রামচরন দেশ ভ্রমনে বেরিয়েছেন। পদবীতে তিনি ঠাকুর। বংশে কুলীন। যাত্রাপথে ভোগ আর ত্যাগের জন্য তিনি বেছে নিচ্ছেন তার মত কুলীন বংশের খাবারঘর আর মলঘরকে। সেবারে হাঁটতে হাঁটতে রামচরন লোকালয় থেকে একটু দূরে চলে এলেন। জায়গাটির একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী এবং অন্যপাশে বন।
পথে পথে রামচরনের সাথে হঠাৎ দেখা হল এক পাগলের। ধুতি-পাঞ্জাবী পরা রামচরনকে দেখে আচমকাই পাগলটা তার গায়ে হাত দিয়ে দুটো টাকা চাইল। ঘটনার আকস্মিকতায় রামচরন চিৎকার করে বলতে লাগল,
–হে ভগবান, জাত গেলো! জাত গেলো!
কুলীনদের জাত গেলে তো চলে না। সামনেই ছিল নদী। রামচরন হাতের পুটলিটা নদীর পাড়ে রেখে শরীর থেকে জাত হারানো সমস্ত কাপড় খুলে ছুঁড়ে মারলেন একটু দূরে। তারপর জাত ফেরাতে নদীতে নামলেন।
পাগল কিন্তু রামচরনের পিছু ছাড়েনি। সে তাকে অনুসরন করতে করতে ততক্ষণে পাশেই একটা গাছের আবডালে এসে দাঁড়িয়েছে।
রামচরন যথারীতি কোমর পানিতে নেমে, শুন্যে নমস্কার করে কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপতে জপতে শুদ্ধস্নান সারছেন।
স্নান সেরে ডাঙায় এসে তিনি দেখলেন তার পুটলিসহ ছুঁড়ে মারা পাঞ্জাবীটি পাগলের হাতে এবং ধুতিটি পাগলের নিজের কোমরে প্যাঁচানো। ধুতি পরার আগে পাগলটা অবশ্য তার পরনের ছেঁড়া প্যান্টটি মাটিতে ফেলে রেখেছিল।
রামচরন গর্জে উঠার ন্যায় কন্ঠ তুলল পাগলটার দিকে তাকিয়ে। পাগল ততক্ষণে রামচরনের পুটলিটা বগলদাবা করে দে ছুট।
রামচরন তো পড়লেন মহাবিপদে….শুদ্ধস্নানের দেহ তার পুরোই এখন নবজাতকের পোশাকে আবৃত।
চারপাশ তাকিয়ে রামচরন দ্রুত এলেন পাগলটার ফেলে যাওয়া ময়লা-ছেঁড়া প্যান্টটির কাছে।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ জপতে জপতে সে আপাতত নবজাতকের পাপমুক্ত অংশটাকে আবৃত করতে ব্যস্ত।
24-04-2021
বি:দ্র: গল্পটি কোন ধর্মের প্রতি নুন্যতম আঘাত হানতে লেখা হয়নি। রূপক হিসেবে লেখা এ গল্পটি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।
ধন্যবাদ বাংলা মেইল নিউজ ডট কম।