1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

# # নারী শিক্ষার পথিকৃৎ নওয়াব ফয়জুন্নেসা # কাওসারী

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১
  • ২৯২ বার
নবাব ফয়জুন্নেসা দক্ষিন এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র মহিলা নওয়াব ও নারী শিক্ষার পথিকৃৎ। তাঁর জন্ম হয়ে ছিল ১৮৩৪ সালে বর্তমান কুমিল্লা জেলার, লাকসাম উপজেলার অন্তর্গত পশ্চিমগাঁয়ে ( সে সময়ে হোমনাবাদ পরগনা)। তার জমিদার বাড়িটি ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। বাড়িটিতে একটি প্রবেশদ্বার, বসবাসের জন্য দ্বিতল বিশিষ্ট ভবন, একটি কাছারিঘর, বাগানবাড়ি, মসজিদ ও কবরস্থান রয়েছে।
নবাব ফয়জুন্নেসার জমিদার বাড়িটি এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরীরানী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সম্ভান্ত্র এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ে করেন আরেক জমিদার গাজী চৌধুরীকে ১৮৬০ সালে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। জনশ্রুতি আছে বিচ্ছেদের দেন মোহরের এক লক্ষ টাকা দিয়ে তিনি নিজে একটি বাড়ি তৈরি করেন। ঐ সময় তিনি নিজে জমিদারীর প্রশিক্ষণ নেন ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে জমিদারী পরিচালনা করেন। তার জমিদারীর আওতায় প্রায় হোমনাবাদ পরগণার, বর্তমান সময়ের কুমিল্লা জেলার মোট ১৪ টি মৌজা ছিল। ১৪টি মৌজাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৪ টি কাছারিঘর ছিল। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী জমিদার, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। তার জমিদারীর অধিকাংশ আয় এই নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় করেন। তাঁর এই সাহসী উদ্যোগ ও সাফল্যের কারণে তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়া তাকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “নওয়াব” উপাধিতে ভূষিত করেন। যা পুরো ভারত বর্ষে একমাত্র মহিলা হিসেবে তিনিই পান।
ফয়জুন্নেসা বাবার প্রথম কন্যাসন্তান। জমিদার বংশের সন্তান হিসেবে বেশ আরাম আয়েশের মধ্য দিয়ে তিনি বেড়ে ওঠেন। ছোট বেলা থেকেই তাঁর পড়াশোনার প্রতি ছিল দারুণ আগ্রহ, তাই দেখে বাবা তাঁর জন্য গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত করেছিলেন। গৃহ শিক্ষকের সাহায্যে তিনি খুব দ্রুত কয়েকটি ভাষার উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। বাংলা, আরবী, ফার্সি ও সংস্কৃত।
১৮৭৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি পশ্চিমগাঁয়ের জমিদারী লাভ করেন ও ১৮৮৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের সম্পত্তির উওরাধিকারী হন। ১৮৭৩ সালে ( বেগম রোকেয়ার জন্মের সাত বছর পূর্বেই) নারী শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য কুমিল্লায় একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই উপমহাদেশে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের প্রাচীন স্কুলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
দেশে বিদেশে শিক্ষার প্রচারে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। নবাব ফয়জুন্নেসা পশ্চিমগাঁয়ে একটি অবৈতনিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাতে মাদ্রাসার ছাত্রীদের জন্য একটি হোস্টেলও ছিল। মাদ্রাসায় ভালো ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীতে তাঁর বংশধরগন ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দে এটিকে উচ্চ মাধ্যমিক ইসলামিক কলেজে রুপান্তরিত করেন ও ১৯৬৫ খীঃ কলেজটিকে একটি ডিগ্রি কলেজে রুপান্তরিত করে নওয়াব ফয়জুন্নেসা ডিগ্রী কলেজ নামে আখ্যায়িত করেন। ১৯৮২ সালে এ কলেজটি সরকারিকরন হয় ও নাম হয় “নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ”। এছাড়া তিনি ও তাঁর মেয়ে বদরুন্নেসা পশ্চিমগাঁয়ে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানেও মেয়েদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্হা করেন। তাঁর জমিদারীর আয় থেকে মেয়েদের জন্য নির্মিত এ কলেজে সব ধরনের খরচ বহন করা হত। মেয়েদের জন্য মাসিক বৃওির ব্যবস্হাও করেছিলেন। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে তিনি সমস্ত নারীদের জন্যই চিন্তা ও কাজ করে গেছেন। ” ফয়জুন্নেসা হাসপাতাল ” নামে ১৮৯৩ সালে নওয়াব বাড়ির কাছে একটি মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র হাসপাতাল নির্মান করেছিলেন। তিনি ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনেক গুলো দাতব্য প্রতিষ্টান হাসপাতাল, এতিমখানা ও সড়ক নির্মান করে সমাজ সংস্কারের অনন্য নিদর্শন স্হাপন করেন। তিনি নওয়াব বাড়ির সদর দরজায় একটি দশ গম্বুজ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
রবীন্দ্রযুগে যে ক’জন বাংলা সাহিত্য সাধনা করে যশ ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা তাদের মধ্যে অন্যতম। কলকাতার ঠাকুরবাড়ির সখী সমিতির সদস্যও ছিলেন তিনি।
তাঁর সাহিত্য সাধনায় খুব অল্প সময়ে তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের সমসাময়িক লেখিকা ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম নারী যার মুসলিম গদ্যপদ্যে সব ক্ষেত্রেও বিচরণ ছিল। ১৮৭৬ খ্রীস্টাব্দে ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা গিরিশচন্দ্র মুদ্রণ থেকে শ্রীমতি নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরীরানী রচিত সাহিত্য গ্রন্থ “রুপজালাল” প্রকাশিত হয়।
ব্রিটিশ অপশাসনের ফলে মুসলিম সমাজে কুসংস্কারের বেড়াজালে থেকেও তিনি সাহিত্য সাধনার ক্ষেত্রে এক গৌরবময় স্হান অধিকার করে ছিলেন। রুপজালাল ব্যতীত ফয়জুন্নেসার আরও দু’খানি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। ” সঙ্গীত লহরী” ও “সঙ্গীত সার”, যা প্রকাশিত হলেও এখন দুষ্প্রাপ্য।
২০০৪ সালে ফয়জুন্নেসাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। তাঁর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী নিবাসেরও নামকরণ করা হয় “নওয়াব ফয়জুন্নেসা ছাত্রীনিবাস”। ১৯০৩ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর এই মহীয়সী নারীর জীবনাবসান ঘটে। তাকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দশ গম্বুজ মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
কিছু দিন আগেও তাঁর এ ঐতিহাসিক বাড়িটি অযত্ন ও অবহেলার কারণে নষ্ট হতে চলছিল। ভবনের দেয়ালে শ্যাওলা ও গাছগাছালি জন্মাচ্ছিল। বর্তমান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ বাড়িটি সংস্কার করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..