1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন

# অসময়ের প্রেম —- কামরুন নাহার মিশু

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৭৮ বার
#১৮+ গল্প। লজ্জা লাগলে পড়ার দরকার নেই।)
উহ! আমি কষ্ট পাচ্ছি, সিরিয়াস কষ্ট! সদ্য প্রেমে পড়া কিশোরের মতো করে বুকের ভেতর হৃদপিন্ডটা দপদপ করে জ্বলছে। আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে, সাথে ভয় ও আতংক। আমি প্রেমে পড়েছি। ভীষণ রকম মুগ্ধতায় একমায়াবীনী আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অথচ একথাটা আমার একা একা স্বীকার করতেও অস্বস্তি হচ্ছে।
এত জড়তা, ভয় আর অস্বস্তির একটাই কারণ, আমি ইমরান মাহাবুব। বয়স পঁচাত্তর । গতবছর মার্চের তিন তারিখে অামার স্ত্রী পরলোকগমন করেছেন। তিন সন্তানের জনক আমি। ছেলে -মেয়েদের বিয়ে দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে পরপারের ডাক পড়বে।
আমি যৌবনে রীতিমত প্লেবয় ছিলাম। নারী ছিল আমার কাছে দেহ স্বর্বস্ব ভোগের সামগ্রী মাত্র। অথচ বিয়ে করেছি পরিবারের পছন্দে। ৪৫ বছরের একটা বিবাহিত জীবনও ছিল আমার। তিন সন্তানের জনকও হয়েছি আমি।
অথচ কখনো ভালোবাসা জিনিসটা বুঝিনি। বিয়ে নামক সম্পর্কের মাধ্যেমে একটা দেহ পেয়েছি, যেটা একান্ত আমার ছিল। আমি যখন-তখন, যেমন খুশি ব্যবহার করতে পারতাম।
আমার আড্ডা, ফান, মজা, মাস্তি সব বন্ধুদের সাথে ছিল।
আমি বউয়ের চাহিদা মেটাতাম, আর্থিক চাহিদা, যৌন চাহিদা। প্রতিমাসে নতুন শাড়ি -গয়না কিনে দিতাম। প্রতি সপ্তাহে ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়াতাম। হাত খরচের টাকাও চাহিদা মতো দিতাম। সত্যি কথা বলতে আজ আর ভয় নেই। কখনো ভালোবাসিনি।
মন খারাপ করা অভিমানী রাতে কখনো তার পাশে গিয়ে বসিনি। কখনো তার হাত ধরে খোলা আকাশে হেঁটে বেড়াইনি। তার অসুস্থতার সময় আমি বিরক্ত হতাম। সে বিরক্তি আমি কখনো লুকিয়ে রাখতাম না। রীতিমত হাঁকডাক করে তাকে জানিয়ে দিতাম।
” বাসায় আসলে বউয়ের সুস্থ শরীর, হাসি মুখ এসব দেখতে চাই। মলিন মুখ, অসুুস্থ শরীর দেখতে চাই না।”
প্রচন্ড আত্মঅভিমানী মেয়েটা আর কখনো তার অসুস্থতার কথা আমার কাছে প্রকাশ করত না।
প্রথম ছেলেটার জন্মের সময় আমি বন্ধুদের নিয়ে পাশের রুমে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একটা সময় নবজাতকের কান্নার শব্দে জানতে পারলাম আমি ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছি। দুনিয়ায় আসার আতংকে শিশুটির গলা ফাঁটা আত্মচিৎকার করেছে। অথচ তার মা দাঁতে দাঁত চেপে সব যন্ত্রণা সহ্য করেছে। একটা শব্দ পর্যন্ত করেনি।
আমি প্রচন্ড উদাসীন মানুষটা ভেবেছিলাম, নারীদের আবার কীসের কষ্ট!
পেট ভরে খাবে, গা ভর্তি গয়না পরবে, আর স্বামীদের মনোরঞ্জন করবে।
পৌরষদীপ্ত পুরুষ হিসাবে আমার একটা আত্ম অহংকার ছিল। হেলানার মৃত্যুর কিছুদিন আগে আমার অহংকারের পতন ঘটেছে। হেলেনা আমার স্ত্রী। আমি টের পেলাম, পুরুষ হিসাবে আমার অহংকারেরর ক্ষয় হতে চলেছে।
সব যন্ত্রপাতি, জিনিসপত্রের একটা কার্যক্ষমতা থাকে। একটা মেয়াদ থাকে। অসময়ে অতিরিক্ত ব্যবহারে একটা সময় মেয়াদ উত্তির্নের আগে বিকলাঙ্গ হবে এটাই স্বাভাবিক। আমার যুবক বয়সের কথা মনে পড়ল।
প্রচন্ড অভিমানী মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কষ্ট লালন করতে করতে একদিন স্ট্রোক করে বসল। অসম্ভব রূপবতী, ষোলো বছরের কিশোরি হেলেনার প্রতি ফুলশয্যার রাতে যতটা ভালোবাসা অনুভব করিনি। পঁয়ষট্টি বছর বয়সী কুঁচকানো চামড়ার, কোটরে ঢুকানো মেয়েটার প্রতি মৃত্যুশয্যায় যতটা ভালোবাসা অনুভব করেছি।
আমি প্রাণপণে চেষ্টা করেছি তাকে ফিরিয়ে আনতে। আমি তাকে ভালোবাসি, একথাটা একটা বার ফিসফিস করে তার কানের কাছে বলতে। কিন্তু ততক্ষণে সময় শেষ হয়ে গেছে।
সে আমার ডাক উপেক্ষা করে, সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। এরপর বছর পার হয়ে গেল, আমি নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছিলাম, একটা শম্বুকের মতো।
আড্ডাবাজ মানুষটা দিনের পর দিন ঘর থেকে বের হতাম না। কারো সাথে কথা বলতাম না। কোনো মিটিং, ডেটিং কোথাও এটেন্ড করতাম না।
একটা সময় সব বন্ধু-বান্ধব চলে গেল।
যুবক বয়স থেকে আমার ইনসমনিয়া ছিল, রাতে ঘুমাতে পারতাম না। বৃদ্ধ বয়সেও সেই অভ্যাস এখনো যায়নি। প্রায় গভীর রাতে আমি টের পাই হেলেনা ফিরে এসেছে, লাল টকটকে একটা শাড়ি পরে সে আমাকে ডাকছে ছাদের দিকে। আমি তার ডাক উপেক্ষা করতে পারি না। সিঁড়ি বেয়ে আমিও তার পিছু নিলাম। যে মানুষটা আমি হাঁটুর ব্যথায় বারান্দায় পর্যন্ত বেশিক্ষণ হাঁটি না। সেই আমি দোতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলায় উঠে গেলাম।
আমি বুঝতে পারছি এটা এবটা হেলুসিনেশন। পর পর কয়েক রাত না ঘুমানোর কারণে আমার মস্তিস্ক উত্তপ্ত হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টায় ভাবনায় আচ্ছন্ন করে রাখা কিশোরিটি আমার কল্পনায় এসেছে। আমিও অবচেতন মনে মনে হেঁটে হেঁটে ছাদে চলে গেলাম।
সকাল বেলায় অজ্ঞান অবস্থায় কেয়ারটেকার আব্দুল যখন আমাকে ছাদে আবিষ্কার করল। তখন তার চিৎকার চেঁচামেচিতে সব ভাড়াটিয়ারা এসে জড়ো হয়েছে। প্রথম কিছুক্ষণ বুঝতেই পারিনি আসলে কী হচ্ছে এসব আমার সাথে।
কিছুক্ষণ পর সব মনে পড়ল। তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বিছানায়, সারা শরীর ব্যাথা। মনে হচ্ছে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি। আস্তে করে চোখ খুলে দেখলাম সামনে সব প্রিয় মুখ, ছেলে, ছেলের বউ, নাতি, মেয়ে, জামাই সবাই।
শুধু আমি যাকে দেখতে চাচ্ছি সে নেই। প্রচন্ড অভিমান হলো আমার নিজের উপর। আমি আর চোখ খুললাম না, ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে ছিলাম।
হেলেনা হাসছে, খলবলিয়ে হাসছে। তার হাসিতে মাদকতকা আছে, আমি উপক্ষা করতে পারছি না। অপরূপ মায়াবীনির ডাকে সাড়া দিয়ে আমিও তার মতো অনন্ত জীবনের উদ্দেশ্য যাত্রা করলাম।
জীবিত অবস্থায় যাকে ভালোবাসতে পারিনি। আজ থেকে তাকে ভালোবাসব। আমার যে বড্ড তাড়া।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..