এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি।।একটা রেস্টুরেন্টে এসেছিলাম বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে। মেয়েটি অল্পস্বল্প চেনা। বাবার কাছেই শুনেছি মেয়েটি পড়াশোনায় খুব ভালো নাকি। দেখতে মোটামুটি, সুন্দরী বোধহয় বলা যায় না। বরং একটু ভারী মনে হলো মুখখানা৷ একবারই স্টেজে বউ দেখে জম্পেস খাওয়া শেষ করে পেছনের দিকে এসে বসেছি। বিয়ে বাড়িতে আসাই হয় কাচ্চি খাওয়ার জন্য। তখনই আব্বা এসে ডাকলেন।
-তপু , একটু এদিকে এসো, সমস্যা হয়ে গেছে।
-ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। সেখান থেকে একজন ফোন করে জানিয়েছে ওখানে ছেলের একটা সংসার আছে!
-মারাত্মক বিষয়! আগে বলেনি?
-না, আগে বলেনি, বরং গলাবাজি করে মেয়েকে গয়না আর ফার্নিচার দিতে হবে বলেছিল। এখন জামালের মান ইজ্জতের প্রশ্ন। এতো আত্মীয় স্বজন। এর মধ্যে মেয়েটির বিয়ে ভেঙে গেলে, একটা কেমন বিষয়!
-আমি বলি কি, বিয়েটা তুমি করো।
-কী বলছেন আব্বা! এটা কীভাবে সম্ভব!
-কেন৷ সম্ভব না কেন? তোমার কোন পছন্দের মেয়ে আছে?
-তা না আব্বা, কিন্তু আমি এখনো তেমন ভালো কিছু করি না। যে টাকা পাই নিজের আসা যাওয়ায় শেষ। এই সময়ে একটা মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া কেন বুদ্ধিমানের কাজ না আব্বা। তাকে কী খাওয়াবো!
-সেটা আমি বুঝব, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে রিনি একটা মেয়ে হাতি, সব কিছু খেয়ে ফেলবে।
ওহ আচ্ছা, মেয়েটির নাম রিনি তাহলে! আমি সামনে রাখা পানির বোতল খুলে ঢক ঢক করে হাফ লিটার পানি খেয়ে ফেললাম। এখানে বড় পানির বোতল রাখেনি ভাগ্যিস!
-আম্মার সাথে কথা বলা দরকার না আব্বা?
-তাকে আমি বুঝাব, তুমি আসো।
আমি ভদ্রছেলের মতো আব্বার পিছন পিছন হেঁটে গেলাম।
যাওয়ার সময় আঁড়চোখে স্টেজে তাকিয়ে দেখলাম,
রিনির পাশে কয়েকজন বসে আছে, রিনি স্বাভাবিক আছে। তার মানে কি, মেয়েটা কিছু টের পায়নি!
আমার আব্বা আনোয়ার সাহেব একটু খেয়ালী মানুষ। সারাজীবনে ইন্দিরা রোডের দোতলা বাড়িটা ছাড়া কিছুই জমাতে পারেননি৷ সামান্যই পেনশন পান। বাড়িতে তিন ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে থাকেন। আমি মেজ । আর বড় আপার বিয়ে দিয়েছেন, মোহাম্মদপুরে তার বাসা।
ছেলে পক্ষ তখন জামাল আঙ্কেলকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে! ছেলের দেশের বাইরে একটা বিয়ে আছে, তাতে কী! দেশে তো কেউ নাই! মেয়ের কোন সমস্যা হবে না!
বাবা তার চিরচেনা হুংকার দিলেন, বাটপারি পেয়েছেন, আগে একটা বিয়ে করে আবার আসছে বিয়ে করতে, ভাগেন এখান থেকে!
জামাল আঙ্কেল দিশেহারা ভাবে আমাী বাবার দিকে তাকালেন।
-দিবোনা এখানে মেয়ে, জামাল, মেয়েকে ডাকো। তপুর সাথে বিয়ে হবে রিনির!
সবকিছু ঘটতে আধঘন্টা সময় লাগলো। রিনির আরো বেশি হতভম্ব হওয়া উচিত । তাকে ডেকে বলা হলো, তোমার বিয়ে ওই বরসাজা ছেলের সাথে হচ্ছে না। বিয়ে হবে তপুর সাথে।
আমি একটা সাদা রঙের শার্ট আর জিন্স পরে আছি, মজার বিষয় হচ্ছে আসে পাশে সবাই পাঞ্জাবী পরা। আমি একাই শার্ট প্যান্ট পরে এসেছি।
রিনিকে খুব বিচলিত মনে হলো না। আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কেল, উনি কি বিয়েতে রাজী? ওনার মুখ শুকনো লাগছে, জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন না তো?
আব্বা বললেন, ওর মুখ এমনিতেই শুকনো, খাওয়া দাওয়া করতে চায় না!
মাত্রই চারটা টিক্কা, এক পিস রোস্ট, দু প্লেট বিরিয়ানি মেরে দেওয়া আমি কিছু না খাওয়ার অপরাধে মুখ মলিন করে সই দিয়ে ফেললাম। রিনি দেখলাম স্বাভাবিক ভাবেই সই করল।
সিগনেচার করে বিয়ে করে ফেললাম। আমার আয় ষোল হাজার টাকা। সেই টাকার চৌদ্দ হাজার প্রতি মাসে আসা যাওয়া আর লাঞ্চে চলে যায়। বাকি দুই হাজার একটা ডিপিএসে জমাই। মাসের শেষে বড় ভাইয়ার কাছ থেকে দুয়েক হাজার টাকা অফেরত চুক্তিতে ধারও নেই। রিনি নামক এই ঝামেলা এখন কাঁধে নেওয়ার মতো আমার কাঁধ এতো শক্ত হয়নি৷
বিয়ে হয়ে গেল, আগের বরপক্ষকে সামনে রেখে আমি বিয়ে করে ফেললাম। আগের বর যাওয়ার সময় আমাকে প্রাণঢালা
অভিনন্দন
দিয়ে গেলেন। সাথে দিলো নিজের বাগদত্তা নারীকে।
তাদের বলা হয়েছিল খেয়ে যেতে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে খাওয়া বিব্রতকর।আমার অবশ্য আগে ভাগেই খাওয়া শেষ। আমি বোধহয় একমাত্র পুরুষ যে নিচের বিয়ের বিরিয়ানি কলেমা পড়ার আগে গান্ডে পিন্ডে গিলে নিয়েছে!
তারা চলে গেল। প্রায় পঞ্চাশজনের মতো খাওয়া বেচে গেল। আমার বাবা বললেন, এই খাবার পার্সেল করে আমার বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করো জামাল। বাসায় বউ নিয়ে গেলে কত মেহমান আসবে, তাদের তো ইনস্ট্যান্ট নুডুলস খাওয়ালে চলবে না। এর বিল অবশ্যই আমি দেবো। বিলের কথা বলা হলো সত্যি কিন্তু এখানে সব বিল এডভান্স পে করা ছিল। তাই বিল আর দেওয়া হলো না। রিনি, দুই হাড়ি বিরিয়ানি, এক হাড়ি রোস্ট সমেত আমরা বাসায় ঢুকলাম সন্ধ্যাবেলা।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply