1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

মহাকালজয়ী মহানায়কের শুভ জন্মদিন – – – মোনায়েম সরকার

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২
  • ১৬২ বার
আজ ১৭ মার্চ, ২০২২ খৃষ্টাব্দ। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুভ জন্মদিন। বাংলার মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতার জন্মদিন ঘিরে দেশে-বিদেশে নানামুখী কর্মকাণ্ড গৃহীত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন যেমন গুরুত্ব পেয়েছে, তেমনিভাবে সম্মানিত হচ্ছে উদীয়মান বাংলাদেশের গণমুখী কার্যক্রম। যে মহামানবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারত না, তাকে ঘিরে একটু অন্যরকম আনন্দ-উত্সব হবে—এটাই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে বাঙালি জাতিও সম্মানিত হয়। কেননা বঙ্গবন্ধুর লড়াই-সংগ্রামের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির জীবনমান উন্নতকরণ। নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা হিসেবে—জননায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন নেতৃত্ব চিরদিন বাঙালি জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধুই বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়। পঁচাত্তর-পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর এই পরিচয় চিহ্ন মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নাম কোনোদিনই মুছে যাওয়ার নয়।
বঙ্গবন্ধুই আমাদের একমাত্র দিশারী। বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করেই আমরা সত্য হতে পারি, সচেতন হতে পারি, দক্ষ কর্মী ও দেশপ্রেমিক হয়ে দেশকে গড়ে তুলতে পারি। এ কথা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বঙ্গবন্ধুই আমাদের ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধুই আমাদের ভবিষ্যৎ। বঙ্গবন্ধু আমাদের মঙ্গলের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্যই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত পথে অগ্রসর হয়ে যদি আমরা এ দেশে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যদি এ দেশের নিপীড়িত জনগণের জন্য অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি তবেই বঙ্গবন্ধুর আত্মদান সার্থক হবে। আর এ কার্যসাধনে বঙ্গবন্ধুর অমলিন স্মৃতিই হবে আমাদের পথপ্রদর্শক। আজ যদি আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভুলে যাই, তার আদর্শকে বিস্মৃত হই তবে যে জাতি হিসেবেই আমাদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়বে তাই নয়, পৃথিবীর জন্যও তা এক মহাক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শোষিত ও নিপীড়িত জনগণের জন্য প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে সকল বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা সারা পৃথিবীর মানুষের জন্যই শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয় বিষয়।
এতদিন আমাদের মুজিবপ্রেম ছিল অনেকটা লোকদেখানো বিষয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে তা মননে ঢুকতে শুরু করেছে। এটা শুভ লক্ষণ। আগে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও শাহাদাত দিবসে নেতাকর্মীরা মাইক বাজাত, তোরণ বানাত আর খিচুড়ি খেত, এখন এই প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ ও নানামুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। আজ বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হয়েছে, প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়া চীন’। তার এবং স্বাধীনতার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হচ্ছে নানারকম ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ, যেমন সোহরাওয়াদী‌র্ উদ্যানের গ্লাসটাওয়ার, শিখা চিরন্তন, শেখ মুজিবের জনস্থান টুঙ্গিপাড়ার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি। পঁচাত্তরে মুজিব সমাধির যে চেহারা ছিল আজ তা নেই। তার বাড়ির ভাঙা দরজাও আজ বদলে গেছে। এই ছবিগুলো আছে ‘হু কিলড মুজিব’ আর ‘বাংলাদেশের সমাজবিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ গ্রন্থে। ছবিগুলো সে সময় দিল্লিতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়েই ‘হু কিলড মুজিব’ গ্রন্থের লেখক এ এল খতিব (আবদুল লতিফ খতিব)-এর হাতে পৌঁছেছিল। ছবিগুলো সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমারও কিছু ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমাদের শুধু এখানেই তৃপ্তির ঢেঁকুর গিললে হবে না, আরো ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত কর্মীরা কেউ মাথায় পাগড়ি বেঁধে ফেরিওয়ালা হয়ে পালিয়েছিল, কেউ স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হয়েছিল ঘরের মধ্যে বসে থেকে। আমার ভয় হয়, আবার যদি ১৫ আগস্টের মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের অবস্থা কী হবে? আমরা আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের আদর্শ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাংস্কৃতিক শুদ্ধতা নিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মৌখিকভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করার প্রস্তাব উত্থাপন করি। কিছু দিন পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবের সঙ্গে তার নিজের কিছু পরিকল্পনা যুক্ত করেন। এর ফলে দুটো সুবিধা হয়েছে, একটি হলো—সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন, অন্যটি হলো— স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন। এই দুটি বিষয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে চিন্তা থেকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছেন এবং যে সময় তিনি নির্ধারণ করেছেন (২০২০-২০২১) তা যথার্থই হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ কে, কীভাবে গ্রহণ করেছেন জানি না, তবে বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ২০১৮ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আমরা একটু আগে থেকেই এই চিন্তা করেছিলাম বলে বেশকিছু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করতে পেরেছি। বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন একটি ছোট্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান হলেও এর কর্মকাণ্ড আজ আর ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। মুজিববর্ষ ঘিরে আমরা ২০টির মতো বই প্রকাশ করেছি, মৌলিক দুটি কালজয়ী গান নির্মাণ করেছি এবং দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে পোস্টার, লিফলেট প্রকাশ করেছি। আমরা চেয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে দেশে-বিদেশে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা গেঁথে দিতে, বর্তমান সরকার সে বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক বলেই মনে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন—‘বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত—আমি শোষিতের দলে।’ আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু শোষিত মানুষের পক্ষেই লড়াই করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বাংলা সত্যিকার অর্থেই সোনার বাংলা হয়ে উঠত। ঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুকে সেই সুযোগ না-দিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে পা-দিয়ে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এর ফলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ, মুখ থুবড়ে পড়ে বঙ্গবন্ধুর আজন্মলালিত স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার প্রদর্শিত পথেই নিরলসভাবে হেঁটে চলেছেন। তিনি দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যে মহামানবের আপসহীন সংগ্রাম ও দূরদশী‌র্ নেতৃত্ব বিশ্বের বুকে নতুন পরিচয়ে বাঙালিকে পরিচিত করে, তার শুভ জন্মতিথিতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ১৩ মার্চ, ২০২২
মোনায়েম সরকার
১৭ মার্চ ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..