1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ১০:২৯ অপরাহ্ন

# অণুগল্প # অপেক্ষার_অবসান # রূপন্তি রাহমান ( ছদ্মনাম)

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ২১১ বার
মেইনডোরের বাইরে এতোগুলা জুতো দেখে ভ্রূদ্বয় কুঁচকে এলো। কোনো কিছু না ভেবেই কলিংবেল চাপ দিলাম। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে ছোটভাই রূপক দরজা খুলল। জুতো খুলতে খুলতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কে আসছে রে বাসায়?? ও বললো,
-আগে বলো আজকে তোমার এতো দেরি হলো কেন?
বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললাম, আর বলিস না আজকে লাইব্রেরিতে বসে নোট করতে গিয়ে এতো দেরি হয়ে গেলো।এখন বল কে আসছে?
-তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে আপু। হয়তো এবার আর তোমাকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না। এখন থেকে তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে।
– মানে?
– তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে আপু।
– আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসার সাথে ঘুমের সম্পর্ক কি?? আর আমাকে দেখতে আসছে আমিই জানি না ব্যপার টা ইন্টারেস্টিং তো। দেখতে আসলে তো মেয়ে বাড়িতে বসে সাজুগুজু করে আর আমি তো বাইরে থেকে আসলাম। আমি যে বাইরে ছিলাম ওনারা কিছু বলে নাই?? ও বললো,
– না বলে নাই। কারণ ওরা তোমার পরিচিত।
মানে বলে যেই সামনের দিকে নজর গেলো ওমনি আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে। বিচ্ছেদের প্রায় দুই বছর পরে প্রাক্তনকে দেখলাম। ওর দৃষ্টিও আমাতে সীমাবদ্ধ ছিলো। কোনো রকম নিজের চোখের পানি আড়াল করে ভাইকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম ও এখানে কি করছে?? ওর চাচা নাকি মামার জন্য দেখতে আসছে?? ও আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে,
– কি যে বলো আপু রাফাত ভাইয়ার চাচা মামা সবাই বিয়ে করে ফেলছে । সে তার নিজের জন্য আসছে।
ওমনি আম্মু আমাকে দেখে বললো ওই তো রূপন্তি চলে আসছে। ওহ আপনাদের তো বলা হয় নাই আমার নাম রূপন্তি রাহমান। অনার্স ৩য় বর্ষে সমাজকর্ম নিয়ে পড়ছি।মা বাবা আর ছোট ভাই নিয়ে পরিবার। আর আমার সামনে মা আর ছোটবোনকে নিয়ে যে বসে আছে সে আমার প্রাক্তন রাফাত আহমেদ। এসএসসির পরে যখন কলেজে ভর্তি হই তখন তার সাথে পরিচয়। পরে যা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিয়ে ছিলো। তখন সে ছিলো অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। ভাগ্যক্রমে সে ভার্সিটির ছাত্র ছিলো আমিও সেই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিলাম। আমি যখন ১ম বর্ষে সে তখন ৪র্থ বর্ষে। আমার ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে। সেই সময় শুধু তার পায়ে ধরা বাকি ছিলো। আমি তখন পুরোপুরি তার মাঝে আসক্ত ছিলাম। সে ফিরে তাকায়নি। কিন্তু আজ কি মনে করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে?? এর মাঝে রাফাতের মা মানে শাহিনূর আন্টি বললো,
– রূপন্তি তো মাত্র ভার্সিটি থেকে আসলো। ও আগে ফ্রেশ হয়ে নিক। যাও মা রুমে যাও।
আম্মুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বু কোথায়??
– তোর আব্বু আসর নামাজ পড়তে গেছে এখনো আসে নাই।
একবার রাফাতের দিকে তাকিয়ে আমার রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। দেখলাম ও আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনেক দিনের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
রুমে এসে মোবাইল বিছানায় রেখে কাবার্ড থেকে থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। একটা লম্বা শাওয়ার নেওয়া দরকার। রাফাত কে দেখে মাথা কাজ করছে না। শাওয়ার শেষে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমে এসে দেখি রাফাত বিছানায় বসে আমার মোবাইলের লক খোলার চেষ্টা করতেছে। তোয়ালে ফেলে ওর হাত থেকে ছু মেরে মোবাইল নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি আমার রুমে কি করেন?? আমার মোবাইলে হাত দিছেন কেন?? আর আব্বু আম্মু আমার রুমে আপনাকে আসতে দিলো?? আপ,,,,,,,,
– রিলাক্স কলিজা রিলাক্স। একসাথে কেউ এতো প্রশ্ন করে। আগের স্বভাব এখনো আছে। হবু বউয়ের মোবাইল ধরলে সমস্যা কি?? আর তোমার বাবাই তোমার রুমে আসতে বললো। প্রথমে আসতে চাইনি। এখন মনে হচ্ছে এসে ভালোই হলো। তোমার স্নিগ্ধ মুখটা দেখতে পেলাম। তাকে রেগে বললাম,
– এই আপনার কলিজা কে?? ফারদার এসব নামে আমাকে ডাকবেন না। আর আপনাকে বিয়ে করে কে?? এসেছেন খেয়ে দেয়ে বিদায় হন। আমি আপনাকে কখনো বিয়ে করবো না।
– খুন করে ফেলবো। আমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করলে। আমার #অপেক্ষার_অবসান হলো এতোদিনে। তাই তো দেরি করিনি। চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। খুব ভালোবাসি তোমাকে।
– ও আচ্ছা ভালোবাসেন আমাকে?? তাই নাকি। আমাকে ওভাবে অপমান করার দুই মাস পরে যখন আপনার ডিপার্টমেন্টের জেসির সাথে হাত ধরাধরি করে হাঁটতেন ওটা কি?? নাকি জেসি এখন আর পাত্তা দেয় না। কোনটা?? একবার চিন্তা করেছেন আমার কেমন লাগবে। এসব দেখলে আমি কেমনে সহ্য করবো। কেউ জানুক আর না জানুক আপনি তো জানতেন ঠিক কতটা ভালোবাসতাম।
– ভালোবাসতে?? এখন আর বাসো না??
– না বাসি না৷
– তাহলে ওইদিকে তাকিয়ে কান্না করছো কেন?? তুমি চাইলে আমার বুকে মাথা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে পারো। আমি মাইন্ড করবো না। আফটার অল এই জায়গা টা তো তোমারই।
– নো নিড। আমি যার তার বুকে মাথা রাখি না৷ আপনি এখন আসতে পারেন। আর নিচে গিয়ে বলবেন যে আপনি এই বিয়ে করতে পারবেন না।
এর মাঝে রাফাত হুট করে বললো, রূপক আমি জানি তুমি বাইরে আছো। তুমি প্লিজ নিচে যাও। তোমার বোনের সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। এটা বলেই দরজা আটকে আমাকে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আর বললো,
– আ’ম সরি কলিজা আমি বুঝি নাই তোমার এতো কষ্ট হবে। আমিও নিজেও যে ভালো ছিলাম না। কি করতাম বলো তুমি রেজাল্ট খারাপ করছিলে।আমারও ফাইনাল পরীক্ষা সামনে ছিলো তাই এই সাময়িক বিচ্ছেদ। আর তাছাড়া আমি মাস্টার্সের পাশাপাশি জবের জন্য প্রিপারেশন নিয়েছি। আমি এখন চাকরি করি রূপন্তি। শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য এতো কষ্ট। আমার সব বন্ধুবান্ধব এখনো চিল করে। আরো পরে নাকি চাকরির জন্য চেষ্টা করবে।কিন্তু আমার তো আমার রূপন্তিকে প্রয়োজন। ভাগ্যিস তোমার ভাই আমাদের রিলেশন সম্পর্কে জানতো। সেই তোমার সব খবর দিতো বলেই আমাকে ছেড়ে দিলো।তারপর দরজার দিকে অগ্রসর হলো। দরজা খুলে বাইরে যেতে যেতে বললো, ভালোবাসি রূপু। নিজের থেকেও বেশি।
তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বললাম, আমি বাসি না।
তারপর সে মুচকি হেসে বলল, আমার রূপুর চোখের ভাষা আমি পড়তে জানি। সে আমাকে ভালো বাসে না না বাসে এটাও জানি। শুধু শুধু তো আর এতোগুলা প্রপোজাল সে রিজেক্ট করে নাই। আমি শুধু তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
রাফাত বেরিয়ে যাওয়ার পর আর নিচে যাইনি। বিছানায় শুয়ে ছিলাম। সন্ধ্যায় উঠে পড়তে বসলাম কারণ সামনে পরীক্ষা। পড়ার মাঝখানে রূপক দরজায় নক করলো।
– আপু আসবো??
– আয় ভেতরে আয়। কিছু বলবি??
– আপু আব্বু কিন্তু রাফাত ভাইয়াকে পছন্দ করেছে। তুমি যদি মত দাও তাহলে সপ্তাহে শাহিনূর আন্টি এসে বিয়ের ডেট ফাইনাল করবে।
– আমি করবো না বিয়ে তোর রাফাত ভাইকে। আর আব্বু এক দেখায় রাফাত কে পছন্দ করে ফেলল?? আব্বু তো এমন না।
– কে বলল এক দেখা ভাইয়া আব্বুকে আজ ছয় মাস যাবৎ পটানোর চেষ্টা করছে। তারা একজন আরেকজনকে গত ছয় মাস ধরে চিনে।
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও আবার বলা শুরু করলো,
– আপু পাগলামি করো না। তোমাদের যেদিন ব্রেকআপ হয় সেদিন ভাইয়া আমাকে কল করেছিলো। আর বলেছিলো তোমাদের বিচ্ছেদের কথা এ ও বলেছিলো তোমাকে যেন চোখে চোখে রাখি। কোনো দূর্ঘটনা যেন না ঘটাও। তুমি আবার আবেগী কি না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলা শুরু করলো,
– আপু তোমার মনে আছে মাস কয়েক আগে তোমার জ্বর হয়েছিল?? একেবারে বিছানায় লেগে গিয়েছিলে। রাফাত ভাইয়ের অবস্থা পাগলপ্রায় হয়ে গেছিলো। একটু পরপর কল করতো। বাসায় আসতে চেয়েছিলো লুকিয়ে। অনেক বুঝিয়ে রেখেছি।
– এতো ভালোবাসলে আমাকে কেন কল করলো না??
– কারণ তোমার খবর আমার থেকে নিতো। আপু প্লিজ রাজি হয়ে যাও।
– তোর রাফাত ভাইয়ের সাফাই গাওয়া শেষ হলে আসতে পারিস।
রূপক ওর মোবাইল আমার পড়ার টেবিলে রেখে বললো, ভাইয়া লাইনে আছে কথা বলো। বলেই মোবাইল রেখে চলে গেলো।
প্রায় মিনিট পাঁচেক মোবাইলটা এমনি রইলো। তারপর হুট করে অপর প্রান্ত থেকে রাফাত বলতে লাগল,
– এখনো রাগ করে থাকবা?? আমার অবস্থাটা বুঝবা না?? তোমার সাথে প্রেম করলে হেলায় সময়টা চলে যেতো। এই সময়টা ইন্টারভিউয়ের জন্য কাজে লাগিয়েছি। এখন তোমার রেজাল্টও ভালো।
– আমার যদি বিয়ে হয়ে যেতো??
– সেজন্যতো তোমার ভাইকে কাজে লাগিয়েছি। আমার বাবা নেই আর না আছে বাবার ব্যবসা। যা করার আমাকেই করতে হতো তাই কষ্ট তোমাকেও দিলাম আমিও করলাম। তোমাকে হারাতে চাই নি। তাই চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে তোমার বাবাকে পটানো শুরু করেছিলাম। রূপু ভালোবাসি। ফিরিয়ে দিও না প্লিজ৷ নিজের করে পাওয়ার জন্য কষ্ট দিছি। একটু তো বুঝো।
অনেক চিন্তা করলাম ভালো তো এখনো ওকেই বাসি। ওকে ছাড়া তো থাকতে পারবো না। সেজন্যে তো আর কারো সাথে প্রেম ভালোবাসায় জড়াই নাই। তাই চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বললাম, আমাকে যে কষ্ট দিছো সব সুদেআসলে ফিরিয়ে দিবো কিন্তু বিয়ের পর।
– কষ্ট দাও আর যাই দাও আমাকে বিয়ে তো করবা। তুমি আমার হবা এতেই আমি খুশি। পরের টা না হয় পরে দেখা যাবে। আর একটা কথা “”ভালোবাসি””
– আমিও।
-আমিও কি??
– ভালোবাসি।
– আমার #অপেক্ষার_অবসান হলো।
আমি একজন পাঠিকা। একটুখানি লেখার চেষ্টা করলাম। আমার ভুলত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিয়েন।
May be an image of 3 people and text

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..