1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু বিপ্লব ও আমাদের সোনার বাংলা – – – শাবলু শাহাবউদ্দিন

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৮১ বার

 

বিপ্লবের আক্ষরিক অর্থ আমূল পরিবর্তন।বিভিন্ন সময়ে মানব সমাজে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়,     সাংস্কৃতিক ইত্যাদি অঙ্গনে নানা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বিভিন্ন বিপ্লবের মাধ্যমে। ঠিক তেমনি আমাদের দেশে ও চলছে এমনি এক বিপ্লব।বঙ্গবন্ধু বিপ্লব। যে বিপ্লবের সূচনাকাল শুরু হয়েছে একাবিংশ শতাব্দির প্রথমআর্ধের দ্বিতীয় দশকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর নামে স্লোগান দিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়  আসেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে। এই বিপ্লবে বাংলার মানুষ যে কতটুকু সাড়া দিয়েছিল তা বোঝা যায় ঐ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান দেখে।যেখানে আওয়ামীলীগ ৩০০আসনের মধ্যে পেয়েছিল ২৩০টি আসন।ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের শপথ নেয়।এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিপালন স্বরূপ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী (৩০জুন, ২০১১) আনা হয়। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি ও দেওয়া হয়।এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়।এই সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন সেই সময়ের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।যা আওয়ামীলীগ সরকারের দূরদর্শী কাজের মধ্যে অন্যতম।

সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার বা বৈপ্লিক পরিবর্তন সাধন করতে হলে সবার আগে বিপ্লব ঘটাতে হবে গণমুখী শিক্ষার।গণমুখী শিক্ষাই কেবল আনতে পারে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিষয়ে স্থায়ী জনকল্যাণমুখী পরিবর্তন।যা ছিল স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম হাতিয়ার।স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিপ্লবের মাধ্যমে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বুকে শিক্ষা বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অসংখ্য কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।যার ফলস্বরূপ দেশে আজ সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

সামাজিক আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নের ফলে নানা ধরনের বৈষম্য দেশ থেকে দূর হয়েছে।বাল্যবিবাহ, খুনাখুনি, রাহাজানি, ইত্যাদি অপকর্ম আজ দেশে নেই বললেই চলে।দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য অনেকাংশে কমে এসেছে। হয়তো আমরা আরো একটু সচেতন হলে দেশে সামাজিক আইন শৃঙ্খলা আরো উন্নত করা সম্ভব।দেশে চালু আছে সরকারি বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় হটলাইন।যেমন;  জরুরীসেবা – ৯৯৯, শিশুসহায়তা   – ১০৯৮, নারীওশিশুনির্যাতন – ১০৯/১০৯২১, জাতীয় পরিচয়পত্র – ১০৫, সরকারী আইনসেবা – ১৬৪৩০, দুর্যোগের আগাম বার্তা – ১০৯৪১, দুদক হটলাইন – ১০৬, তথ্যসেবা – ৩৩৩ ইত্যাদি।

বঙ্গবন্ধু বিপ্লবের সবচেয়ে বড় অবদান হল দেশজুড়ে অবকাঠামো গত উন্নয়ন।২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৭৮২ মেগাওয়াট।বর্তমান সরকারের সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫২২৭ মেগাওয়াট।২০০৬ সালে মোবাইল ফোনের সিম ছিল ১৯ মিলিয়ন।বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৩.৫৩ মিলিয়ন। ২০০৬ সালে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৮ লক্ষ জন।বর্তমান সরকারের সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৩ লক্ষ জন।২০০৬ সালে ওয়ার্কিং ফোর্সে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ২১.২%।বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩.৪৪%।সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে সরকার।নারী, শিশু ও সেবা প্রার্থীদের জন্য দেওয়া হচ্ছে ২৭ রকম ওষুধ ও সেবা।নদীভাঙ্গন ও নবসৃষ্ট এলাকাসহ মোট ৩৬৯ টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ২৭৭৬টি হাট-বাজার উন্নয়ন, ১২৪৬টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল (লাখে) ৩৭০ জন। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে কমে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬১ জন। ২০০৬ সালে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার হার ছিল  ৫৪%। বর্তমান সরকারেরসময়েবৃদ্ধিপেয়েদাঁড়িয়েছে৯৮.২৫ %। ২০০৬ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৬.৭৭%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বেকারত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৬%। ২০০৬ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল মাসিক ১৪৬২ টাকা। বর্তমান সরকারের সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৮৩০০ টাকা। মুক্তিযোদ্ধার সন্মানী ভাতা ৯০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করেছে সরকার। উপকৃত হচ্ছে প্রায় ২ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। ভবিষ্যতের স্মার্ট প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে শতভাগ শিশুকে উপবৃত্তির আওতায় এনেছে সরকার। ফলে বিনামূল্যে শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে ১কোটি ৩০লাখের বেশি শিশু। ২০০৬ সালে সেচের আওতাভুক্ত কৃষি জমি ছিল ২৮লক্ষ হেক্টর। বর্তমান সরকারের সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯লক্ষ হেক্টর। ২০০৬ সালে কৃষি উৎপাদন ছিল ২কোটি ৬১লক্ষ টন। বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯কোটি ৮০লক্ষ মেট্রিক টন। ২০০৬ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে ৩০.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.৬%। ২০০৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৫,৬৭২টি। বর্তমান সরকারের সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৮,৮৯১টি। ২০০৬ সালে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৩,৪৪,৭৮৯জন। বর্তমান সরকারের সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৫৭,২০৩জন। ২০০৬ সালে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল মাত্র ৯টি। বর্তমান সরকারের সময়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৬টি। ২০০৬ সালে মোট মৎস্য উৎপাদন ছিল ২১.৩০লক্ষ মেট্রিকটন। বর্তমান সরকারের সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩.১৪লক্ষ মেট্রিকটন। ২০০৬ সালে চা উৎপাদন ছিল ৩৯ মিলিয়ন কেজি। বর্তমান সরকারের সময়ে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ মিলিয়ন কেজি। ২০০৬ সালে লবণ উৎপাদন ছিল ৮.৫৪ লক্ষ মে. টন। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে লবণ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৩.৪৮ লক্ষ মে. টন। ২০০৬ সালে পোল্ট্রির সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৬ লক্ষ ২২ হাজার। বর্তমান সরকারের সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৭৯ লক্ষ। ২০০৬ সালে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ছিল মাত্র ৫৫%। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে ৪৩.৭% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮.৮%। ২০০৬ সালে শিশু মৃত্যুর হার ছিল  (প্রতিহাজারে) ৮৪ জন। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে ৪ গুণ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ জন। ২০০৬ সালে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ০.২৩%। বর্তমান সরকারের সময়ে মোট জনগোষ্ঠীর ৭৩.৫৫% ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০০৬ সালে আইসিটি খাতে রপ্তানি ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৯ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরের ও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুত গতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে পেরেছে! উঠে আসে জাতির পিতা কী ভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব,  দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক।পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল সহ দেশের মেগা প্রকল্প সমূহ।এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্য বদ্ধ ভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত,  সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

বাংলাদেশে আজ যত গণমুখী উন্নয়ন এবং জনকল্যাণ মুখী পরিবর্তন,সব সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ফসল স্বরূপ হিসেবে।তাই আমরা আজ এই পরিবর্তনকে ”বঙ্গবন্ধু বিপ্লব” হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি।

 

শাবলু শাহাবউদ্দিন

কবি ও গল্পকার

পাবনা, বাংলাদেশ।

ঠিকানা:

সাদুল্লাপুর  (গাঙকুলে স্কুল পাড়া), দুবলিয়া – 6600, পাবনা সদর, পাবনা।

01746631125

sablushahabuddin@gmail.com

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..