1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

জান্নাতি নারী ### কামরুন নাহার মিশু

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৩১ বার
গতকাল একটা কম্পিউটারের দোকানে গিয়েছি, বইমেলার জন্য কিছু পাণ্ডুলিপি মেইল করার উদ্দেশ্য। আমার কাজ বেশি না, অল্প একটু। হঠাৎ করে হন্তদন্ত হয়ে এক মহিলার আগমন দোকানে।
এমন ভাবে প্রবেশ করল, মনে হচ্ছে কেউ তাকে দৌঁড়াচ্ছে। এক পাটি জুতা বাহিরে রেখে, আরেক পাটি জুতা পায়ে নিয়ে ভেতরে ডুকল।
কোন ভণিতা না করেই বলা শুরু করল-
” ভাই আমার কাজটা করে দিন, আমি বিশ মিনিট সময় হাতে নিয়ে এসেছি।”
মহিলার কণ্ঠে রীতিমত ভয় আর আতংকের চাপ দেখে
আমি আর কম্পিউটারের লোকটা দুজনে এক সাথে তাকালাম মহিলার মুখের দিকে। এক পাটি জুতা যে পায়ে করে নিয়ে আসছে, মহিলার খেয়ালই নেই। হাত মোজা, পা মোজা, হাজী হিজাব, চশমা দিয়ে চারদিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে, নিজেকে এমন ভাবে ঢেকে রেখেছের, কণ্ঠ না শুনলে বুঝাই যেতো না, মহিলা না পুরুষ।
তারপরও বুঝতেই পারিনি, মহিলার বয়স কেমন হবে। একবার মনে হয়েছে মধ্য বয়স্ক, আবার মনে হয়েছে অল্প বয়সি।
কথা বলার ধরণ দেখে মনে হলো বেশ স্মার্ট। যদিও বাইর থেকে বুঝার সুযোগ নেই।
কম্পিউটারেরর লোকটা হাত ইশারা করে চেয়ার দেখিয়ে দিলো, বসার জন্য।
কিন্তু না, তাঁর বসার মতো সময় হাতে নেই।
সে আমাকে বিনয়ের সহিত অনুরোধ করল-
” Excuse me, apu. যদি আপনার কোন অসুবিধে না হয়, আমার কাজটা আগে করে নেই, পরে আপনার কাজটা করবেন।”
আমি ভীষণ বিরক্ত হলাম। মহিলার এত তাড়া থাকলে, পাবলিক প্লেসে কেন?
এখানে একটা নিয়ম আছে, আগে যে আসবে, তার কাজ আগে হবে।
আর আমার কাজটাও প্রায় শেষ।
কিন্তু মহিলা এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করতে রাজি না।
মনে হচ্ছে সে নূন্যতম ভদ্রতা ও আত্মসন্মান ভুলে গেছে। আমার আর লোকটার পারে না, হাতে পায়ে ধরে। তাঁর কাজটা আগে করে দেয়ার জন্য।
এত বিরক্তিকর মানুষ দেখে আমি জায়গা ছেড়ে দিলাম।
ঠিক আছে, আপনার কাজটা আগে করে নিন।
কম্পিউটারের দোকানের লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে।
হাসির মিনিং অনেকটা এরকম-
এরকম অনেক পাবলিক প্রায় হ্যান্ডেল করতে হয়।
আপনি অবাক হলেও আমি হচ্ছি না।
কি, কি যেনো বুঝাচ্ছে কম্পিউটারের লোকটাকে। আমার ঐদিকে খেয়াল নেই। আমি কন্যার বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছি।
হঠাৎ দেখি মহিলা উচ্চস্বরে বড় খতমের দোয়া পড়ছেন, আর অদ্ভুত রিং টোনের একটা মোবাইল পার্স থেকে বের করছেন-
অনেকটা কান্না বিগলিত কণ্ঠে কাকে যেনো বলছেন-
” এইতো আমি তো মাত্র আসছি, একটা মিনিট সময়ও নষ্ট করিনি। লোকটা কাজ করছে এক্ষুনি শেষ হয়ে যাবে। আমি কোথাও তাকাব না। সোজা বাসায় চলে আসব।”
আরও মিনমিন করে কি যেনো বলছেন।
আমি কিছুই শুনতে চাইনি। তারপরও কিছু কথা কানে আসছে।
এবার দেখলাম মহিলার কথা বন্ধ।
বুঝাই গেছে অপর প্রান্ত থেকে কেউ লাইনটা কেটে দিয়েছে।
এবার কিছুক্ষণ কম্পিউটার দোকানে শুনশান নিরাবতা। আমি ও কিছু বলছি না, মহিলাটাও না, কম্পিউটারের লোকটাও না।
হঠাৎ করে মহিলা বলে উঠল-
” প্লিজ ভাইয়া যেভাবে হোক, ১০ মিনিটের মধ্য আমার কাজটা করে দিন। “
মহিলার কণ্ঠে রীতিমত ভয়, আতংক, কান্না মনে হচ্ছে কোন আসামি জেলখানা থেকে প্যারালালে মুক্তি নিয়ে আসছে দশ মিনিটের জন্য। এক্ষুনি গিয়ে জেলখানায় প্রবেশ করতে হবে।
কম্পিউটারের লোকটা হঠাৎ করে হাতের কাজ রেখে মহিলাকে বললেন।
” কিছু বুঝতেছিনা আপনি কাজ দিচ্ছেন এক ঘণ্টার, বলতেছেন দশ মিনিটের মধ্য করতে হবে, এটা কিভাবে সম্ভব। এগুলো কি জোর করে হয়?
আবার ভুল হলে আমার দোকানের বদনাম হবে।
আপনি ঠিক মতো কিছু বুঝিয়েইও বলতে পারছেন না। আপনার কণ্ঠে অসংলগ্ন কথাবার্তা। আপু কাজ করতে হলে সময় নিয়ে আসবেন।”
যদিও চোখ দেখতে পাইনি, তারপরও বুঝছি মহিলার চোখে পানি। এই পানি অপরাধবোধের।
বুঝতে পারলাম, এতক্ষণ পর্যন্ত মহিলা যা যা আচরণ করছেন, সব নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে মহিলা ভীষণ লজ্জা পেলো।
আবার ফোন বেজে উঠলোদ। এবার মহিলা আয়াতুল কুরসি পড়ছে, আগের চেয়েও জোরে জোরে।
এবার কি দেখলাম, মহিলা মাঝ পথে নিজের চেয়ার চেড়ে উঠে দাঁড়াল।
“ভাইয়া আমাকে যেতে হবে। কাজটা করতে পারলাম না।”
কম্পিউটারের লোকটা বললেন আপনাকে এখানে বসে কাজটা করতে হবে না। আপনি ইনফরমেশানগুলো দিয়ে যান। আমি আপনার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে কাজটা করে দেবো।
মহিলা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন
“সময় শেষ। আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।”
এবার আমি পুরো ঘটনা অবলোকন করেও কিছু বুঝতে না পেরে বললাম।
“আপা, কিসের টাইম শেষ। আপনাকে কে বারবার ফোন দিচ্ছে।”
মহিলা চুপ করে আছে দেখে বললাম,
“বুঝছি স্বামীর নাম মুখে আনা যাবে না, গুনাহ হবে।
আপনার বর তো?”
এবার মহিলা হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়লেন।
আমি ভাবলাম প্লেনে করে কোথাও যাবে তার টাইম শেষ।
এবার বললাম
“কোথায় উনি, নিচে?”
“না, সৌদিআরব।”
“মানে?”
মহিলা হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো, রেখে গেলো অনেকগুলো প্রশ্ন।
স্বামীর প্রতি এতটা অনুগত আর কোথাও দেখিনি। বিরল দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। আজকালকার দিনে এমন মহিলাও থাকেন।
বাসায় এসে বরের কাছে পুরো বিষয়টা শেয়ার করলাম।
তার একটাই কথা, মহিলার ছোট বোন আছে কিনা, খোঁজ নিয়ে দেখো। ছোট ভাইকে বিয়ে করাব।
রাতে শুয়ে আছি, আমার ঘুম আসছে না।আজহারীর ওয়াজ শুনলাম। চার গুণাবলীর রমণীর জন্য জান্নাত ফরজ। এর মধ্য একটা হলো স্বামীর প্রতি আনুগত্য।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..