1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে কারা, প্রশ্ন হাইকোর্টের

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৩৫৫ বার
দুই দশক আগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে এই মামলার অপূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে উচ্চ আদালত।
হাইকোর্ট মনে করে, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যাচেষ্টায় নেপথ্যের খলনায়কদের খুঁজে বের করা যায়নি তদন্তে।
আড়াই বছর আগে বিচারিক আদালত ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যে আদেশ দেয়, বুধবার সেটি বহাল রাখে উচ্চ আদালতও।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে বাংলায়। এই রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতিরা মামলার তদন্ত নিয়ে এই প্রশ্ন তোলেন।
এতে বলা হয়, ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে কেউ আফগানিস্তান ও কেউ পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের তৎপরতার আড়ালে যাদের বিচরণ ছিল, তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের আরও গভীরে যাওয়া উচিত ছিল। তদন্তকাজে আরও ‘অধিকতর মনোযোগী’ হওয়া উচিত ছিল।
রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামিরা এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছিল যা বাস্তবায়িত হলে এ দেশে আরেকটি ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হতো। তাই বিচারিক আদালত দোষী সাব্যস্ত করে যে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে তা যথার্থ এবং আইনসম্মত।
২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
ঘটনাচক্রে স্থানীয় এক শ্রমজীবী মানুষ বোমার তার খুঁজে পান। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ও একই সালের ২৩ জুলাই হেলিপ্যাডের কাছ থেকে ৪০ কেজি ওজনের দুটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে।
প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আসার কথা শুনে মুফতি হান্নানসহ আসামিরা সাবান কারখানায় শক্তিশালী বোমা দুটি তৈরি করেন।
এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি।
মামলায় ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি। ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও ৯ জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০১০ সালে গোপালগঞ্জ আদালত থেকে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
এই মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১০ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়।
দীর্ঘ তদন্তে অনেক ফাঁক রয়ে গেছে বলে মনে করে হাইকোর্ট। দুই বিচারপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাটিকে হালকাভাবে দেখার অবকাশ নাই। এ ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্তের গভীরে যাওয়া উচিত ছিল।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ আরও যারা ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ভোররাতের বিভীষিকাময় ঘটনার মধ্য দিয়ে শহিদ হওয়ার কারণে এই সার্বভৌম দেশটি যতটুকু পিছিয়ে গিয়েছিল, ঠিক আবারও একটি ঘটনার অবতারণা শুরু হয়েছিল এ ঘটনার মধ্য দিয়ে।’
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরে বিচারপতি বলেন, ‘দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে এমনিভাবে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা বিরল। কাজেই এ মামলায় সংঘটিত ঘটনাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের ভয়াবহ অপরাধ আসামিরা করতে চেয়েছিল কেন?’
পর্যবেক্ষণে সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আসামিদের জবানবন্দি পর্যালোচনার কথা বলে লেখা হয়, আসামিরা ঢাকার মোহাম্মদপুর ও মুগদাপাড়া অফিসে বৈঠক করেছিল। সেখানে তারা মতামত প্রকাশ করে যে, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামবিদ্বেষী এবং ভারতের দালাল হিসেবে ইসলাম ধ্বংসের কাজে লিপ্ত।’
‘সুতরাং তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারকে উৎখাত করতে হবে হত্যার মধ্য দিয়ে। কিন্তু কী ধরনের ইসলামবিরোধী কার্যক্রম তৎকালীন সরকার করেছিল বা ভারতের সঙ্গে কী ধরনের আঁতাত করেছিল এরূপ কোনো বক্তব্য বা দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কেউ উল্লেখ করেননি’- লেখেন বিচারপতি।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আসামিদের একটি অবাস্তব এবং ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে।’
আদালত বলে, ‘অবস্থা যাই হোক না কেন, আসামিরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে তৎকালীন সরকারকে দোষারোপ করেছিল। অথচ ইসলামের মূল্যবোধ, হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শিক দিকগুলো এ দেশের মুসলিম বাঙালিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য এবং আগত জেনারেশনকে উদ্বুব্ধ করার জন্য বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুধু তাই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপারেও তিনি সজাগ ছিলেন।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘আসামিরা যাদের (সরকার) ইসলামবিদ্বেষী বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তারাই বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত। অথচ একসময় ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ও কর্মে পুরো দেশ ও সমাজ অশান্তিতে বিরাজমান ছিল।’
আসামিদের এ ধরনের ধ্যানধারণা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কারণ, ইসলাম শান্তির ধর্ম।
পরে আদালত এ মামলায় আসামি সরোয়ার হোসেন মিয়াকে খালাস দিয়ে রায় দেয়। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জনসহ বাকিদের সাজা বহাল রাখে আদালত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..