1. press.sumon@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৯:১৩ অপরাহ্ন

আমার মায়ের বাগান করার খুব শখ – – – শাম্মি মারজিয়া

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২
  • ১৪০ বার
ফুলফল, শাকসবজির চারা লাগাবে, নিজ হাতে যত্নআত্তি। এসব তাঁর নেশা। তিনি ভালো নার্সারি থেকে বেশ দাম দিয়ে ফুল, ফলের চারা, বিভিন্ন সবজির বীজ, জৈবসার কিনে আনালেন। যখন আমাদের পরিবার কুষ্টিয়া শহরের বাড়িতে আসে তখনকার কথা বলছি। বেশ বড়ই যায়গা বাগান করার জন্য বাসার সাথে। তিনি গেটের পাশে বারোমাসি শিউলি ফুলের গাছ লাগালেন। তার পাশে তিন রং এর ফুল ফুটবে একই গাছে এমন বাগানবিলাস। বাসার ডানদিকের বারান্দার সামনে পাতাবাহার। বাড়ির পিছনের দিকে কাঁঠালিচাঁপা। ছাদের টবে গোলাপ, ক্যাকটাস, সিজনাল ফুল, তুলসীগাছ আরো কত কি!
যেখানে ভীষণ যত্ন আত্তি, পানি, সার, নিয়মিত নিড়ানি পেয়ে ওদের লকলকিয়ে বেড়ে ওঠার কথা, সেখানে সবগুলো কেন ঝিমুতে থাকে। বারোমাসি শিউলি বারোমাসেও দেখা দিলো না। অতো দাম দিয়ে কেনা তিন রঙ এর বাগানবিলাস গাছে দেখা গেল এক রং এর ফুল ফুটেছে তাও হালকা গোলাপি যা অপছন্দের। গাছটাও তেমন শক্তপোক্ত হলো না। রাগের চোটে মা গোড়া সহ উপড়ে ফেলে দিলেন। অন্যসব গাছের কথা আর না বলি।
এরপর আসি পেঁপে গাছের কথায়। মায়ের খুব পছন্দের। বীজ ছিটিয়ে দিলেন মনের মতো। কয়েকটা চারা হলো। তিনি তা উঠিয়ে পছন্দমতো যায়গাতে লাগালেন। মাশাল্লা, ধাক ধাক করে বেড়ে চলেছে তো চলেছেই। এরপর একদিন গাছ ভরে ফুল এলো। এবং দেখা গেল, প্রত্যেকেটাই পুরুষ গাছ। কেউ বললো গাছের মাথাটা কেটে কাপড় বেধে দাও। করা হলো। ফলের দেখা আর মিললো না। অথচ,আশেপাশের সব বাড়ির গাছে পেঁপে পেকে ঝুলে রয়েছে যা তারা নিজেরাও লাগায়নি, পাখির টয়লেট থেকে আপনাআপনি হয়েছে।
মা হাল ছাড়লেন না। এবারে লাগালেন পেঁপের চারা, নার্সারি থেকে আনিয়ে। এবারেও সেই একই কাহিনী। আজ পর্যন্ত কোনদিন আমাদের বাড়িতে একটা পেঁপে গাছেও ফল ধরেনি।
তারপর সজনে গাছের কথা। মায়ের সবচে প্রিয় সবজি। লাগালেন বাড়ির সামনে কয়েকটা। একটা গাছও বাঁচেনি। কয়েকবার চেষ্টা করে হাল ছাড়লেন।
লাউ গাছের কথা বলি। লেবার ডেকে বাঁশ কিনে জাংলা দিলেন। তাওয়া করে লাউ চারা লাগালেন। যত্নআত্তি যত প্রকার জানেন করলেন। সবার লাউ গাছে ফুল চলে এলো, আমাদের কয়েকটা মাত্র পাতা। এরপর দুইতিনটে লাউ হলো ছোটমোটো। মা বললেন আগামীকাল আমরা এই লাউটা কাটবো, সাথা কচি পাতা ভর্তা। পরদিন উঠে দেখি কেউ লাউটা কেটে নিয়ে গিয়েছে সাথে কচি পাতাগুলো।
পুঁই মাচার কাহিনী আরো করুণ। তাঁর সবচে প্রিয় শাক। যত্ন যাকে বলে! শুধু কিচকিচে ডাঁটা, পাতার দেখা নেই। কত শখ ছিল পুঁই এর ফল ভেজে খাবে। ফল তো চোখে দেখিনি আমি।
শখের মরিচ গাছ, ঝুমঝুমে পাতা, তার ভেতরে লুকিয়ে দুইতিনটে মরিচ। নাই ঝাল, পানসে। মরিচও যে এত বাজে স্বাদের হয় জানা ছিল না।
এবারে আম গাছের কথা। অনেক দামি চারা, সেই দূরের নার্সারি থেকে আনিয়েছিলো। সিজনে মুকুলের দেখা নেই। অনেক দেরিতে দুই একটা গাছে কিছু মুকুল এলো, তা থেকে সামান্য কটা আম। ঝড় হলো। একটা ছাড়া সব আম পড়ে গেল। সেই আমটা পাকলো। কিন্তু মা গাছেই রেখে দিলো। তার শখ ছিল বাচ্চারা নিজের হাতে আমটা ছিঁড়বে। ততদিনে বাচ্চারা সব যার যার বাড়িতে। কাজে। তাই তিনি নিজে কিছুতেই এই আম খাবেন না। গাছেই পঁচে গেল।
এই হলো আমার মায়ের বাগানের সংক্ষেপিত কাহিনী। অন্যান্য সবজি ও ফলের গাছের কথা লিখিনি।
ছবিটা কয়েকবছর আগের, আমাদের বাড়ির সামনে তোলা।
May be an image of 1 person, standing, outdoors and tree

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..