1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

উপন্যাস : যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে — লেখিকা : আয়ানা শাহরিন — পর্ব :১

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১
  • ১৪৯ বার
অন্যান্য রাতের মতো আজও মিষ্টি তার স্পর্শ ভাইয়ার পুরোনো সেই ছবিটা বুকে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে আর অভিমানে ধরা গলায় নিজে নিজেই বলে চলেছে,
– কেন এত কষ্ট দিচ্ছ স্পর্শ ভাইয়া? কেন এভাবে কাঁদাচ্ছ আমায়? আর কত কাঁদালে ক্ষান্ত হবে তুমি? তুমি কি বুঝতে পারো না তোমার বিরহে জ্বলে-পুড়ে বুকের ভীতরটা অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে আমার? তুমি কি জানো কত রাত জেগেছি আমি তোমার জন্য, কত বার মাঝ রাতে জেগে ওঠে অন্ধকারে তোমায় হাতড়ে বেড়িয়েছি? আমি যে আর পারছি না স্পর্শ ভাইয়া। আমি যে বড্ড ক্লান্ত। প্লিজ ফিরে এসো না আবার আগের মতো আমার কাছে।
কথাগুলো বলেই মিষ্টি ঠুকড়ে ঠুকড়ে কাঁদতে লাগল বালিশে মুখ গুঁজে।
সকালে,
– মিষ্টি, এই মিষ্টি, তুই এখনো পরে পরে ঘুমোচ্ছিস? না, এই মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারিনা। সকাল নয়টা বাজে আর এই নবাবজাদি এখনো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। এই মেয়ে, তোর কলেজ নেই? আর কতদিন ক্লাস হয়না বলে বলে কলেজ মিস করবি তুই? ওঠ বলছি অসভ্য নইলে পানি মারব এখন।
– (ঘুম জড়ানো গলায়) উফফ আম্মু একটু ঘুমোতে দাও না? কেন এরকম জল্লাদ মহিলাদের মতো আমাকে টর্চার করো বলোতো? তোমার কি একটুও মায়া হয়না এই নাদান, মাসুম বাচ্চা মেয়েটার জন্য? আমি তো তোমার একমাত্র মিষ্টি একটা বেবি গার্ল তাই না?
– আহারে আমার নাদান, মাসুম বাচ্চাটা! কয়দিন পর বিয়ে দিলে নিজেই চার পাঁচটা নাদান, মাসুম বাচ্চার মা হয়ে যাবি কিন্তু এখনো তোর বাচ্চামোই গেল না। ওঠ বলছি তাড়াতাড়ি, আজ ভার্সিটিতে না গেলে তোর একদিন কি আমার একদিন।
– আম্মু….এখন ভার্সিটিতে গিয়ে কি করব? ক্লাস তো এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি। তাহলে ভর্সিটিতে গিয়ে কি আমি হাওয়া খাবো?
– প্রয়োজন পরলে তাই করবি কিন্তু আর একদিনও ভার্সিটিতে না যাওয়া চলবে না। তুই যে কি পরিমাণ অলস তা আমি ভাল করেই জানি। ভার্সিটিতে গেলে তো অলসতার পিএইচডি করতে পারবি না। তাই নিশ্চয়ই ক্লাস হয় না বলে বলে আমাকে বোকা বানাচ্ছিস। কিন্তু, আর এসব চলবে না। ক্লাস না হলেও গিয়ে বসে থাকবি ভার্সিটিতে কিন্তু বাড়িতে শুয়ে বসে দিন কাটানো চলবে না। যা গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে, আমি নাস্তা দিয়ে যাচ্ছি রুমে।
– ওকে যাও।
🌺🌺
আজ মিষ্টি আর মিষ্টির দুই বান্ধবী রিমা এবং শখ ভার্সিটিতে এসে দু-তিনটে ক্লাস করে বেরিয়ে গেছে ক্লাস থেকে। ক্যাম্পাসের একপাশে একটা গাছের নিচে ঘাসের উপর বসে পরল তিনজন। শখ বলল,
– কি রে মিষ্টি, ইদানীং দেখছি নিয়মিত ক্লাসে আসছিস! ব্যাপার কি বলতো? এত সিন্সিয়ার স্টুডেন্ট কিভাবে হয়ে গেলি?
– ধুর ঘোড়ার ডিম। আর বলিস না, আম্মুটা যা শুরু করেছে কি বলবো? সেদিন কড়া গলায় বলে দিয়েছে যে এখন থেকে ক্লাস না থাকলেও ভার্সিটিতে এসে বসে থাকতে হবে। আমি নাকি বাড়িতে থেকে থেকে দিনকে দিন অলস হয়ে যাচ্ছি। এটা কোনো কথা বল? আমি কি অলস? তোদের কি আমাকে দেখে অলস মনে হয় বল? সেই সকাল আটটায় ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরোই। তারপর ভার্সিটির গেইট থেকে ক্লাস পর্যন্ত পায়ে হেঁটে রোদ-বৃষ্টির মধ্য দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্লাসে যাই। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লাসে বসে থেকে টিচারদের বোরিং লেকচার শুনি। তারপর ক্লাস শেষ করে আবার গেইটের কাছে যাই,,,,,
মিষ্টির কথায় মাথা ভনভন করতে লাগল শখ আর রিমির। রিমি দ্রুত মিষ্টিকে থামানোর জন্য বলে উঠল,
– এই থাম থাম বোন, তুই একদমই অলস না। আসলে আন্টি তোকে ভুল বুঝেছে আই থিংক। তোর মতো এত হার্ডওয়ার্কিং মেয়ে আর কয়টা আছে বল? আমার তো মনে হয় তুই-ই বাংলাদেশের সবচেয়ে হার্ডওয়ার্কিং গার্ল। তুই অলস হতেই পারিস না। কি বলিস রে শখ?
শখ রিমির দিকে একবার তাকিয়ে আবার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে দ্রুত বলে উঠল,
– হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছে রিমি। মিষ্টির মতো একটা মেয়ে কি করে অলস হতে পারে, তাইনা?
মিষ্টি খুশি হয়ে বলতে লাগল,
– এই না হলে আমার বান্দরনী থুক্কু বান্ধবী তোরা! তোরাই একমাত্র আমায় বুঝলিরে দোস্ত, আর কেউ বুঝল না। এই দুঃখ আমি কই রাখি?
রিমি বলে উঠল,
– কেন, তোর স্পর্শ ভাইয়া বুঝি বুঝেনা তোকে?
স্পর্শ নামটা শুনতেই মিষ্টির বুকের ভিতরে ধাক করে ওঠল। মুহূর্তেই মুখের হাসি ভাবটা চলে গিয়ে চেহারায় অন্ধকার নেমে এলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
– সেই সৌভাগ্য কি আদৌ আমার আছে? বুঝবে থাক দূরের কথা, উনার আমাকে মনে আছে কিনা কে জানে?
রিমি মিষ্টির কাঁধে হাত রেখে বলল,
– সরি দোস্ত, তোকে হার্ট করার জন্য কথাটা বলিনি। প্লিজ, মন খারাপ করিস না। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে যে স্পর্শ ভাইয়াও তোকে ভালবাসে। তোর মতো হয়ত উনিও তোকে মিস করছে। হতে পারে না?
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল মিষ্টি,
– হু, উনি আমাকে ভালবাসে! হাসালি আমায়। উনি যদি আমায় ভালই বাসতো তাহলে এতগুলো দিন আমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারতেন? আসলে কি বলতো? আমিই উনাকে একতরফা ভাবে ভালবেসে ফেলেছি। উনি হয়তো কখনো আমাকে ঐ চোখেই দেখেন নি, শুধু ছোট হিসেবেই স্নেহ করে গেছেন হয়তো।
শখ বলল,
– মন খারাপ করিস না মিষ্টি। আচ্ছা, উনি দেশে ফিরবে কবে জানিস?
– না জানিনা।
রিমি বলল,
– উনার সাথে কি একবারও তোর কথা হয়নি এই পর্যন্ত?
– না?
শখ মিষ্টির মোড ঠিক করার জন্য বলল,
– আচ্ছা বাদ দে এসব। তুই বরং আজ আমাদের সাথে তোর আর স্পর্শ ভাইয়ার কিছু মিষ্টি মুহুর্তের কথা শেয়ার কর। মানে, স্পর্শ ভাইয়ার সাথে তোর সুন্দর কিছু ঘটনা আমাদেরকে শোনা।
রিমিও বলে উঠল,
– হ্যাঁ দোস্ত, আমিও শুনতে চাই। প্লিজ আজ আমাদের সব বল।
মিষ্টি মৃদু হেসে বলল,
– কি আর বলবো এতো ছোটবেলার গল্প। আচ্ছা শোন তাহলে।
চলবে-

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..