1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# ভালোবাসার_ভাঁজে_ভাঁজে ************************** ফারজানা ইসলাম

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১
  • ২৯০ বার
আজও পেনশনের টাকাটা হাতে পেলেন না শফিক আলী । আজ টাকাটা না পেলে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে । ছোটো ছেলেটার পরীক্ষার ফি জমা দেয়ার সময় আরও তিনদিন আগে পেরিয়েছে । প্রতিদিন তিনি স্কুলে যেয়ে একদিন করে সময় বাড়িয়ে এনেছেন প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে । গতকাল স্যার আর কোনোভাবেই সময় বাড়াবেন না বলে দেয়ায় শেষ পর্যন্ত স্যারের হাতে-পায়ে ধরে আজকের দিনটা চেয়ে নিয়েছেন ।
আজ টাকা জমা না হলে ছেলেটার এবছর আর এসএসসি দেয়া হবে না । পেনশন নিতে এতো ঝামেলা হওয়ার কারণটা তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না । প্রথম দু’মাস তাঁর নামের ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । এরপর ফাইল যা-ও পাওয়া গেল কিন্তু সই করার জন্য বড় স্যারদের আর পাওয়া যায় না । আজ একজন আসেন না তো কাল একজন এইমাত্র বেরিয়ে গেলেন, এই করে করে আরও একটা মাস পেরিয়ে গেল । সামান্য এই ক’টা টাকা দিতে এদের কেন এতো গড়িমসি, বুঝতে পারেন না তিনি। অথচ এই সামান্য কিছু টাকাই তার পরিবারের এই দুর্দিনে আশির্বাদ হয়ে আসে । পিয়ন রমিজ গতকাল বলেছেন আজ তাকে পাঁচ’শো দিলে টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন । পাঁচ’শো টাকা ছিল না শফিকের কাছে । মোড়ের দোকানী লোকমান ছেলেটার কাছে চাওয়ামাত্র সে টাকাটা দিয়েছে । তিনি বলে এসেছেন ঘন্টা দু’একের ব্যাপার । আজ পেনশন পাবেনই । ফিরতি পথে দিয়ে যাবেন টাকাটা । যদিও লোকমান মুখ ফুটে কখনোই টাকা ফেরত চাইবে না, যেমন দোকানের বাকীর খাতায় ঋণ বাড়লেও কখনও নিজ থেকে টাকা চায় না । ছেলেটা ভদ্র । ভাবতে ভাবতে অন্যান্য রুম গুলোতে যেয়েও উঁকি দিলেন শফিক । রমিজ নেই, কোথায় গেলেন রমিজ ? আজ যে টাকাটা না নিলেই নয় । অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পেলেন, “আজ রমিজ ভাই আইবো না ।” বুকের কোনে চিনচিন করে ব্যাথা শুরু হয়ে গেল শফিকের । কী বলবেন ফিরে যেয়ে ? ছেলেটা কত আশা নিয়ে বসে আছে তাঁর জন্য । তিনি ফিরলে আজ ফর্ম ফিলআপ হবেই । এখন তিনি কী করবেন?
——————————————————————–
বাস থেকে নেমে কোনদিক যাবেন ঠিক করতে পারছেন না শফিক আলী । এখন বাড়ি ফিরলে ছেলেটার মন ভেঙে যাবে । ও অপেক্ষায় থাকুক । যতক্ষণ তিনি না ফিরছেন ততক্ষণ তো বাচ্চাটা আশায় বুক বেঁধে থাকবে । ভাবনার ছেদ পড়ল কাঁধে একখানা হাতের ছোঁয়ায় । ফিরে দেখলেন রহমান দাঁড়িয়ে । রহমান তার ছোটোবেলার বন্ধু তবে ভাইয়ের চেয়েও বেশী আপন । এপাড়ায় তারা একসাথে কাটিয়ে দিয়েছেন পুরো জীবন ।
রহমান বললেন –
কী রে এই ভরদুপুরে চললি কোথায়?
আজও পেনশনের টাকাটা পেলাম না রে । ছেলেটার আর পরীক্ষা দেয়া হবে না এবছর । ফর্ম ফিলআপ করতে পারল না ।
হলো না মানে? এই সামান্য ক’টা টাকার জন্য রাহাতের একটা বছর নষ্ট হবে? তুই পাগল নাকি! আমাকে বলিসনি কেন?
শফিক আলী রহমানের হাত ধরে বললেন, আমি কী জানি না তোর অবস্থা ?
তুই না জানলে কে জানবে বল তো? তবু বলবি তো, না কি? দুঃখ ভাগ করলে দুঃখ কমে যায় জানিস না? রাহাত কোথায়? চল স্কুলে যাই, ফর্ম ফিলআপ করে আসি ।
তুই বোধহয় বুঝতে পারিসনি রহমান, আমি টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি ।
টাকার ভাবনা এখন আমাকে ভাবতে দে । আমার কাছে কিছু টাকা আছে, চল তো তুই ।
তুই টাকা পেলি কোথায়?
একজন ধার নিয়েছিল অনেকদিন আগে । কী মনে করে আজ ফেরত দিল । ভালোই হলো, টাকাটা কাজের সময় হাতে পেয়ে গেলাম । আমি এই টাকা দিয়ে কী করব বল? বাচ্চাটার কাজে লাগুক । চল, চল, দেরী হয়ে যাচ্ছে ।
——————————————————————–
গত এক বছর ধরে টাকাটা জমিয়েছিলেন রহমান । তার বউ সায়মা একবার নিজের একটা শখের কথা বলেছিলেন । দুধ সাদা জমিনে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বুটির ঢাকাই জামদানী পরার গোপন একটা বাসনা সায়মা সারাজীবন লালন করেছেন বুকের ভেতর । শুনে খুব মন খারাপ হয়েছিল তাঁর । কোনোদিন সায়মা কিছুই চায়নি তার কাছে । আজ সায়মার জন্মদিনে তাকে চমকে দেবেন বলে গত এক বছর ধরে পরিকল্পনা করে সঞ্চয় করেছেন তিনি । বুটিক শপে গিয়ে ঐরকম একটা শাড়ি দেখে দাম কেমন হতে পারে সেটার ধারনাও নিয়েছিলেন । একটা শাড়ির দাম তাদের মাসের সংসার খরচকেও হার মানায় ! তাকে একবার ভালো করে খেয়াল করে দোকানের সেলসম্যান ছেলেটা বলেছিল, চাচা এখানে তো দাম বেশী, আপনি হকার্স মার্কেট থেকে কিনলে অনেক কমে পাবেন । তিনি মার্কেট থেকে নিতে চাননি । ছেলেটিকে বলেছিলেন, সারাজীবন তো ভালো কিছু দিতে পারিনি বাবা । এবার শাড়িটা আমি মনের মতো কিনব । তুমি শুধু ঐসময়ে আমার জন্য এরকম একটা শাড়ি তোমার দোকানে রেখো । ছেলেটা হেসে বলেছিল, ‘ঠিক আছে চাচা । আমি ডাইরিতে টুকে রাখলাম তারিখটা । সময়মত পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ ।’ তবে এখন মনে হচ্ছে টাকাটা শফিকের বেশী দরকার । রাহাতের একটা বছর নষ্ট হতে দেয়া যায় না । বন্ধুর জন্য এটুকু করা তার দায়িত্ব । যদি বেঁচে থাকেন তো আবার টাকা জমাবেন । আগামী বছর চমকে দেবেন সায়মাকে ।
স্কুলে টাকা জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আধা কেজি বালুসাই আর তিনটে গোলাপের একটা তোড়া নিলেন রহমান ।
———————————————————————
তন্দ্রা মাস্টার্স পড়ছে । এসএসসির পর থেকে ও টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মা’র হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়েছে সবসময়। আসছে ডিসেম্বরে তন্দ্রা’র বিয়ে । ছোটো খালা সম্বন্ধ এনেছিলেন খালুর ভাগ্নে সাদিকের জন্য । সাদিক কলেজের লেকচারার । ওদের বাড়ির অবস্থা ভালো । তন্দ্রা কখনো কল্পনাই করেনি সাদিকের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসবে । যখন বিয়ের কথা পাকা হলো, তখন থেকেই তন্দ্রা কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখছে । বসার ঘরের জন্য রট আয়রনের একটা খাট কিনতে চেয়েছিল । কাঠের খাটের অনেক দাম, তারচেয়ে অর্ধেক টাকায় রট আয়রনের সুন্দর একটা খাট হয়ে যাবে। বাড়িতে দুটো খাট । একটাতে মা-বাবা শোয়, অন্যটায় সে আর চন্দ্রা । হিমেল বসার ঘরে ফ্লোরিং করে । ওর কোনো অনুযোগ নেই কিন্তু তন্দ্রা’র খুব খারাপ লাগে ভাইকে মাটিতে শুতে দেখে । এই সপ্তাহেই খাট কিনবে ভেবেছিল কিন্তু চারদিন আগে বাবা তাকে একটা কথা বলায় খাট কেনার চিন্তা আপাতত বাদ দিয়েছে সে । বাবা’র খুব শখ মা’র জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেয়ার । মনের কথাটা তন্দ্রাকে বলেছে বাবা । মা’র জন্য সাদা জামদানী কিনে চমকে দিতে চায় । বুটিক শপের নামটাও বলেছেন । দোকানী না কি বলেছে, সে শাড়িটা এনে রাখবে ।
কথাগুলো বলার সময় খুশিতে রহমানের চোখ চকচক করছিল । বাবাকে দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল তন্দ্রার । তন্দ্রার খুব অবাক লাগে । বাবা একা একা বুটিক শপ ঘুরে এসেছেন ! সে তো জানে তার বাবা’র সাধ আছে, সাধ্য নেই । চুপ করে বাবা’র কথাগুলো শুনছিল সে । কোনো জবাব দিতে পারেনি ।
আজ মা’কে রান্নাঘরে ঢুকতে দেয়নি সে । পোলাও এর সাথে বেগুন ভাজা, পটল ভাজা আর ডিম ভুনা । হিমেল গরুর মাংসের ভুনা খেতে পছন্দ করে কিন্তু গরুর মাংসের যা দাম ! তাই তাদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া গরু রান্না হয় না । সে আধা কেজি গরুর মাংস রান্না করে লুকিয়ে রেখেছে । ভাজাভুজি দিয়ে খাওয়ার ফাঁকে সে যখন মাংসের বাটিটা হিমেলের দিকে বাড়িয়ে দেবে, তন্দ্রা নিশ্চিত, তখন খুশিতে হিমেলের চোখে পানি চলে আসবে । ঐ মুহূর্তটা সে প্রাণভরে দেখতে চায় ।
তন্দ্রা’র রান্নার শেষের দিকে রহমান ফিরলেন বাড়িতে । তন্দ্রা তাকিয়ে দেখলো, বাবার মুখটা কী ভীষণ মলিন দেখাচ্ছে ! আহারে, মনে হচ্ছে দৌড়ে যেয়ে বাবাকে এখনই সারপ্রাইজটা জানিয়ে দেয় । নিজেকে অনেক কষ্টে থামালো তন্দ্রা ।
মিষ্টি আর ফুলগুলো টেবিলে রেখে গোসলে চলে গেলেন রহমান ।
মা’কে রুমে বসিয়ে রেখে দুই ভাইবোনকে পাহারায় রাখলো তন্দ্রা । সুন্দর করে টেবিল সাজালো আজকে । গোসল শেষে বাবা বেরোলে তাঁকে নিজের রুমে নিয়ে এলো তন্দ্রা । রহমানের মনটা তখনও খুব বিমর্ষ । তন্দ্রা বলল –
আচ্ছা বাবা এতো মন খারাপ করে আছো কেন বলো তো ? আজ মা’র জন্মদিন । কোথায় সবাই আনন্দ করবো, আর তুমি মুখটা মলিন করে রেখেছো ।
কিছু না রে মা । চল খেতে যাই । আর এই ফুলগুলো তোর মাকে দে । কিছু তো আনতে পারিনি এগুলো ছাড়া ।
ফুলগুলো খুব সুন্দর বাবা । মা খুব খুশী হবে কিন্তু এগুলো আমি দেব না, তুমি নিয়ে চলো । তুমি নিজ হাতে দেবে মা’কে।
কত শখ ছিল রে মা । মানুষের সব শখ বুঝি এক জীবনে মেটে না ।
কে বলেছে মেটে না? এই নাও দেখো তো এটা খুঁজছিলে কি না মা’র জন্য ?
রহমান জীবনে এতো হতবাক কখনো হননি । সেই সাদা জামদানীটা ! লাল, নীল বুটি তোলা! এটা এখানে এলো কী করে ! তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
তুই কিনেছিস ?
জি বাবা ।
এতো টাকা তুই কোথায় পেলি রে মা? এর তো অনেক দাম !
জানি বাবা । মাঝে মাঝে শখের দাম দিতে হয় । সবসময় কী এতো হিসেব করলে চলে বলো । তুমি ভেবো না বাবা, আমি কারো কাছ থেকে ধার করিনি । আমার জমানো টাকা ছিল । এটা তুমি মা’র হাতে দাও, মা খুব খুশী হবে ।
এতো খুশী এর আগে তিনি কবে হয়েছিলেন মনে পড়ে না । ছোটোবেলায় একবার মা তাকে একটা জ্যামিতি বক্স কিনে দিয়েছিল । তাদের সময়ে বাজারে ওটা পাওয়া যেত না । মা কোত্থেকে এনেছিল কে জানে! বন্ধুরা দেখে ভীষন অবাক! নিজেকে রাজা মনে হয়েছিল বক্সটা হাতে পেয়ে । আজ আবার তেমন খুশী লাগছে । বুকের ভেতরটা টগবগ করে ফুটছে । তিনি শাড়িটা জড়িয়ে রেখেছেন বুকের মধ্যে, অন্য হাতে তন্দ্রা’র হাতটা ধরে আছেন । মনে মনে ভাবলেন, মায়ের জাত বুঝি এমনই মমতাময়ী হয় ।
তন্দ্রা’র খুশীতে লাফাতে ইচ্ছে হচ্ছে । বাবা’র এতো খুশী দেখে তার খুব ভালো লাগছে । শাড়ির আঁচলে বাবা’র চোখ দিয়ে গড়ানো জলটুকু মুছে দিল তন্দ্রা । তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, জীবন তুমি এতো সুন্দর কেন, ও জীবন জবাব দাও ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..