1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

দীপের চোখে জল (উপন্যাস থেকে) — ১ম পর্ব,২য় পর্ব এবং ৩য় পর্ব — বুলবুল

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১
  • ৩৭৪ বার
১ম পর্ব
,,,
– কি রে প্রিন্স , কি হয়েছে?
– কি আর হবে।
নাম রাখছে,পি- রি- ন-স।
– তা আবার কি হলো ?
– কি আর হবে। লিখতে পারিনা ,যতসব পেচাগোচা নাম।
আমি আর ঐ স্কুলে যাবো না।
– কেনো?
– কেনো আবার।
স্যার, ক্লাশে নাম লিখতে দিয়েছিল , সবাই লিখেছে।
কিন্তু আমি এই পেচাগোচা নাম লিখতে পারিনি।
স্যার, রেগেমেগে সবার সামনে বললো । তুই আস্ত
একটা গাধা। প্রিন্স নাম লিখতে পারিসনা , তো গাধা লিখে নি।
– এতো কথা বলতে পারো, লেখা পড়া করতে পারো না,সারা বেলা
এ বাড়ি ,সে বিড়ি দৌড়ানো,ডাঙ্গুলি খেলা এসব তো খুব পার ,।
শুধু পড়তে বললেই ,বাহানা।তাই না?
মায়ের বকুনি খেয়ে প্রিন্স তার মুখটা বেশ গোমরাহ করে বসে আছে।
– যা ও , তোমাকে আর লেখা পড়া করতে হবে না।কাল থেকে লাল মিয়ার গেড়েজে গিয়ে রিক্সা চালানো শিখে নিয়ো। ব্যাস, হয়ে যাবে।
তোমাকে নিয়ে আমাকে আর ভাবতে হবে না।
– পল্টূ‌ ,কি করে স্যারকে তার নাম লিখে দেখালো? একদম ঠিকঠাক।
ও তো ডাঙ্গুলী খেলে একদিনও আমার সাথে পারেনি।
ওকে দেখে নিবো, হ্যা।
শিরীন আপুর কাছ থেকে সব পড়া শিখে নিবো। তারপর দেখবো
পল্টু, আমার সাথে কি করে পায়।
প্রিন্স, নামটা খারাপ না। সুন্দর তো বটেই। কিন্তু যাক বাবা , রাতে পড়তে বসে শিরীন আপুর কাছ থেকে জেনে নেয়া যাবে।
প্রিন্স, সন্ধ্যে হতে না হতেই একদম সুবোধ বালকের মতো, হাত মুখ ধুয়ে
পরিপাটি হয়ে বই খাতা নিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে।।
বিষয়টি সবার নজরে পড়েছে ,তো বটেই।যাকে পড়তে বসতে বললে
বাহানার শেষ নেই। সে কি না আগেই পড়ার টেবিলে বসে আছে।
শিরীন আসতেই –
– আপু, প্রিন্স নামের মানে কি রে?
– হু ম , তা এ প্রশ্ন,কি জন্যে ?
— না, বলছিলাম কি, স্কুলে স্যার নাম লিখতে দিয়েছিল ।
সবাই লিখেছে কিন্তু আমি আমার নাম লিখতে পারিনি।
– স্যার, রেগেমেগে সবার সামনে বললো, তুই আস্ত একটা গাধা।
প্রিন্স লিখতে পারিসনা, এখন থেকে গাধা লিখবি, বুঝলি। সবাই হাসতে
লাগলো। আমার খুবই কষ্ট লেগেছে,মনে মনে ভাবলাম আমি আর ঐ
স্কুলে যাবো না।
কিন্তু, পল্টু তার নাম ঠিকই লিখে দেখালো। যে কি-না আমার সাথে কোনো খেলায় পারেনা।
–শোন , লেখা পড়া,আর খেলাধুলা এক বিষয় নয়।
সে লেখা পড়া করে ,তাই সে লেখা পড়ায় ভালো।
আর তুমি খেলাধুলা করো,তাই তুমি খেলাধুলায় ভালো করছো,বুঝলে।
— তা না হয় বুঝলাম।
প্রিন্স , মানে বললে না তো ?
— প্রিন্স, মানে- যুবরাজ ।
– বাব ব বাহ:-যু ব রা জ।
– হ্যা ।
– তবে ,পল্টু মানে?
– ছাগল!
শিরীনকে দোষ দিবো কি? সেতো আর পল্টু নামের অর্থ জানেনা।
পল্টু নামের অর্থ জানে ক্ষয়ে যাওয়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থা।
(চলবে)
২য় পর্ব
– বিধাতা সব বদলাতে পারে।
শুধু ভাগ্য বদলাতে পারে না।
তাই না মা?
– কেনো পারবে না? আল্লাহ সব বদলাতে পারে।
– এ তো শান্তনা মা! শান্তনা যদি না থাকে তবে মানুষ কি করে বাঁচবে।
তাই না?
নিশোর মা , আড়ালে লুকিয়ে বারবার চোখ মুছে নেয়।
মা তো জানেন ‌,নিশো বেশি দিন আর বাঁচবে না।তার কঠিন অসুখ হয়েছ ।শুধু ভাগ্য আর আশা নিয়ে নির্ঘুম রাত্রি যাপন। ব্লাড ক্যান্সার-
রক্ত পরিবর্তন আর কিছু ব্যবস্থাপত্র।ডাক্তার সব বলে দিয়েছেন।এ রোগের যথাযথ উন্নত চিকিৎসা এখনও সম্ভব হয়নি। আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে বলেছেন।
সদা চঞ্চল, হাসি খুশি একমাত্র মেয়েটি যখন বাচবেনা তা যদি কোনো মা জানতে পারে, ভালো থাকবে কি করে। তারপরও আশায় বুক বেঁধে
অপেক্ষা করতে হয়, সর্বশেষ আস্থা আর ভরসা একমাত্র আল্লাহ উপর।
-নিশো জানেনা তার কি অসুখ হয়েছে।কেউ তাকে জানতে দেয়নি।
মেয়েটি কষ্ট পাবে। মা ও গোপন রেখেছেন। মৃত্যু সবার জন্যেই চিরন্তন।
এ অমোঘ সত্য আমরা সবাই জানি। তারপরও কিছু কিছুই সত্য মেনে নিতে কষ্ট হয়।
নিশোর এতো জ্বর যেনো নামতেই চায় না। সুন্দর শরীরটা শুকিয়ে
দিন দিন কাঠ হয়ে যাচ্ছে। মুখটিতে আগের মতো আর লাবণ্যতা নেই ।চোখদুটো কোঠরি কালো আভায় আচ্ছাদিত।
নাহ:আর কতদিন এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকা?
উদিচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানের সুবাদে দীপের সাথে নিশোর ভাইয়ের পরিচয়। ভাসানী হল, শহীদ মিনারে পথ নাটক দলীয় সঙ্গীত, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে দীপ কমবেশি ভূমিকা রাখে। অমিত হাসান, উদীয়মান তারকা । চমৎকার অভিনয়ে দর্শক শ্রোতাকে মন্ত্রের মতো মুগ্ধ করে রাখে।
দীপ সেখানে নবীন। অল্প দিনেই পরিচিতি বেশ ভালো। পাড়ার উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের আকর্ষণ চোখে পড়ার মতো।
– নিশো কয় দিন হলো হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে ।
পড়ার লোকজন , আত্নীয় স্বজন কমবেশি আসে যায়। তারপরও কিছু মানুষকে দেখার ইচ্ছে থাকে যায়। বারবার মনে উঁকি দেয় সে আসছে না কেন? এতো মানুষ এলো গেলো,। বেহায়া মন, কখন যে কাকে দেখতে ইচ্ছে করে ,সে খবর ঈশ্বর রাখেন কি না। মনের সব ভাবনা গুলো সবাই কে খুলে বলা যায় না। শিরীন শেফালীকে বলতে হবে। দীপ যেনো একবার হলেও দেখা করে।
দেখা পেলেই হলো- বলবো ,বেঁচে গেছো তাই না? রাস্তায় পথের ধারে এখন আর কেউ বিরক্ত করে না। মা তোকে দেখতে যেতে বলছে শক্ত করে পথ আগলে রেখেছি। না হ : এতো সব হিবিজিবি কথা গুলো।
(চলবে-)
৩য় পর্ব
কে কূলি প্রজা রাজা মহারাজা ক্ষণিকের খেলাঘর ।ভেঙ্গেচূড়ে গড়ে কোন কূলে তীরে আপনে বাধিলে ডোরে অচেনা যে পর।
– মা অ মা। শোনতে পাচ্ছ‌ না।
– কেনো রে ?
– কেনো আবার।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রোগে ভুগে মাথাটা একদম নষ্ট,কি যেনো ভাবনা এসে সব এলোমেলো হয়ে যায়।আর তোমাকে বলা হয় নি। এখন মনে পড়েছে,।তোমাকে না বললে শান্তি পাবো না। এতো সুন্দর একটা স্বপ্নের কথা তোমাকে শুনতেই হবে।
– ঠিক আছে,কি বলবে,বলো।
– স্বপ্নে দেখি,একখন্ড সাদা মেঘের ভেলা কোত্থেকে উড়ে এসে আমাকে আকাশে তোলে নিয়ে যায়। আমার কোনো ইচ্ছা শক্তি কাজ করছে না।
শতচেষ্টা করেও নিচে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছিনা। আমার মধ্যে এক অজানা অনুভূতি কাজ করছে ।কি অদ্ভুত, আমার শরীরের ধবধবে সাদা পোশাক।
শূন্য থেকে শূন্যে ভেসে চলিছি। এক অজানা আলোর রশ্মি দিকে,আস্তে আস্তে পিছনে আমার সব অতীত ভুলে যাচ্ছি,। ভূলে যাচ্ছি মা মাটি মানুষ।
– স্বপ্নে তো মানুষ কতো কি দেখে। তাই কি সত্যি হয়? স্বপ্ন তো স্বপ্নই।
এই নে, সিরাপটুকু খেয়ে নে।
-তিতো , একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।বুক চিরে বের হয়ে আসতে চায়।
– গাছ তিতা হলেও ফল মিষ্টি । ঔষধ তিতা হলেও রোগের ‌সেফা।
সুস্থতা আল্লাহ এক বড় নিয়ামক। রোগব্যাধি না হলে আমারা বুঝতে পারিনা। আলহামদুলিল্লাহ, শুকরিয়া আদায় করিনা।
আর সময় নষ্ট না করে খেয়ে নে।
– মা তুমি নাছোড়বান্দা। দাও-
নাক চেপে ধরে গলদ করণ।
শিরীন শেফালী কে দেখে-
-কি রে, তোরা বুঝি রাস্তা ভূলে এদিকে চলে এসেছিস,তাই না।
– তা হবে কেন,।ঐতো সেদিন সারাবেলা, তোর কাছে থেকে, সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফিরেছি।
– ঝরা ফুলের মালা গাঁথা রায় কিন্তু
বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষটাকে মনে রাখা যায়না।
-যাক বাবা,চন্দন স্যারের কথা কেনো যেনো বারবার মনে হচ্ছে।
স্যারের কথা তোদের মনে হয় না?
শোন-
চন্দন কাঠ আর চন্দন স্যার , উভয়ই দামি।
একটি মানে আর অন্যজন জ্ঞানে।
জেনে রাখা ভালো-
_ভিক্ষুক আর কৃপণের মধ্যে তফাৎ নেই-
ভিক্ষুকের কাছে টাকা থাকলে ও সে ভিক্ষা করে আর
কৃপণের কাছে যতই টাকা থাকুক সে কৃপণতা করে।
– অ হ্যা, ভূলে যাবো। আগেই বলে রাখি। দীপের সাথে দেখা হলে আসতে বলিস তো। বলবি, মহারাজ- আপনার যদি সদয় সময় হয় তবে
নিশো নামের মেয়েটি কে একটু দেখে আসবেন।এখনো বেঁচে আছে।
– বাহ্, চমৎকার। দেখছি তুই আস্ত একটা কবি। দীপকেও ছাড়িয়ে যাবি।
– আরে না। বেঁচে থাকলে মস্তবড় ডাক্তার হবো। আর
মরে গেলে মাটি, বুঝলি।
– মেঘ – বৃষ্টি ঈশ্বরের আশীর্বাদ। পত্র পল্লবে খুশির ঝিলিক, অনাবিল শান্তি সুখের পরশ।এক পা দু পা করে দীপ বৃষ্টির ছোঁয়ায় চকচকে রাস্তায় হেঁটে চলেছে। নিশোর শরীর অবস্থা আগেই কিছুটা জেনেছে। তবে এতো বেশি খারাপ তা জানা ছিলো না। লেখাপড়া, দু-একটি টিউশনি কিছুটা প্রয়োজনে দীপকে চালিয়ে যেতে হয়। তার দায়িত্ববোধ, সময়ের হিসাবে সচেতন। নিশোর চঞ্চলতা, সরলতা সুন্দর ব্যবহার, মনে
রাখার মতো মেয়ে।
ভাবনার মাঝে চলতে চলতে নিশোর বাসার গেটের সামনে।লক করতেই নিশোর মা গেট খুলে দেয়।দীপের নাম নিশোর কাছ থেকে আগেই জেনেছেন। কিন্তু সামনাসামনি এই প্রথম দেখা।
– আমি, দীপ ।
– অ- ‌হ্যা, ভিতরে এসো। তোমার কথা নিশো অনেক বলেছে।
সত্যি, মায়াবী। নিশো ভূল বলে নি। প্রথম দেখায় নিশোর মায়ের বুঝতে অসুবিধা হয় নি।সে ভালো ছেলে।
– কে মা?
– দীপ এসেছে।
– দীপ,!
-হ্যা।
– দীপ কে সোজা নিশোর কক্ষে নিয়ে যায়। নিশোর মা বললেন,নিশো
তোমারা কথা বলো আমি তোমাদের জন্যে কিছু ফল নিয়ে আসছি।
আবেগ আর উচ্ছাসে নিশোর কথা থমকে আছে।
– শিরীন বলেছে?
– না। আমি আগেই কিছুটা শোনেছি।
– তাহলে এতো পরে কেনো ?
– ভাবছিলাম আসবো,সময় করে উঠতে পারিনি।
-কেমন আছো?
– যেমনটা দেখছো।
– ঠিকঠাক ঔষধ খেয়ে নিও , একদম দিব্যি ভালো হয়ে যাবে।
– দীপ তোমার লেখা কবিতা
দু:খ হলো সুখের কবিতা
দু:খ হলো জীবনের গান।
দু:খ হলো শোক তাঁরার মতো
জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রাণ।
– দীপ তুমি কিছু বলবে না?
-ঘড়ির কাঁটা আর নিঃশ্বাস
বহে সমান্তরাল ।
সময় গতিময় কিন্তু
নি:শ্বাসের বিশ্বাস নেই।
জীবন কখনো থেমে থাকে না।
মানুষ বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি
পুরুষ হলো সুন্দর বাগান,
নারী সেই বাগানের ফুল।
কতেক ফুল ফোটে আর
কত ফুল ফোটার আগেই ঝড়ে পড়ে।
(চলবে)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..