1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

# প্রতিশোধ # লেখনীতে- # হুমায়রা_হাসিব_ঋতু [ ২১ ],[ ২২ ,[ ২৩],[ ২৪][ ২৫ এবং শেষ ]

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৫৮ বার

 

[ ২১ ]

সকালের খাবার শেষ করে আমরা বাড়ীর ছেলে-মেয়েরা চলে গেলাম পুকুরধারে। সেখানে মূলত আমিই যেতে চেয়েছিলাম, কারণ এই জায়গাটা আমার খুব ভালো লেগেছে। সুপ্তি,দীপ্তি তাদের পুকুরের বর্ণনা করছে এখানে কি কি মাছ আছে ছিলো আগে, ওরা নাকি সবাই যখন আসে তখন সবাই মিলে গোসল করতে নামে। তখনি একজন বললো, “ভাবি নামবে নাকি? আমি শুনেই বলে উঠলাম, “না না আমিতো সাঁতারই জানিনা।”

রুপন্তিঃ আপু সাঁতারটা শিখলেই পারো। অনেক দরকারী একটা জিনিস এটা।

আরো অনেকক্ষণ সবাই আড্ডা দিলাম। তারপর গিয়ে গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। খাবার খেয়ে এসেই চোখে রাজ্যের ঘুম এসে কড়া নাড়লো। কি আর করার ঘুমিয়ে গেলাম। তবে আয়ান গ্রামের ভাইদের সাথে ঘুরতে বের হয়ে যায়। আর বাকিরা কেউ বসে কথা বলে তো কেউ শুয়েছিলো

আমার ঘুম ভাঙে আসরের নামাজের পর। আমি উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে বাইরে গিয়ে দেখি সবাই উঠানে বসে আছে। মামুনিকে কাকী মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। দাদু চেয়ারে বসে আছে। বাকি সবাই বসে গল্প করছে আর আচার খাচ্ছে। আমি মামুনির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। মামুনি আমায় দেখে বললো, “কিরে ঘুম হলো? আয় দেখ তোর কাকি কি সুন্দর করে তেল মালিশ করে দিচ্ছে নে বসে পর তুইও।” যেহেতু আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই আর মানা করলামনা।

______________________________________

এভাবেই আমাদের দিনগুলো আনন্দে কাটতে লাগলো গ্রামে। শহর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রামের আওতায় এসে মনটা ফ্রেস লাগছে,নিজের মনকে অনেক বেশী প্রফুল্ল মনে হচ্ছে।

আজ ৪ দিন হলো গ্রামে এসেছি। বিকেলে সবাই উঠোনে মাদুর পেতে বসে গল্প করছি। আমার মাথা কিছুটা ব্যাথা হওয়ায় আর অনেক্ষণ পা ব্যাথায় আমি উঠে হাঁটতে হাঁটতে উঠোনের এড়িয়া থেকে পুকুটের ধারে চলে আসি। এই পুকুরপাড়টায় জেনো মায়া আছে। আমার খুব বেশী ভালো লাগে এখানে।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমায় পুকুরে ঢাক্কা দিলো। আমি সোজা নিজেকে সামলাতে না পেরে পানিতে পরে অস্থির হয়ে যাই। অনেক্ষণ চিৎকারের পর সবাই যখন শুনতে পায় তখন উঠে এসে দেখে আমি পানিতে লাফালাফি করছি এবং সেই সময় ডুবে যেতে নেই এবং জ্ঞান হারাই। তখনি আয়ান পানিতে ঝাপ দিয়ে আমায় কোলে তুলে এনে উঠোনে শুইয়ে দেয়। তারপর আমার পেটে চাপ দিতে থাকে আয়ান, কেউ পায়ের তালুতে তো কেউ হাতের তালুতে মালিশ করে দিচ্ছে। মুখ থেকে চাপ পড়ায় পানি বের হওয়ায় কাঁশতে কাঁশতে আমার জ্ঞান ফিরে। আমি উঠে বসতেই একেকজনের একেক প্রশ্ন “কিভাবে এমন হলো?কিভাবে পানিতে পড়লাম?” আবার কেউ কেউ বলছে একা পুকুরধারে যাওয়ায় জ্বীন বা ভুত ধাক্কা দিয়েছে। সকলের কথার কোনো উত্তর আমি দিচ্ছিনা কারণ আমি জানি আমায় কেউ ধাক্কা দিয়েছে। তবে এটা কাউকে বললে সবাই পাগল বলবে আমায় কারণ সেখানে কেউ ছিলো না। আর বিশ্বাস করলেও বলবে ভুতের কাজ। বর্তমান যুগে এসে আমি কিভাবে বিশ্বাড করি এটা ভুতের কাজ?

অতঃপর আয়ান আমায় ঘরে নিয়ে গেলো। সবাই যখন চলে গেলো তখন আমি শোয়া অবস্থা থেকে উঠে আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,”কেউ আমায় ধাক্কা দিয়েছে আমি জানি এখন তুমি বলবে কিভাবে সম্ভব কেউ ছিলোনা তবে বিশ্বাস করো আমি পেছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়েছি, যে আমায় স্বজোরে ধাক্কা দিয়েছে। ”

আয়ানঃ তবে সেই সময় সেখানে তুমি ছাড়া কেউ ছিলোনা।

আয়াতঃ এটাই তো মিলছে না কে করলো এই কাজ? তবে আমি সিওর সেখানে আমি বাদেও কেউ ছিলো। আর এটাও হতে পারে সে আমাদের নজরে রাখছে যেই আমি একা পুকুরের ধারে গেলাম তখনি সুযোগ বুঝে ফেলে দিলো। আর এটা কোনো ভুতের কাজ না মানুষের কাজ আয়ান।

আয়ানঃ এতো সিওর হয়ে কিভাবে বলছো?

আয়াতঃ বর্তমানে এসে তুমি এগুলো বিশ্বাস করো? আচ্ছা এই দেখো এটাতো আর ভুতে দেবে না আমায়

আয়ানঃ এটা কি?

আয়াতঃ একটা কাগজ। যাতে লেখা “খেলাতো সবেমাএ শুরু Sweetheart “। আমিতো আর ভুতের সুইটহার্ট হইনা তাইনা? যে কাজটা করেছে সে কাগজটা আমাদের পৌছে দেয়ার জন্যেই কাহিনীটা করে। সবাই যখন আমায় নিজে ব্যস্ত তখন সে তার কাজ করে চলে যায়।

আয়ানঃ তবে এগুলো কে করবে? প্রিয়াতো জেলে।

আয়াতঃ আমারওতো সেই একই কথা কে হতে পারে? আবার নতুন কোন বিপদ আসছে?

আয়ানঃ ওয়েট আমি অফিসারকে কল দিয়ে শুনি প্রিয়া কোথায়।

আয়ান কল দিয়ে জানতে পারে প্রিয়া জেলেই আছে।এরপর আয়ানকে আগের কাগজগুলোও দেখাই এবং সব বলি। আমাদের চোখে প্রিয়া ছাড়া আর কাউকেই সন্দেহ হচ্ছেনা। তবে প্রিয়া সে তো জেলে। আর তার পক্ষেতো আর সম্ভবনা এগুলো কাহিনী করে, আমায় ফেলে দিয়ে আমার জেলে গিয়ে বসে থাকা। তাহলে কে হতে পারে? যে আমাদের বিপদে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে।নতুন করে বিপদের আবাস পাচ্ছি আমি। কে সে??

কথাগুলো আমরা আর কাউকে জানালামনা নিজেদের মধ্যেই রাখলাম। শুধু শুধু সবাই ভয় পাবে। ইনসিকিউর ফিল করবে। তাই আর দরকার মনে করলামনা কাউকে জানানোর।

(প্রিয় পাঠক /পাঠিকা কি মনে হয় কে সে? আজকের পর্ব কেমন হলো তা অবশ্যেই জানাবেন। Next next করবেননা এমনিতেই দিব)

 

 

 

 

 

[ ২২ ]

বাড়ীর সবারই মনটা খুব একটা ভালো না বিকেলের ঘটনার কারণে। মামুনি এখানে থাকতে নারাজ। সে দ্রুত আমাদের নিয়ে শহরে যেতে চায়।

বর্তমানে কচিকাচারদল সব একসাথে বসে আছি। আমি সবাইকে বললাম,”এতদূর এসেছি আর সাজেক যাবোনা তাই কি গাইস????” এতো কাছে এসেও ফিরে যাবো প্রকৃতি কি তা মানবে?”

আয়রাঃ বলে লাভ নেই মামুনি মানবে না। সে তোমায় নিয়ে ভয়ে আছে কখনোই যেতে দেবেনা।

আয়াতঃ যেতে দিতে কে বলেছে তারাও সাথে যাবে।আমরা সবাই কাল সাজেক যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।

আয়রাঃ কথাটা তাইলে তুমিই গিয়ে বলো। আমাদের সাহস নেই।

আয়াতঃ আমি,,, আয়ান,,,,,,,,,,(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)

আয়ানঃ কি আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো আমি কিছু বলতে পারবোনা যাও সরো।

আয়াতঃ Plz ওমন করো না। যাওনা যাও বলছি। আমি কিন্তুু রেগে যাবো?

আয়ানঃ রাগলে রাগো তো আমি কি করবো?হু আসছে ভয় দেখাতে।

আয়াতঃ দূর আমি যাই।

মিটিং থেকে উঠে মামুনির কাছে চলে গেলাম। দেখলাম মামুনি, আম্মু,কাকি,দাদু বসে আছে। আমি সুন্দর করে গিয়ে বললাম,”মামুনি একটা কথা ছিলো”

মামুনিঃ কি বলো

আয়াতঃ না মানে মামুনি, ইয়ে মানে মামুনি, বলতে চাচ্চিলাম কি মামুনি আসলে

মামুনিঃ তুই একলাইনে কয়বার মামুনি বলছিস জানিস? তুইতো কথা বলার সময় এমন করিসনা তাহলে এখন এমন করছিস কেনো?

আয়াতঃ মামুনি আমরা সাজেক যাবো তোমরাও যাবে দেখো এতোদূর আসছি আর সাজেকে যাবোনা তাই হয় plz মানা করোনা। তোমরাও যাবেতো(চোখ বন্ধ করে এক নিমেশে বলে দিলাম)

মামুনিঃ না না ওসব হবে না।

আয়াতঃ plz মামুনি।

কয়েকবার মানা করায় মামুনি সকলের জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যায়। এরপর ঠিক হয় কাল সকাল ৭ টায় আমরা এখান থেকে বের হচ্ছি সাজেকের উদ্দেশ্যে।

তাই রাতে সকলে তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

ভোর ৫ টায় উঠে গোসল,খাওয়া এটা-সেটা করতে করতেই ৭ টার বেশী বেজে গেলো পরে সবাইকে তারা দিয়ে গাড়ীতে ওঠানো হলো বর্তমানে আমরা গাড়ীতে বসে আছি। অনেক মজা করলাম গাড়ীতেই। জোরে জোরে সকলে মিলে গান গাইলাম। অবশেষে সাজেকের মাটিতে পা দিলাম বাড়ী থেকে এখানে আসতে ৩ঘন্টার মতো সময় লাগলো। রোদ তখন মাথার ওপর। সারাদিন সবাই ইচ্ছে মতো ঘুরলাম, ছবি উঠলাম,ভিডিও করলাম।

আমি আর আয়ান কয়েকটা কাপল পিক উঠলাম। যেহেতু সবাই ছিলো তাই আর বেশী ছবি উঠিনি। আসলে আমরা যখন সকলের মাঝে থাকি তখন খুব একটা ২জনে কথা বলিনা। কেউ দেখে বলবেই না যে আমরা জামাই-বউ। লোক দেখানো অন্যদের মতো গায়ে ঢলাঢলি করার কোনো ইচ্ছে নেই আমাদের। হুম আয়ান আমায় আমি আয়ানকে ভালোবাসি এটা ঠিক তবে তাই বলো যে, লোক দেখানো কাজ করতে হবে তার কোনো মানে নেই। ঢং করবো,ভালোবাসবো সব ঘরে বাইরে লোক দেখাতে হবে কেনো?

সারাদিন অনেক ঘোরাঘুরির পর সবাই ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলাম। এসে শুধু ফ্রেস হয়েই ঘুমোতে চলে গেলাম। যেহেতু রাতের খাবার রেস্তোরায় করে এসেছি সবাই তাই আর বাসায় এসে খেলামনা কিছু।

সকালে উঠে দেখি সবাই খাবার খাচ্ছে আমি আর আয়ান আজ লেট। সবাই মজা করে চালের রুটি এবং গরুর মাংস খাচ্ছে। এটা আমার পছন্দের একটা খাবার তাই দেরী না করে বসে পড়লাম খেতে। খাওয়ার সময় মামুনি বললো, “আমরা আজ রাতে বাসায় ফিরছি।” কথাটা শুনে সবাই একটু অবাক হই। কারণ হুট করে কেনো?

আয়াতঃ তবে মামুনি এমন হুট করে?

মামুনিঃ তোমার বাবা এবং শশুড়ের অফিসে কি এক কাজ আছে তাই যেতে হবে। আর তোমার সাথে যা হলো তারপর চাই না একা ফেলে যেতে।

আয়াতঃ তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি?

মামুনিঃ তাই বলে এমন হুট করে?

সকলের মন খারাপ হয়ে গেলো। তবে আয়রাকে দেখে খুশী মনে হলো। কেনো আমার এমনটা মনে হলো জানা নেই।

সারাদিন আবার প্যাকিং, এটা সেটা করতে করতেই দিনটা পার করে ফেললাম এরপর ৭ টার দিকে শহরের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। ফিরতে ফিরতে আমাদের ১১টার মতো বেজে গেলো। গিয়ে দেখলাম ফুপি সব খাবার রেডি করে রেখেছিলো। তার সাথে কুশল বিনিময় করে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলাম। যেহেতু অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আমার মামাতো ভাই-বোনরা আমাদের এখানেই ছিলো।

পরেরদিন সকালে সবাই সকালের খাবার খেয়ে বিদায় নিলো আমাদের থেকে।

আবার আমাদের জীবন আগের মতো চলতে লাগলো। আজ ৭ দিন হলো আমরা এসেছি।আয়ান,বাবার অফিস, আয়রার কলেজ আমার এবং মামুনির বাসায় বোরিং লাইফ পার করা। আর ফুপি সে তো শশুড়বাড়ী ঘন ঘন যাচ্ছে আসছে।

রাতে সকলে খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে আয়রা মিসিং। সে নাকি মামুনিকে বলেছে আজ কলেজে প্রোগ্রাম আছে তাই আসতে দেরী হবে। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো আমি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি আয়রা খুব বাজে অবস্থায় দাঁড়িয়ে। চুলগুলো উশকো,জামা ছেড়া,ফাটা। মুখে নীলা পরা। ঠোঁটের কোণায় হালকা রক্ত। আমি ভয়ে দরজা থেকে সরে দাড়াই এবং চিৎকার করে বলি আয়রা…….

সকলে আমার চিৎকারে তাড়াতাড়ী খাবার টেবিল থেকে বাইরের রুমে চলে আসে। আমার মতো সবাই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়রার কোনো কথা নেই। সে নিশ্চুপ। এক পর্যায়ে মামুনি যখন আয়রার মুখ থেকে কথা বের করতে পারছিলো না তখন ওকে সজোরে থা/প্প/ড়ে বসিয়ে দেয়। আরো মারতে মারতে বলে,”বল কোথায় কি আ/কা/ম করে এসেছিস বল।” আমি এবং আয়ান মামুনিকে আটকাই। কারণ সে খুব রেগে গিয়েছে।

আয়াতঃ মামুনি আয়রাতো কিছু বলেনি তোহ আগেই এসব কথা বলে…….। আর আমরাতো ওকে চিনি ও কখনোই ভুল কিছু করতে পারেনা।

মামুনিঃ আয়াত তুইতো খুব বুদ্ধিমতী তুই ওর দিকে তাকে বলতো দেখে কি মনে হচ্ছে?

আমার কিছু বলার ছিলোনা তাই আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলাম। বুঝতে পারলাম এভাবে আয়রার মুখ থেকে কিছুই বের করা যাবেনা। আমি সবাইকে বললাম, “তোমরা যে যার রুমে যাও আর আজ রাতে আমি ওর সাথে থাকবো।” সবাই আমার কথা মেনে নিলো।

আমি আয়রাকে সাথে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলাম। আয়রাকে বসিয়ে ওর ড্রয়ার থেকে জামা বের করে বললাম যাও গোসল করে এসো। সে কিছুই বললোনা।আমি ওকে নিয়ে গোসল করিয়ে দিলাম এরপর খাবার খাইয়ে শুইয়ে দিলাম। আয়রার অবস্থা দেখে আর কিছু জিগ্যেস করার সাহস হলোনা। আমিও ওর পাশে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ গভীর রাতে কারো ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙে আমি পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি আয়রা বসে কান্না করছে।

আমি উঠে আয়রার মাথায় হাত দিয়ে বললাম,”আয়রা দেখো কি হয়েছে জানিনা তবে যা হয়েছে খারাপ হয়েছে বোন।এভাবে কেঁদো না। তুমি আমায় বলো কি হয়েছে হতে পারে আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো?”

আয়রাঃ আমি বলতে পারবোনা। তুমি আমায় খারাপ ভাববে।

আয়াতঃ না খারাপ ভাববোনা। আমরা সবাই জানি তুমি কেমন। তুমি বলো plz এমন করে থেকোনা বলো।

আয়রাঃ ভাবি আমায় ঠকানো হয়েছে।

আয়াতঃ মানে? সব খুলে বলো

আয়রাঃ আমায় ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে গিয়ে কোকাকোলার সাথে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে রেপ করেছে ( বলেই আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো)

আয়াতঃ( কিছু বলার মতো ভাষা আমার ছিলো না।আমি নির্বাক। আয়রার মতো মেয়ের সাথে এগুলো? ও যথেস্ট বুদ্ধিমতী)

আয়রাঃ আমার ম/রা ছাড়া কোনো উপায় নেই ভাবি(বলেই উঠে ফল কা/টা/র ছু/ড়ি নেয় হাত হাটার জন্যে)

আমি উঠে গিয়ে আয়রার হাত থেকে ছুড়িটি নিতে নিলে আমাদের মাঝে একপ্রকার ধ/স্তা/ধ/স্তি হয়ে যায়।আমি কিছু না বুঝে আয়রাকে জোরে একটা থা/প্প/র দেই। আয়রাসহ ছু/ড়ি/টি ছিটকে পড়ে যায়।

আমিঃ তুমি কি পাগল? কি করছো এসব? তোমার ভালোবাসায়তো কোনো ভুল ছিলোনা। এটা তার ভুল,সে তোমার ভালোবাসাকে ঠকিয়েছে।

আয়রাঃ আমি কি করবো ও আমার শরীরের ভিডিও,ছবি তুলেছে।বলেছে ওর কথামতো না চললে ভা/ই/রা/ল করে দেবে।

আয়াতঃ কিহ? আচ্ছা শোনো তুমি ১ম থেকে সব বলো কিভাবে ওর সাথে দেখা সব বলো….

আয়রাঃ ১বছর আগে ওর সাথে আমার পরিচয় হয় ফেসবুকে। এই এক বছরে ১মে টুকটাক মেসেজ তারপর প্রতিদিন নিয়ম করে কল,মেসেজ,ভিডিওকলে কথা। এভাবে আমাদের প্রেম শুরু। ও সুইজারল্যান্ড থাকে, তবে বাঙালি। ২ সপ্তাহ আগে ও দেশে ফেরে। তখন আমরা গ্রামে। এজন্যেই আমি এতোটা খুশী ছিলাম কারণ ওর সাথে দেখা হবে। তবে এখানে আসার পর ওর এক জরুরী কাজে আমাদের দেখা হয়না। আজ আমাদের দেখা হয় একটা ক্লাবে। আমি যেতে চাইনি পরে ভাবলাম যেহেতু ও বিদেশে থাকে তো ক্লাব জিনিসটা ওর কাছে তেমন কিছুনা আমাদের রেস্তরাঁর মতোই। তাই চলে যাই। সন্ধ্যায় যে বের হলাম তখন ওখানেই যাই। আমি যাওয়ার পর ও ২টা ড্রিংকস অর্ডার দেয়। তারপর আমি খাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই। আমি যখন ঘুম থেকে উঠি তখন দেখি আমি একটা রুমে শুয়ে আছি এবং আমার শরীরে কোনো কাপড় নেই। শুধু একটা কাথা। আর আমার সামনে শয়তানি হাসি দিয়ে বসে আছে ও।আমার জ্ঞান ফিরতেই আমি ওকে বললাম,”এগুলো কি? তুমি আমার সাথে কি করেছো?

তারপর ও আমায় বললো,”যা করার তাই” বলেই ফোন থেকে ছবিসহ কিছু ভিডিও দেখালো।” যেখানে,,,,,(বলেই কান্না শুরু করলো)

আয়াতঃ প্লিজ কান্না করো না।

আয়রাঃ ও বলছে আমি ওর কথা না শুনলে ও আমার ভিডিও ভা/ই/রা/ল করে দেবে। তখনতো ম/রা ছাড়া উপায় থাকবেনা আমার।(কান্না করতে করতে)

আয়াতঃ ওর নাম কি?

আয়রাঃ নেহাল। নেহাল সিনহা নিরব।

আমি আয়রার কাছ থেকে ছেলেটির বায়ো নিলাম।এরপর আয়ানকে কল দিয়ে রুমে আসতে বলি। কারণ এখানে আমি মেয়ে মানুষ হয়ে বুঝতে পারছিনা কি করা উচিত। আয়রা আমায় অনেক মানা করে যেনো তার ভাইয়াকে না বলা হয়। সে ভাবছে তার ভাই তাকে মা/র/বে এবং মা-বাবাকে বলে দেবে। আমি আয়রাকে অনেক কস্টে বুঝিয়ে আয়ান আসলে ওর সামনেই সব বলি।

আয়ান সব শুনে ১মে আয়রাকে মা/র/তে যায় আমি ওকে থামিয়ে বুঝিয়ে বলি,”দেখো আমরা মানুষ আমরা ভুল করবোই। আর এখানে আয়রারতো কোনো ভুল ছিলো সেতো ছেলেটাকে ভালোবেসেছিলো।এখন ও যদি ঠকায় তাহলে আয়রা কি করবে? এখন আমরা যদি আয়রাকে বকাবকি করি তাহলে ওতো নিজে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে আর তখন যদি ও মৃ/ত্যু/কে বেঁছে নেয় তাহলে কি ভুল কিছু হবে? ” আমার কথা শুনে আয়ান রেগে গিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে আর একহাত তুলে মা/র/বে মা/র/বে অবস্থা নিয়ে বলে, ” ও কেনো গেলো ওখানে? ও যদি না যেতো তাহলে কি এমন হতো?”

আয়াতঃ ও তো জানতোনা এমন কিছু হবে। আচ্ছা তুমি যদি আমায় ডাকতে আমি যেতাম না?

আয়ানঃ তোমার আমার কথা আর ওদের কথা আলাদা

আয়াতঃ না আলাদা না। তোমার প্রতি আমিও যেমন ভালোবাসার টানে যেতাম ঠিক তেমনি আয়রাও ওই ছেলের প্রতি ভালোবাসার টানে গিয়েছে।

আয়ানঃ ভালো তুমিতো এতো বোঝো যা মন চায় করো আমায় এসবে ডাকবেনা। (বলেই চলে গেলো)

আয়ানের এমন ব্যবহারে মনে মনে খুব রাগ হলো। তবে রাগের চেয়ে অভিমান হলো বেশী। সে ব্যাপারটা না বুঝে আমায়সহ আয়রার সাথে বাজে ব্যবহার করলো। তবে বোনের এমন ক্ষতিতে রাগে এমন করা অস্বাভাবিক কিছুনা। নিজেকে সামলে নিয়ে আয়রাকে বললাম”তুমি টেনশন করো না দেখছি কি করা যায়। আর এরপরে ছেলেটা তোমায় কি করতে বলে তা ও বলার সাথে সাথে আমায় জানাবে।এখন শুয়ে পড়ো।

আয়রা লক্ষীমেয়ের মতো শুয়ে পড়লো। আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। মাথায় হাজারও প্রশ্ন কি হচ্ছে গত কয়েকমাসে? কে এই নেহাল কেনো এমন করলো?

(প্রিয় পাঠক/পাঠিকা দুঃখিত গল্প দেরিতে দেয়ার জন্য। আসলে সামনে আমার পরীক্ষা তাই চাপে আছি। আজকের পর্ব কেমন হলো জানাবেন।কালকে থাকছে ধামাকা)

 

 

 

 

[ ২৩ ]

সূর্যের আলো জানালা ভেদ করে মুখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে পাশে তাকি দেখলাম আয়রা নেই। আমি তড়িঘড়ি করে উঠে দেখলাম জানালার গ্রিল ধরে আকাশপানে চেয়ে আছে। চোখ বেয়ে ঝড়ছে লোনাপানির ঝর্ণা।

আমি পেছন থেকে গিয়ে কাঁধে আস্তার হাত দিয়ে বললাম,” এভাবে ভেঙে পড়ো না। মা-বাবার কথা চিন্তা করো এবং ভুল কিছু করার আগে নিজের পরিবারের কথা ভেবো।”

আয়রা হয়তো আমার কথা শুনেও না শোনার ভান করে মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।

হঠাৎ আয়রার ফোনে টুং শব্দে দুজনই দুজনার দিকে তাকাই। আয়রা তাড়াতাড়ী ফোন হাতে নেয়।আয়রা দেখলো নেহাল মেসেজ করেছে। মেসেজটা ছিলো ঠিক এমন,,,

“আজ সন্ধ্যা ৭টায় ক্লাবে চলে এসো। আজকেই তোমার মুক্তি। আমি যা বলবো তা যদি তুমি মেনে নাও তো তোমার ভিডিও, ছবি তোমায় ফেরত দেয়া হবে।”

আমি এবং আয়রা দুজনেই অবাক হয়ে তাকাই। আমি আয়রাকে বলি কল দিতে ওকে এবং সিওর হতে যে, কি করতে বলবে?

আয়রা কল দেয়,,,

আয়রাঃ হ্যালো

নেহালঃ কি হলো কল দিলে কেনো?

আয়রাঃ আমায় কি করতে হবে?

নেহালঃ তোমায় কি করতে হবে তা তো ক্লাবে আসলেই জানতে পারবে। আর শোনো যদি আমার কথা মতো কাজটা করতে রাজি হও তো তোমার ভিডিও আজই তোমায় দেয়া হবে।

আয়রাঃ তুমি যে তোমার কথা রাখবে তার কি প্রমাণ আছে?

নেহালঃ পেনড্রাইভটা আজ আনবো এক হাতে আমার শর্ত আর একহাতে তোমার পেনড্রাইভ। তুমি মানলে পেনড্রাইভটা তোমার।

আয়রাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

আয়াতঃ তুমি আজ ক্লাবে যাবে।

আয়রাঃ তবে ভাবি ও যদি আবার রুমে নেয়….

আয়াতঃ সেটা পরে দেখা যাবে তবে আজ ও পেনড্রাইভটা আনবে আর যে করেই হোক পেনড্রাইভটা ওর থেকে আমাদের উদ্ধার করতে হবেই। শোনো তুমি বাড়ী থেকে বের হওয়ার পর আমি বের হবো। তবে একসাথে না।

__________________________________________

সন্ধ্যা আয়রা বের হওয়ার পরই আমি এবং আয়ান মামুনিকে বলি আমাদের বাসায় যাচ্ছি। ওদিকে আম্মুকে বলি রাতে আমরা ওখানেই যাবো।

আয়রা ক্লাবে পৌছে গেছে। ও গিয়ে দেখলো নেহাল বসে আছে এবং ওর একপাশে একটা ব্যাগ।

আয়রা ধীরে ধীরে চলে গেলো নেহালের কাছে।

নেহালঃ Hey come here

আয়রাঃ (কিছুটা দূরত্ব রেখে বসলো)

নেহালঃ দূরে বসে আছো কেনো কাছে এসো(বলেই হাত ধরলো)

আয়রাঃ কেনো ডেকেছো তাই বলো।

নেহাল কিছু বলবে তার আগেই গান বেজে উঠলো এবং কিছু নর্তকী নেহালদের সিটে এসে নাচ শুরু করে দিলো। যেহেতু এটা ক্লাব তাই নেহাল বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিয়ে সকলের সাথে নাচতে লাগলো।

এখানে যেসব মেয়ে -ছেলে ছিলো তাদের মধ্য আয়ান,আয়াত,রুপসা,রুপন্তি, পিয়াস,পূর্ণা ছিলো। সবাই নেহালকে নাচে ব্যস্ত রাখছিলো আর এদিকে আমি নাচতে নাচতে নেহালের ব্যাগটা খুলে পেনড্রাইভটা নিয়ে নেই।

তারপর গিয়ে আবার নাচতে থাকি।নেহাল আয়রাকে জোর করে উঠিয়ে নাচাচ্ছে এটা দেখে আমাদের সবার এতো রাগ হলো। তবে এটা ভেবে ভালো লাগলো যে কাজটা হয়েছে। এরপর আমরা একেএকে সবাই চলে আসি।

নেহালঃ যাক ভালোই হলো একটু ফান হয়ে গেলো।

আয়রাঃ কি বলবে বলো?

নেহালঃ শোনো আমায় বিয়ে করতে হবে তোমায়। তারপর আমি তোমার বাড়ীতে ঘর-জামাই হয়ে থাকবো। যদি এটা পারো তো তোমার ভিডিও তোমায় দিয়ে দেবো

আয়রাঃ কি তোমার মতো নিচু একজনকে আমি বিয়ে করবো কখনোইনা।

নেহালঃ তাহলে তোমার ভিডিও ভাইরাল হতেও সময় নেবেনা।এখন দেখো কি করবে।

আয়রাঃ আমার সময় লাগবে। আমি ভেবে কলে বলবো।

নেহালঃ ঠিক আছে তাহলে উত্তরের পরই পেনড্রাইভটা পাবে তার আগে না।

আয়রাঃ ঠিক আছে।

এতক্ষণ আয়রার বলা সব কথা ছিলো আয়াতের শেখানো। কেনোনা আয়রার কানে হেডফোন ছিলো। যেহেতু নেহালের কাছে পেনড্রাইভটা বর্তমানে ছিলইনা তো কিভাবে দেবে? আর যদি না পায় এখন পেনড্রাইভটা তাহলে আয়রার ক্ষতি করতে পারে তাই আজকের মতো আয়রাকে ভাগিয়ে নিয়ে আসলাম।

আমরা সবাই চলে গেলাম আমার বাবার বাসায়।

__________________________________

রুপসাঃ ফা/জি/ল ছেলেরা দেখতে বুঝি এতো সুন্দর হয়? ওকে দেখে কেউ বুঝবেইনা যে ও এতো ব/দমা/ইস।

রুপন্তিঃসত্যি তাই কি শ/য়/তা/ন ছেলে ভাবো। যখন আয়রাকে জোর করে নাচাচ্ছিলো তখন মনে হচ্ছিলো থা/প্প/ড় দিয়ে ওর ফর্সা গালটা টমেটো বানাই দেই।

আয়াতঃ হইছে হইছে তবে আমার অনেক ভয় হচ্ছিল। যদি দেখে নিতো তো সব শেষ। এই নাও আয়রা পেনড্রাইভটা তুমি নিজে সব ডিলেট করো।(আয়রাকে উদ্দেশ্যে করে)। রুপসা আমার রুম থেকে ল্যাপটপটা নিয়ে আয়।

ল্যাপটপটা আয়রাকে এনে দিলে আয়রা পেনড্রাইভটা সেট করে সকল ভিডিও, ছবি ডিলেট করে দেয় এবং আরেকটা কপি করে পুলিশকে পাঠিয়ে নেহালের নামে জিডি করা হয় এবং এক লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আমি ওর মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরি। আমার দেখাদেখি রুপসা, রুপন্তি, পূর্ণাও জড়িয়ে ধরে।

রুপসাঃ আয়রাপু তুমি ভেঙে পড়োনা আমরা আছিনা? দরকার হলে আমরা তোমাদের বাসায় ১ বছরের জন্য পার্মানেন্ট যাবো তোমার মন ভালো করার জন্যে।

রুপন্তিঃ চুপ কর হ্যংলা শুধুই অন্যের বাড়ীতে যাওয়ার ধান্দা তাইনা?

রুপসাঃ বা রে আপুর বাসায় না গেলে না থাকলে ওর মন ভালো করবো কিভাবে?

সবাই রুপসার কথা শুনে হেঁসে ফেলি।

চলুন এবার একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই,,,,,

আয়রার ঘর থেকে বেরিয়ে আমি চলে যাই আমাট রুমে। আয়ানের সাথে অভিমানটা দূরে রেখে তার কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলি। এরপর আমরা একটা প্ল্যান করি যা ইতিমধ্যেই আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন। হ্যাঁ, আমার ভাই-বোনদের সব ঘটনা খুলে বলি তারা এগিয়ে আসে আমাদের সাহায্য করতে। এরপরের ঘটনা সবারই জানা।

আমাদের সাথে থাকাকালীনই আয়রার ফোনে নেহালের কল আসে। আয়রা ভয়ে কল রিসিভ করতে চায় না তবে পরে করে,,,,

নেহালঃ কি ভেবেছিলি আমায় জেলেরভাত খাওয়াবি। আমি তোদের সবাইকে দেখে নেবো।(কল কেটে দেয়)

আয়রা কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তবে আমরা ওকে অভয় দেই।

এরপর আমরা রাতের খাবার খেয়ে সবাই বাসায় চলে আসি। আমি আয়রার সাথে ঘুমতে আসি। কারণ আমি ওকে এই মুহুর্তে একা রাখতে চাইনা। যতটা পারছি সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করছি।

পরেরদিন সকালে মামুনি মামুনি খাবার টেবিলে সবাইকে বলে সে আজ তার বাবার বাড়ী যাচ্ছে তার বড় ভাই অসুস্থ তাই। আমাদের সকলের দুপুরে সেখানে দাওয়াত। আয়ান এবং বাবা অফিস থেকে চলে যাবে।আমায় এবং আয়রাকে মামুনি সাথে যেতে বললে বললাম আমরা পরে যাবো। তাই মামুনি এবং ফুপি চলে যায়।

_____________________________________

আমরা বাসা থেকে বের হবো এমন সময় ফুপির কল,,

আয়াতঃ হ্যাঁ ফুপি আমরা বের হচ্ছি।

ফুপিঃ তোরা তাড়াতাড়ী হসপিটালে আয় ভাবি এক্সিডেন্ট করেছে।

আয়াতঃ কিহ? কিসব বলছো কিভাবে হলো এমন?

ফুপিঃ সব বলবো আগে তারাতাড়ি চলে আয় তোরা।

আমি এবং আয়রা তাড়াতাড়ী গাড়ীতে উঠে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হই। গাড়ীতে থাকা অবস্থাতেই ফোনে মেসেজ আসে,,,,,

“১ম রাউন্ডে জিতে গেলে তবে এই রাউন্ডেতো হেরে গেলে Sweetheart “”

কথাটা শুনে আমি থমকে যাই, ১ম রাউন্ড মানে? তবে কি সে নেহাল?তার মানে এই সেই লোক যে কিনা আমায় ফলো করছে, আমায় পানিতে ফেলে দিয়েছে।সব এখন আমার কাছে পরিষ্কার। তবে কে ও? দেখেতো মনে হলোনা আমি ওকে চিনি।কে ও কি চায় আমার থেকে?

আমি কল দেবো বলে নামবার দেখতে কোনো নামবার শো করলোনা। আমার মাথা কাজ করছেনা কি হচ্ছে এসব?

(চলবে)

(প্রিয় পাঠক/পাঠিকা পরের সব পর্বে থাকবে শুধু ধামাকা তাই সাথে থাকুন। আর কেমন হলো তা জানাবেন)

 

 

 

 

 

 

[ ২৪ ]

হসপিটালে পৌছে দেখলাম আয়ান এবং বাবা দাঁড়িয়ে আছে আইসিইউ রুমের সামনে। আমি এবং আয়রা গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “মামুনি এখন কেমন আছে?” আয়ান বললো,”এখনো কিছু জানা যায় নি। আমরা এসে দেখি মামুনিকে রুমে নেয়া হয়েছে”

আমি গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। আজ কি তবে আমার কারণে মামুনির এতো বড় ক্ষতি হলো? মামুনির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। কি করবো এখন আমি? আয়ানকে তো এখন এইসব বিষয় বলা সম্ভব নয় কেনোনা এমনিতেই সে তার মায়ের এই দূর্ঘটনায় ভেঙে পড়েছে।

আমি উঠে ফুপির কাছে গেলাম। ফুপিকে বললাম, “আপনারাতো একসাথেই ছিলেন তাইনা?

ফুপিঃ হ্যাঁ

আয়াতঃ তাহলে মামুনির এতো খারাপ অবস্থা আর আপনার কিচ্ছু হলোনা?

ফুপিঃ আসলে আমাদের গাড়ী মাঝরাস্তায় খারাপ হওয়ায় ড্রাইবার যায় আশেপাশে কোনো মেকার আছে কিনা তা খুজতে আর আমার ফোন আসায় আমি গাড়ীর থেকে বাইরে কিছুটা দূরে চলে যাই। তারপর হঠাৎ একটা শব্দে পিছনে তাকাতেই দেখি আমাদের গাড়ীটাকে বড় একটা ট্রাক ধাক্কা দিয়ে গেলো।

আয়াতঃ আপনার কি গাড়ীর নামবার বা কিছু মনে আছে?

ফুপিঃ নারে মা তখনতো আমি ভয়েই শেষ

আমি আরো কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই আয়ান এসে আমায় বললো, ” অরিনাপু এবং তার আম্মুকে কেউ খুন করেছে।সেখানে পুলিশ গেছে তদন্ত করতে”

আমিঃ কিহ? আমি যেতে চাই ওখানে

আয়ানঃ এখন কিভাবে সম্ভব? ঠিক আছে এখানে খবর শুনি তারপর যাবো।

আমি রীতিমত শক্ট। কি হচ্ছেটা কি আমার সাথে? কেউ আমার কারণে ওই দুইজনের প্রাণ নিয়ে নিলো?আল্লাহ আমার সহায় হন।আমার সাহায্য দরকার। আজ কেনো আমি বুঝতে পারছিনা আমার কি করা দরকার….(আমি কান্না করতে করতে কথাগুলো বললাম)

এরপরই একজন নার্স এসে বললো মামুনির একটা অপারেশনের খুব দরকার। এরজন্যে আমাদের একটা এগ্রিমেন্টে সাইন করতে হবে। কারণ, মামুনির কিছু হলে সেই দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ নেবে না।

বাবা সাইন করবে তখন আমি একবার বললাম,”বাবা একবার পড়ে নিলে হয়না?”

ফুপিঃ কি বলিস এসব এখন সেই মনমানসিকতা আছে নাকি? ভাইজান তুমি সাইন করোতো…

বাবা আমার কথা না শুনে সাইন করে দেয়। আমিও আর কিছু বললামনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার আম্মু -আব্বু চলে আসে। আমি তাদের দেখে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। কেনোনা আমার মনে হচ্ছে এরপরের টার্গেট আমার মা-বাবা।

আমি আম্মু-আব্বুসহ আয়রাকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বলি,”শোনো তোমরা এই হসপিটাল থেকে কোথাও যাবেনা। মনে রেখো এরপরের টার্গেট তোমাদেরই মধ্যে কেউ। আয়রা তুমি কোনো মতেই তোমার ভাইয়া এবং বাবাকে চোখের আড়াল হতে দেবেনা। এই হসপিটালই তোমাদের জন্য সুরক্ষিত জায়গা। আর মা-বাবা আমি তোমাদের সব বলবো কেনো বলছি এগুলো শুধু এই সময়টুকু তোমরা আমার কথা শুনো plz

বাবাঃ এভাবে বলছিস কেনো? মানা করেছিস কোথাও যাবোনা।

আয়াতঃ ঠিক আছে।আয়রা এদিকে এসো?(দূরে সরিয়ে এনে)

আয়রাঃ বলো

আয়াতঃ তুমি বুদ্ধিমতী। কারো চালচলন দেখলেই বুঝতে পারো তার মতীগতি কি তাই সবসময় চোখ-কান খোলা রাখবা। মনে রেখো আমাদের সামনে আরো বিপদ আছে।

আয়রাঃ ঠিক আছে তবে তুমি কোথায় যাবে?

আয়াতঃ অরিনাপুর বাসায়।এখন না গেলে প্রমাণ পাবোনা।

আয়রার থেকে বিদায় নিয়ে কাউকে কিছু না বলেই আমি অরিনাপুর বাসায় ছুটে গেলাম। আমায় প্রথমে ঢুকতে দিতে চাচ্ছিলো না পরে অনেক জোর করে ঢুকি। বাসায় ঢুকে দেখি ওদের লা/শ দুটো বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হঠাৎ সামনের দেয়ালে তাকাতেই দেখি র/ক্ত দিয়ে লেখা,,

“যে তোকে সাহায্য করবে

তার পরিণতি ঠিক এমনই হবে।”

আমি বুঝতে পারলামনা নেহাল কেনো ওদের খু/ন করলো ওরাতো নেহালের কোনো ক্ষতি করেনি। আমার ভাবণার অবসান ঘটিয়ে আয়ানের কল,,”কোথায় তুমি?”

আমিঃ অরিনাপুর বাসায়।

আয়ানঃ আমিতো বলেছিলাম পরে নিয়ে যাবো

আয়াতঃ আমার দরকার তাই এসেছি।কেনো কল দিয়েছো তাই বলো?

আয়ানঃ প্রিয়া জেল থেকে পালিয়েছে। আমাকে অফিসার মাএ কল করে বললো।

আয়াতঃ হায় আমার কপাল…. আর কতো বিপদ আছে সব আসুক। আমি আর পারছিনা। (কান্না করতে করতে)

আয়ানঃ দেখো ভেঙে পড়োনা সব ঠিক হবে। আচ্ছা রাখি।

আয়াতঃ শোনো,, মামুনির কি অবস্থা

আয়ানঃ অপারেশন রুমে নেয়া হয়েছে।

______________________________________

আজ ৭ দিন হলো মামুনি হসপিটালে ভর্তি বর্তমানে সে মোটামুটি সুস্থ। তবে পায়ের শিরা ফেটে যাওয়ায় তা জোরা লাগতে সময় লাগবে। এখন মামুনি হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করছে একটু।

আজ ৭ দিন হলো আয়ান, বাবা,আয়রা আমাদের বাসাতেই ছিলো। এর মধ্যে ১বার বাসায় যায় সবাই জামা-কাপড় আনতে। বাসা ফাকা থাকায় ফুপি নিজেই বলে সে বাসায় থাকবে আর সাথেতো কাজের মেয়েটা আছেই। আর আমি মামুনিকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চাইনি বলে এখানেই থেকে যাই।

আজ মামুনির রিলিজ। সে আজ বাসায় যাবে তারই প্রস্তুুতি নিচ্ছি।

মামুনিকে বাসায় নিয়ে যেতে আজ আয়রা,আয়ান,বাবা এসেছে। আজ আমাদের খুব খুশীর দিন। এতোদিন পর আমরা বাসায় ফিরছি মামুনিকে নিয়ে।

তবে বাসায় ঢুকেই চোখ সকলের ছানাবড়া।

সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে নেহাল,প্রিয়া,ফুপি।

বাবা সবাইকে একসাথে দেখে প্রচুর রেগে যায়। বলে রাখা ভালো মামুনি এবং বাবাকে আয়রার ঘটনা পরে সব বলা হয়েছিলো।

বাবাঃ একি প্রিয়া তুই আমার বাড়ীতে কি করছিস বেড়িয়ে যা বলছি

ফুপিঃ তোমার বাড়ী? কোনটা তোমার বাড়ী ( ৩ জনে একসাথে হেসে উঠলো)

প্রিয়াঃ মামু এটা তোমার বাড়ী ছিলো তবে এখন এটা আমাদের বাড়ী।

ফুপিঃ ভাইজান তোমার বুদ্ধিমতী বউমা সেদিন এগ্রিমেন্টটা পড়ে সাইন করতে বললো তবুও তুমি না শুনে সাইন করে দিলে? ইসসস তোমার এই পাকনা বউমার থেকে কিছুতো শেখা উচিত।

আয়ানঃ ফুপি তুমি এসব কি বলছো? আর এই নেহাল এখানে কেনো?

ফুপিঃ নেহাল কে নেহাল? মনে আছে আয়াত কলেজে একটা ছেলে তোকে ডিস্টার্ব করতো আর আয়ান ওকে প্রচুর মা/রে। আসলে আমিই ওকে পাঠিয়েছিলাম তোকে বিয়ে করার জন্য। যেনো আমার রাস্তা ফাকা হয়।

আয়াতঃ মানে?

ফুপিঃ মানে? মানেটা খুব সহজ। এই বাড়ীর মালকিন হওয়ার আমার বহুবছর থেকে তবে তোমার শশুড় আমায় এই বাড়ীতে রেখেছে শুধুমাএ দয়া করে। আমি ভেবেছিলাম প্রিয়াকে বিয়ে দিলে সব সম্পত্তি নিজের নামে করতে সময় লাগবেনা। তবে সেখানেও বাধা হলি তুইসহ তোর পরিবার। কোথা থেকে উড়ে এসে পার্টনারশীপে জয়েন হলো তোর বাবা তখন থেকেই আমার কালো দিন শুরু হলো। রুদ্র হলো আমার জা-য়ের ছেলে মা-বাবা ম/রা এতিম ছেলে ওকে আমিই সকলের আড়ালে মানুষ করি শুধুমাএ এই পরিবারকে শেষ করার জন্যে। আমিই বুদ্ধি করে ওকে পাঠাই তোর কলেজে তবে লাভ হয়না।এরপর যখন দেখলাম তোদের বিয়ে হবে তখন তোকে সরিয়ে দিলাম।তবে দেখ আমার মেয়ে হয়েও রিয়া আমাদের সাথে হাত না লাগিয়ে আমাদের কথা ফাঁস করে দিতে চাইলো তখন প্রিয়াকে আমিই বললাম ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে।

আয়াতঃ ছি মা হয়ে এমন কাজ করতে পারলে?

ফুপিঃ আমি সম্পত্তির জন্যে সব পারি।

আয়াতঃ অরিনাপু এবং তার মা কি দোষ করেছিলো?

ফুপিঃ ওরা যদি তোকে সাহায্য না করতো তো তুই আজ উপরে থাকতি তাই ওদেরও সরিয়ে দিলাম।

তবে দেখ এতো কিছু করলাম আয়ানের সাথে বিয়ে দিতে তবুও সে রাজি নয়।তাইতো ওকেও ঝাড়বাতি মাথায় ফেলে মা/র/তে চেয়েছিলাম। তবে তুই বাঁচিয়ে দিলি। যেদিন তুই সকলের সামনে এলি সেদিন ভেবেছিলাম আমার এতোবছরের সাধণা শেষ। তবে তুইতো আসল লোকটাকে চিনতে পারিসনি হাহাহা।

খুব ভয়ে ছিলাম যে প্রিয়া সব বলে না দিলে হয়।তবে ও তো আমার মেয়ে ঠিকই জানতো ওর মা ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। সেদিন যদি ধরা পড়তাম তবে আজ এই এতোকিছুর মালকিন হতে পারতাম। আজ আমি স্বার্থক হাহাহা।

আয়াতঃ হাহাহা

প্রিয়াঃ শুনেছি মানুষ বেশী আঘাত পেলে নাকি পাগল হয়ে এভাবে হাসে। এরও মনে হয় তাই।

আমি একাধারে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছি। এবার উঠে বললাম,”আরে হইছে হইছে আর ভিডিও করতে হবেনা।”

ফুপিঃ মানে? কিসের ভিডিও?

আয়াতঃ কেনো এইযে আপনাদের পর্দা ফাঁসের শর্ট ফিল্ম ( হাত দিয়ে ওপরের দিকে ইশারা করে)

সবাই তাকিয়ে দেখে পিয়াস ক্যামেরা নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে। আমি পিয়াসকে উপর থেকে নিচে নামতে ইশারা করলাম।

আয়াতঃ ৩দিন আগে আমায় কল দিয়ে রাজিয়া(কাজের মেয়ে) বলে ফুপির সাথে প্রিয়া,নেহাল বসে গল্প করছে। আমি ওকে বলি ওদের দিকে নজর রাখতে এরপর রাজিয়া ওদের সকল গোপন কথা শুনতে পায়। এটাও শোনে যে বাড়ীটা আর আমাদের নেই। সব কাহিনীর মূল লোক ফুপি। ব্যস আমার কাছে সব পানির মতো সহজ হয়ে যায়। এরপর আমি নেহালের সম্পর্কে খোজ নিয়ে জানতে পারি সে সার্জারি করে নিজের মুখ বদলায়। আসলে সে রুদ্র।

আমি রাজিয়াকে বলি রাতে পেছনের দরজাটা খোলা রাখতে যেনো পিয়াস রাতে বাসায় ঢুকতে পারে। এদিকে আমি সবটা পুলিশকে জানাই। তাদের সাথে পরামর্শ করেই এই প্ল্যানটা করা।

ফুপি তুমি তোমার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলে তাইনা?

ফুপিঃ হ্যাঁ। এতো বড় বাড়ীর সম্পত্তি কেনো ভাই একা ভোগ করবে এতে আমারও ভাগ আছে।

আয়াতঃ নাহ কথাটা তুমি ভুল বললে। তোমায় এবং বাবাকে সমপরিমাণ সম্পত্তিই দিয়েছিলো দাদুভাই। তবে তুমি পালিয়ে বিয়ে করে নিজের ইচ্ছেমতো টাকা উড়িয়ে, ঘুরে-ফিরে ৩বছরের মধ্যে সব শেষ করো ঠিক তখনি আংকেলও মা/রা যায়। তখন তোমায় এই বাবা নিজের কাছে আনে। আর যেটাকে দয়া বলছো তা দয়া না বোনের জন্যে একজন ভাইয়ের ভালোবাসা ছিলো সেটা। তুমি না বুঝেই প্রতিশোধ নিতে বহুবছর আগে থেকে এই নগ্ন খেলায় নেমেছো।

এরপর আমি প্রিয়ার কাছে গিয়ে বললাম,”সেদিনের থা/প্প/ড়গুলো হয়তো কম ছিলো তাইনা? (দিলাম একটা লাগিয়ে)। আমি ভেবেছিলাম তুমি আয়ানকে ভালোবাসো বলে এগুলো করেছো তবে আমি ভুল..

নেহালের কাছে গিয়ে বললাম,”ভালো হয়েছে তোমার মা বাবা নেই। নয়তো তারা এগুলো জানলে সহ্য করতে পারতোনা। এজন্যেই হয়তো আল্লাহ তাদের আগেই নিয়ে গেছে। তুমি একটা মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করার কথা ভাবো কি করে?

নেহালঃ বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনি শুধু ঘুমের বড়িটাই দিয়েছি আর ভয়টা দেখিয়েছি। বাকিসব যেমনঃ ছবি তোলা,ভিডিও করা কাকিমনি একাই সব করেছে।

কথাটা শুনে একটু ভালো লাগলো যে আয়রার সাথে কিছু হয়নি। এরপর আমি ফুপির কাছে গিয়ে বললাম,”আপনি আমার বড় তাই কিছু করতে পারলামনা”। বাবাকে বললাম,”এতকিছুর পর তুমি কিছু বলবেনা?”

বাবা এসে ফুপিকে পরপর অনেকগুলো থা/প্প/ড় দিলো আয়ান পরিস্থিতি বুঝে বাবাকে টেনে নিয়ে এলো।

এরপর পুলিশ এসে ওদের সবাইকে নিয়ে গেলো আমার কাছে যতো প্রমাণ ছিলো সব দিয়ে দিলাম। রুদ্র,প্রিয়া,ফুপিকে নিজে যাওয়া হলো এবং কয়েকদিনের ব্যবধানে ওদের ফাঁশির রায় দেয়া হলো। আমরা আমাদের বাড়ী ফিরে পেলাম।

(চলবে)

 

 

 

 

 

[ ২৫ ]

এরপর কেটে গেছে ৪ বছর। এই শহরের রাস্তাঘাট, বাড়ী-ঘর, পরিবেশ সবকিছুই বদলেছে মানুষগুলো এবং সেই সাথে বদলেছে আমাদের জীবন।

আমার এবং আয়ানের কোল আলো করে এসেছে আমাদের টুইন মেয়ে বেবী। আনায়া,আয়ানা। তারা এই বছর ৪ বছরে পা দিলো। ছোট্ট ছোট্ট শব্দে আমাদের মেয়েরা পাপা,মাম্মাম বলতে পারে। তারা তাদের পাপা নামে পাগল। তারা যেখানেই থাকুক না কেনো যদি শোনে তাদের পাপা এসেছে তাহলে হামাগুরী দিয়ে হোক বা যেভাবেই হোক পাপার কাছে ছুটে যাবেই। আয়ানও ঠিক তেমন মেয়েদের ভক্ত।বাসায় থাকলে সবসময় মেয়েদের সাথেই সময় কাটায়। এগুলো বিষয় নিয়ে আয়ান আর আমার মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হয়।মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে বলি,”সে কেনো আমায় আগের মতো সময় দেয়না? সে এখন আর আমায় ভালোবাসেনা।”

আনায়া,আয়ানা আমাকেও খুব ভালোবাসে তবে যখন তাদের পাপা থাকেনা তখন। হাহাহা। মেয়েরা,বাবারা মনে হয় এমনি হয় তাইনা? মেয়েরা বাবার পাগল আর বাবারা মেয়েদের পাগল।

অন্যদিকে, আয়রা এবং পিয়াসের বিয়ে হয়ে যায় এবং ওদের একটা মেয়ে হয়েছে নাম আরিসা ওর বয়স ৩ বছর। ওরা সবাই পুরো পরিবারসহ লন্ডনে থাকে।

মামুনি,বাবার চোখের মনি এই ৩জন। যখন এই তিনজন একসাথে হয় তখন পুরো বাড়ী দেখে মনে হয় মানুষ থাকেনা অন্যজগৎ-এর মানুষ থাকে। ৩জন মিলে বাড়ীর সব জিনিস এলোমেলো করবে,রান্নাঘরের গিয়ে ময়দা আটা নিজেদের শরীরে মাখবে। আরো অনেক কাহিনী আছে এই তিন পাকনাবুড়ীদের সেদিকে না যাই।

____________________________________________

আনায়াঃ মাম্মাম,,,,মাম্মাম

আয়াতঃ হুম বলো কি হয়েছে?

আনায়াঃ আয়ানা আমায় মাততে(মে/রে/ছে)

আয়াতঃ আয়ানা এটা ভারি অন্যায় তুমি কেনো ওকে মে/রে/ছো?

আয়ানাঃ মাম্মাম আমি ওতে মালিনি সুদু ইকটু তুলটা দলছি আল ও সলে গেছে তাইতো ব্যাতা পেলো(মাম্মাম আমি ওকে মা/রিনি শুধু চুলটা ধরছি আর ও সরে গেছে তাইতো ব্যাথা পেলো)

আয়াতঃ আচ্ছা।মামুনি ও বুঝতে পারেনি। আচ্ছা আরিসা কোথায়? তোমাদের দুপুরের খাবার খেতে হবেতো…

আয়ানাঃ মাম্মাম ও ফুত্তির কাতে( মাম্মাম ও ফুপির কাছে)

আয়াতঃ মামুনি ওটা ফুত্তি না ফুপি

আয়ানাঃ ফুত্তি

আয়াতঃ ওফ,,, ওকে চলো খাবার খাবে।

খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে বসেছে। এইসময় ৩জন পুচকের সে কি ঝামেলা। ওটা খাবো এটা খাবো বলে বলে সবার মাথা খারাপ করে। ৩ জন একেকবার একেকজনের কাছ থেকে বায়না করে খাওয়ার। মূলত একজন আরেকজনেরটা দেখাদেখি।

_______________________________________

ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে আছি। মনে মনে ভাবছি আজ আমি দুই সন্তানের মা। আর এই আমি মাএ কয়েক বছরের ব্যবধানে কি বাচ্চামিটাই না করতাম। আর আজ নিজের বাচ্চাদের বাচ্চামি সহ্য করতে হয়। আজ আমি পরিপূর্ণ একজন নারী।

(আবল-তাবল ভাবতে ভাবতে নিজে নিজেই হাসছিলাম)

হঠাৎ কারো জড়িয়ে জড়ায় ভাবণা ভেঙে বাস্তবে ফিরলাম।

আয়ানঃ কি ভাবছো এতো?(আমায় জড়িয়ে ধরে)

আয়াতঃ না কিছুনা।

আয়ানঃ কিছুনা বললেই হবে? আমি দেখলাম তুমি একা একাই হাঁসছিলে।

আয়াতঃ ভাবছিলাম আজ আমি দুই সন্তানের মা। যে আমি কিনা মাএ কয়েকবছর আগেও ছোট ছিলাম কিছু বুঝতামনা।

আয়ানঃ সময় এভাবেই চলে যায় মেডাম। একদিন এদের বিয়ের সময়ও চলে আসবে।

আয়াতঃ (আয়ানের দিকে ঘুরে তাকাই)

আয়ান আমার কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দেয়।তখনি,,,,

আনায়াঃ পাপা তুমি মাম্মামকে কিসি দিলে কেনো?

দুজন আলাদা হয়ে যাই। এরপর আয়ান বললো,,

আয়ানঃ তোমার মামুনি কান্না করছিলো তো তাই

আনায়াঃ কেনো মাম্মাকে তেউ বকা দিচে আত্তা তুমি মাম্মাকে কোলে নিয়ে দোকান তেকে চলকেট কিনে দাও কান্না থামবে।(কেনো মাম্মামকে কেউ বকা দিয়েছে? আচ্ছা তুমি মাম্মামকে কোলে নিয়ে দোকান থেকে চকলেট কিনে দাও কান্না থামবে)

আনায়ার কথা শুনে আমরা দুজনেই হেঁসে ফেলি। একটুপর আয়ানাও চলে আসে। এরপর মেয়েদের কোলে নিয়ে গালে চুমু একে দেই। তারপর চারজনে মিলে একটা সেলফি উঠি।

এভাবেই আমাদের আনন্দে জীবনের পথ চলতে থাকে।

অবশেষে প্রতিশোধের নির্মম খেলায় খারাপের পরাজয় এবং ভালোর জয় হলো। এক ভালোবাসার পূর্ণতা মিললো কয়েক যুগ পরে। তবে কি আছে আয়াত, আয়ানের পরবর্তী জীবনে? তারা কি সত্যি সুন্দর,হাসি-খুশী জীবন-যাপন করছে? প্রতিশোধের খেলা কি সত্য শেষ?

জানতে হলে অপেক্ষা করুন #প্রতিশোধ_সিজন_০২ -তে

সমাপ্ত

(প্রিয় পাঠক/পাঠিকা এতদিন যারা প্রতিশোধ গল্পের পাশে ছিলেন তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না আপনাদের প্রতি রইলো আমার অবিরাম ভালোবাসা। পরবর্তী গল্প কবে পোস্ট করবো তা আমার গ্রুপে জানিয়ে দেয়া হবে। সেই পর্যন্ত সাথে থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এবং আমার সামনে পরিক্ষা তাই দোয়া করবেন)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..