1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন

# দ্যা_সাইলেন্ট_কিলার — প্রথম পর্ব — লেখনীতে – মেহরুন্নেছা সুরভী

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১
  • ১৮৯ বার
“দেখ ভাই, আমি কিলার নই, আর হতেও চাই না। কিন্তু তোকে যদি এখুনি সামনে পেতাম।হাতের ছুড়িটা সোজা ঢুকিয়ে দিতাম, বুকের বা-পাশে। তাহলে বুঝতি, বুকের যন্ত্রণা কাকে বলে।”
সংগীত কিছু বলার মুহূর্তেই ফোনের লাইনটা কেঁটে গেল।সুরের বলা কথাগুলো তার মাথায় বারংবার আঘাত করতে লাগলো। সংগীত বুঝতে পারে না,এত শান্ত মেয়ে সুর, এভাবে কথা বলতে পারল? এত অবিশ্বাস আমায়!
গত তিনদিন যাবত সুর বেশ অসুস্থ। এরমাঝে গত দুপুর থেকে একটু বেশি অসুস্থ। বুকের মাঝে অস্থিরতায় শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছে না সে, আর না পারছে নিশ্বাস ছাড়তে!
মাথা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বিছানার এপাশ-ওপাশ করছে অস্থিরতায়। এ মুহূর্তে সুরের ঘুম প্রয়োজন! কিন্তু, ঘুমের থেকেও সংগীত তার বেশি প্রয়োজন ছিলো। প্রয়োজন দিয়েও বা কি হবে, এরপরও সংগীতকে প্রিয়জন ভাবা সুরের পক্ষে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটার মতো!
সুর বিছানায় এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে আছে। মনের মাঝে এক যন্ত্রণাময় অস্থিরতা। প্রতিটি মানুষের হয়ত এমন একটা সময় আসে, যে সময়টা বিয়োগের যন্ত্রণা অনুভব না করে পালিয়ে বাঁচার উপায় থাকে না। চোখের জল একটা সময় শুকিয়ে আসে।সুর গভীর ঘুমে বিভোর হয়, অস্থিরতার যন্ত্রণা এখন তার বুকের মাঝে অনুভব করে না।
মামুনি, শীত সকালে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে।
বাবার ডাকে সুর চমকে ওঠে। ছাদের এক কোণে এসে সে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভয় নিয়ে পিছিয়ে আসে ছাদের কোণ থেকে।
মামুনি, কি ভাবছো?
সুর ক্ষীণ সুরে বলে,
আব্বু, ঐ আমি গতকালের খুনের নিউজটা নিয়ে ভাবছিলাম।
হুমায়ুন সাহেব গম্ভীর হেসে বলেন,
এসব ভেবো না। শহরে এসব প্রায়শ হয়। খুব শীঘ্রই জেলে পুরবে পুলিশ। হয়ত কিছুদিন বাদে জামিন পেয়ে যাবে।
কিন্তু আব্বু, কত নৃশংস ভাবে মেরেছে। এক নম্বরের সাইকো খুনীটা।
মামুনি, তুমি এসব নিয়ে এত ভাবছ কেন? যাও, ভিতরে যাও। ফ্রেশ হয়ে নেও, কথার বিয়েতে যেতে হবে তোমায়।
সুর একটু দমে যায়, আসলেই তো, সে এসব কেন ভাবছে। শহরে কত ঘটনা ঘটে যায়। সব নিয়ে ভাবলে নিজেরা বাঁচবে কীভাবে?
সুর ছাদ থেকে নেমে ঘরে চলে আসে। কিছুক্ষণ পায়চারি করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। কতশত ফুলের টপ রেখেছে সুর বেলকনিতে। এই জায়গাটা তার একান্ত। শুধুই একান্ত। এখানে কেউ হাত লাগায় না।
সুরের একটাই ভাই, সুহাস আবির। তার ভাইকে বিয়ে করালেও সুর এই ঘরটা আজীবন নিজের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছে। এই ঘরটা সুরের ভিষন প্রিয়। নিজে সাজিয়েছে সব কিছু। এমনকি ফুলগাছ গুলো নিজের আয়ের টাকায় কিনেছে। সুরের খুব আত্মসম্মান, নিজের প্রয়োজন ব্যতীত সে আব্বুর থেকে টাকা নিবে না। আত্নসম্মান বেশি বলেই হয়ত, গতকাল সংগীতের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলো!
সুরের বুকের অস্থিরতার যন্ত্রণাটা আবার বেড়েছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে গতরাতে সুর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সংগীতের কথায়। সুরের গালবেড়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। কেউ দেখে নেয়ার আগেই সুর জলটুকু মুছে নেয়। সব সময়, সব যন্ত্রণার ভাগ কাউকে দেয়া সম্ভব হয় না। সুরের এ যন্ত্রণার ভাগিদার বলতে যদিও কেউ নেই। তবুও, এই সময় একজনকে খুব করে সে কাছে চাইছে। সে হলো সংগীত। সুরের ভালোবাসার মানুষ।
চৌধুরী বাড়িতে আজ বেশ সমাগম। ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক হলো। সবাই বেশ আনন্দে সময় কাটালেও কনের অবস্থা নাজেহাল।
চৌধুরী বংশ বলতে সেই আগের আমলের মতো দাপটে পরিবার নয়। বেশ বড় পরিসংখ্যানও নয়।
শুধু বংশের নামই চৌধুরী বংশ।
ছোট একটি বাসা। দো’তালা বলা যায়। তাও দো’তালায় এক ভাড়াটিয়া থাকে। নিচের তলায় চৌধুরী পরিবার বেশ সাচ্ছন্দ্যেই সময় কাটিয়ে দেয়।
শুধু অসস্থিতে থাকে কথাকলি। চৌধুরী বংশের ছোট মেয়ে। দেখতে আহামরী সুন্দরী নয়, শ্যামলা বর্ণের চেহারায় মায়া কারা ভাব আছে। এ ধরনের মেয়েরা বেশ আবেগী হয়। মায়া জালে আটকে যায় সহজে।
কথাকলির খুব বড় শখ, দো-তালায় ফুলের বাগান করবে, ছোটখাটো। ফুল – ফলের গাছ থাকবে। সুরের বাগানের মতো হবে সে বাগান। সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছগুলো সাজানো থাকবে।দেখলে মন ভরে ওঠবে।
সুর হলো কথাকলির ফুফাতো বোন। বয়সে বড় হলেও সুরের সাথে তার বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। নিজের সকল গোপন কথা সে সুরের সাথে আলোচনা করে। সুরকে সে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে।
মোবাইল স্কিনে কথাপু নামটা ভেসে ওঠতেই সুর কাজ রেখে চটজলদি রিসিভ করে,
সুর
কথাপু
কখন আসছিস?
কোথায়?
আমার বিয়েতে গাধী।
ওহ কথাপু, এই তো সব গোছগাছ করছিলাম। আধঘন্টায় পৌঁছে যাবো।
হ্যাঁ আয়, তোকে অনেক কিছু বলার আছে। আর শুন, ঘৃতকুমারীর একটা চারা নিয়ে আসবি। এবার আমি এটাকে দো’তালার ছাদে লাগিয়েই ছাড়বো। ঐ বুইড়া ভাড়াটিয়াকে এবার যদি শায়েস্তা করতে না পারি, আমার নামও কথাকলি নয়। চৌধুরী বংশের ছোট মেয়ে আমি। একটা দাপট ভাব থাকতেই হবে, তাই না বল।
সুর মন দিয়ে কথাকলির কথা শুনছিলো। কথাপুর কণ্ঠস্বর বেশ মিষ্টি। কথা শুনতে সুরের বেশ লাগে। মন ভালো হয়ে যায়।সময় চলে যায়, তাদের কথা সহজে শেষ হয় না।
সুর
হ্যাঁ, কথাপু।
তোর মন খারাপ।
হ্যাঁ
কতটা খারাপ?
খুব বেশি খারাপ।
কেন বল তো।
সংগীতের সঙ্গে কথা হয়েছে।
কি বলল।
ও স্বীকার করেছে ওর বউ আছে।
তাহলে তো হলোই, তুই কষ্ট পাচ্ছিস কেন? ও ওর বউ নিয়ে সুখে থাকুক।তুইও বিয়ে করে সুখে থাকবি। শুন, তুই দেখতে কিন্তু জোসস! খুব ভালো ছেলে তোকে বিয়ে করবে, দেখবি হেলিকপ্টার নিয়ে আসবে।
কথা বলেই কথাকলি হেসে ওঠে। সুর বিষন্ন মনে বলে,
আমি চাই না, এমন ছেলে আসুক।
তো, তুই বিবাহিত ছেলেটাকে চাস।
সুর দম নিয়ে বলল,
হ্যাঁ চাই।
তাহলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমার বাসায় চলে আয়। আমি আছি তোর সাথে। কষ্ট পাস না একদম। কষ্ট পেলে কিন্তু মারব, আমারও তে কষ্ট হবে বল।
কথাপু, আমি এখুনি আসছি। এখুনি। তোমায় জড়িয়ে ধরে না কাঁদলে আমার কান্না শেষ হবে না।
হুম, চলে আয়৷ তোর জন্য আমি গোছল করব না আজ। তোর চোখের জলে ভাসব!
সুর আনমনে হেসে ওঠে। কথাকলিকে তার খুব ভালো লাগে। মনের কথাগুলো অনায়াসেই এই মানুষটাকে বলা যায়। এই মানুষটা তার খুব কাছের একজন মানুষ।
শহরের বুকে অন্ধকার নেমেছে। চারপাশে, মানুষের কত কোলাহল, নীড়ে ফেরার তাড়নায়।
অথচ, সুহাসের এই তাড়া নেই। এটা খুব বিরক্তিকর লাগে।
সুহাস পিচঢালা রাস্তায় একা হাঠছে, দু-চোখ যেদিকে যায়। তার এই জগৎ, সংসারের প্রতি কোনো মায়া টান নেই। সে স্বাধীন।
একটি দে’তালা কাঠের বাড়ি।
বাড়িটা একটু জঙ্গলের কোল ঘেঁষে। সামনেই পিচঢালা রাস্তা।
বাড়ির ইট-কাঠ কত বছরের পুরোনো তা সুহাসের জানা নেই। তার বাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে। মাঝরাতে জঙ্গলের ভিতর থেকে যখন সে পশুপাখির গর্জন, হিরহির আওয়াজ শুনতে পায়। তখন সুহাসের খুব নেশা জাগে। নারীর নেশা।
পৃথিবীতে সে একটি নারীর নেশায় আসক্ত। সে হলো সুর। সুরের মত আগুন সুন্দরী নারী তার চোখে খুব কম পড়েছে। যখন সে জানতে পেল মেয়েটির নাম সুর, তখন সে ভালোবাসার দাবী নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারলো না। কীভাবে পারবে? সুহাসের ছোট বোনের নাম সুর। এই নাম সে অন্য নারীকে নেশার সুরে ডাকবে কি মুখে?পারবে না। এসব ভাবতেই সুহাসের কি একটা বাজে ভাব আসে। না, না সে পারবে না।
সুহাস এই বাড়িতে আছে প্রায় বছর খানেক। বাড়িটা কাঠের তৈরি। ভিতরে সিঁড়ি বেয়ে উপরের ঘরে যাওয়া যায়। বেশ সুন্দর গোছানো। পুরাতন এক মাতাল ঘ্রাণ। সুহাসের বেশ পছন্দ হয়। শান্তি শান্তি ভাব আসে। সুর যখন এখানে আসে, সুরের সে কি পাগলামী! এখানেও ফুলের বাগান করবে। সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ থাকবে।
সুর প্রতিবারই এসে সুহাসের কাছে আবদার করে।
ভাই, এই ভাই। আমি এখানে থেকে যেতে চাই।
সুহাস বলে,
সম্ভব নয়।
আমার ওই বাসায় থাকতে ভালো লাগে না।
তবুও থাকতে হবে।
আমি এখানে থাকলে কি সমস্যা ভাই, বরং, তোমার সুবিধা। আমি ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াতে পারবো।
আমিও ভালো রাঁধতে পারি।তোর এখানে থাকা সম্ভব নয়।এটাই শেষ কথা।
সুর তখন নাক ফুলিয়ে বলে,
তুমি এখানে কেন থাকো তবে?
সুহাস তখন চোখ-মুখ শক্ত করে বলে,
সেটা তোর না জানলেও চলবে।
গভীর রাত, ঘরজুড়ে অন্ধকার।চারপাশে নিস্তব্দ পরিবেশ, সুহাস বসে বসে বোনের কথা ভাবছিলো, আর হাসছিলো। দূরে থাকলেও বোনটাকে আগলে রাখতে ভুলে না সে। শহরে খুনের প্রকোপ বেড়েছে খুব।এই নিয়ে একটু ভয় হয়!
বাড়ির বাহিরে নেমপ্লেট- সুহাস আবির।
তারপাশেই কলিংবেল।সুহাস কলিংবেলের শব্দ শুনতেই ওঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে দেয়।
বাহিরে সুর দাঁড়িয়ে আছে। সুহাসের সময় লাগে না বুঝতে, এই সুর তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ! মনের সুপ্ত ভালোবাসা, প্রেয়সী সুর!
কিন্তু, এই মেয়ে এত রাতে এখানে এসেছে কোন উদ্দেশ্য। ভয়ংকর সুন্দর চোখদুটির ভিতরে কোনো জলন্ত আগুন লুকিয়ে নেই তো?
চলবে…

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..