১৯ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার। আমরা রেডি রাঙামাটির জন্য। লিঙ্কন এসে বলছে, অর্নী যাস না। বাসায় ফিরে যা। কাল সন্ধ্যার পর রাঙামাটিতে শান্তি বাহিনীর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তিনজন মারা যায়। শহর খুব উত্তাল। অবশ্য রাতে টিভির খবরে আমরাও শুনেছি কিন্তু পাত্তা দেই নি। সাহেব এমনিতেও একটু ভয় কাতুরে। সে বেশ ভয় পাচ্ছে। ছেলে বলছে, আমার তাতে কি আমি লিঙ্ক রোড দিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঢুকে যাবো। লিঙ্কনের কথা, না তুই তাহলে শহরের সোজা পথে যা। ঝামেলার দরকার কি? একপাশে পাহাড় আরেক পাশে হ্রদ। আমি এতোদিন আছি জানিস একদিনও এ পথ মাড়াইনি। ছেলে শুনে হেসে হেসে বলছে, শালা তুই তো একটা ভীতুর ডিম। আবার আর্মিতে আছিস! এই পথের সৌন্দর্যই দেখলি না তবে এতো দিন কি দেখলি! তোর তো কাপ্তাই থাকাই বৃথা। আমি যাবো রাঙামাটি। তবে এই পথেয় ইনশাআল্লাহ।
রাঙামাটি কাপ্তাই সংযোগ সড়কটি অনেক আঁকা বাঁকা উঁচু নীচু পাহাড়ি পথ। এই সড়কের দুই পাশের মনেরম দৃশ্য পর্যটকদের নিকট খুবই উপভোগ্য।অনন্য বৈশিষ্ট্যের এমন সড়ক এদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। সড়কের একদিকে সবুজ পাহাড়ের সারি অন্যদিকে নীলজলের হ্রদ। পাহাড়ের উপরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হ্রদ আর পাহাড় দেখা পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।
কাপ্তাই থেকে রাঙামাটির দূরত্ব এই নতুন সড়কে ২৭ দশমিক ৬ কিলোমিটার। চলছে গাড়ি। তবে খুব একটা জোরে না। দেখার সুবিধার্থে। এসি বন্ধ জানালা খোলা। এমনিতেও পাহাড়ি এলাকায় এসি বন্ধ রাখতে হয়। আমরা চিৎকার করছি ওয়াও! এত্তো সুন্দর পথ হয়! একপাশে পাহাড়ের ঘন সবুজ অন্য পাশে হ্রদের নীলজল। উঁচু নীচু পাহাড়ি পথ বেয়ে চলছে গাড়ি। পাহাড়ের আগায় মাঝে মধ্যে বৌদ্ধ মঠ। গাড়ি উপরে উঠতেই সাহেব ভয় পায়। বলে নাচানাচি রেখে আল্লাহ আল্লাহ কর। বলছি, ক্যান তুমি ভয় পাচ্ছো? দু’চোখ ভরে সুন্দর দেখো আর আল্লাহর মহিমা গাও।ছেলে আবার ভালো পছন্দমতো জায়গা দেখেই গাড়ি থামায়। সবাইকে নিয়ে সেলফি নেয়। আর বলে আম্মু তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হ্রদ এবং পাহাড়ের দৃশ্য অবলোকন করো। প্রকৃতি রাণী অকৃপণ ভাবে রাঙামাটিকে ক্যামনে রাঙিয়েছে দেখো। এইভাবে কিছুটা দেরী হলেও সুস্থ মতেই আমরা রাঙামাটি ক্যান্টমেন্টের অফিসার্স মেসে আসি। দারুণ দু’টো রুম। এগুলাও আগে বুকিং দেওয়া ছিলো। রুমের নাম ভুলে গেছি। এসবের নামও আদিবাসীদের ভাষায়। অনতি দূরেই রিসোর্ট আরণ্যক। দেখতে খুবই মনোহর। সামনে পিছনে ফুল,ফলের গাছে ভর্তি। এখানে বসার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া। এমনকি রাস্তার উপরেও নানাবিধ ফুল যত্নে গড়া। এসবই নাকি সেনাবাহিনীর তৈরী। আরণ্যকের সামনে থেকে হ্রদ অবধি সুচারু রাস্তার মাথায় সুন্দর মজবুত ছাউনি। এখানে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা দৃষ্টি নন্দন হ্রদ অবলোকন করে। রাঙামাটি জেলার সেনানিবাস এলাকায়
মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত এই রির্সোট। এটা পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র।কাপ্তাই হ্রদে ঘেরা শান্ত ও ছিমছাম পরিবেশে আরন্যক রিসোর্টটি সুনিপুন ভাবে ছবির মতো সাজানো গুছানো। রিসোর্টটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত। হ্রদের পাড়ে সবুজ ঘাসে মোড়ানো রিসোর্টের প্রথম অংশে আছে নান্দনিক ফুলের বাগান,নানা রকম ভাস্কর্য, রিসোর্ট,প্যাডেল বোট,স্পীট বোটে চড়ার সুবিধা ও কফি শপ। এবং দ্বিতীয় অংশ হ্যাপি আইল্যান্ডে আছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড,পার্ক,রাইডার,বোট রাইডিং এবং লেক ভিউ সুইমিং পুল। রিসোর্টের ভেতরে ও বাহিরে চলছে ফটোসেশান । পরে বোটে চড়ে হ্যাপি আইল্যান্ডে যাই…
Leave a Reply