1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন

# অনুগল্প # স্মৃতির_পাতা # তানজিল_মীম

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৯৪ বার
“তুমি আমায় বিয়ে না করলে আমি সুইসাইড করতে বাধ্য হবো শুভ্র’!!লোক শূন্য একটা রেস্টুরেন্টে বসে কথাটা বলে উঠলাম আমি শুভ্রকে’!!আর শুভ্র আমার কথা শুনে আমার হাত শক্ত করে ধরে বললোঃ
———“এসব কি বলছো তুমি রোজা’!!
———“যা বলছি ঠিকই বলছি তুমি আমায় বিয়ে না করলে আমি সুইসাইড করে নিবো’!!এই বলে কেঁদে দিলাম আমি’!!
———“পাগলী কাঁদছো কেন তোমায় আমিই বিয়ে করবো’!!
———“কাঁদবো না তুমি কেন বুঝতে পারছো না বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে কিন্তু এই বিয়ে আমি কিছুতেই করতে পারবো না’!!কারন আমি তোমায় ভালোবাসি আর তোমার জায়গায় অন্য কাউকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না’!!
———“সব বুঝতে পেরেছি কিন্তু এই মুহুর্তে তো আমি প্রতিষ্ঠিত নই’!!
———“ওসব আমি জানি না’!!তুমি আমায় বিয়ে করবে মানে এখনি করবে’!!আর আজকে রাতেই আমরা পালিয়ে দূরে কোথাও চলে গিয়ে সংসার শুরু করবো’!!
———–“কিন্তু???
———-“তুমি আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু সত্যি সত্যি মরে যাবো’!!
“শুভ্র আমার কথা শুনে আর কিছু না বলেই রাজি হয়ে গেল’!!আমি শুভ্রের কথা শুনে চোখের পানি মুছে শুভ্রের হাত জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বললামঃ
———“এখন আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না’!!শুভ্র আমার কথা শুনে শুধু হালকা হাসলো’!!!
“কথা মতো রাতের বেলা পরিবারের সব মায়া ত্যাগ করে ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে পালিয়ে গেলাম আমি’!!আর বাড়িতে শুধু রেখে গেলাম একটা চিঠি জানি বাড়ির সবাই আমার উপর খুব রাগ করবে কিন্তু তারপরও সব মায়া ত্যাগ করে চলে আসলাম আমি’!!কথা অনুযায়ী শুভ্র আর আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে ট্রেনে করে চলে গেলাম অজানা গন্তব্যে’!!যেখানে আমার আর শুভ্রের মাঝখানে অন্য কেউ থাকবে না’!!রাজশাহী ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পা বারিয়ে ছিলাম আমরা’!সারারাত শুভ্রের বুকে জড়িয়েই পাড় করে দিলাম’ আমি!!
“এদিকে শুভ্র সারারাত শুধু ভেবেই গেল কি করবে এখন’!!আমরা ঢাকা পৌঁছে কাজী অফিস গিয়ে বিয়ে ফেললাম’!!তারপর ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নিয়ে শুরু করলাম শুভ্র আর রোজার সংসার’!!প্রথম এক বছর আমাদের চলতে প্রচুর কষ্ট হয়েছে’!!কিন্তু শুভ্রের ভালোবাসার কোনো কম ছিল না’!!দু’বছরের মধ্যে শুভ্র একটা কোম্পানির বড় পোস্টে প্রমোশন পেয়ে গেল’!!আর সেখান থেকেই আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো’!!ধীরে ধীরে পুরো জীবন বদলে গেল আমাদের’!!আমরা নিজেরা নিজেদের বাড়ি করে ফেললাম সাথে একটা গাড়ি কিনলাম’!!পুরো বাড়িটা জুড়ে ছিল আমার শুভ্রের স্মৃতিতে ঘেরা’!!পুরো বাড়িটা আমি আমার মনের মতো করে সাজালাম’!!আমরা দুজনেই আনন্দের সাথে জীবন শুরু করে নিলাম’!!হর্ঠাৎই আমার কোল জুড়ে আসল আমাদের সন্তান’!!খবরটা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম আমরা’!!শুভ্র প্রতিদিন আমায় খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে আমার চুল আঁচড়ানো পর্যন্ত খুব যত্নসহকারে করতো’!!শুভ্রের ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে খুব ধন্য মনে হতো আমার’!!আমরা রোজ রাতে গাড়ি করে ঘুরতে যেতাম’!!এটা ছিল আমাদের ডেইলি রুটিনের মধ্যে একটি’!!
“দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল ১০ মাস’!!
“আমাদের কোল জুড়ে আসল একজন কন্যা সন্তান’!!শুভ্র ওর নাম রেখেছিল নূর’!!তারপর থেকে শুরু হলো আমাদের জীবনের নতুন গল্প’!!নূর এর যখন ২ বছর বয়স’!!হর্ঠাৎ একদিন ফোন আসলো শুভ্রের এক্সিডেন হয়েছে’!!কথাটা শুনে মুহূর্তেই মধ্যে পুরো জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল’!!কথাটা শুনেই আমি নূরকে আমাদের একজন কাজের মেয়ের কাছে রেখে চলে গেলাম হসপিটালে’!!হসপিটালে পৌঁছাতেই জানতে পারলাম শুভ্রকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে ও নাকি অনেক বড় আঘাত পেয়েছে মাথায়’!!আমি হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে প্রচুর কাঁদতে ছিলাম’!!কয়েক ঘন্টা পর ডাক্তার বের হলো’!!ডাক্তারের কথা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল’!!মুহূর্তে মধ্যে সব ধোঁয়াশা হয়ে গেল আমি লুটে পরলাম হসপিটালের ফ্লোরে’!!কারন শুভ্র যে আমায় ধোঁকা দিয়ে চলে গেল’!!এখন কি করে থাকবো আমি’!!.
“জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে দেখতে পেলাম’!!শুভ্রের কথা মনে পরতেই চেঁচিয়ে উঠলাম আমি’!!হসপিটালের বেডের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসলাম আমি’!!বাহিরে বের হতেই শুভ্রের ক্লান্তমাখা মুখ দেখলাম আমি’!!কি সুন্দর চোখ বন্ধ করে আছে ও’!!বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল আমার’!!শুভ্রের বন্ধু, বন্ধুর বউ সহ আরো কিছু মানুষ আমায় খুব সান্ত্বনা দিতে লাগল’!!কিন্তু তারপর কোনো ভাবেই নিজের ভালোবাসাকে এই ভাবে চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না’!!শুভ্রকে রেখে আসলাম ওই মাটির নিচে’!!সেদিন রাতে আর ঘুম হয়নি আমার’!!বিছানায় কিনারায় বসে কেঁদেই গেছিলাম আমি’!!আর আমার মেয়েটা ফ্লোরে বসে খেলছিল’!!আমাকে কাঁদতে দেখে ও আমার কাছে এসে বললোঃ
——-“মাম্মা কান্না কলো কে নো,,পাপা এখনি চলে আসবে’!!মেয়েটার কথা শুনে বুকের ভিতরটা ছাড়খার হয়ে যাচ্ছিল আমার’!!কি করে বুঝাতাম আমি আমার মেয়েটাকে যে ওর পাপা আর কোনোদিন আসবে না’!!মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরেই সারারাত কেঁদেই পার করে দিলাম’!!প্রচন্ড বেগে খারাপ সময় কেটে গিয়েছিল আমার’!!ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত করে নিলাম আমি’!!শুরু করলাম মেয়েটাকে নিয়ে এক নতুন জীবন’!!ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়েছিল’!!তারপরও শুভ্রের স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারলাম না’!!অবশ্য আমি ভুলতে চাই নি’!!
__________________________________________
__________________
“শুভ্রকে ছাড়াই শুভ্রের স্মৃতি নিয়েই পার করে দিলাম’ পুরো ৩০টা বছর’!!আজ আমি মৃত্যু শয্যায় মেয়েটাকেও বড় করে বিয়ে দিয়ে দিলাম’!!এখন সব ঠিক আছে’!!সবাই সুখী আর আমিও এখন শুভ্রের কাছে চলে গিয়ে আবারো সুখের জীবন শুরু করবো’!!জানো শুভ্র আজ নূর কতোটা বড় হয়ে গেছে আজকে ওর বিয়ে ওকে ওর ভালোবাসার মানুষের সাথেই বিয়ে দিচ্ছি তুমি খুশি তো’!!ওকে দেখতেও না একদম তোমার মতো হয়েছে’!!আমি জানি আমার কাছে খুব বেশি সময় নেই আমিও তোমার কাছে আসছি শুভ্র’!!আফসুস শুধু একটাই এতবছরে একবারও বাবা-মার সাথে দেখা হলো না আমার’!!হয়তো চিরকালের মতোই তারা ভুলে গেছে আমায়’!!ডাইরির শেষের পৃষ্ঠায় বড় অক্ষরে লেখা ছিল “স্মৃতির পাতা”!!এতটুকু পড়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে………..
“ডাইরিটা বন্ধ করে কেঁদে দিল নূর’!!কনের বেসে সেজে মায়ের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে দেখে নিলো নূর’!!চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গেল!!আর এখানেই শেষ হলো শুভ্র-রোজার ভালোবাসার গল্প’!!
সমাপ্ত……..’!!🥀
No photo description available.

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..