্। প্রায় চার মাস হয়েছে চাকরিটা করছে। বাড়ির তেমন কেউ রাজী ছিলো না, মেয়েকে চাকরি করতে দিতে। পরবর্তীতে মাহেরা তাদের বুঝিয়ে রাজী করান। তার অন্যতম পছন্দের পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। সেখানে সে, এমন একটা সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করতে চাইছিল না। চাকরির প্রথম থেকে এ পযর্ন্ত মাসিক বেতনের টাকাটা মাহেরা তার বাবার হাতে তুলে দেয়। এক অন্যরকম শান্তি।
মজিদুর রহমান মেয়ের দেওেয়া টাকা হাতে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার তাকেই দিয়ে দেন। নিজের পছন্দমতো কিছু কিনে নিতে বলেন।
মাহেরা প্রায় চারমাস পরিবারের থেকে হাতখরচ বাবদ টাকা নেই না। বরং তার উপার্জিত টাকা থেকে মাঝেমধ্যে বাবা-মা, ভাইয়ের জন্য কিছু কিনে আনে।
মিনহাজ এবার সদ্ব্য কলেজে উঠেছে। মাহেরা যথাসাধ্য ভাইয়ের পড়াশোনায় সাহায্য করে।
মায়ের সাথে প্রায়শই রান্না করছে এটা ওটা। কাজে সাহায্য করছে। নিজের কাপড়গুলো সে নিজেই ধৌত করে। পাশাপাশি মা-বাবা, ভাইয়ের কাপড়ও ধুয়ে দেয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে সংসারে মাসিক খরচের পরে সামান্য কিছু টাকা অবশিষ্ট থাকে। যা জমা রাখতে হয় সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য ব্যাংকে। মধ্যবিত্তের সঞ্চায়েই সম্বল। এখন রুজিনা হকের বয়স বেড়েছে। কোমোরের হাড়ের কর্মক্ষমতাও পূর্বের তুলনায় বেশ দূর্বল। বয়স হলে শরীরে বিভিন্ন রোগের আবির্ভাব ঘটে। তাই কাজকর্ম পূর্বের ন্যায় করা হয়ে ওঠেনা। মাহেরাকে নিষেধ করে। তিনিই সব কাজ পারবেন বলে, মেয়েকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু মাহেরা তো আর মিথ্যা আশ্বাসে আশ্বস্ত হওয়ার মেয়ে নয়।
সে তার মাকে সোজাসুজি বলে দিয়েছে,
~এতদিন আমাদের জন্য সবকিছু তুমিই করেছো। এখন আমি বড় হয়েছি ঘরের কাজে কিছুটা সাহায্য করতেই পারি। এতে আমার কোন অসুবিধা দেখছি না। মিনহাজও বড় হয়েছে সেও এখন বাজাড় করতে পারে। আব্বুর কষ্ট করে অফিস শেষে বা ছুটির দিনে আরাম করা বাদ রেখে বাজাড় করতে ছুটতে হয় না। আমরা ভাইবোন যদি তোমাদের এটুকু সামান্য সাহায্য, উপকার না করতে পারি তাহলে বাবা মায়ের কেমন আদর্শ সন্তান হব। কিভাবে তোমাদের সেবার মাধ্যমে আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করব।
মুখে তৃপ্তির হাসি অথচ চোখে পানি এমতাবস্থায় রুজিনা হক ধরা গলাই বলেন,
~তোরা তো আমার আদর্শ সন্তান সোনারা। আর কি চাই জীবনে। আমার শ্রেষ্ঠ উপহার। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। আমার দুইটা জান্নাত। আল্লাহর কাছে আমার চাওয়া আমার সোনাদের তিনি যেন তার প্রিয় বান্দা হিসাবে কবুল করেন।
আয় আমার বুকে আই।
এমন আনন্দ অশ্রুর মিলনমেলার প্রায়শই দর্শক হয় ঘরের বোবা দেয়ালগুলো। হয়তো আসমান থেকে মহান আল্লাহ্ দেখেও সন্তুষ্ট হন। (আল্লাহ্ ভালো জানেন)।
এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে, আগামী দু একদিনের মধ্যে তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবেন ইনশাআল্লাহ। গোপালগঞ্জে অবস্থিত তাদের গ্রামের বাড়িটি। এক অন্যরকম সৌন্দর্যের অধিকারী জেলা গোপালগঞ্জ।
এরমধ্যে বহুবার মাহেরার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু মাহেরাকে তারা যে সময় দিয়েছে, সে সময় না আসা পযর্ন্ত কোন প্রস্তাবও গ্রহণ করেননি তারা। নাকচ করেছেন বহু সমন্ধ। এ নিয়েও দায়িত্ববান কটুক্তি খ্যাত প্রতিবেশিদের থেকে কম তিক্ত বানী শুনতে হয়নি। কেন মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন না? মেয়ের কোথাও প্রেম নেই তো, কোন শারীরিক সমস্যা আছে নাকি? থাকলে বলতে পারেন আমার জানা শোনা ডাক্তার আছে। এখনি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওেয়া উচিত। দুদিন পরে যখন চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে, তখন কে নিবে?
রুজিনা হক এসব কথা মেয়ের থেকে সবসময় আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তবুও মাহেরার কর্ণগোচর হয়েছিল একবার। মাকে সে বলে দিয়েছিল, তারা যা খুশি করতে পারে, আপত্তি নেই মাহেরার।
রুজিনা হক বরাবরের মত এবারও মেয়েকে সুন্দরমতো বুঝিয়েছিলেন, পাছে লোকে কিছু বলে, এ মনোভাব নিয়ে সামনে চলা যায় না। তারা বলবেই, আমাদের উচিত সব তিক্ততা পেড়িয়ে মধুর সংস্পর্শে যাওয়া। সফলতা এমনি এমনি আসে না। তার জন্য বহু চড়াই উত্রাই পেড়োতে হয়।
মায়ের বলা মোটিভেশনাল বাক্যগুলো মাহেরাকে নতুন উদ্দমে সফলতার জন্য পরিশ্রমী করতে সাহায্য করে সাথে আল্লাহর প্রতি ভরসা, বিশ্বাস তো রয়েছেই।
_______________________________________
মাহেরা’রা গ্রামে প্রায় দশদিন থাকবে। দাদা বাড়ি আর নানা বাড়ি পাশাপাপাশি গ্রামে। বেশ কয়েকবছর গ্রামে যাওয়া হয় না তাদের। তাই বেশ কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে যাবে। মাহেরা, মিনহাজ খুবই একসাইটেড। ফ্লাটের মধ্যেই তাদের আনাগোনা। মিনহাজ ছেলে মানুষ বাহিরে প্রায়শই গেলেও, মাহেরা শুধু কাজেক্ষেত্রে যায়। সবুজ নির্মল পরিবেশ তেমন উপভোগের সুযোগ হয় না। গ্রামের বিশুদ্ধ বাতাস, খোলামেলা পরিবেশ খুব করে টানে প্রকৃতিপ্রেমী মাহেরাকে। তাইতো গ্রামে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে সে।
মাগরীবের নামাজ শেষে পরিবারের সবাই একসাথে বসে গল্প, আড্ডা দিচ্ছিল । সাথে রয়েছে চা, বেগুনি, পেয়াজী স্যালাড। তারা ফজর নামাজ শেষে হালকা নাস্তা করে সকালেই বেড়িয়ে পরবে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ছুটি পেয়েছে তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুতই বেড়িয়ে পরতে চান। তাছাড়া পদ্মাসেতু হওয়াই ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ বেশ তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া যায় আলহামদুলিল্লাহ্।
কথাবার্তার এক পর্যায়ে মজিদুর রহমানের ফোনে হঠাৎ কল আসে। তিনি ড্রয়িং রুম ছেড়ে নিজেদের শোবার রুমে চললেন কথা বলতে। মজিদুর রহমান একটু জোড়েসোড়েই কথা বলেন। যার ফলে ড্রয়িং রুম থেকে তার কথা শোনা যাচ্ছিল।
“আমরা তো কালকে গ্রামের বাড়িতে যাব ইনশাআল্লাহ। এর মধ্যে কেমনে কি? আমরা বাড়ি থেকে ঘুরে আসি তারপর না হয় এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে। হ্যাঁ ঠিক আছে রাখছি তাহলে।”
ড্রয়িং রুম হতে তিনটি প্রাণীর এতটুকু কথায় বোধগম্য হলো। অপরপাশের কথা আর তাদের শোনা হল না।
হয়তো অফিসের থেকে ফোন কল এসেছে এমনটা ভেবেই, তারা পুনরায় গল্পে মসগুল হলো। বাড়িতে গিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবে। নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি, ফুফু বাড়ি সব জায়গাই যাওয়া হবে। এসব নিয়েই বাড়ির দুই রমনীর আলাপচারিতার চলছে।
শুধু সোফার এক কোনায় বসে ফোনে দৃষ্টি নিবন্ধ মিনহাজ। তার মা-বোনের কথা কর্ণপাত হলেও উত্তর দেওেয়ার মত কিছু খুজে পাচ্ছে না। তাই সে মোবাইলেই মসগুল আপাতত।
[ইনশাআল্লাহ…চলবে]
শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানী। এই রানীর সম্মানেই যেন নবান্নের ধুমধাম ও আনন্দ-উৎসব নিয়ে হেমন্তের আগমন। ঘরে ঘরে ফসলের সওগাত বিলিয়ে দেওয়ার জন্যই তার আগমন ও অবস্থান।
কার্তিক অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্তের পরিসর। এ সময়ে ধানক্ষেত সোনালী রুপ ধারণ করে। মনে হয় মাঠ হতে মাঠে কে যেন মুঠো মুঠো সোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। পাঁকা ধানই তো আমাদের দেশের সোনা। সোনালী রঙ পাকা ধানের গন্ধ চারদিকে মৌ মৌ করে। ধানে যখন মাঠকে মাঠ ছেয়ে যায়, তখন সকলের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়। কৃষকের ঘরে আসে নতুন ধান। আলহামদুলিল্লাহ্।
গ্রাম বাংলার অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করতে করতে গন্তব্যে এসে পৌঁছাল মাহেরা। এ এক অন্যরকম আনন্দদায়ক যাত্রা ছিলো।
গ্রামের সৌন্দর্যের বর্নণা বলে শেষ করা যায় না। এ জন্যই হয়তো কবি, সাহিত্যিক’দের কাব্য ও লেখনীর বর্নণা গ্রামের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে বেশি। গ্রামের মানুষের সহজ-সরল জীবনচিত্রের লিখনী লিপিবদ্ধ করেছেন বইয়ে।
কবি “জাহানারা আরজুর” ভাষায়,
” চারদিকে মৌ মৌ নবান্নের ঘ্রাণ,
” কার্তিকের সোনা ধানে ভরে যায় গোলা,
” হেমন্তের দিনগুলো আসে ঝকঝকে
সোনার থালায় __”
মাহেরা’দের গ্রামে যাওয়া সময়টি হেমন্ত ঋতুতে পরেছে। যার জন্য মাঠে সোনালী ধান, কৃষকের মুখের তৃপ্তির হাসি, নবান্য উৎসবের উপভোগ করার সুযোগ পাবে।
হেমন্ত ঋতুর মত অন্যান্য ঋতু এতটা আয়োজন করে আসে না। ঘরে ঘরে আসে নতুন ধান। বাড়ির গৃহীনীরা ব্যস্ত হস্তে ধান হতে চাল উৎপাদনে থাকে। তৈরী হয়, ঘরে ঘরে চিড়া, মুড়ি, পায়েস ইত্যাদি। এক হেমন্ত ছাড়া আর কোন ঋতুতেই বাংলাদেশে এমন আনন্দ দেখা যায় না। অতঃপর শীত কে একা রেখে বিদায় নেই হেমন্ত।
মাহেরার দাদার দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো। তারমধ্যে মাহেরার বাবা চাকরিসূত্রে পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন। মাহেরার বড় চাচা গ্রামেই থাকেন। পাঠ ব্যবসায়ী তিনি। আর ফুফুর দু গ্রাম বাদেই বিয়ে হয়েছে।
মজিদুর রহমান শহরে থাকলেও গ্রামে নিজের একটা ঘর করেছেন। সবসময় ভাইয়ের ঘরে এসে থাকা যায় না। যদিও তারা দু ভাই খুবই মিলেমিশে থাকে। তারপরও নিজেদের প্রাইভেসি, তাদের প্রাইভেসির কথা চিন্তা করেই এক তলা একটা দালান করে রাখেন গ্রামে। যখন বাড়িতে আসেন সেখানেই থাকেন। কিন্তু খাওয়া দাওয়া সব ভাইয়ের ঘরেই হয়।
মজিদুর রহমানের বড় ভাই জলিলুর রহমান তার দুই এক ছেলে যে মিনহাজের বয়সী। আর মেয়ে মাহেরার থেকে বছর দুয়েকের বড়। পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানের বড় ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।
মাহেরা’র সাথে তার সব কাজিনগুলোর বড্ড ভাব। সে সবসময় সকলের সাথে যোগাযোগ রাখে। পড়ালেখার সুবাদে নিতু, রিনির সাথে বন্ধুত্বের বাহিরে আর কারো সাথে তেমন সখ্যতা নেই মাহেরার। যার ফলে গ্রামে আসলে সবার সাথে দেখা হয় এবং সবার সাথে কাটানো দিনগুলো তার জীবন পাতায় অন্যতম স্মৃতিমধূর দিন হয়ে থাকে।
বাস স্টপেজ থেকে নামতেই দেখা মিলে জলিলুর রহমানের। ভাইয়ের আগমনে সে তাদের নিতে এসেছেন। দু ভাইয়ে দেখা মিলতেই আলিঙ্গনের ব্যস্ত হলেন তারপর সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বাড়ির দিকে রওনা করেন জলিলুর রহমানের সাথে ঠিক করে আনা আটোতে।
বাড়িতে গিয়ে, সেখানে আরও একদফা মিলনমেলা চলল। অতঃপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য যে যার রুমে ঢুকলো।
মাহেরার বড় চাচি আমেনা বেগম বেশ ভালো মহিলা। গ্রামের সহজ সরল মানুষ। সল্প শিক্ষিত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে তিনি। কিন্তু সংসার জীবনে কারো সাথে আলাপচারিতায় মুর্খতার পরিচয় দেননি। রুজিনা হকের সাথে গলাই গলাই ভাব। একমাত্র জা বলে কথা। এদিকে বিকালে আসছে মাহেরা একমাত্র চাচাতো বোন নায়েলা শশুর বাড়ি থেকে। আগে থেকেই বলা, যতদিন মাহেরা গ্রামে থাকবে ততদিন তারও থাকতে হবে। মাহেরার বড় বোন নেই! তাই তাকে নিজের বড় বোনের মতই জ্ঞান করে সে।
যেহেতু বাসে করে এতটা পথ এসেছে তারা! তাই, আমেনা বেগম ভেবেচিন্তে হালকা খাবারের ব্যবস্থা করেন। ভারী খাবার খেলে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিকালের দিকে জলিল সাহেব গিয়ে নায়েলা কে শশুর বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। অন্তসত্ত্বা নায়েলা একা কোথাও চলাফেরা করতে পারে না। সাথে কেউ থাকলে ভালো হয়। নায়েলার স্বামী স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। কিন্তু প্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে অবস্থান করাই স্ত্রীকে নিজে শশুর বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারেননি। সে জন্যই জলিলুর রহমানের যাওয়া।
নায়েলা’কে পেয়ে মাহেরা সবার চেয়ে বেশি খুশি মনে হচ্ছে। কাছ থেকে সড়ছেই না। আরও নতুন অথিতির আগমনের খবর খুশি যেন, উপচে পড়ছে তার।
পরদিন সকালে মাহেরার ছোট ফুফু রাহেলা খাতুনের আগমন। মজিদুর রহমান আগেই অবগত করেছেন বোনকে তারা গ্রামে আসছেন। তাই সেও যেন উপস্থিত হয়। রাহেলা খাতুনের বড় ছেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ২য় বর্ষে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন। কাজিদের মধ্যে তিনিই সবার বড় এবং তিনিই একমাত্র ডাক্তারি বিষয়ে পড়ালেখা করছেন। এজন্য সকলের কাছেও বেশি প্রশংসনীয়। আর ছোট ছেলে সে মাহেরার বয়সি। সেও মায়ের সাথে মামা বাড়িতে এসেছে।
বাড়ির ছেলে বহুদিন পর স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে এসেছেন। সাথে বাড়ির দুই প্রজন্মের দুই মেয়ে শশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে সবমিলিয়ে বাড়িতে মানুষে গমগম করছে। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে যেন বাড়ি জুড়ে।
শহর থেকে গ্রামে কেউ আসলেই, গ্রামের মানুষের স্বভাব দেখতে আসা। সেই জন্য আশেপাশের প্রতিবেশিরাও দেখতে আসছে শহর থেকে আগত মজিদুর রহমান ও তার ছোট্ট সুন্দর পরিবারকে।
“আপু আমার অনেক দিনের ইচ্ছা শাড়ি পরে গ্রামের সুন্দর পরিবেশে ছবি তোলার। আমি ঢাকাতে বড় বেলায় শাড়ি পড়িনি বললেই চলে। আজ তুমি আর আমি শাড়ি পড়ে ছবি তুলবো ঠিক আছে”? উচ্ছসিত গলাই নায়েলাকে উদ্দেশ্যে করে কথাগুলো বলল।
নায়েলাও বোনের কথায় মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
নায়েলার সম্মতি আছে দেখে, মাহেরা দ্বিগুণ উচ্ছসিত কন্ঠ স্বরে বলল, তোমার এ সময়ের ছবি, পরবর্তীতে ছেলে বাবু আসুক আর মেয়ে বাবু আসুক যেই আসবে দেখাতে পারবো তাই না বল? স্মৃতি হয়ে থাকবে।
্যাঁ সে তো থাকবেই। সাথে এটাও বলে দেখাবো যে এই দেখ তোমাদের খালামনীর বিয়ের আগের ছবি। নায়ের মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটিয়ে মাহেরার কথার প্রতিত্তোরে বাক্যদ্বয় বলল।
মাহেরা লজ্জিত কন্ঠে বলল, ধুর আপু কি যে বলনা। আমার বিয়ে কি হয়ে যাচ্ছে নাকি। আমি বহুদিন সিঙ্গেল থাকতে চাই। সিঙ্গেল জীবন অনেক শান্তির। প্যারা নাই চিল।
~অবশ্য ভুল বলিসনি সিঙ্গেল জীবন আসলেই সুন্দর। তবে জীবনসঙ্গী উপযুক্ত ও সুন্দর মনের হলে বিবাহিত জীবন মা শা আল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ্ আরও সুন্দর হয়।
~হ্যাঁ সেটা ঠিক। কিন্তু ক’জনে পাই এমন মনের মত মানুষ বলো? সবাই তো আর নাহিদ ভাইয়া না। যে বউ ছাড়া কিছুই বোঝে না।
~আল্লাহ চাইলে নাহিদের থেকেও ভালো মানুষ পাবি বনু। এটা ঠিক তিনিও খুব ভালো। খুব খেয়াল রাখে। আজ আব্বা গিয়ে নিয়ে এসেছেন, সে বারবার বলছেন, নায়েলা আমার উচিত হয়নি ঢাকাতে আসা। তোমার পাশে সবসময় আমার থাকতে হবে। আর আমি কিনা এখানে এসে বসে আছি। তোমার থেকে একটুও দুরে থাকতে মন চাই না। আব্বারও কষ্ট করে আবার গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসা লাগলো। অথচ সে যে, ঢাকাতে স্কুলের কাজে গিয়েছে তার খেয়ালই নেই। সে আছে এখানের চিন্তাই।
~খুব ভালো লাগে যখন শুনি তুমি ভালো আছো নাহিদ ভাইয়ার সাথে। এভাবেই ভালো থেকো আপু।
[ইনশাআল্লাহ..চলবে]
মাহেরা! এই নিস্তেজ, নিস্তব্ধ বিকালে একা ছাদে দাড়িয়ে কেন বোনু? পাঁচ মাসের ভারী পেটটা নিয়ে পা টিপে টিপে হেটে মাহেরার পাশে এসে দাড়াতে দাড়াতে কথাগুলো বলল নায়েলা।
গ্রামের সুন্দর, নির্মল প্রকৃতি দেখছিল মাহেরা। হঠাৎই নায়েলার কথায় হেমন্তের সুন্দর সাজ সাজ প্রকৃতি দেখাই ব্যাঘাত ঘটল। বোনের দিকে ফিরে বিরষ কন্ঠস্বরে বলল,
~দেখ না, কি সুন্দর প্রকৃতি। এসবই দেখছিলাম। মন খারাপের সময় একান্তে প্রকৃতিবিলাস করতে মন চাই। সুন্দর অন্তরীক্ষে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে মন চাই। এসবে কত যে আনন্দ খুজে পাই তোমায় বোঝাতে পারব না আপু।
~একেক জনের আনন্দ, ভালো লাগা একেক রকম। এইযে তোর যেমন মন খারাপে প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে, তেমনি অনেকের মন খারাপের সময় খেতে ভালো লাগে, শপিং করতে ভালো লাগে, কারোও আবার ঘুরতে যেতে ভালো লাগে। ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ সবার কাছেই অন্যরকম। তা আমার কিউট বোনুটার হঠাৎ মন খারাপ কেন?
~এমনি আপু। তেমন কিছু না। আমার তো মাঝেমাঝেই মুড সুয়িংয়ের রোগ আছে। আজও হয়তো সেজন্যই মন খারাপ। নিতু ফোন দিয়েছিল, শুনলাম রিনির নাকি মেয়ে হয়েছে! ভালোই আছে তাহলে। কিন্তু, আমার কি দোষ ছিলো বলতো আপু? বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো আমার স্কুল জীবনের। নিতু আর ওর মধ্যেই আমার বন্ধুত্বের সীমাবদ্ধতা ছিলো। বিনা নোটিশে ভেঙে গেল সেই বন্ধুত্ব। ওর কোন ক্ষতি করেছিলাম বলে তো মনে হয় না। আমাকে এভাবে অপমান কেন করল? স্বাভাবিকভাবে বললেই পারতো। সে আমাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বি ভেবেছে। অথচ আমি তাকে বোনের মত বন্ধু ভাবতাম। কথাগুলো বলতে বলতে মাহেরার চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরল চিবুকে।
এতক্ষণ মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় মাহেরার বলা কথাগুলো শুনছিল নায়েলা। মন ভারী হল তারও। আহা ছোট্ট বোনটা তার কোন দোষ না করেও কতটা কষ্ট পাচ্ছে। ভালো মানুষেরা এভাবেই বুঝি কষ্ট পাই। বোনকে কোমল, শান্ত কন্ঠস্বরে সান্ত্বনা দিতে বলল,
~আমার বোনটাকে আমি স্ট্রং বলেই জানতাম। সে কেন ফালতু একটা বিষয় নিয়ে চোখের মূল্যবান অশ্রু নির্গত করছে? চোখ থেকে এক ফোটা পানিও যেন না পড়ে। জীবনে চলতে গেলে বহু মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে আমাদের জন্য মঙ্গল কামনা করে এমন মানুষের সংখ্যা থাকে খুবই অল্প। কিন্তু আমাদের ক্ষতি করার মানুষের অভাব থাকে না। আর কিছু মানুষ আছে দুমুখ সাপ! এরা আমাদের সাথে এমনভাবে মিশে বোঝাই যায় না কিভাবে আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা এদের দ্বারা হয়। তোর ওই বান্ধবীকে আমার তেমনটাই মনে হয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় কর। আল্লাহ্ না করুক এই মেয়ের দ্বারা তোর এর থেকে বড় কোন ক্ষতিও হয়ে যেতে পারত। তাই ওসব কথা না ভেবে, সামনের দিনগুলোর দিকে নজর দে। আল্লাহ্ তোকে উত্তম জীবনসঙ্গী দান করুন। আল্লাহর জীবন বিধান মেনে চল দেখবি জীবন সুন্দর।
~অবশ্যই জীবন সুন্দর। জীবনের সকল বক্রতাকে জয় করে তবেই সরল সুন্দর জীবনের দেখা পাওয়া যায়। আপু দোয়া করিও। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে ইসলামকে সামনে রেখে চলতে পারি।
~হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে দোয়া রইল। এগিয়ে যা সামনে তোর জন্য উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে।
~কথা বলতে বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম, তুমি এই শরীরে ছাদে এসেছ কেন? কাউকে দিয়ে ডাকালেই পারতে? এখন চল নিচে যায়।
~কিচ্ছু কষ্ট হয়নি আমার । এসময় একটু আধটু হাটা প্রয়োজন। তাছাড়া আমি সবসময়ই শুয়ে বসেই কাটাই। বাবু পে’টে আসার পর থেকে কোন কাজে হাত লাগাতেই পারি না। সবাই খুব যত্ন নেই আমার।
~আলহামদুলিল্লাহ শুনে খুব ভালো লাগলো। চলো যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে মাগরীবের আজান দিয়ে দিবে।
~হু চল!
অতঃপর আলাপনের সমাপ্তি ঘটিয়ে দুবোন নিচে নেমে এলো। মাহেরা’দের গ্রামে আসার চারদিন চলছে আজ। কাল নায়েলার শশুর বাড়ি থেকে সবাই আসবে। তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। নায়েলার বিয়ের সময় সবার সাথে দেখা হয়েছিল ওদের, তারপর সেভাবে আর গ্রামে আসা হয়নি। তাই এবারে সময় সুযোগ বুঝে নায়েলার শশুর বাড়ির সবাইকে দাওয়াত করেছেন।
কাল মেহমান আসবে। তাই সবার মধ্যেই ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। বাড়ির বড় মেয়ের শশুর বাড়ির লোকজন বলে কথা। যত্নের ত্রুটি রাখা যাবে না।
জলিলুর রহমান গ্রামের একজন সফল ব্যবসায়ী। সচ্ছল জীবন-যাপন তার। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেয়ে পরে সুখেই দিনযাপন করার সুযোগ আল্লাহ্ দিয়েছেন তাদের আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু অর্থ বিত্তের দিক থেকে নায়েলার শশুর বাড়ির ধারেকাছে তারা নেই। চেয়ারম্যান বাড়ি বলে কথা। কিন্তু অর্থ বিত্তের দাম্ভিক্য আত্মীয়তার জীবনে দেখতে পাননি তিনি। বড়ই সন্তুষ্ট মেয়ের শশুর বাড়ির লোকেদের প্রতি।
_______________________________________
নতুন দিনের শুরুটা রাতের অন্ধকার কেটে গিয়ে ভোরের আলো ফোটার মধ্যে দিয়ে। আজ ফজরের নামাজ আদায় করে একটা প্রানিও বসে নেই। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। মাহেরা প্রায়ই ফজরের নামাজ শেষে ঘুমাই কিছুক্ষণ। কিন্তু সেও আজ মা-চাচিদের সাথে কাজে হাত লাগিয়েছে। মেহমান আসবে বাড়িতে কোন ত্রুটি রাখা যাবে না তাদের আপায়নের।
মজিদুর রহমান ও জলিলুর রহমান গিয়েছেন বাজারে। সকালের টাটকা বাজার করতে। এদিকে নায়েলার ভাই নেমেছে পুকুরে মাছ ধরতে। গ্রামের ছেলে হওয়াই এসব ক্ষেত্রে বেশ পটু নিয়াজ। নিয়াজের সাথে মিনহাজও ছুটেছে সে দিকে দু ভাই আজ পুকুর থেকে মাছ ধরবে জাল ফেলে। নিজেদের বাড়ির সাথেই পুকুর কাটা। পিছনের দিকটাই। জনমানুষ নেই বললেই চলে। তাই মাহেরাও সে দিকে ছুটলো। মাছ ধরা দেখতে তার বেশ লাগে। আর বড় মাছ জালে বাধলে খুশিতে মুখ থেকে আটোমেটিক আওয়াজ ভেসে আসে। কিন্তু এসব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার সময় সুযোগ কোনটাই তাদের হয় না।
পুকুরে নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্নের জন্য বড় বড় মাছ হয় আলহামদুলিল্লাহ্। মাছ বড় হওয়ার পরে নিজেদের জন্য কিছু রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেন জলিলুর রহমান। এসবে ভাগ নেন না মজিদুর রহমান। তবে দায়িত্ব এড়িয়ে যায় না জলিলুর রহমান। প্রায়শই মাছ বিক্রি টাকা এবং সাথে অনেক মাছ পাঠিয়ে দেয় ভাইয়ের বাসায়। সময় পেলে নিজেই যায় না হলে স্ত্রী, পুত্র দিয়ে পাঠিয়ে দেন। তার ধারণা তার ভাই মধ্যম আয়ের মানুষ। সবসময় ভালো মন্দ জুটে না পাতে। পুকুরের ফরমালিন মুক্ত মাছ এবং মাছ বিক্রি টাকা দিয়ে কয়েকদিন বেশ সুন্দরভাবে চলে যাবে।
ভাইয়ে ভাইয়ে বেশ মিল তাদের। এমনটাই তো হওয়া উচিত।
পুকুরে একটার একটা জাল ফেলে বড় বড় মাছ ধরছে নিয়াজ। মিনহাজ সেগুলো তুলে বালতিতে রাখছে। পুকুরের পাড়ে দাড়িয়ে অতি আনন্দ ও আগ্রহের সাথে দেখছে মাহেরা। আজ পুকুরের এই মাছগুলো দিয়েই মেহমানদের আপ্যায়ন করা হবে। বাজার থেকে শুধু ইলিশ আর চিংড়ি আনা হবে। কারন সেগুলো তো আর পুকুরে চাষ হয় না।
বাড়ির মহিলারা ব্যস্ত হয়ে পরেছে রান্নায়। সাথে দুজন হেল্পিং হ্যান্ড রেখে দিয়েছেন জলিলুর রহমান। সবসময় আমেনা বেগমই রান্না-বান্নার কাজ করে এসেছেন। তাই রুজিনা হক দায়িত্ব নিয়ে সে আজ মেয়ের শশুর বাড়ির মেহমানদের জন্য রান্না করবেন। চাচি হিসাবেও তারও কিছু দায়িত্ব আছে। শহর থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসায় আমেনা বেগম তাকে দিয়ে তেমন কোন কাজ করাতেন না। নিজেই সব করতেন। কিন্তু আজ নিজেই সব করবেন রুজিনা হক। আমেনা বেগম তাতেও আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু আজ নাছোড়বান্দা রুজিনা সেটা কানেই নেননি। আমেনা বেগমের মুখে লেগে ছিল তৃপ্তির হাসি। যা দেখে রুজিনা বেগমও খুশি হলেন খুব। আল্লাহ্ কাছে শুকরিয়া আদায় করতেও ভুললেন না। এমন সহজ সরল মেয়েটাকে তার বোন রুপি জা করে দেওয়ার জন্য।
একটা সংসারে শাশুড়ির পাশাপাশি জায়েরও কম গুরুত্ব থাকে না। সেখানে কিছু জা নামক অসাধু মানুষের জন্য সংসারে শান্তি আসে না। থাকে একে অপরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ। আর জা নামক সম্পর্কের মানুষটা যদি ভালো হয়, তবে সদ্ব্য বিয়ে হয়ে আসা বধূটিরও নতুন পরিবেশ সহজ হয়ে যায়।
আমেনা বেগমের অনেকগুলো ভাই থাকলেও বোন ছিল না। তাই হয়তো জাকে নিজের বোনের মতই জ্ঞান করে।
এদিকে আমেনা বেগম সল্প শিক্ষিত নিম্নবিত্ত এক পরিবারের মেয়ে হলেও শিক্ষিত ও সচ্ছল পরিবারের রুজিনা হক বড় জা বড় বোন ছাড়া নিচু নজরে দেখেননি।
[ইনশাআল্লাহ…চলবে]
পাচঁ বছর পরে________________
ছেলের পেছনে অতি বিরক্তের সহিত খাবার নিয়ে ছুটছে মাহেরা। তিন বছরের ছেলে তার, কিন্তু মুখে খাবার দিতেই চাই না। জোর করে খাওয়াতে হয়। খাবার খাওয়াতে গেলে বাড়িময় ঘুরতে হয় ছেলের পেছনে। মুখে খাবার নিয়ে বি*চ্ছু ছেলে চিবুতে চাই না। কত ঢং সং করে খাওয়াতে হয়। কিন্তু বাবার হাতে ঠিকই খেয়ে নেই, বাধ্য ছেলের মত। বাবা যে আনাড়ি হাতে তাকে খাবার খাওয়ায়, বাচ্চা ছেলেকেও লোকটার খাওয়ানোর সাধ্য নেই। তাও ছেলের বাইনা বাবার হাতে খাওয়ার। কিন্তু তাকে খাওয়ানোর মত সময় বাবার ছুটির দিন ছাড়া হয় না। কে বোঝাই একে।
~আর একবার নাও সোনা! তাহলেই তো প্লেটের খাবার শেষ হয়ে যায়। আর খেতে বলব না তোমায়। এদিকে এসো আমাকে আর দৌড় করিও না। রেগে গেলে পিঠ আস্ত রাখব না। ফাজিল ছেলে।
~কে মারবে আমার ছেলেকে?কার এত সাহস দেখি? সোজা বাপের বাড়ি রেখে আসবো।
স্বামীর কথায় রাগান্বিত মুখশ্রি নিয়ে পেছন ফিরে মাহেরা। এই এক লোক ওনার জন্য ছেলের গায়ে ফুলের টোকাও দেওেয়া যাবে না।
~রেখে আসেন আমাকে সেটাই উত্তম হয়। আপনাদের বাপ-ছেলের যন্ত্রনায় আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
~আমরা শুধু যন্ত্রণা দেয়? ভালোবাসা দেয় না? তোমাকে ভালো না বাসলে ছেলের মা হতে পারতে?
ইমতিহানের এমন লাগামহীন কথায় মাহেরার কাশি উঠে গেছে। হালকা কেশে দ্বিগুন তেজ ভরা কন্ঠস্বরে উত্তর দিল,
~আসতাগফিরুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ার সাহেবরা আপনার কি বোধজ্ঞান সব লোপ পেয়েছে? কিসব বলছেন? ছেলে রুপে, পাশের রুমে মা-বাবা তারা শুনলে কি হবে, সে খেয়াল আছে আপনার?
ইমতিহানের নির্বিকার উত্তর,
~শুনলে শুনবে তাতে কি? আমি আমার কিউট বউটাকে বলেছি পররনারীকে তো আর বলিনি?
~হয়েছে! আর বলতে হবে না। এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন তারপর নামাজে যেতে হবে।
~যাচ্ছি। শুধু অর্ডার মহারানির।
~আমাদের যে আজ ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে সে খেয়াল আছে না ভুলে গিয়েছেন? ইব্রাহিম তখন থেকে বলছে, পাপা কখন আসবে আর সে কখন ঘুরতে যাবে?
~হ্যাঁ জানা আছে ইব্রাহিমের তাড়া বেশি নাকি তার মায়ের! এটুকু বলে ফিক করে হেসে দিল ইমতিহান তারপর দ্রুত পায়ে ড্রয়িং রুম ছেড়ে নিজের রুমের দিকে গেল।
ইমতিহানের এমন খোচা দেওেয়া কথায় মাহেরা প্রতিত্তোরে কিছু বলার পূর্বে তার মুখের মিষ্টি হাসি দেখে চুপ করে গেল। বড্ড ভালোলাগে মানুষটার হাসি।
যে মানুষগুলো কম হাসে, কম কথা বলে এদের হঠাৎ হঠাৎ হাসি খুব সুন্দর লাগে। ইমতিহানও এমন একজন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি হাসেন না। আর যখন হাসে খুব সুন্দর লাগে।
_____________________________
অতিত____
নায়েলার শশুর বাড়ি থেকে মেহমান এসেছিলেন। তারমধ্যে ছিলো নায়েলার ছোট চাচা শশুর। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। হলদে ফর্সা ও লম্বা গড়নের মাহেরারকে দেখে তার একমাত্র পুত্রের বধূ করতে বাসনা জেগেছিল। এ বিষয়ে বড় ভাই চেয়ারম্যান লুৎফর চৌধুরীকে বলেন। তিনিও সম্মতি জানিয়েছেন। কারন নিজের ছেলের জন্য এ বাড়ি থেকে যে মেয়েটাকে নিয়ে গিয়েছিল, অত্যন্ত ভালো মনের একটা মেয়ে। তাছাড়া মজিদুর রহমান ও তার পরিবারকে মন্দ লাগেনি তার। তাই ছোট ভাই আমিন চৌধুরীর কথায় সম্মতি দেন। বড় ভাইয়ের সম্মতি পেয়ে তিনি সবাইকে অবগত করেন। ভাই তার চেয়ারম্যান মানুষ গোটা এলাকা চড়িয়ে খাও’য়া মানুষ নিশ্চয়ই মানুষ চিনতে ভুল করবেন না।
মজিদুর রহমান বড়ই অবাক হয়েছিলেন এমন প্রস্তাবে। কিন্তু রুজিনা হক অবাক হলেও অবাকাতে কাটিয়ে বড্ড খুশি হন তিনি। তার মেয়ে যে বড়ই নম্র,ভদ্র,শুশ্রী এমন ঘর থেকে প্রস্তাব আসতেই পারে।
ছেলে ইঞ্জিনিয়ার টাকায় বাড়ি-গাড়ি সব আছে। দেখতে সুদর্শন। সেও যথেষ্ট ভদ্র। তাছাড়া গ্রামেও আসেন মাঝেমধ্যে বেড়াতে। দুবোন এক বাড়িতে বিয়ে হলে একসাথে থাকতে পারবে। সুখে দুঃখে একে অন্যকে পাশে পাবে। তাই আর আপত্তি জানাইনি কেউ। সকলের সম্মতিতে মাহেরা-ইমতিহানের বিয়েটা হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ্।
তারপর থেকেই মাহেরা ঢাকাতে শশুর বাড়িতে থাকে। মাঝেমধ্যে বাপের বাড়িতে যাওয়া হয়। গ্রামেও সবার সাথে যাওয়া হয় বছরে দু একবার।
নায়েলা স্বামী সন্তান নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্ সুখেই আছে। নিতুর বিয়ে হয়ে গেছে। এক ইতিলিয়ান প্রবাসির সাথে বর্তমানে ওখানেই আছে স্বামী, সন্তান নিয়ে।
মাহেরার সাথে মোটামুটি সবারই যোগাযোগ হয়। হটাৎ একদিন রিনি এসেছিল মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে । মাহেরার কাছে ক্ষমা চাইতে। মাহেরা মুখে ঠিকই বলে দিয়েছে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি ক্ষমা করতে পেরেছে? তবে সে যথাসম্ভব চেষ্টা করবে দুই অকৃজ্ঞকে ক্ষমা করতে। বাকিটা আল্লাহ্ ভালো জানেন।
________________________________
হঠাত ফোনের রিংটনের আওয়াজে মাহেরার ভাবনায় ছেদ পরে। ব্যস্ত হস্তে ফোন হাতে নেই। পরিচিত, কাঙ্ক্ষিত নাম্বার থেকে ফোন আসায় মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার।
ফোনটি করেছিল মাহেরার ননদ। ইমতিহান, মিষ্টি দু ভাইবোন। মাহেরার বছর দুয়েকের বড় হবে মিষ্টি কিন্তু দুজনের ভাব বান্ধবীর মত। দুবোন বললেও ভুল হবে না। তারা ননদ-ভাবী কম বন্ধু+বোন বেশি। সবথেকে পছন্দের মানুষের তালিকায় মিষ্টি অন্যতম। ইসরাক নামক সুদর্শন ডাক্তারের সাথে মাহেরার বিয়ের পরের বছরেই মিষ্টি নামক মিষ্টি কন্যাটির বিয়ে হয়ে যায়।
মিষ্টির সাথে কথা বলা সময়টি মুখ থেকে হাসি সরেই না মাহেরার। মেয়েটার নাম যেমন মিষ্টি তেমন তার প্রতিটা কাজও খুবই মিষ্টি।
মিষ্টি ফোন করে জানালো সে দ্বিতীয়বারের মত কনসিভ করেছে আলহামদুলিল্লাহ্। মিষ্টি-ইসরাক দম্পতির পূর্বেও এক কন্যা সন্তানের জনক, জননী হওয়ার সুযোগ আল্লাহ্ তাদের দিয়েছেন। আবারও আল্লাহর অশেষ রহমতে সন্তানের পিতা-মাতা হতে চলেছেন তারা। মাহেরার এহেন খুশির সংবাদ শুনে খুশি যেন সরছেই না। বারবার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছে সাথে অনাগত সন্তান ও মিষ্টির নিরাপত্তার জন্য দোয়াও করতে ভুলছে না।
কথা বলা শেষ হতেই সুন্দর, সুখের, খুশির সংবাদটি দিতে ছুটলো রুমে। আগে তার ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে জানাতে হবে। তারপর বাকি সবাইকে। লজ্জাবতী মিষ্টি মাহেরাকেই দায়িত্ব দিয়েছে খবরটা বাকি সবাইকে জানাতে। তার নাকি ভিষন লজ্জা লাগছে।
মাহেরা বুঝতে পারে না মিষ্টির এত লজ্জা আসে কিভাবে? এত খুশির সংবাদ তার নাকি সবাইকে দিতে লজ্জা লাগছে। কোই সে তো এত লজ্জা পাই না। হঠাৎই মনে পরলো তার ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ভাষ্যমতে সে অতিশয় লজ্জশীল রমনী। ভেবেই একদফা লাল, নীল হচ্ছে লজ্জায়।
~কি গো! ভর দুপুরে তোমার হঠাৎ এত লজ্জা আসল কোথা থেকে। এ কোনায় দাড়িয়ে লজ্জায় লাল, নীল হওয়ার কারন খুজে পাচ্ছি না। জানো তো মাহেরা! আমি ভেবে পাই না এক ছেলের মা হওয়ার পরেও তোমার এত লজ্জা আসে কোথা থেকে? ঝটপট বলে ফেল কি হয়েছে?
হঠাৎই ইমতিহানের অনর্গল কথাগুলো বলাই লজ্জায় ও ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে মাহেরার। তাই সে লজ্জা ঢাকতে ও বলে উঠল,
~আপনার ভাষ্যমতে আমি লজ্জাশীল তাই আমার লজ্জা দশ বাচ্চার জন্মের পরেও ভাঙবে না। আমি এমনই থাকব। আপনি হয়তো জানেন না,
“লজ্জাশীলতা নারীর আসল গহনা ” {হযরত ফাতেমা (রা:)}
~জানি তো! আর আমার তো ভালোই লাগে লজ্জাবতী বধূটির লজ্জা ভাঙাতে। তা লজ্জা পাওয়ার কারন কি? দিন দুপুরে বাসর করার সখ জেগেছে নাকি? ওকে নো প্রবলেম। আমি রেডি তোমার জন্য লজ্জাবতী! শেষের বাক্যদয় দুষ্টু হেসে মাহেরাকে বলল।
মাহেরা এহেন লাগামহীন কথায় হা হুতাশ করে বলল, ইব্রামিহের পাপা আপনার এ কি অবনতি হচ্ছে? দিনে দুপুরে কিসব বলছেন? লজ্জায় আমি মরেই যাচ্ছি। রাখেন আপনার সব আজায়রা কথা। ছিঃ!
~আরে যাচ্ছো কোথায়? তুমি হয়তো জানো না আমার রাজপুত্রের রাজমাতা তার ইঞ্জিনিয়ার সাহেব শুধু তার সামনেই লাগামহীন পুরুষ। বাকি সবাই তাকে গম্ভীর, কঠোর, সল্পভাষী ইমতিহান বলেই জানে।
~আমি জানি তো। আমাকে এক্সপ্লেইন করে বলা লাগবে না। আমি কি জানবো না আমার সুদর্শন মানবটার ভেতর বাহির। খবরদার এ লাগামহীন, লজ্জাহীন ইমতিহান যেন শুধু মাহেরার কাছেই থাকে। আসল কথা শুনেন? মিষ্টি আবার কনসিভ করেছে আপনি মামা হতে চলেছেন।
~ আলহামদুলিল্লাহ্ আলহামদুলিল্লাহ্ কি বল? এত খুবই খুশির সংবাদ। আগে বলবা না? আম্মু-আব্বুকে জানিয়েছ?
~না! আপনাকে সর্বপ্রথম জানালাম। আপনি চলেন সবাইকে বলবেন!
~ আচ্ছা চল।
~ শুনেন? আজ ঘুরতে যাওয়া ক্যানছেল করেন। আমরা মিষ্টির শশুর বাড়িতে যাব। ওর সাথে এ মুহূর্তে দেখা না করলে একটুও ভালো লাগবে না। যাবেন তো?
~ ইনশাআল্লাহ অবশ্যই যাব। তুমি এত বুঝদার কবে হলে মাহেরা? আমরা পুরো পরিবার খুব ভাগ্য করে তোমার মত একজনকে পেয়েছি।
~আমার এত এত অপূর্ণতাকে জেনেও এতটা আগলে রাখেন সবাই আমাকে এতটা ভালোবাসেন সেই পরিবারের জন্য এটুকু কিছুই না ইঞ্জিনিয়ার সাহেব।
~ নিজের শক্তপোক্ত বক্ষে প্রিয়তমা স্ত্রীকে কোমলতার সহিত আলিঙ্গনে আগলে নিল ইমতিহান। এই তো তার হৃদপিণ্ড, ভালোবাসা, চক্ষুশীতলকারীনী। মনে মনে আল্লাহকে লাখো শুকরিয়া জানাচ্ছে সে।
অনদিকে মাহেরাও আবেগে চোখের পানি ছেড়ে দিল। সেও মহান আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানাচ্ছে উত্তম মানুষটার সাথে সে যেন দুনিয়া ও আখিরাতে এক সাথে থাকতে পারে।
হঠাৎই ইব্রাহিমের আগমন ঘটায় ব্যাঘাত ঘটলো তাদের সুন্দর পবিত্র মুহুর্তের।
কি করছো পাপা? মামনিকে ওভাবে দাড়িয়ে কোলে নিয়েছ কেন?
~ ওটাকে দাড়িয়ে কোলে নেওয়া বলে না পাপা! তুমি যখন বড় হবে, তখন বুঝবে কি বলে? ঠিক আছে। এবার চল আমরা দাদুর রুমে যায়।
~ ওহ্ আচ্ছা চল তাহলে।
মাহেরা বাবা-ছেলের অদ্ভুত কথাপকথন শুনে মুচকি হাসে।
___সমাপ্ত___
আসসালামু ওয়ালাইকুম..
আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত গল্পটা এভাবে শেষ করে দেওয়ার জন্য। আজই আমার ছোট্ট সময়ের লেখালেখি জীবনের শেষ দিন। অপ্রত্যাশিতভাবে আমার অনুমতির অনুমোদন শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। পরিস্থিতির জন্য বাধ্য হয়ে এভাবে গল্প শেষ করতে হলো,সাথে বিদায় নিতে হল আমার সখের লেখালেখি থেকে। আল্লাহ্ চাইলে কোনদিন হয়তো আসব ফিরে। আমাকে এবং লেখনী দুটোই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দোয়া ও কৃতজ্ঞতা রইল। ভালো থাকবেন। দোয়া করবেন আমার জন্য। জাযাকাল্লাহ্। আল্লাহ্ হাফেজ….
২য় ধারাবাহিক গল্প আমার এইটা। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। লেখাতে ভুল ত্রুটি থাকতে পারে সে বিষয়ে অবশ্যই অবগত করবেন। আসসালামু ওয়ালাইকুম।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..