1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

একটা ঘটনা বলি – – – সেলিনা রহমান শেলী

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৩৯৩ বার
বেশ অনেক দিন আগে, ঢাকা থেকে ফিরছিলাম জব এক্সাম দিয়ে। চৌরাস্তা পেরিয়ে কোন এক ব্যস্ত সড়কে আমার প্রাইভেট কার জ্যামে আটকে গেলো। আমার বাহিরে বের হওয়া হয় খুব কম। তাই যখনই বের হই খুব আগ্রহ নিয়ে মানুষ দেখি, তাদের ব্যস্ততা দেখি। আকাশ দেখি, ফেরিওয়ালা দেখি, ফুটপাতে যে ভিক্ষুক থালা সামনে বসে থাকেন তার গতিবিধিও লক্ষ্য করি, পান,সিগারেটের হকার, সুদর্শন ছেলেটি, খোঁপায় ফুল গুঁজে ব্যস্ত পায়ে রাস্তা পার হওয়া তরুণী কিংবা একদম খেটে খাওয়া শ্রমিক মানুষটি শক্ত হাতে সস্তা ফ্রক পড়া বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে বাস থেকে নামেন তাকেও দেখি। দেখতে ভালো লাগে। মনে হয় এই যে, শত শত মানুষ চারপাশে সবাই এক একটি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র।
হঠাৎ চিন্তায় বাঁধা পরে,যখন সামনের পিকাপে বসা উঠতি বয়সের দুজন ছোকরা আমাকে দেখে শীষ বাজায়, হিন্দি গানের কলি আওড়ায়। হা হা হা.. ওদের বাচ্চামি দেখে আমিও সুন্দর করে হাসি দেই। ছেলেগুলো গম্ভীর হয়ে যায়। তারা হয়তো অন্য কিছু আশা করছিল। একটু পরেই দ্বিগুণ উৎসাহে তাহারা সিটি বাজানো শুরু করলো। মজাই লাগছিল। রাস্তায় ক্ষণিক দেখা নাবালক। জীবনে আর কখনো দেখা হবে না জেনেও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কেনো? মনোবিশারদরা বলতে পারবেন হয়তো।
আমার গাড়ি কিছুটা সামনে এগিয়ে আবার জ্যামের জন্য থেমে গেলো। এবার ফুটপাতের ওপাশে বেশকিছু আলো ঝলমল দোকান। ওষুধের, ফ্রিজের, মোবাইলের আরও কত কি। একজন পাগলি ধরনের মহিলা শতছিন্ন কাপড় পরে, কোলে দুই কি তিন বছরের অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চা নিয়ে এ দোকান সে দোকান সাহায্য চেয়ে ঘুরছে। হাত পেতে কি কি সব বলছে, আমি অনেকক্ষন তাকে লক্ষ্য করলাম। কেউ দিচ্ছে, কেউ দিচ্ছে না। রাস্তার পথচারিদের কাছেও টাকা চাইছে। কোলের বাচ্চাটার চেহারা দেখে, মহিলার অসহায়ত্ব দেখে এত মায়া লাগলো, ব্যাগ থেকে খুব বেশি না দুশ টাকার দুইটা নোট( খুচরা টাকা যা ছিল আরকি) মুঠোর মধ্যে নিয়ে মহিলাকে ইশারা করলাম। জোরে চিৎকার করে কয়েকবার ডাকলামও কিন্তু চারপাশের এত এত গাড়ির হর্ণের শব্দ, চিৎকার, চেঁচামেচিতে মহিলা একবারের জন্যও ফিরে তাকালো না আমার দিকে। বাচ্চাটা তাকিয়ে ছিল কেনো জানি না। জ্যাম ছুটে গেলো। সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার সাথে সাথে আমার গাড়িও চলা শুরু করলো। আমি খুব খুব করে চাইছিলাম মহিলা একবার তো এদিকে এক পলকের জন্য তাকিয়ে দেখুক। তার, তার বাচ্চাটা একটা কলা, একটা রুটি তো খেতে পারতো। মহিলা এ দোকান সে দোকান ঘুরছেন আর অনুনয় করে পাঁচটা দশটা টাকা হয়তো চাইছেন।
মহিলা দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলেন। হতাশ হয়ে আমার হাতের টাকাটা ব্যাগে রেখে দিতে গিয়ে মনে হলো, ” চাইলেই যেমন সবাইকে সাহায্য করা যায় না, তেমনি সৃষ্টিকর্তা যতটুকু রেখেছেন তার বেশিও হয়তো পাওয়া হয় না। “
সেই পিচ্চি বাচ্চার চেহারাটা আজও চোখে ভাসে। সাথে আমার টাকা দেবার আকুলতাও। আহা।
আমি কর্ম এবং প্রচেষ্টা যেমন বিশ্বাস করি, তেমনি ভাগ্যও বিশ্বাস করি। এমন অনেক ঘটনা ঘটে আমাদের জীবনে ভাগ্য বিশ্বাস না করে আসলে উপায় থাকে না।
মাঝে মাঝে নিজেকে বলি,”জীবন অদ্ভুত কইন্যা। বড়ই অদ্ভুত।”
©সেলিনা রহমান শেলী
May be an image of 1 person, smiling and flower

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..