1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

## গল্প কথা ##বৃদ্ধাশ্রম” —————রোজিনা রোজ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৫৭৫ বার
মা-বাবা হওয়া কি এতই সোজা–?
উত্তরঃ– না। অনেক কঠিন। এবং সেই কঠিন কাজগুলো মা-বাবা হাঁসি মুখেই বরণ করে নেয়।প্রান প্রিয় সন্তানের জন্য।
মাতৃগর্ভে সন্তানের আবির্ভাব হওয়ার পর থেকে, দীর্ঘদিন ধরে একটি মা শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে, হাজার ব্যাথা বেদনা কে তূচ্ছ করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সন্তানটিকে পৃথিবীর আলো দেখায়।
তারপর আবার সন্তানটিকে জন্মের পর থেকে, সুদীর্ঘ সময় ধরে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে, চড়াই-উৎরাই, লালন-পালন করে মা-বাবা। অজস্র কষ্ট করে মা-বাবা সেই সন্তানের জন্য।
সন্তানের জন্য মা-বাবা কত‌কিছুই না করে। একটা গানের কলি শুনেছি- গাঁয়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলে ও তাঁর ঋন শোধ হবার নয়।
এবং পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা যদি একত্রিত করা হয়। তবু ও মা-বাবার ভালোবাসার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। কারণ তাদের ভালোবাসার কোন তুলনা হয়না। মা-বাবা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চান না।
সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চলতে চলতে যখন বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়। এইতো আর কয়টা দিন। খোকার একটা ব্যবস্তা হলেই নিশ্চিত।
সন্তানরা বিয়ে সাদি করার পর। মা-বাবারা বাকি জীবনটা ছেলে,ব‌উ, নাতি-নাতনিদের সান্নিধ্যে কাটিয়ে দেবার স্বপ্ন দেখেন। অনেক সময় অনেক কারনেই শাশুড়ি বা বৌমার মধ্য বনিবনা না হওয়ায়।ঠিক তখনই ঘটে যায় বিপরীত। ঘটছে শতশত অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা।
তাদের কে অতিরিক্ত বোঝা মনে করে । প্রতিনিয়ত অবহেলা,অবজ্ঞা করে। একটা সময় মুক্তির পথ খুঁজতে, রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রম নামক জেলখানায়।
————-
সন্তানের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করার পর ও কেন তাদের সাথেই হয়,,, এমন বর্বরতা ও নিষ্ঠুর আচরণ ?
কি কারণ থাকতে পারে এমন নিষ্ঠুরতার পেছনে? অব্যশ‌ই কোন না কোন কারণ তো বটেই।
————————–
গত কয়েকদিন আগে এক আপু লিখেছিল “বৃদ্ধাশ্রমে’ যাওয়ার জন্য শুধুই কি সন্তান‌ই দায়ী? বাবা-মায়ের কি কোন ভূমিকা নেই ? সরি আমার ঠিক অতটা মনে নাই। যাই হোক, তবে এরকম কিছুই হবে। আমি ও তাঁর লেখার সঙ্গে সহমত পোষণ করে,নিজের ভাবনার ক্ষুদ্রতম জ্ঞান থেকেই আজকের লেখাটায় কিছু চিত্র তুলে ধরতে চাই।
————-
আমি পৃথিবীর অন্য কোন দেশের কথা বলবো না।
আমাদের দেশেই শত শত, হাজার হাজার পারিবারিক দৃশ্য গুলো এখন এরকমটাই হচ্ছে।
আমাদের সমাজে প্রতিদিনই হাজার ও ঘটনা ঘটছে। হয়তো, সারা জীবন লিখলে ও তা শেষ হবে না।
টেলিভিশনে, পত্রিকাতে, ইন্টারনেটে অহরহ শোনা যায়, মা-বাবার প্রতি, সন্তানের অবহেলা ও দুর্ধর্ষ সব অপরাধ। কখনো বা বাবাকে কুপিয়ে হত্যা। আবার মাকে রাস্তায় ফেলে আসা। আরও তো আছে শত শত বৃদ্ধাশ্রম।
বাবার-মায়ের ঠাঁই হয় না সন্তানের কাছে। কি ধনী, আর কি গরিব। সবারই নাজেহাল অবস্থা। সমাজে উচ্চ শিক্ষিত করে, জীবন গড়ে দেওয়ার পরেও, সেই বাবা-মায়ের জায়গা হয় না সন্তানের কাছে। ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। আবার অনেক ধনী পুত্র নিজের আত্মসম্মানের কারণে মাকে বাসায় রেখে কাজের লোকের পরিচয় দেয়।
তাহলে তো বলতে হয়, মা-বাবা সন্তান কে সঠিক নৈতিকতার সুশিক্ষা গুলো দিতে পারে নি?
কারণটা আরেক বার একটু ভেবে দেখি।
প্রথমত।
———–
সন্তানকে যদি আমরা চারা গাছের সঙ্গে তুলনা করি। তাহলে বাবা-মা হলো সেই চারা গাছের “মালি।
আর “মালির কাজ হলো, চারা গাছকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা, গাছে পানি দিয়ে, স্যার দিয়ে, গাছটিকে পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে সুন্দর ভাবে বড়ো করে তোলা।” মালির’ উপর রক্ষা করছে চারাগাছটি বেড়ে উঠা।
দ্বিতীয়ত।
————-
আবার দেখুন, একজন কুমোর কি সুন্দর করে তাঁর নিপুণ হাতে মাটি দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করে। এমন নিখুঁত ভাবে কাদামাটি দিয়ে তাঁর হাতে তৈরি করে হাঁড়ি পাতিল কলস ইত্যাদি। কাদামাটির দলা টাকে সে যেরূপে দেখতে চাইবে, সেরুপে তৈরি হবে তাঁর পাত্রটি। সম্পূর্ণ তাঁর হাতের দক্ষতার উপর নির্ভর করছে।
ঠিক তেমনি প্রতিটি শিশুই ওই কাদামাটি,বা চারাগাছটির মতোই জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে আসে। শিশুটিকে ঠিক যেভাবে তৈরি করা হবে। সেরকম ভাবেই শিশুটি বেড়ে উঠবে।
তেমনি করে প্রতিটি বাচ্চার আইডল তাঁর মা-বাবা। আর কোন মা-বাবা‌ই তাঁর সন্তান কে কুশিক্ষা দিচ্ছে না। সব মা-বাবাই চায় তাঁর সন্তান যেন মানুষের মধ্যে মানুষ হয়।
এতো কিছুর পরেও মা-বাবার ভুল হয়।
হ্যাঁ, মা-বাবার ও ভুল হয়। আর মানুষ মাত্রই ভুল করে। কোন মানুষ‌ই ভুলের উর্ধ্বে নয়। তাদের অজান্তেই ভুল গুলো হয়ে যায়। আর সেই ভুলের কারণেই বৃদ্ধ বয়সে এসে তাঁর মাসুল দিতে হয়।
———————–
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি। আমাদের সমাজে দুটি শব্দ প্রচলিত আদর এবং শাসন।
এই দুটি শব্দের মধ্যই সীমাবদ্ধ অভিভাবকরা।
এরমধ্যে কয়জন মা-বাবারা সন্তান কে বুঝতে পেরেছে?
নিজের সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের মতো আচরন করতে পেরেছে?
কখনো কি ভেবে দেখেছেন একবারও??
কোনটি সন্তানের জন্য খারাপ। কোনটি সন্তানের জন্য ভালো। কখনো এগুলো ভেবে দেখেনি মা বাবা। সন্তান মানুষ করতে হবে,এটাই ছিল মা-বাবাদের চিন্তা-চেতনার মূল দায়িত্ব।
পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে। করতেই হবে। পাশের বাড়ির অমুক কতো ভালো রেজাল্ট করে। কত বুদ্ধিমান। সে ভাত খায় । তুই কি ভাত না খেয়ে ছাই খাস?যে তোর মাথায় গোবর ভরা। প্রতিনিয়ত অন্যের সঙ্গে সন্তানের তুলনা করায়। সে নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে।
এতে করে সন্তান বুঝতে পারেনি ভালো মন্দের তফাৎ টা।
সন্তান এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে বড় হতে থাকে।
আবার, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অভিভাবকরা সন্তানের উপর চাপিয়ে দিয়েছে তাদের আকাঙ্ক্ষার বোঝা।
আবার অনেক বাবা-মা সন্তানকে হোস্টেলে রেখে বড়ো করেছে। তাদের চিন্তাধারা এটা তাঁরা সন্তানের ভালোর জন্যই করেছে। অথচ সন্তানের সেই বয়সেই বাবা-মাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।
আত্মীয়-স্বজন কারও সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয়নি সন্তানদের। পরীক্ষার সময়গুলোতে আত্মীয়-স্বজন কাউকে বাসায় আসতে দেয়নি, ছেলে মেয়ের পরীক্ষার অজুহাতে।
সন্তানের সামনে বাবা তাঁর ভাইয়ের সম্পদ মেরে খাইসে। মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বোনকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। সন্তান এগুলো দেখেই কিন্তু বড় হচ্ছে।
তাদের ধারণা সবকিছু সন্তানের জন্যই করছে, যাতে করে ভবিষ্যতে সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয়। আরো অনেককিছুই আছে যা লিখে শেষ করবার মতো নয়।
*আবার অনেক বাবা-মা এভাবে ও ভেবে নেয়। যে সন্তানের সঙ্গে কি মেপে কথা বলতে হবে!? এরকম ছোট ছোট ভুল গুলো থেকেই সন্তানের মনে এক ধরনের দাগ কেটে যায়। সেগুলো বিন্দু বিন্দু করে বড় দলা” হতে থাকে। আরো অনেক অনেক খারাপ ব্যবহার করে সন্তানের সঙ্গে। যেগুলোর পরিনাম আজ এই ভয়াবহতা।
ঠিক এভাবেই তাঁরা নিজেদের অজান্তেই সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা টা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
পরিশেষে কারণ হলো। সন্তান কে তাঁরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে যেয়ে, সুশিক্ষাটাই দিতে পারে নি।
দুই
—–
নিম্নবিত্ত বাবা-মা দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদেরকে কোনরকম টেনেটুনে বড় করে। অনেকে হয়তো বা স্কুলের বারান্দায় যেতে পারে, আবার অনেকেই পারে না । সন্তানের যখন আট নয় বছর বয়স হয়। তখন থেকেই তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় সংসারের বোঝা। বাবা আর সন্তান মিলে এক‌ইসঙ্গেই উপার্জন করে বাকি সদস্যদের রুজির ব্যবস্থা করে।
এভাবে কয়েক বছর সন্তানের উপার্জন ভোগ করতে পারে।একটা সময় তাঁরা যখন বিয়ে করে। তাঁর ব‌উ ছেলেমেয়ে নিয়ে হয় আরেকটি সংসার। তখন সেই সন্তান নিজের সংসার দেখবে? না, মা-বাবার সংসার দেখবে? এভাবে তারা দোটানায় পড়ে চড়াই-উৎরাই উঠতে পারে না। নিজেদের গণ্ডির মধ্যে থেকে।
পরিশেষে, সবকিছু মিলিয়ে দেখা গেল। যে বাবা-মায়ের সঙ্গে যদি সন্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতো। বাবা মাকে ভয় না পেয়ে বন্ধু ভাবতে পারতো। তাহলে সন্তান তাঁর মনের ভালোলাগা-মন্দলাগা অনুভূতিগুলো নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারতো। বাহিরে অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা গুলো বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করতে পারতো। তাহলে আমাদের সমাজের এই অবক্ষয় গুলো থেকে আমরা কিছুটা হলেও অন্তত বেরিয়ে আসতে পারতাম।
আমার লেখনিতে আমি কিন্তু সবাইকে বলিনি। কিছুসংখ্যক বাবা-মা এবং সন্তানদের উল্লেখ করেছি।
সারা জীবন কষ্ট করে যে সন্তানদের মানুষ করেছে বাবা মা। সেই বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের সান্নিধ্যে ছাড়া বৃদ্ধাশ্রমে একা একা অনাদরে পড়ে থাকুক। এটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
বাবা-মা যদি ভুল করেও থাকে তবুও তাঁরা বাবা মা। তাদের তুলনা শুধুই তাঁরা । অন্য কারো সাথে তাদের তুলনা হয় না। মেনে নিলাম বাবা-মা না হয়, ভুল করেছেন। কিন্তু সন্তানরা যখন বাইরের সমাজে মিশে তখন তো তাঁরা ভালো-মন্দের বিচার করতে পারে। তাঁরাও তো শুধরে দিতে পারে।
একটা কথা না বললেই নয়। নিজের ভালোবাসার স্ত্রী, কিংবা ভালোবাসার স্বামী, কারো কথাতেই জন্মদাতা কে অবহেলা অবজ্ঞা করে নিজের জান্নাত হাঁরাবেন না।
#বৃদ্ধাশ্রম বলুন না, না, না,। মনে রাখতে হবে আমাদের ও বয়স বাড়ছে বৈকি কমছে না।
আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে সামান্যতম লেখার চেষ্টা করলাম।
পারলে আপনাদের মতামত ও জানাবেন। ভুল হলে মার্জনা করবেন।
May be an image of flower and body of water

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..