1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

বেলজিয়াম ভ্রমণ- ১ এবং বেলজিয়াম ভ্রমণ- ২ – – – ©তাসনুভা সোমা – – লেখক ও কলামিস্ট

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০২৩
  • ১৭৫ বার
বেলজিয়াম ভ্রমণ- ১
ফেব্রুয়ারি শুরু হলে ইদানিং অন্যরকম মন খারাপ এসে ভর করে মনের মাঝে। দেশে যেতে ইচ্ছা করে, বইমেলায় যেতে ইচ্ছা করে। নিজের বইগুলোর সাথে থাকতে, পাশে থাকতে ইচ্ছা করে। এবারও হলোনা। জানিনা কবে হবে। বইমেলায় যাওয়া সম্ভব নয় জানতাম। তবে, অন্য কোথাও তো যাওয়াই যায়। আমাদের ভ্রমন দলের বাকি সদস্যদের চেয়ে আমার একটা অতিরিক্ত কারণ ছিল ঘুরতে যাওয়ার। আমি অনেকটা মন খারাপ ভাবটা কাটাতেই আবার ঘুরতে বের হয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির হাফ টার্ম হলিডেতে।
আমাদের ৫ জনের ভ্রমণ দলের ৪ জনই অসুস্হ ছিল বিধায় ডিসেম্বরের হলিডেতে কোথাও যাওয়া হয়নি। টিকেট করা ছিল। সেগুলো বাতিল হয়ে গেছে। নতুন করে টিকেট করে আগের নির্ধারিত জায়গাতেই গেলাম আমরা। রাতের আঁধারে ইউরোপের একমাত্র এবং সবচেয়ে আলোকিত রাস্তার দেশ বেলজিয়াম। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাজধানী কিম্বা বলা যায় ইউরোপের মধ্যমণিও এই বেলজিয়াম। এরকম নামকরণের পেছনের কারণগুলোতে একটু পরে আসছি।
এবার ভ্রমণে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে বেছে নিয়েছিলাম সড়ক পথ। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হল যাত্রা। বাসা থেকে বের হয়ে ভিক্টোরিয়া কোচ স্টেশন এক ঘন্টার পথ। সেখান থেকেই বেলজিয়ামের পথ ধরব। কোচ স্টেশনে সকালের নাস্তা আর ড্রিংঙ্ক কিনে নিয়ে বাসে উঠার জন্য একদম প্রস্তুত সবাই। পাসপোর্ট, টিকেট চেক করে বাসে ঢুকতে দিল। বাসে হলেও সীমান্ত পার হচ্ছি, পাসপোর্ট চেক তো হবেই।
আমরা দোতলায় বসব। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। সেই হিসেবে গড়গড় করে উঠে গেলাম উপরে। তারপর কোন সিট নম্বর খুঁজে পাইনা। একটু হলেও রাগ ধরল। ওরা নির্ধারিত সিটের জন্য আলাদা করে পয়সা নিয়েছে। আমরাও নিজেদের পছন্দমত জায়গায় সিট কিনেছি। তাহলে কেন এখন অন্য কেউ সেখানে বসবে? অন্য যাত্রীরা বলল এরকমই হয় এই বাসে! তারাও সিটের জন্য আলাদা পে করেছে কিন্তু বাসে কোন সিট নম্বর নেই।
  No description available.
যেখানে ইচ্ছা বসতে পারে। বুঝলাম পুরো দুনিয়াটাই এরকম হয়ে গেছে! শুধু পয়সা নেয়ার ধান্ধা আর চালাকি!
No description available.
ভাল জায়গায় সিট পেয়ে ভুলে গেলাম দুঃখ। সবকিছু অন টাইম। কাঁটায় কাঁটায় দশটায় বাস নড়ে উঠল। টিয়া পাখির গায়ের রংয়ে রাঙানো Flixbus নামের কোচে সকালের নাস্তা খেলাম। স্যান্ডউইচ, ক্রিসপ আর চা। আমার পাশে বসেছিল আমাদের দলের চতুর্থ সদস্য। সে মূলত আমার টেক কেয়ারেই ব্যস্ত থাকল বেশ কিছুক্ষণ। আমি জানতাম, সেও অনেকটা জানত। চলন্ত বাসে চা পান করার সময় আমার গায়ে চা পড়বে।
No description available.
একসময় পড়লও। ওর অত্যন্ত বিপদে পড়া মুখ দেখে আমি হাসলাম। হাসির অর্থ ‘এটা কোন ব্যাপারই না। গায়ে একটু চা পড়লে কি হয়! একটু মুছে নিলেই হয়ে যাবে। আমি তো আর নায়িকা না যে গায়ে একটু কিছু পড়লেই হুলুস্হূল শুরু করতে হবে! সুযোগ বুঝে কাপড় বদলে নিলেই হবে।’ ছেলে শান্ত হোল। সেন্ট্রাল লন্ডনের ভিক্টোরিয়া থেকে বেরিয়ে, সাউথ লন্ডন পেরিয়ে তিন ঘন্টা পর আমরা পৌঁছালাম সীমান্তে। (চলবে)
(এই পর্বের সবগুলো ছবি নেট থেকে নেয়া)
বেলজিয়াম ভ্রমণ- ২
ইংল্যান্ডের একটি সীমান্ত ঢোভার বন্দর বা পোর্ট অব ডোভার। সেটাও কিন্তু দেখার মত একটা জায়গা। ফ্রান্সের থেকে ইংল্যান্ড আলাদা হয়েছে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে। চ্যানেলের এপারে ইংল্যান্ডের ডোভার আর ওপারে ফ্রান্সের ক্যালে। ডোভারে সামনে আইরিশ সাগরের একাংশ বা ইংলিশ চ্যানেল/প্রনালী, একপাশে বিশাল পাহাড়। সাগর পাহাড়ের মিতালিতে খুব সুন্দর একটা জায়গা।
No description available.
নানা ফরমালিটি শেষ করে প্রায় ঘন্টা দুয়েক কাটিয়ে ফেরিতে উঠল বাস। ফরমালিটির মধ্যে ছিল দুই দুইবার পাসপোর্ট চেকাপ, পুরো বাসের স্ক্যানিং ইত্যাদি। এরমধ্যে একবার পাসপোর্ট নিয়ে বাস থেকে নামতে হলো ইমিগ্রেশন চেকাপের জন্য। ফেরিতে ওঠার লম্বা লাইন, ক্লিয়ারেন্স পাওয়া শেষে আমাদের জায়গা হল IRISH FERRIES নামক ফেরিতে। ২০১৪ সালে ফ্রান্সে গিয়েছিলাম ঠিক এই পথে। সেবার উঠেছিলাম P&O ফেরিতে। ইংল্যান্ড থেকে সড়ক পথে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মান এবং নেদারল্যান্ডস যাওয়ার জন্য এপার থেকে একই পথ। তখন গাড়িতে গিয়েছিলাম বলে চেকাপটাও ভিন্ন ছিল। মিল ছিল ফেরিতে খাওয়ার ব্যবস্হা, সুরক্ষা ব্যবস্হা এবং দুলুনি।
No description available.
ফেরিতে বাস যেখানে পার্ক করা হয় সেটা যাত্রীদের থাকা নিয়ম বিরুদ্ধ। বাস থেকে সব যাত্রী নেমে গেলে ড্রাইভার সাহেব বাসের দরজায় তালা দিয়ে দিল। তারমানে, কেউ চাইলেও ফেরি চলাকালীন সময়ে বাসে বসে থাকতে পারবে না। ড্রাইভার ব্রিটেনের না। ওপারের কেউ হবে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলে। তাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ঘন্টা দেড়েক পরে ফিরতে হবে। কিংবা ঘোষণার দিকে কান দিয়ে রাখলেও হবে। যাত্রীদের সকল সেবা ফেরির ৭তলায়। সকল যাত্রীদের সাথে সেদিকেই রওনা হলাম। খেয়াল করে বাসের নম্বর, কোন সিঁড়িঘর দিয়ে ঢুকছি তার এবং এবং সিঁড়ির নামের ছবি উঠিয়ে নিলাম। এসব জানা না থাকলে ফেরার সময় একাধিক সিঁড়ি এবং অসংখ্য বাসের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া খুব সহজ। ফেরি ছাড়ার পর পরই গা মাথা সব দুলতে লাগল। হাঁটার সময় মনে হচ্ছিল সোজা সামনের দিকে হাটতে পারছিনা। ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে একপাশে! ফেরিতে বেশ দুলুনি টের পাওয়া যায়। মাথা রীতিমত চক্কর দিয়ে ওঠে।
No description available.
ফেরিতেই আমরা দুপুরের খাবার খেলাম। ফিশ, চিপস, বেকড মিক্সড ভেজিটেবলস, বেকড পটেটো, বেকড বিনস। সাথে ড্রিংকস, আইসক্রীম এবং সুইটস। সাথে ছিল বাসা থেকে নেয়া কিছু খাবার। ফেরিতেই রান্না করা ফ্রেশ খাবার বিক্রি হয়। খেতেও ভাল। খেতে খেতে ভাবছিলাম ২০১৪ সালেও ফেরির ডেকে যেতে পারিনি। দুরন্ত, অবুঝ, ছোট একজন সাথে ছিল। ওকে সামলিয়ে, দুলুনি সামলিয়ে ডেকে যাওয়ার সাহস হয়নি তখন।
No description available.
এবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু মাথা যেভাবে দুলে উঠছিল তাতে সেই সাধ মরে গেল। ডেকে গেলে ইংলিশ চ্যানেলটা একটু ভাল করে দেখা যেত। সেটাই সাধ ছিল। কিন্তু মাথা যেভাবে দুলে উঠছিল তাতে সেই সাধ মরে গেল। এবারও হলোনা ফেরির বারান্দায় দাড়িয়ে উন্মুক্ত প্রনালীর ঢেউ দেখা। আর বোধহয় হবেনা এজীবনে। দুলতে দুলতে ঢলতে ঢলতে দেড় ঘন্টা শেষ করলাম। ফিরে এলাম বাসে এবং শুরু হলো যাত্রা। ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ছয়ঘন্টা। গন্তব্যে পৌছাতে বাকি আছে আরো প্রায় চার ঘন্টা। (চলবে)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..