1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন

রম্য গল্প ### রোদ্দুশী রাধারাই

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২১
  • ৫৬০ বার
একজন জেলা শিক্ষা অফিসারকে পাঠানো
হলো একটা হাই স্কুল পরিদর্শনের জন্য।
তাকে নির্দেশ দেয়া হলো পরিদর্শন শেষে
স্কুলটি এম.পি.ওভুক্ত করার উপযোগী কি না
সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তার
মতামত পেশ করবেন।
শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের আগমন উপলক্ষে
স্কুলটাকে পরিপাটি করে সাজানো হলো,
ছাত্র-ছাত্রীদের নির্দেশ দেয়া হলো
স্যার যা জিজ্ঞেস করেন সবাই যেন তার
ঠিকঠাক জবাব দেয়।
শিক্ষা অফিসার মহোদয় স্কুলে পৌঁছলে
শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী সবাই তাকে স্বাগত
জানাল। শিক্ষা অফিসার স্কুলের পরিবেশ
দেখে মুগ্ধ, তিনি প্রধান শিক্ষককে বললেন,
“বাহ! আপনার স্কুলটা দেখছি খুব সুন্দর।”
প্রধান শিক্ষক বিগলিত স্বরে বললেন, “সব
আপনাদের দোয়া, স্যার। তবে আমি হলফ
করে বলতে পারি স্যার আমার স্কুল দেখে
আপনি যেরকম মুগ্ধ হয়েছেন তার চাইতেও
বেশি মুগ্ধ হবেন আমার ছাত্র-ছাত্রীদের
মেধা দেখে।”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় মাথা নেড়ে
বললেন, “ভাল, খুব ভাল।”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় প্রধান শিক্ষকের
কক্ষে কিছুক্ষণ বসে শ্রেণী কক্ষ পরিদর্শনে
বের হলেন, সাথে প্রধান শিক্ষক সহ আরও
কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষা অফিসার মহোদয়
প্রথমে ঢুকলেন ক্লাস সেভেনে, তাকে
দেখে সকল ছাত্র-ছাত্রী উঠে দাঁড়াল।
শিক্ষা অফিসার মহোদয় সামনের বেঞ্চের
এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “বলতো,
সোমনাথ মন্দির কে ভেঙ্গেছে?”
ছাত্রটি ভয়ে ভয়ে মাথা নেড়ে বলল, “স্যার
আমি জানিনা।”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় ক্লাস এইটে
গেলেন। সেখানেও একই প্রশ্ন করলেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে
বলল, “স্যার, আমরা জানিনা স্যার। আমরা
কোন মন্দির ভাঙ্গিনি।”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় মহাবিরক্ত হয়ে
ক্লাস নাইনে গেলেন, সেখানেও জিজ্ঞেস
করলেন, “সোমনাথ মন্দির কে ভেঙ্গেছে?”
একটা চঞ্চল ছেলে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার
আমরা ভাঙ্গিনি। ক্লাস টেনের ছাত্ররা
খুব দুষ্টু, ওরাই হয়তো ভেঙ্গেছে।”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় রাগে দাঁতে দাঁত
ঘষলেন। প্রধান শিক্ষকের কপালে ঘাম
দেখা গেল, তিনি বুঝে ফেলেছেন তার
স্কুলের এম.পি.ওভুক্তি এযাত্রায় আর
হবেনা।
শিক্ষা অফিসার মহোদয় এবার ক্লাস টেনে
গেলেন এবং যথারীতি একই প্রশ্ন করলেন।
সবাই একই উত্তর দিল, “আমরা জানিনা
স্যার।”
প্রচণ্ড রাগে শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের
মুখ লাল হয়ে উঠল। তিনি হিংস্র চোখে
প্রধান শিক্ষকের দিকে তাকালেন,
চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, “সোমনাথ মন্দির
কে ভেঙ্গেছে বলতে পারেনা, এই আপনার
ছাত্র?”
প্রধান শিক্ষক ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
“স্যার, বিশ্বাস করুন স্যার, আমার স্কুলের
ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা খুব কড়া শাসনের
মধ্যে রাখি। এরা সত্যি বলছে স্যার,
সোমনাথ মন্দির এরা ভাঙ্গেনি; কে
ভেঙ্গেছে সেটাও দেখেনি।”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় হাসবেন না
কাঁদবেন কিছুই বুঝতে পারলেন না।
অফিসে গিয়ে শিক্ষা অফিসার মহোদয়
ঢাকায় রিপোর্ট পাঠালেন। রিপোর্টের
সারমর্ম হলো, ‘সোমনাথ মন্দির কে
ভেঙ্গেছে স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক কেউই
বলতে পারেনা। এই স্কুলকে কোন
অবস্থাতেই এম.পি.ওভুক্ত করা যাবেনা।’
এক মাস পর শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের
নিকট একটা চিঠি এল। চিঠিতে ঐ স্কুলের
এম.পি.ওভুক্তির ঘোষণা দেয়া আছে। চিঠি
পড়ে শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের মাথায়
আগুন ধরে গেল। তিনি কালবিলম্ব না করে
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনার জন্য
ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। হেড অফিসে
পৌঁছেই তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে
চিঠিটা দেখিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলেন,
“স্যার. এটা আপনি কী করলেন?”
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললেন, ” কেন, কী
হয়েছে?”
“এই স্কুলকে কীভাবে আপনি এম.পি.ওভুক্ত
করলেন?”
“কেন, সমস্যা কোথায়?”
“আমি আমার রিপোর্টে লিখেছি,
সোমনাথ মন্দির কে ভেঙ্গেছে এই স্কুলের
ছাত্র-শিক্ষক কেউ জানেনা……”
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শিক্ষা অফিসার
মহোদয়কে থামিয়ে দিয়ে শক্ত কণ্ঠে
বললেন, “শুনেন, আপনাকে স্কুলে পাঠানো
হয়েছিল পরিদর্শনের জন্য- জিজ্ঞাসাবাদ
করার জন্য নয়। আর এরা যদি সোমনাথ
মন্দির ভেঙ্গেও থাকে সেটা কখনো
আপনার কাছে স্বীকার করবে?”
শিক্ষা অফিসার মহোদয় অধিক শোকে
পাথর হয়ে গেলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..