1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ (খালি পেটে এই লিখা পড়া নিষেধ,পুরোটা একবারে পড়তে না পারলে জিরিয়ে জিরিয়ে পড়ুন) – – – ফারহানা রহমান

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২
  • ২৫৭ বার
আমি জন্মেছি সুন্দর এই ভূখন্ডে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে যখন কন্যা সন্তান আর ছেলে সন্তানের মধ্যে বিভেদ মুছে গেছে।বড় হয়ে শুনেছিলাম আগে কন্যা সন্তান প্রসব হলে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো।সেই গা ছমছমে খবর শুনে হতবাক হয়ে আমার জন্মদাত্রীর মুখ পানে তাকিয়ে থাকতাম।কি করে পারতো? কন্যা সন্তান কি তবে মানুষ নয়? যাক সে বিভীষিকা, আমি মুক্ত আকাশে নিজের নাম লিখেছি আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে,আশির দশকে।জন্মামাত্র নীল আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করে পৃথিবীকে জানিয়ে দিয়েছিলাম… আমি এসেছি।এসেছি লাল সবুজের দেশে,কাশ ফুলের দোলনায় বসে দোয়েল -কোয়েলের সাথে কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি “…. গাইতে।সেদিন সলতের আগুনে তেল গরম করে কাটা নাড়ির যন্ত্রণায় সেঁক দিচ্ছিলেন আমার ধাইমা। আজ মুক্ত আকাশে র নক্ষত্র নিয়ে দিন-রাত পরীক্ষা চালাচ্ছেন আমারই মতো নীরিক্ষা প্রিয় কোন নারী বিজ্ঞানী । ধীরেধীরে শৈশব পারি দেয়া,মাঠে প্রান্তরে ছুটে বেড়ানো,শাপলা দিঘিতে বাড়ীর রাখালের সাথে হাঁটু পানিতে শাপলা তোলা,পদ্মফুলের পাতায় ভোড়ল খাওয়া,নাড়ার আগুনে ধানক্ষেতে বরবটি পুড়িয়ে খাওয়া,বনভোজনে মেতে ওঠা,আর দিগন্তের পানে ছুটে চলা… সে কি দূর্দান্ত শৈশব! আমি বারবার ফিরে যেতে চাই সেই সবুজ মাঠে,জোড়া পুকুরে পা ডুবিয়ে বরই খাওয়ার দিনে। কোথায় আছেন আজ বেগম রোকেয়া, তিনি যদি দেখতেন তাঁর মেয়েরা আজ মুক্ত,স্বাধীন, তাঁর মেয়েরা আজ শিক্ষা দীক্ষায় অনেক এগিয়ে,তাঁর মেয়েরা আজ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করে,তাঁর মেয়ে আজ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী… তিনি নিশ্চয়ই তৃপ্তির একটি ঢেকুর তুলতেন।
শৈশবেই মায়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা হয়েছে।আমার বাবা ছিলেন ঘোড়াশাল সার কারখানার লেবার অফিসার।সে-সময় কিভাবে অন্যায় আর জুলুম সহ্য করতে হয়েছিলো বাঙালি জাতিকে সব শুনেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনেছি।সমুদ্রের গর্জনের মতো তাঁর কন্ঠের জাদু একত্রিত করেছিলো ৭ই মার্চএর ভাষণে। বাঙালির ছিল একবুক আত্মবিশ্বাস আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উপর ভরসা।অস্ত্রে সাজসজ্জাহীন ভাবে বাঙালি ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটা নিজস্ব ভূখণ্ড পেয়েছিলো বাংলাদেশের মানুষ। আমি গল্প শুনেছি। জুলুমের বিরুদ্ধে কিভাবে একত্রিত হয়ে লড়তে হয় এটা শিখেছি।আজ ভোরের আজানে ভেসে আসে সুখের স্পন্দন। যুগে যুগে কবি সাহিত্যিক জন্মেছেন,তাঁরা তাঁদের সাহিত্যকর্ম দিয়ে ডুবন্ত আশা আকাংখাগুলোকে বাঁচিয়েছেন,ভবিষ্যতে ও কবি সাহিত্যিক জন্ম নিবেন।পার্থক্য একটাই… মুক্তিযুদ্ধের আগের কবি সাহিত্যিক দের চিন্তাভাবনা, সৃষ্টিশীল কাজকর্ম গুলো ছিলো অনেকটা নিয়মে বাঁধাধরা, মনের অবচেতনে যা চলতো তার সবটুকু বহিঃপ্রকাশ হয়তো করতে পারতেন না।আর এখন অর্থাৎ স্বাধীনতা পরবর্তী কবি, সাহিত্যিক, লেখকদের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।এঁরা মুক্ত আকাশে নিজের কাব্য চর্চা করে,স্বাধীন ভাবে নিজস্ব ভূখণ্ডে ভ্রমণ করে,নিজের ভাষায় কষ্ট,আনন্দ লিপিবদ্ধ করে,এঁরা নিজেকে মুক্তচিন্তার মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করে,করতে পারে।
পেশায় বর্তমানে আমি একজন শিক্ষক।প্রায় ঊনিশ বছর এই মহান পেশায় আছি।আমার এক কলিগ একদিন আমায় বলেছিলেন “আপনার তো অনেক মেধা,আপনি প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকতায় কেন এসেছেন?”…আমি একগাল হেসে জবাব দিয়েছি” আপনি কি নিজেকে মেধাশূন্য মনে করে এ পেশায় এসেছেন?”… আমার চাকরি হয়েছে এমন সময় যে সময় আমি পড়াশুনা করছি অনার্স। এমন মুক্ত স্বাধীন দেশে শুধুমাত্র মেধার উপর যে চাকরি হয় সেটা নিজেকে দিয়েই প্রমাণ পেলাম।সে-সময় বেতন যা পেতাম তা দিয়ে বাস ভাড়া, রিক্সাভাড়া দিয়ে হাতে কিছু থাকতো না।তবু প্রশান্তি আমি নিজের মেধায় চাকরি পেয়েছি,কোনও মামা,খালু,পলিটিকাল হেল্প,মোটা অংকের টাকা কিছুই প্রয়োজন পড়ে নি।একটা বাস্তব কথা বলি,সরকারি চাকরি পেতে মোটেও এতসব বাজে হয়রানির প্রয়োজন নেই। মেধাশক্তি আর সততা থাকলেই যে-কোনভাবে যে কারোরই জীবন সুন্দর হয়।
আর থাকতে হয় সুস্থ মানসিকতা,সুস্থ বিনোদনের ব্যাপক আয়োজন। আসলে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে এই বৈশ্বিক মহামারী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জে কে কিভাবে টিকতে পার,টিকে থাকো।মহাবিশ্ব রহস্যাদি যেমন ছিলো, আজ অনেকটাই উন্মোচিত… বিজ্ঞান আজ হাতের মুঠোয়।মুঠোফোনে ঘরে বসে লেখাপড়া, অন লাইনে ব্যাবসা -বাণিজ্য,পরিদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কী হচ্ছে না,সব ঘটছে মুক্ত স্বাধীনভাবে।হয়তো পিছিয়ে রয়েছি কিন্তু থেমে নেই।”বাঙালি জাতি কে দাবায়ে রাখতে পারবে না”….বলেছেন সেই মহাসিন্ধু,বঙ্গবন্ধু। আমরা থেমে নেই,কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না,কারো কাছে বাঙালি নতি স্বীকার করবে না।স্বাধীনতার উদিত সূর্য সে দিন-ই অস্ত যাবে,যেদিন পৃথিবীতে মহাপ্রলয় আসবে।সুখী হওয়ার জন্য খুব বেশি কিছু প্রয়োজন নেই।একটি স্বাধীন পতাকা আপনাকে যে প্রশান্তির ছায়া দিবে তা অন্য কোন বটবৃক্ষ দিবে না।মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা আপনাকে সুস্থ বিনোদনে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখবে,আর বাঁচতে কে না চায় বলুন?
আমিও বাঁচতে চাই সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে, আর এ কারনেই আমার লিখালিখির সাথে যুক্ত হওয়া।মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার একটাই উপায় তা হলো সুস্থ মানসিকতার মানুষের সাথে সাহিত্য চর্চা করা।কর্মব্যস্ততার কারনে আমরা অনেক সময় ক্লান্তি অনুভব করি,অকারণে খিটখিটে মেজাজের আচরণ করি।নির্দিষ্ট একটা গন্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলি।জীবন টা ছোট করে ফেলি।আসলে জীবনে মৌলিক চাহিদা,যৈবিক চাহিদার পর ও চাহিদা মানুষের থাকে আর সেটা হলো নিজের মানসিকতা অনুযায়ী এমন কেউ অথবা এমন কোনও মাধ্যম থাকা, যার কাছে নিজের একান্ত গোপন প্রতিবেদনগুলো জমা দেয়া যায়।আমার কাছে পরনিন্দা পরচর্চার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সাহিত্য চর্চা করা।এটা হতে পারে কবিতা আবৃত্তি করা,হতে পারে গান শুনা,হতে পারে কাব্য লিখা,হতে পারে গল্পের বইসহ বিভিন্ন গ্রন্থ পড়া।পরিবারের সাথে সময় কাটানোটাও একটা সুস্থ বিনোদনের অংশ।আমরা নিজেদের সন্তানদের কতটুকু সময় দিতে পারি?অথবা পরিবারের মুরুব্বিদের সাথে কতটুকু সময় বসে গল্প করি? উনারা আমাদের কাছে টাকাপয়সা, জমিজিরাত কিচ্ছু চান না,চান একটু সময়।তাঁদের সাথে সময় কাটানো আমাদের জন্য সৌভাগ্য।কেন তবে অসুস্থ বিনোদনের জন্য নিজেদের দূর্ভাগ্য বয়ে আনছি?
আমি শিক্ষকতা পেশায় এযাবৎ একটি বিষয় বুঝেছি,স্কুল হলো একজন ছাত্রর জন্য শোধনাগার। সকল প্রকার অনৈতিক,অসামাজিক, অসৌজন্যতা বিবর্জিত একটা মানবিক প্রতিষ্ঠান হলো বিদ্যালয়। একজন শিক্ষক তার সিলেবাসের বাইরে যতকিছু শেখান তত কিছু সিলেবাসে লিপিবদ্ধ থাকে না।আজ আমার ছাত্ররা আমাকে তাদের আদর্শ মনে করে,এরচেয়ে বড় গৌরব আমার জন্য কিছু নেই।আমি তাদের শেখাই কি করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে,কি করে ভোগী নয় ত্যাগী হতে হবে,
কি করে ঘৃণা থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে।সেদিন হিন্দু ধর্ম ক্লাসে পড়াচ্ছিলাম “ঈশ্বর সকল জীবের মধ্যে বিদ্যমান,তাই ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে,তবেই ঈশ্বর কে ভালোবাসা যাবে”…. এই লাইন টা পড়িয়ে আমি বললাম আমরাও তো ঈশ্বরের সৃষ্টি,আমাদের অন্তরে যদি ঈশ্বরের বাস হয়,তাহলে আমাদের অন্তর কে বড় করতে হবে,কি বল তোমরা?সকলেই একসাথে বলে উঠলো ” জ্বি, ম্যাম”…. আমি বললাম আমাদের অন্তর টা যদি আমরা সংকীর্ণ করে ফেলি তাহলে অল্প জায়গায় ঈশ্বরের অবস্থান করতে অসুবিধা হবে।তাই আমরা আমাদের মন বা অন্তর কে উদার করব,কোনও রকম হিংসা মনের মধ্যে আনবো না,মনে অহংকার আনবো না।ছাত্ররা সবাই একমত হলো।এতসব কথা কি সিলেবাসে ছিলো? নিশ্চয় নয়।খেলাধুলা ও শরীরচর্চা পারে একজন মানুষকে সঠিক জীবনাভ্যাস দিতে।একজন পরাধীন মানুষ যখন পথ চলতে চায়,সকল বন্ধ দুয়ারে তাকে আঘাত খেতে হয়।পরাধীনতা স্বীকার করে নেয়াটাই অসুস্থতা। এই স্বাধীন মাটিতে সবুজ ঘাসে ভোরের শিশিরে কেউ যদি পা না মারিয়ে রাতজেগে নেটের দুনিয়ায় পড়ে থাকে,সে তো কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ পাবে না।আমার ফুলবাগানে সকালের সোনা রোদে সদ্য ফোঁটা গোলাপ ফুলের স্নিগ্ধ হাসিটাই যদি না দেখলাম,তবে আমি কি দেখলাম? কতটুকু স্বাধীন আমার ইচ্ছেগুলো? কতটুকু মুক্ত আমার স্বপ্নগুলো!

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..