1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

# ছোট গল্প # এক ভণ্ডের উচ্চহাসি ### রাশিদা বেগম

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ২৮৮ বার

নিজ বেডরুমে লুকিংগ্লাসের সামনে দাঁড়ায় নাহিদ হাসান। নিজের দিকে তাকিয়ে উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে। হাসিতে এমন ঝংকার তোলে যে হাসি আর থামে না। এক একটা হাসির ঢেউ দেয়ালে আটকে ফিরে আসে। মুখে হাসির রেশ রেখেই নিজেকে বলে’ ‘ নাহিদ তুই নিঁখুত অভিনেতা।তোকে সবাই ভীষণ বিশ্বাস করে। তোর দুই বউ,প্রেমিকা,কলেজের সভাপতি – সবাই বিশ্বাস করে।’
আর আয়নায় নিজের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে আবার বলে’ ‘ আর তুই ভেতরে ভেতরে চরম বিশ্বাসঘাতক,প্রচণ্ড নিষ্ঠুর, স্বার্থপর এক ভণ্ড।’
নিজের দিকে তাকিয়ে কথাগুলি বলেই আরেক দফা হাসে নাহিদ। ভদ্রতার সবটুকুই আছে তার মধ্যে। অমায়িক ব্যবহার, মানুষকে কাছে টানার নিত্যনতুন কৌশল,বিনয়,প্রেমকাতরতা, বিশ্বাসী হয়ে উঠার চাতুর্যগুণ সহজেই মানুষের মন কাড়ে। হাসতে হাসতে সে মাথার চুলে চিরুনী চালায়। মাথায় হালকা টাক। তাই বেশ যত্ন করে সে মাথায় চিরুনী টানে। তারপর গোফে হাত বুলিয়ে শক্ত চোয়াল ধরে হাত নামিয়ে আনে। বাইরে যাওয়ার জন্য মনটা উসখুস করে। তবু ইচ্ছা অবদমন করে বেডে শুয়ে পড়ে। তার স্ত্রী সাহেরা আজ বাসায় নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে শপিং এ গেছে।বড়ো মেয়ে ডাক্তার,ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। সাহেরাই তাদের সব চাহিদার দিকে খেয়াল রাখে। সে কলেজের সহকারী অধ্যাপক। নাহিদ একটি প্রতিষ্ঠিত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। পরিচ্ছন্ন সংসার তাদের। স্ত্রী হিসেবে সাহেরা খুব সুখী। ভালোবেসে বিয়ে করেছে নাহিদকে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে পাঁচ বছর তারা প্রেম করেছে। সাহেরার চার ভাই প্রতিষ্ঠিত। একজন মন্ত্রী,একজন সচিব,একজন ডাক্তার,একজন ইঞ্জিনিয়ার। বাবার আছে অঢেল অর্থ সম্পদ। ধনী ঘরের সন্তান হলেও সামান্য নাহিদকে সে প্রাণাধিক ভালোবেসে। বাবা ও ভাইয়ের নিষেধ অগ্রাহ্য করে সে বিয়ে করেছে। আজও নাহিদের মুখে তাকিয়ে তার সকাল হয়,দুপুর কাটে,সন্ধ্যা হয়। নাহিদের শারীরিক,মানসিক সুস্থতার খবর রাখে,যত্ন করে।নাহিদের মুখ উচ্চারিত প্রতিটি কথা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।
চরম দারিদ্র্যে কেটেছে নাহিদের শৈশব,কৈশোর। কোনো কোনোদিন তিনবেলা খেতে পায়নি। ভালো খাবারের সাথে পরিচয় ছিল না।পড়াশোনার সব বইখাতা কেনার সামর্থ্য তার বাবার ছিল না। ছাত্রাবস্থায় তার বাবা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।তারপর বাকিদিনগুলি তার মামা খরচ চালায়। নাহিদ বুঝেছে অর্থই জীবনের চালিকাশক্তি। অর্থহীন জীবন পাথরের মূর্তির মতো। অর্থে জীবন প্রাণ পায়।সে জীবন হাসে,নাচে।জীবন সচল হয়। সাহেরা যখন তার প্রেমে মগ্ন,অধিক ব্যাকুল, তখন সে মনে মনে হাসে।সে হাসি উপহাসের। তার দৃষ্টি সাহেরার বাবার সম্পদের দিকে। সাহেরাকে দ্রুত বিয়ে করে সেই সম্পদ হাত করতে চায়।সাহেরা নাহিদকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাবার সম্পদের অর্ধেক অর্থাৎ পাঁচকোটি টাকার মতো নিয়ে আসে। চার ভাইয়েরা এটা নিয়ে আপত্তি করেনি বরং তারাও সময়ে সময়ে দশ লাখ,বিশ লাখ করে দিয়ে গেছে। নাহিদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়তে থাকে। বাড়লেই কী? টাকার জন্য রয়েছে তার এক সমুদ্র তৃষ্ণা। আশে পাশে কোনো ধনী মানুষ বা যোগ্য মানুষ সে সহ্য করতে পারে না। যে কোনো মূল্যে সেও সম্পদশালী হতে চায়। তাই প্রায়ই বাসায় এসে নানা অসুখের কথা,ডাক্তারের পরামর্শের কথা বলে। কোনোদিন হার্ট,কোনোদিন কিডনি,কখনও লিভারের সনস্যার কথা বলে।সাহেরা নাহিদের সুস্থতার জন্য ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।বাবাকে,ভাইকে বলে কোটি টাকার ব্যবস্থা করে। সাহেরার একতরফা ভালোবাসা নাহিদকে স্পর্শ করে না,ভাবায় না।সাহেরা কোনোদিন জানলই না নাহিদ তাকে ভালোবাসে না।তার মনের নানা গতিপথে ঘুরে ভণ্ডামির সন্ধান পায়নি।নাহিদের কাছে ভালোবাসার কোনো জায়গা নেই। বিয়ের পক্ষপাতীও সে নয়। একসাথে দীর্ঘ বছর সংসার করাকে সে বদ্ধ পুকুরের ময়লা পানির মতো কদর্য মনে করে। সে মুক্ত থাকতে চায়। কিন্তু সাহেরাকে তার বিয়ে করতে হলো শুধু সম্পদের আশায়। সংসার যত স্থায়ী হবে তত সে বিত্তবান হয়ে উঠবে।
একদিন ভরা পূর্ণিমায় সাহেরা নাহিদকে টেনে ছাদে নিয়ে যায়। বিশাল বাড়ির বিশাল ছাদ। ফুলের গাছসহ অন্যান্য গাছে পরিপূর্ণ ছাদের একদিক।অন্যদিকে আছে বসার জন্য চেয়ার টেবিল।জোছনার আলোয় লাফিয়ে উঠে সাহেরা।নাহিদের দুহাত টেনে আবেগে ঘুরতে থাকে।নাহিদের স্বতঃস্ফূর্ততা নেই। সাহেরা একেক টানে যেন একটি পাথর সরাচ্ছে। তবু সাহেরা গলায় সুর তুলে বলতে লাগল,’ নেশা লাগিলরে,বাঁকা দুনয়নে নেশা লাগিলরে।,
নাহিদ বলে,’ হাত ছাড়ো। ভালো লাগছে না।’
কিন্তু সে বাজে ব্যবহারও করে না। কারণ, ব্যবহার উগ্র হলে মেয়েরা কারণ খোঁজে,অনুসন্ধান করে। সে আরেকটি বিয়েও করেছে। মেয়েটি সুন্দরী ও ধনীর একমাত্র সন্তান।তার কাছে সে যাওয়া আসা করে। অর্থ তার সেখান থেকেও আসে।সাহেরা তা জানে না। মেয়েদের ফার্নিচার,শাড়ি,গহনা দিলে স্বামীর ভালোবাসাকে নির্ভেজাল মনে করে। সাহেরা বলে, ‘ ছাড়ব কেন? কী উপভোগ্য রাত! চাঁদের আলোটা দেখো।’
‘ দেখেছি।চাঁদ আলো দিবে।এতে আমোদিত হওয়ার কী আছে?’
‘ তুমি যে কী বলো।পরিবেশে মনে ভালো হয়ে যায়।’
নাহিদের এসবে মন ভালো হয় না। সাহেরাকে এটা বুঝাতেও পারছে না।তবু ভদ্রবেশে সাহেরার হাতে বন্দী অবস্থায় বাহ্যত দুলছে।কিন্তু মানসিকভাবে ছটফট করছে।বন্ধনমুক্ত হলেই যেন সে বেঁচে যায়।
রাত বারোটায় তারা ঘুমের জন্য শুয়ে পড়ে।সাহেরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।সে ঘুমালে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।নাহিদ তাকিয়ে আছে।মাছের চোখের মতো অনড় দুটি চোখ।সে ভাবছে অন্য কথা।কলেজের মেম শান্তার সাথে তার সম্পর্ক। মেমের নামে তার স্বামী শহরে তিনকোটি টাকার জমি লিখে দিয়েছে। ওটা তার হাত করতে হবে। গোপনে প্রেম জমে উঠেছে। তাকে বিয়ের আশ্বাসও দিয়েছে।অধ্যক্ষ তার প্রেমে পড়েছ বলে তার গর্ব হয়।নাহিদের ঘুমের কোনো লক্ষণ নেই দেখে সাহেরা জিঞ্জেস করে,’ কী হয়েছে? ঘুমাও।’
‘ চেষ্টা করছি।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।’
কলেজে কিছু টিচার বেশ অর্থসম্পদের মালিক। তাদের পেছনে ফেলে নাহিদের উত্থান দরকার। তাছাড়া কলেজের একটি বড়ো আয়ের অংশ নাহিদের পকেটে যায়। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির বিশ্বাস অর্জন করে গোপনে এসব করে যাচ্ছে। তার এসব অনিয়ম বোঝার ক্ষমতা অনেকের আছে।আর তাদের ভয়ে সে তটস্থ থাকে। তবু লোভের আধিক্যে সংযত থাকতে পারে না।
সবার জীবনে বৈচিত্র্য আছে। প্রকৃতি,প্রেম,সমুদ্র,আকাশ,আনন্দ- বিনোদন,সংসারের মাঝে সবাই সুখ খোঁজে। নাহিদের সুখ পারিপাশ্বিক শক্তিকে প্রতিহত করায়।সে সাংঘাতিকরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তার চলায়,পোশাকে,আচরণে অর্থের গন্ধ থাকবে।টাকার অহংকার,দাপট থাকবে।আর তা দেখে চারপাশের সবাই হিংসা করবে।প্রকাশ্যে সম্মান দেখাবে। তার সামনে সবার মাথা নত হয়ে আসবে।বাসায় এসে গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে কথা বলবে আর উচ্চহাসিতে দেয়াল কাঁপাবে।তার জীবনে এর বেশি বৈচিত্র্য নেই।শান্তার কথা ভাবতে ভাবতে নাহিদ ঘুমিয়ে পড়ে। সাহেরাও ঘুমিয়ে পড়ে।রাত তিনটায় নাহিদের ঘুম ভাঙ্গে।হাতের আঙ্গুল উলটিয়ে চোখ কচলে সাহেরার ঘুমন্ত মুখ চেয়ে দেখে।কী নিষ্পাপ মুখখানা! একেবারে বাচ্চাদের মতো সরল,অবুঝ। দীর্ঘ চল্লিশ বছর নাহিদকে ভালোবেসেছে। নাহিদের মনের নাগালই পায়নি।কীভাবে পাবে? সে তো মিথ্যাকে আশ্রয় করে সংসার করছে।সাহেরা তাকে বোঝার কোনো ক্লু পায়নি। নাহিদ তার মুখে তাকিয়ে তাই বলে,’ হায়রে রোকেয়ার অবলা নারী।আমাকে আরও ভালোবাসো। যত বাসবে ততই আমার লাভ।’
কথাটি বলেই ফোস করে এক গাল হাসে নাহিদ।তারপর ওয়াশরুম থেকে এসে একটি সিগারেট টানে এবং শুয়ে পড়ে।
সকালে সাহেরার কাজের অন্ত নেই। মেয়ে, ছেলে ছুটিতে এসেছে।তাদের পছন্দের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত।নাহিদের পছন্দের খাবারেও সে বিশেষ যত্নশীল। সবাইকে খাইয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য সে রেডি হয়। নাহিদও রেডি হয়।নাহিদ গ্লাসের সামনে দাঁড়ালে সাহেরা চট করে ব্লেজার ও টাই পরিয়ে দেয়।নাহিদ ব্লেজার টেনে গ্লাসের সামনে ঘুরেফিরে দেখে।সাহেরাকে বলে,’ দেখো তো তোমার মন্ত্রী ভাই,সচিব ভাইয়ের মতো লাগে কিনা?’
সাহেরা সযত্নে তাকায় তার দিকে।প্রেমাবেগে কাতর চোখে স্বামীর দিকে তাকায়।তারপর বলে,’ আমার স্বামীর কাছে মন্ত্রী, সচিব হার মানছে যে।’
নাহিদের ডান হাতে টান দিয়ে চোখের ঈশারায় বলে,’ এবার কলেজে যাও।’
নাহিদ বড়ো বড়ো পা ফেলে চলে যায়। মনে মনে বলে ভালোবাসা প্রকাশ করাটা দুর্বলতা। এই দুর্বলতা যার কাছে ধরা পড়ে সে চাইলে সর্বনাশের সবটুকুই করতে পারে।সাহেরা একজন শঠ,প্রতারক স্বামীর সংসার করছে।কেবল ভালোবাসে বলে তার বাবা, ভাইয়ের অনেক কিছু আজ শেষ। যাহোক স্বামী হিসেবে তার ষোলোকলা পূর্ণ হলো। সাহেরার কথায় ফায়ার সার্ভিসের মতো তার ভেতরের আগুন নিভে গেল।
কলেজে পা দিয়েই নাহিদ শান্তার খোঁজ করে।শান্তাকে সে কারণে অকারণে সামনে বসিয়ে রাখে।সে সামনে না থাকলে তার শান্তি লাগে না। সাহেরা তো রূপবতী নয়। সে সুপারি গাছের মতো লম্বা,শুকনো। যৌবনে একটু লাবণ্য ছিল বলে একটু ভালো লাগতো। এখন তাকে শীতের প্রকৃতির মতো বড়ো রুক্ষ দেখায়।চামড়া যেন হাড়ে বসে গেছে।মেদবহুল শরীরের নেশা নাহিদের আছে। শান্তা বেশ স্বাস্থবান,লম্বা।চেহারার মাধুর্য ও বেশ। রূপ ও অর্থ দুই-ই পাওয়া গেলে ক্ষতি কী? কিন্তু তাদের এক হওয়ার পথে দুটি বাধা আছে।শান্তার স্বামী আর নাহিদের অধ্যক্ষ পদ।তাই বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তুলছে। কিন্তু মনে মনে একটি উপায় সে খুঁজে পায়।
ছুটির পর নাহিদ তার রুমে শান্তাকে ডাকে। কিছু সময়ের মধ্যে কেক,কলা,কফি আসে।কফির কাপে শান্তার আঙ্গুল নাহিদের চোখে পড়ে। আঙ্গুর ফলের মতো নরম,মসৃণ ত্বক তার ছুঁতে ইচ্ছে করে।কফি খাওয়া হলে সে শান্তার হাতটি চেপে ধরে।চুম্বনে ভরে দেয় শান্তার হাত। শান্তা তার ঠোঁটের উষ্ণতা টের পায়। শান্ত, স্তব্ধ পরিবেশে দুজনকে খুব অস্বাভাবিক লাগে।ঘোর কাটলে নাহিদ বলে,’ আমরা কীভাবে এক হতে পারি বলো।’
‘ আমার মাথায় কিছু আসছে না।’
‘ তোমার স্বামীকে জীবন থেকে সরিয়ে দেই।’
‘ না। না। এটা করার দরকার নেই।’
‘ তাহলে?’
‘ ডিভোর্স দেবো।’
‘ এটা কোনো সমাধান নয়। সে তোমার পেছনে লেগে থাকবে।’
‘ তাহলে?’
‘ বিদেশে পাঠিয়ে দাও।’
‘ গুড আইডিয়া। সে বিদেশে যেতে চায়।তার ভাই কানাডা থাকে।’
‘ তাহলে দ্রুত তাই করো।আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া আর পারছি না।তোমার নেশায় বিভোর আমি।।’
‘ আমিও গভীর আগ্রহে দিন গুনছি।’
‘ তোমাকে প্রথমে বাসায় নেবো না।গোপনে বিয়ে করব। কলেজের সবাই এটা নিয়ে বাদ্য বাজাক চাই না।’
‘ ঠিক বলেছ।’
‘ পাঠিয়ে ডিভোর্স দাও।তারপর তুমি আর আমি। হাহা।’
নাহিদের কথায় শান্তা এক ঝলক হাসে।সেই হাসি নাহিদের নজরে পড়ে।নাহিদ মনে মনে বলে, ‘ যত পারো হেসে নাও। পরে যে কাঁদতে হবে।পুরুষকে তোমাদের এত প্রয়োজন বলেই তোমরা স্বাধীন হতে পারো না।মাথা উঁচু করতে পারো না।হাহা।হাসো।’
শান্তা তার কথায় সম্মতি দেয় এবং বলে,’ আজ তাহলে উঠি।’
ঠি আছে। যাও।’
ঢাকায় তিনটি বাসা আছে নাহিদের।দুটি দোকান আছে।সেগুলো থেকে ভাড়া আসে ছয় লাখ টাকা।মাঝেমধ্যে ছুটি দিয়ে ওখানে শান্তাকে রাখবে।বাকি সময় কলেজের পাশে ভাড়া থাকবে। সে বাসায় যায়। সাহেরা দেখে সারদিনের ক্লান্তির পর তার মুখ কালো দেখাচ্ছে।অভ্যাসমতো সে তার জন্য গরম পানির ব্যবস্থা করে। নাহিদ ফ্রেশ হয়ে আসলে তার হাত,মুখ মুছে দেয় সাহেরা।তারপর তাকে খেতে দেয়।খাওয়া শেষে নাহিদ চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। সাহেরা আর বিরক্ত করে না।
শান্তার স্বামীর কানাডা যাওয়ার সব কাজ সম্পন্ন হয়। সব কিছু করতে ছয় মাস সময় লেগেছে।সকাল দশটায় ফ্লাইট।সকালে স্বামীকে বিদায় দিয়ে শান্তা ফোন করে। ফোন পেয়ে নাহিদের আনন্দের শেষ নেই। শান্তার কণ্ঠে বেজে উঠে,’ সে চলে গেছে।’
‘ তাহলে আমরা মুক্ত। হাহা।’
‘ একদম।বাসায় এসে কথা বলব।’
‘ঠিক আছে।এসে ফোন দিও।’
ফোন রেখে নাহিদ ছাদে যায়।পশ্চিমাকাশে তাকিয়ে উর্ধ্বে মুখ তোলে।দুটি হাত প্রসারিত করে দাঁড়ায়।মুক্ত পাখির ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে গলে পড়ে। তারপর বলে,’ পৃথিবীর সব মিথ্যা। একমাত্র টাকাই সত্য। এর পেছনে ছুটতে বেশ লাগে।আমি বেশ আছি।নাহিদ তুই বেশ আছিস। শালা তুই পারিস বটে। হাহাহা—-। তারপর গগণবিদীর্ণ উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে।সেই হাসির আওয়াজ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
সমাপ্ত
————

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..