সকালের আরামের ঘুমের পাট জীবন থেকে চুকে গেছে বহু আগেই। বাহির থেকে জীবনটা যতটা চকচকে মনেহয় মানুষের কাছে সেটা আসলে ততটা চকচকে নয়। অন্তত নিজের কাছে তো নয়ই। কর্মব্যস্ত দিনে ইহানের সকাল শুরু হয় ভোর পাঁচটা থেকে। সকালে উঠে নিয়ম মাফিক একঘন্টা জীম করা তারপর সময় হলে দাদিমার সাথে বসে নাস্তা করে শুটিং, ডাবিং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া। ফিরতে ফিরতে গভীর রাত। মাঝের এই সময়টা সবচেয়ে বোরিং কাটে ইহানের। শুটিং এর মাঝে একই দৃশ্য পাঁচ কি সাতবার রিটেক, কখনো নায়িকার স্পটে আসতে দেরি, কখনো পরিচালক এর সমস্যা আবার কখনো টেকনিক্যাল সমস্যা। এসব কিছু মিলিয়ে দিনটা কখনোই ভালো যায় না ইহানের। আজ মনটা কেমন যেন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ইহানের। দাদিমার শরীরটা বেশ খারাপ। ইচ্ছে করছে না আজ শুটিং এ যেতে। অথচ মানা করার কোনো উপায় নেই। সামনের সপ্তাহে দেশের বাইরে যাবে তার আগেই এই ছবির শুটিং শেষ করতে না পারলে সিডিউল জটিলতায় ভুগতে হবে ওকে। এসব কিছু ভেবেই ইহান কাপড় পরে রেডি হয়ে উদাস বসে ছিলো সোফায়। সাবের এসে দাঁড়ালো সামনে-
“স্যার, দাদি আম্মা ডাকে আপনেকে।”
ইহান ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো তারপর উঠে দাঁড়ালো-
“চলো।”
দাদির ঘরে ঢুকলেই ইহানের মন ভালো হয়ে যায়। কারনটা ঠিক বোঝে না ইহান। দাদিমার ঘরে সব পুরনো ফার্নিচারের আসর। ইহান ছোটর থেকেই যা দেখে আসছে। নতুন এই বাড়িতে ওঠার সময় ইহান দাদিমার জন্য নতুন ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজিয়েছিলো কিন্তু দাদিমা সেসবে থাকতে রাজি হয়নি কিছুতেই। তার এক কথা, পুরনো আমলের খাট পালঙ্কে না শুলে তার ঘুম আসবে না। ওটা নাকি দাদার শেষ স্মৃতি। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে ইহান পুরোনো আসবাবগুলো নতুন করে রংটং করে দাদিমার ঘরে সেট করে দিয়েছে। এখন ইহানও ফিল করে, এতো বিলাসি আসবাবের মাঝেও ইহান যখন এই ঘরে আসে তখন আলাদা একটা শান্তি পায়। এই ঘরের সবকিছু খুব আপন আপন লাগে। মাঝে মাঝে ভাবে দাদির জন্যই হয়তো ভালো লাগে। পৃথিবীতে এই একটা মানুষকেই ওর আপন আর নিজের বলে মনেহয়। বাকি সবাইকে মনেহয় স্বার্থলোভি। ইহান ঘরে ঢুকতেই দাদি জামেলা বেগম হাতের ইশারায় তা কাছে বসার জন্য বললেন। ইহান হেসে দাদির কাছে বসলো-
“তোমার শরীর কেমন দাদিমা? “
“ভালো আছি ভাই।”
“তবে টেবিলে না যেয়ে রুমে ডাকলে যে?”
“অতো জোর এখনো আসে নাই রে ভাই তাই তোমারে এইখানেই ডাকলাম। একটা জরুরি কথা বলতে চাই। “
জামেলা স্নেহময় হাতে ইহানের মুখটা ছুয়ে দিলো।
“বলো না দাদিমা। তোমার আবার অনুমতি লাগে নাকি?”
জামেলা হাসলেন একটু। আদুরে দৃষ্টিতে নাতিকে দেখলেন কিছুক্ষণ-
“তোমার আজকে এক জায়গায় যাওয়া লাগবে। জানি, তুমি সব জায়গায় যাও না। তবুও আজকে দাদির সম্মানের খাতিরে যাওয়া লাগবে। যাবা তো ভাই? “
“কোথায় যেতে হবে দাদিমা? না হয় তোমার আমার নামে একটা গিফট পাঠিয়ে দেই?”
“সেইটা হইলে তো আর তোমারে বলতাম না ভাই। ওই যে তোমার নুরু চাচা আছে না, চিনো তো?
এককালে বিপদে আমারে মেলা সাহায্য করছে, তোমার পড়ালেখার সময় না কইতে মেলা করছে আমাগো জন্য। সে নিজে আমাকে ফোন করছিলো। তার বড় পোলার বিয়া লাগছে, আইজকা বৌভাত। খুব কইরা যাইতে কইছিলো। নিজে একদিন আইসা বিয়ার কার্ডও দিয়া গেছে। এখন আমি তো অসুস্থ হইয়া পইড়া আছি, বিয়াতে যাইতে পারি নাই। এখন বৌভাতে না গেলে কেমুন অয়, আমার তরফ থিকা তুমি যাও না হয়?”
“আচ্ছা, যাবো। কি দিতে হবে বলে দাও।”
“সে তুমি দিয়ো তোমার ইচ্ছামতো কিছু একটা। এই যে কার্ড, এইখানে ঠিকানা লেখা আছে।”
“ঠিক আছে দাদিমা। আমি এখন যাই তাহলে?
“না, খাড়াও। তুমি মনেহয় কিছু ভুইলা যাইতেছো।”
ইহান মনে মনে প্রমোদ গুনলো। এই রে সেরেছে। দাদী এখন এ কথা না পারলে হয়।
“কোন কথা দাদীমা?”
“তোমার বিয়ার কথা। তুমার চেয়ে ছোট ছোট মানুষ সব বিয়া কইরা ফেলতেছে আর তুমি এখনো রঙ্গ করতেছো। তুমার না কার লগে জানি আমার দেখা করাই দেওনের কথা?”
“আমি যাই আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে দাদীমা।”
ইহান দাদীকে ফাঁকি দিতে চায়।
“না খাড়াও। আমার কথার জবাব দিয়া তারপর যেইখানে মনচায় যাও।”
ইহানের হাত ধরে দাদী তার পাশে বসিয়ে দেন। ইহান আমতা আমতা করে।
“কি হইলো কও?”
“দাদীমা, আমি তো তার সাথে তোমার দেখা করাইতে চাই কিন্তু সে তো রাজি হয় না। সে বলে, নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে সে নাকি বিয়ে করবে না। আমি এতো নামীদামী নায়ক আর সে এখনো চুনোপুঁটি। তাই তোমার সামনে আসতে চাইছে না।”
“তো সে কি এখন নায়িকা হইতে চায়? আজব মেয়ে মানুষ তো? আর তুমিও কি নায়িকা বিয়া করবা নাকি? তাইলে তো এইটা সংসার না সিনেমা হইবো। শোনো ভাই, এতোকথা আমি শুনতে চাই না। দুই-একদিন এর মধ্যে তার সাথে দেখা না করাই দিলে কিন্তু এইবার তোমারে ছাড়তাম না। তোমার চিন্তায় চিন্তায় শরীর আমার বেশি খারাপ হয়ে গেছে তুমি কি তা বোঝো না?”
“দাদীমা, আমাকে আর একটু সময় দাও দেখি তাকে বোঝাতে পারি কিনা? তুমি আর এইসব নিয়ে ভেবো না। আমি আসি দাদীমা।”
ইহান দাদির কপালে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে এলো। সাবের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইহান বের হয়ে সাবেরের হাতে কার্ডটা দিলো-
“আজকে রাতে দাওয়াত। তুমি একসেট গহনা কিনো, আমি নিজে এই দাওয়াতে যাবো। আর রাতে মনে করিয়ে দিয়ো আমাকে।”
সাবের মাথা নাড়ে। যদিও সে অবাক হয়েছে অনেক। ইহান পারতপক্ষে কোনো দাওয়াত বা পার্টিতে যায় না। আজ নিজে থেকে যেতে চাচ্ছে তারমানে এটা খুব স্পেশাল দাওয়াত। দু’জন চুপচাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ। ইহানের কপালে চিন্তার রেখা। সাবের ভাবছে জিজ্ঞেস করবে কিনা ওর মনে দ্বিধা, স্যার আবার বকাটকা দিবে নাতো? শেষমেষ দ্বিধা ঝেড়ে ফেললো-
“স্যার, কি নিয়ে ভাবছেন বলা যাবে?”
“আর বোলো না, দাদী এবার ভীষণ জেদ করছে। এদিকে ওই মেয়েটাকে তো প্রস্তাব দিলাম কাল কিন্তু সে তো প্রস্তাবে রাজি নয় উল্টো এমন ভাব করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো যেন তাকে আমি বাজে প্রস্তাব দিয়েছি। কি করি বলোতো?”
সাবের কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললো-
“আপনি ভাববেন না স্যার আমি দেখছি কি করা যায়। “
ইহান সাবেরের দিকে তাকিয়ে থেকে নিশ্চিত হলে ঘাড় নাড়লো। সাবের যখন বলছে তখন কোনো একটা ব্যাবস্থা হবে নিশ্চয়ই।
“আরে, নায়ক সাহেব যে! এখন বুঝি সময় হলো আসার? আমি তো ভাবলাম আজ শুটিং ক্যানসেল?”
কথাটা শুনে ইহান দাঁড়িয়ে গেলো। হালের জনপ্রিয় নায়িকা আরতি। শিক্ষিত আর ড্যাম কেয়ার মেয়ে হিসেবে এরইমধ্যে বেশ নাম কামিয়ে ফেলেছে। ইহানের সাথে এই ছবিতেই প্রথম কাজ। মেয়েটা প্রায় দিনই দেরি করে আসে শুটিংএ। ইহান খুব বিরক্ত, মনে মনে ভেবেই রেখেছে এর সাথে আর কোনো কাজ করবে না। সেই মেয়ে কিনা আজ তাকেই কথা শোনাচ্ছে? ইহান একটা শুকনো হাসি দিলো-
“সরি, আজ একটু লেট। আসলে আজ যে আউটডোর শুটিং এটা আমার মাথা থেকে স্কিপ করে গেছিলো। তুমি দু’মিনিট বসো, আমি চট করে মেকাপ করে আসি।”
আরতি উঠে এলো, ইহানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো-
“আজ যে একটা রোমান্টিক সিন আছে সেটাও কি ভুলে গেলেন নাকি? একটু আলোচনা করে নিলো হতো না?”
ইহান মনে মনে চমকে গেলো। সত্যি সত্যি আজ কোনো সিন আছে নাকি? সে একনজর দেখলো আরতিকে। একেবারে আঁটোসাটো একটা পোশাক পরে আছে, শরীরের অর্ধেক দৃশ্যমান। চড়া মেকাপে মুখ ঢেকে আছে। ইহান চোখ সরিয়ে নিলো। কেমন যেন লাগছে তার, অরুচি লাগছে। এই মেয়ের সাথে আজ কোনোভাবেই কোনো সিন করা সম্ভব হবে বলে মনেহয় না। নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে ইহান বললো-
“আচ্ছা, আগে দেখি কি সিন। পরে প্রয়োজন হলে আলোচনা করবো।”
নিজের মেকাপ রুমে এসে দু’বার বড় বড় নিঃশ্বাস নিলো ইহান। কিছুক্ষণ পরই পরিচালক নাজিম রকি এসে ঢুকলো-
“হেই রিজওয়ান, এই যে আজকের স্কিপ্ট। একটু দেখে নাও।”
“রকি ভাই, কি শুনলাম? আজ নাকি কিসিং সিন আছে? আমি আপনাকে কিন্তু বার বার বলেছিলাম, ওসব থাকলে ছবি করবো না। আরতির সাথে তো আরো না।”
“রিল্যাক্স রিজওয়ান। কি করবো বলো, পাবলিক ডিমান্ড। একটা দু’টো কিসিং সিন না থাকলে তো ছবি জমবে না। আর তাছাড়া আরতির সাথে তোমার প্রথম মুভি, ওর একটা মার্কেট ভ্যালু আছে, ওটা কাজে লাগাতে হবে তো নাকি?”
বলেই চোখ টিপলো রকি। ইহানের মেজাজ চরম খারাপ লাগছে।
“আজ কোনো রোমান্টিক সিন পসিবল না রকি ভাই। আমার আজ মুড ভালো না। প্লিজ অন্যদিন রাখুন এই শুটিং।”
কিছুক্ষণ হো হো করে হাসলো রকি। যেন ইহান কোনো মজার জোকস বলেছে।
“তুমি যে কি বলো না রিজওয়ান না হেসে পারি না। কতোদিন ধরে অভিনয় করো বলোতো? এসব তো তোমার কাছে ডালভাত, চোখ বন্ধ করে করে ফেলতে পারবে। আজ আরতির মুড ভালো, প্লিজ ভাই না করো না। তোমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে।”
“এখন আর এসব ভালো লাগে না রকি ভাই।”
“তবে যে আর্ট ফিল্ম করতে চাইলো? নাচতে নেমে কি আর ঘোমটা দিলে চলবে? টেক ইট ইজি ম্যান। দু’মিনিট এর সিন, দেখতে দেখতে হয়ে যাবে।”
রকি ইহানের পিঠ চাপড়ে বেড়িয়ে গেলো। হাতে ধরে থাকা স্ক্রিপ্টের কপিতে চোখ বুলাতে বুলাতে ইহানের মেজাজ সপ্তমে উঠলো। এতো খোলামেলা দৃশ্য আগে কখনো করেনি ইহান। হঠাৎ করেই ভীষণ লজ্জা লাগলো ইহানের। কোনোদিন যদি দাদিমা জানতে পারে কি বলবে ওকে? ছি! দাদাভাই, টাকা ইনকামের জন্য এইসব করেছিস? কি জবাব দেবে ইহান ওর দাদিমাকে?
“মা, আজ আমার ফিরতে রাত হবে। আজ ডিউটি পরেছে আমার। “
রায়া মাকে বলে হুড়োহুড়ি করে বেড়িয়ে পরতে চায়। তার মা রাজিয়া বিল্লাল তখন রান্নাঘরে বসে আছে ঠায়। কিছু একটা ভাবছিলেন, মেয়ের কথা তার কানে গেলো না।
“এই তাসনি,শোন তো,একটু দাড়া।”
পেছনে বড় বোন জোয়ার গলা পেয়ে রায়া দাঁড়ালো। পেট উচু করে পেঙ্গুইনের মতো হেঁটে এলো জোয়া। আটমাসের বাচ্চা পেটে জোয়ার। প্রথম বাচ্চা, তাই তার বাবার বাড়িতে আগমন।
“কি বলবে আপা?”
“আমার না খুব বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে। আজ আসার সময় নিয়ে আসবি?”
রায়া একবার মায়ের দিকে তাকালো। রাজিয়া জুলজুলে চোখে তাকিয়ে আছে জোয়ার দিকে। রায়া মায়ের থেকে চোখ ফিরিয়ে বোনের দিকে তাকালো, ভেতর থেকে উঠে আসা নিঃশ্বাস চেপে নিয়ে বললো-
“আচ্ছা, নিয়ে আসবো। মা আমি আসছি।”
রায়া বেড়িয়ে যাওয়া মাত্র রাজিয়া জোয়ার কাছে এলো-
“তোর বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে?”
“হুম মা, খুব।”
রাজিয়া জোয়ার গালে কষে চড় লাগিয়ে দিলেন-
“তো বাপকে বলতে পারিস না? খুব তো ঢ্যাংঢ্যাং করতে করতে তার কাছে চলে গিয়েছিলি। এখন আবার আমার কাছে ফিরেছিস কেন? বাপ রাখেনি বুঝি তার আদরের মেয়েকে? শয়তান মেয়ে একটা!
আর তোর জামাইটাই বা কেমন? সে কি বেঁচে আছে না মরেছে আর নাকি তার পয়সার অভাব? তাকে বলতে পারিস না নিজের শখ আল্লাদের কথা? বোনটা খেটে খেটে মরছে তোর তার কাছেই নিজের খিদের কথা বলতে হবে?”
মায়ের চড় খেয়ে জোয়া কাঁদতে শুরু করলো-
“কেন ওকে কেন বলবো? আমি কি পালিয়ে বিয়ে করেছি? তোমরাই তো বিয়ে দিয়েছো। তবে কেন তোমার কাছে আসতে পারবো না? প্রথম বাচ্চা হবে আমার, আমি মায়ের কাছে আসবো না? আমার সব জাদের বাচ্চা হওয়ার সময় ওরা বাপের বাড়ি ছিলো। এখন আমি যদি না আসি তবে ওদের কাছে আমার মান থাকবে?”
মেয়ের কথা শুনে রাজিয়ার মনে হলো আরো কয়েকটা চড় মারে মেয়েকে। এতো স্বার্থপর মেয়ে পেটে ধরেছিলেন এটা ভাবতেই নিজের ওপর ঘেন্না ধরলো। মেয়ে হয়েছে ষোলআনা বাপের মতো। তার আর রুচি হলো না জোয়ার সাথে কথা চালানোর। সে উঠে চলে গেলো রান্নাঘরে।
“এই দোলন, ম্যাডাম কি খোঁজ করেছিলো আমার?”
রায়া খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো দোলনকে। দোলন আর রায়া একই সাথে পড়ে, আর একই সাথে একটা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম কাজ করে। আজ একটা ইভেন্টে রায়া আর দোলনের ডিউটি পরেছে।
“হ্যা, দুবার খোঁজ করেছে। এখনই রওনা দিতে বলেছে সবাইকে। আজকের পার্টি অনেক বড়, পেমেন্টও পাবে ভালো আজ। তাই ম্যাডামের মেজাজ খারাপ। আজ কোনো উল্টো পাল্টা কিছু যেন না হয়, বারবার বলে দিয়েছে।”
“ওহহহ। আচ্ছা আমি তাহলে চট করে কাপড় পালটে নেই দাঁড়া।”
প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ড্রেসকোড শার্ট আর প্যান্ট পড়ে বেরিয়ে এলো রায়া। যদিও এই পোশাকে ও কমফোর্ট ফিল করে না তবুও চাকরি বলে কথা। সবই মেনে নিতে হয়। রায়া আর দোলন প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
আরতির সাথে চুমুর দৃশ্য মোটেও সুখকর ছিলো না ইহানের কাছে। মেয়েটা চরম মাত্রার বেয়াদব। এমনিতেই এসব দৃশ্যতে ইহান ভীষণ আনকমফোর্টেবল ফিল করে তারউপর আরতি ঘুরে ফিরে ইচ্ছে করে বারবার ভুল শট দিচ্ছিলো। প্রতিবার পরিচালকের কাট শুনেই আরতির মুখে একটা বাঁকা হাসি খেলে যেতে দেখেছে ইহান। পরপর তিনবার এমন হওয়ার পর ইহান যথেষ্টই রেগে গেছিলো। চতুর্থবার ইহান প্রস্তুত হয়েই ছিলো। পরিচালকের ওয়ান টু থ্রি শোনার সাথে সাথে আরতিকে জাপটে ধরে গভীর চুমু দিয়েছিলো ইহান। আরতিও সেই চুমুতে গভীরভাবে সারা দিলো। দু’জনে এতোটাই বিভোর হয়ে ছিলো যে রকি ভাইয়ের কাট কথাটি কারো কানেই যায়নি। বেশ অনেকক্ষণ বাদে ইহানের হুশ ফিরলে ফট করে আরতিকে ছেড়ে দেয়। আরতি তখন মিটমিটিয়ে হাসছে, হাসছে রকি ভাইও-
“দারুন কাজ হয়েছে রিজওয়ান। তোমাদের ক্যামিস্ট্রি তো দারুন জমে গেছে। ছবি হিট হয়ে যাবে রিজু। এজন্য অবশ্য পুরো ক্রেডিট আরতি পাবে। ও তোমাকে ইচ্ছে করে রাগিয়ে দিয়েছে যাতে করে শুটটা পারফেক্ট হয়।”
ইহান সলজ্জ হেসে আরতিকে দেখলো। মেয়েটা তখনো হেসেই যাচ্ছে।
“আমি নতুন হতে পারি নায়ক সাহেব কিন্তু এসব কাজে আপনার থেকে পটু। কি বলেন?”
ইহান কোনো কথা বলতে পারলো না। ইস, মেয়েরা বুঝি এতো বোল্ড হয়! ইহানের তো মেয়েদের লজ্জাবতী দেখতেই ভালো লাগে।
“আপনার এই লজ্জা লজ্জা মুখটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে নায়ক সাহেব আর চুমুটাও…”
গাড়ির ব্রেক ইহানকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো। কানের কাছে তখনো আরতির কথাগুলো বেজে যাচ্ছে। সাবেরের কন্ঠ পাওয়া গেলো-
“স্যার, চলে এসেছি। “
ইহান গাড়ি থেকে নামলো। সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠান দেখে ভ্রু কুঁচকালো ইহানের। নুরু চাচার কি অনেক টাকা হয়েছে নাকি? এতোটা হাই প্রোফাইল বিয়ে তো সে আশা করেনি। দাদিমাও কিছু বলেনি ওকে। সে অবাক হয়ে সাবেরের দিকে তাকালো-
“সাবের, এতো দেখছি বড়লোকি বিয়ে। “
“জ্বী স্যার। উনি তো বেশ ভালো টাকার মালিক। হসপিটাল এক্সেসরিজের বিজনেস ওনার।”
“তাই নাকি? চলো দেখি, গিফট কি ছোট হয়ে গেলো নাকি? আমি তো বুঝতে পারিনি।”
“সমস্যা নেই স্যার, ভালো গিফট আছে, আপনি ভাববেন না। “
ইহান কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে সাবেরের দিকে তাকালো। এই ছেলেটা সবসময় ওকে বাচিয়ে দেয়। ইহান গেটের দিকে এগিয়ে গেলো। এদিকে দু’চার জন ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছে ইহানের দিকে। নায়ক রিজওয়ান খান ওরফে ইহানকে দেখছে। নুরুল হক সাহেব ইহানকে দেখে এগিয়ে এলো –
“রিজু, আমিতো বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি এসেছো! খুব খুশি হয়েছি বাবা। জামেলা খালার শরীর কেমন এখন?”
“আগের মতোই। আপনাকে ভুলেই গেছিলাম চাচা। আগে তো প্রায়ই বাসায় যেতেন।”
“আমি তো যাই প্রায়ই তোমার দাদিকে দেখতে। তুমি থাকো না তাই তোমার সাথে দেখা হয় না।”
কথা বলতে বলতেই ভেতরে যায় ইহান। বর কনের সাথে দেখা করে গিফট দিয়ে চলে আসবে ভেবেছিলো। কিন্তু নুরুল হক তাকে ছাড়লেন না কিছুতেই। নিজে ধরে নিয়ে গেলেন খাবার টেবিলে। না খেয়ে কিছুতেই যেতে দেবেন না। অগত্যা বাধ্য হয়ে ইহান বসলো। অনিচ্ছা সত্বেও প্লেটে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তখনই আওয়াজ, ইহান তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো। রায়া গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখ ভরা পানি। বেশ মোটাসোটা এক মহিলা চেচামেচি করছে-
“হাউ ডেয়ার ইউ, দেখে চলতে পারো না। আমার এতো দামি শাড়িটা নষ্ট করে দিলে। কে দেবে এই ক্ষতিপূরন? তুমি দেবে? কি সব লোকজন দিয়ে কাজ করায়। অসহ্য!”
মহিলার শাড়ি ততক্ষণে মাংসের ঝোলে মাখামাখি। রায়া ক্ষীন শব্দে সরি বলার চেষ্টা করলো কিন্তু গলা দিয়ে স্বর ফুটলো না। ইহানের সামনে এভাবে নিজেকে অপদস্ত হওয়াটা ওকে বেশি পোড়াচ্ছে। ইহান যখন ঢুকলো তখনই রায়ার নজরে পড়েছিলো। তাইতো এতোক্ষণ ইহানের চোখ বাচিয়ে চলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ধরা পড়েই গেলো শেষমেষ। ইহানকে দেখতে দেখতে কখন যে হোঁচট খেয়ে মহিলার উপর পড়েছে বুঝতেই পারেনি। মহিলা তখনো গজগজ করেই যাচ্ছে। রায়া চোখ ভরা জল নিয়ে আরো একবার ইহানকে দেখার চেষ্টা করলো। ইহান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওরই দিকে। কিছুক্ষন পর ইহান মুখ নামিয়ে নিলো। যেভাবে প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করছিলো সেরকমই করতে লাগলো। যেন সে কিছুই দেখেনি, যেন সে রায়াকে চেনে না। হঠাৎ রায়ার চোখ পড়ে মহিলার পাশের চেয়ারে বসে থাকা লোকটার দিকে। ইহানকে দেখার চক্করে এই লোককে নজরে পড়েনি। লোকটা দুএকবার রায়াকে চড় মারা মহিলাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলো কিন্তু তাতে মহিলা আরো যেন বেশি ফুসলে উঠলেন। লোকটা আর কিছু বলার সাহস পেলো না। কেবল একবার চোরা চোখে রায়াকে দেখে নিয়ে খাবার খাওয়ায় মন দিলো। দোলন এসে কোনোরকমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রায়াকে টেনে নিয়ে গেলো আড়ালে। রায়ার হঠাৎ কি হলো কে জানে। দোলনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। সে কোনোমতেই ভুলতে পারছে না ওই মহিলার পাশে বসা লোকটাকে। লোকটা যে তার বাবা! ওই মহিলার স্বামী!
তীব্র অপমানের লজ্জায় মনেহয় রায়ায় সে রাতে ভীষণ জ্বর হলো। সারারাত ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে আর জ্বরের তাড়নায় রায়া বারবার কেঁপে কেঁপে উঠলো। রাজিয়া সারারাত মেয়ের পাশেই জেগে বসে রইলেন। বুঝতে পারছিলেন মেয়ে কোনো একটা বিষয়ে ভীষণ কষ্টে আছে। জ্বরে তপ্ত মেয়ের কপালে জলপট্টি দিতে দিতে রাজিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মেয়েটা তার বড্ড চাপা। অল্প বয়সে সংসারের বিশাল বোঝাটা একা হাতে সামলাচ্ছে। জানে এই সংসারের ঘানি টানতে যেতে মেয়ের নিজের অনিচ্ছায় অনেক কাজ করতে হচ্ছে। তিনি সবই বোঝেন কিন্তু না বোঝার ভান করেন। মা হয়েও এদের জন্য কিছু করতে পারছেন না এই লজ্জা তাকে তাড়া করে ফেরে।
এই বয়সে স্বামীর দ্বারা প্রতারিত হয়ে অপমানের লজ্জায় মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করলেও মেয়েগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেন। একেকটা রাত তার কিভাবে কাটে সে নিজেও জানে না। সারাজীবন ঘরকন্নার কাজ ছাড়া আর কিছু করেননি। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিলো। সেই থেকে স্বামী সংসারেই সব মনোযোগ দিয়েছেন। মনেই হয়নি কখনো যে পড়ালেখা করবেন বা অন্য কিছু করবেন।
সংসারী বউ ছিলেন, স্বামীর মনমতো চলতে পারতেন না হয়তো। তাইতো এই বয়সে এসে এরকম অঘটন ঘটালো লোকটা। ভোরের দিকে চোখ লেগে এসেছিলো রাজিয়ার তখনই রায়া চোখ মেললো। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেছে। গতকাল দুপুরে খেয়েছিলো শেষ, তাই জ্বর ছেড়ে যেতেই খিদেটা চাগার দিয়ে উঠলো। পাশে তাকাতেই দেখলো মা ঘুমিয়ে আছে। মাকে দেখে মায়া হলো ভীষণ, মানুষটা হয়তো ঘুমায়নি সারারাত। তাই সে মাকে না জাগিয়েই সন্তর্পনে বিছানা ছাড়লো। শরীরটা বেশ দুর্বল, মাথাটা টলছে রীতিমতো। রায়া বহুকষ্টে বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এলো। ডাইনিংয়ে এসে ফ্রিজ খুলে দেখলো খাওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায় কিনা। খাওয়ার মতো কিছু নেই, পুরো ফ্রিজ ফাঁকা পড়ে আছে। রায়া হতাশ হয়ে শ্বাস ছাড়ে। একসময় এই ফ্রিজ ভর্তি খাবার থাকতো আর এখন ফ্রিজ এতোটাই ফাঁকা যে দুবেলা পেট পুরে খাওয়া হয় না তাদের। একেই বুঝি নিয়তি বলে?
“কিরে, জ্বর ছাড়লো?”
রায়া ঘাড় ঘুরিয়ে মাকে দেখলো।
“তুমি উঠে গেছো?”
“হুম। তোকে না পেয়ে উঠে এলাম। কি খুঁজছিস?”
“কিছু না। খিদে লেগেছে মা, খাবার কিছু আছে?”
“নাহ। বাসায় তোএকটু চাল আর ডাল ছাড়া রান্নার মতো আর কিছু নেই। তুইতো আজ বাজার করতে চেয়েছিলি।”
“হুম।”
“খিচুড়ি রেধে দেই তোকে?”
রায়ার চোখ চিকচিক করে উঠলো। খিচুড়ির কথা শুনেই জিভে জল এলো।
“দাও মা। বেশি করেই করো, সবাই মিলে খাবো।”
রাজিয়া কিছু বললো না। রান্নাঘরে চলে গেলো। রায়া মায়ের পিছু পিছু এলো। দেয়ালে হেলান দিয়ে মায়ের কাজ দেখতে লাগলো।
“কিছু বলবি?”
রায়া চমকে উঠলো। মা কি করে জানলো যে ও মাকে কিছু বলতে চায়? রায়া ইতস্তত করছিলো। মাকে কথাটা বলা কি ঠিক হবে? এমনিতেই মা কষ্টে আছে আর কষ্ট দিয়ে কি লাভ।
“বলে ফেল, এতো ভাবনার দরকার কি?”
“কাল বাবাকে দেখলাম মা! বাবা ভালোই আছে আমাদের ছাড়া।”
চাল ধুতে ধুতে এক সেকেন্ডের জন্য রাজিয়ার হাত থেমে গেছিলো। নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে আবার আগের মতো কাজ করতে থাকলো। বুকে ঝড় বয়ে গেলেও মেয়ের সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো প্রানপনে। রায়া জানে মায়ের এখন ভীষণ কান্না পাচ্ছে কিন্তু ওর সামনে কাঁদতে চায় না মা তাই রায়া নিঃশব্দে মার কাছ থেকে সরে এলো। মা একটু কাঁদুক একা একা, মনটা হালকা করুক।
“ছোটপা, কি করিস?”
টিয়া এসে বোনের জড়িয়ে ধরে ঝুলে পড়লো। রায়া তখন মন দিয়ে ছয়তলার বারান্দা থেকে নিচের ব্যস্ত শহরটা দেখছিলো।
“কিছু না। তোর স্কুল নেই আজ? বড়পা উঠেছে ঘুম থেকে?”
“হুম উঠেছে। স্কুল আছে, যাবো একটু পরে।”
জবাব দিয়ে টিয়াও দাঁড়িয়ে পড়লো বোনের সাথে। আমতা আমতা করে বলে ফেলে-
“ছোটপা, স্কুলের বেতন বাকি পড়েছে কয়েক মাসের। সামনে পরীক্ষা আছে আপা, বেতন না দিলে পরীক্ষা দেওয়া হবে না।”
রায়া চোখ মেলে বোনকে দেখে। ক্লাস টেনে পড়ে টিয়া। এই বয়সটাতে তবুও রায়া অনেক নির্ভার ছিলো। মাথার উপর বাবার ছায়া ছিলো, টিয়ার মতো এতো ভাবনা ছিলো না মাথায়। আহা! বোনটা তার কিশোরী বয়সটা এনজয় করতে পারছে না। ছোট বোনের প্রতি এক অপার্থিব মায়ায় রায়ার মন আদ্র হয়। টিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে-
“দু একদিনের ভেতর দিয়ে দেবো। তোর এক্সাম কবে?”
“সামনের মাসে।”
“মন দিয়ে পড়িস কিন্তু। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে রে। জীবন কত কঠিন দেখছিস তো?”
“হুম।”
টিয়া কি বুঝলো কে জানে। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বোনকে ভীষণ ভালো বাসে টিয়া। তার বোনের মনটা নরম খুব। নিজে যত কষ্টেই থাক না কেন ওদেরকে একটুও কষ্ট পেতে দিতে চায় না। একেবারে বাবাদের মতো করে আগলে রাখে ওদের। বাবাদের মতো? না কখনোই না। ও বড় বোনের মতোই আগলে রাখে। নিজের মনে সগতোক্তি করে টিয়া। হঠাৎই মনে পড়ে গেলো কাল ও জুয়েল ভাইকে দেখেছিলো। মনে পড়তেই ফট করে বলে ফেললো বোনকে-
“আপু, কালকে জুয়েল ভাইকে দেখলাম রে।”
“কোথায়?”
“এই তো, স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিলাম তখন। সাথে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে। কি খুশি লাগছিলো জুয়েল ভাইকে! পৃথিবীর সব পুরুষগুলো কি এইরকম হয়রে আপু? বাবা আর জুয়েল ভাইয়ার মতো? ভালো মানুষ নেই নাকি পৃথিবীতে?”
রায়া বোনকে কাছে টেনে নেয়-
“জানি না রে। আছে হয়তো কিন্তু আমরা দেখতে পাই না।”
“জানিস আপু, আমার ভীষণ ঘেন্না হয় ওদের। কেন এরা সবাই এমন আপু? আমাদের সাথেই কেন এমন হয়?”
তীব্র কষ্ট দলা পাকিয়ে ওঠে টিয়ার মনে। রায়া বোনকে জড়িয়ে ধরে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনেমনে বলে-
“আমারও ঘেন্না হয়রে টিয়া কিন্তু কিছু বলতে পারি না। তোর মতো এতো সহজে প্রকাশ করতে পারি না রে? কষ্টগুলো পুষে রাখছি বুকের ভেতর। কষ্টগুলোকে পেলেপুষে বড় করছি। কোনোদিন যদি আমারও সুযোগ হয় তবে একদিন হিসেব নিকেশ করবো, দেখে নিস।”
“ভাইয়া, আমি আজ থেকে এখানেই থাকবো। ও বাড়িতে আর ফিরে যাবো না। মা সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে, ঘ্যানঘ্যান করে। আমার ভালো লাগে না। তুমি থাকতে দেবে তো আমাকে?”
ইনা ভাইকে দেখে দৌড়ে এলো। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছিলো ইহানের। ভাবছিলো রুমে ঢুকেই বিছানায় ঝাপিয়ে পড়বে। কিন্তু বোনকে দেখে ঘুম ছুটে গেলো।
“তুই কখন এলি?”
“সন্ধ্যায় এসেছি। আজ ক্লাসে যাইনি। দেখো কাল রাতে মা আমাকে কি রকম মেরেছে?”
ইনা জামার হাতাটা গুটিয়ে উপরে তুললো। বোনের হাতের কালসিটে দেখে ইহান চোখ ফিরিয়ে নিলো।
“কিছু করেছিস?”
“হ্যা করেছি তো?”
“কি করেছিস?”
“মা আমাকে দিয়ে মডেলিং করাতে চায়। আমি রাজি হইনি তাই…”
কান্নায় ইনার গলা ভারী হয়ে গেলো। রাগে ইহানের চোয়াল শক্ত হলো।
“তুই এখানেই থাক, ও বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই কোনো। ঠিক আছে?”
ইনা ঘাড় নেড়ে সায় জানালো।
“শোন, আমি আগামী সপ্তাহে ব্যাংকক যাবো সপ্তাহ খানেকের জন্য। দাদিমা অসুস্থ, কাউকে পাচ্ছিলাম না যে কাছে থাকবে। তুই তাহলে একটু দাদিমাকে দেখে রাখিস আমি আসা পর্যন্ত। কি পারবি না? “
“এ আর এমন কি কাজ ভাই, খুব পারবো। তুমি নিশ্চিন্তে যাও।”
ইনা ভাইকে আস্বস্ত করলো।
“আর শোন, আমার অনুপস্থিতিতে কেউ যেন না আসে বাড়িতে। বুঝতে পারছিস? কেউ না মানে কেউ না!”
“ঠিক আছে। কেউ এলে আমি কাউকে ঢুকতে দেবো না।”
“দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল। আমি গেলাম, আজ টায়ার্ড ভীষণ।”
ইহান নিশ্চিত মনে ঘুমাতে গেলো। যাক, একজনকে তো পাওয়া গেলো দাদিমার কাছে থাকার জন্য। কিন্তু তবুও দাদীমা কি মানবে? কথিত প্রেমিকাকে না দেখালে কি ছাড়বে ওকে? দেখা যাক সাবের কি ব্যবস্থা করে। ইহান হাসলো মনেমনে। মেয়েরা ভালোটা বোঝে না। মনে কেবল আত্মসম্মান নামের একটা ভারী বোঝা বয়ে বেড়ায়। আরে ভরা মজলিসে যে অপমান হলি তাতে তোর আত্মসম্মান কোথায় গেলো? নেহায়েত মেয়েটাকে দেখে ভালো লেগেছিল তাই এই প্রস্তাব দেয়া। কিন্তু ওর তো ভালো লাগলো না। ইহানকে ফিরিয়ে দিয়ে কতটুকু ভালো হলো তোমার সে তুমিই ভালো বুঝবে। আমি শুধু তোমার খারাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি যদি তা না বোঝো তবে আমি কি করতে পারি? ইহান বিরবির করে নিজের অনুযোগ প্রকাশ করে অদৃশ্য কারো কাছে।
আজ ভার্সিটিতে এসেই রিজভীকে খুঁজলো রায়া।
টিয়াকে টাকার কথা তো বলে দিয়েছে কিন্তু কিভাবে জোগাড় করবে এতোটাকা? কালকের পাওয়া অর্ধেক পেমেন্টর টাকা মার হাতে দিয়েছে বাজার করতে। এখন হাত একেবারেই ফাঁকা।
এদিকে সামনে জোয়ার ডেলিভারি ডেটও এগিয়ে আসছে। সেখানেও একটা বড় খরচ করতে হবে। কি করবে রায়া ভেবে পায় না। জোয়ার বরের টাকাপয়সা আছে। ইচ্ছে করলেই জোয়া শশুরবাড়িতে থেকে ডেলিভারিটা করাতে পারতো কিন্তু করাবে না। তাতে নাকি তার মানসম্মান থাকবে না। বড়বোনের কথা শুনলে রায়ার হাসি পায়। যে মেয়ের বাবা বুড়ো বয়সে এসে নিজের বউ মেয়েদের ফেলে পরস্ত্রী বিয়ে করতে পারে, যার মা বোনরা নিজেদের দৈনন্দিন খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে তার আবার মানসম্মান? একসময় রায়া ভেবেছিলো বড়বোন আর দুলাভাই তাদের বিপদের দিনে বটগাছ হবে। কিন্তু রায়া ভুল ছিলো বরাবরের মতো। তার বোনটা ঠিক বাবার মতো স্বার্থপর হয়েছে। আর দুলাভাই কেমন লোক তা আদৌও বোঝে না রায়া। লোকটা ওদের কোনো ব্যাপারে মাথা ঘামায় না। ওরা কেমন আছে সে খোঁজও করে না। মাঝে মাঝে বাসায় এসে জোয়াকে দেখে যায়, ওর পচ্ছন্দের খাবার নিয়ে। তখন দু চারটা ভালো মন্দ কথা জিজ্ঞেস করে এই যা।
“খোঁজ করছিলি আমার?”
রিজভী নিঃশব্দে এসে রায়ার পাশে দাঁড়ায়। কলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলো রায়া আর আনমনা হয়ে দূরে তাকিয়ে আছে। ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে হাজারো মানুষ আর গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। রায়া
রিজভীর কন্ঠ শুনে ওর দিকে ফিরলো-
“বিপদে তোকেই মনে পড়ে, কি করবো বল?”
শুকনো ঠোঁটে জোর করে হাসলো।
“তোকে এমন লাগছে কেন?”
“রাতে জ্বর এসেছিলো তাই হয়তো।”
রিজভী গতদিনের কথা জিজ্ঞেস করতে যেয়েও করলো না। কি দরকার মেয়েটাকে বিব্রত করে। যদি নিজে থেকে বলে তো বলবে। গ্রামের ছেলে রিজভী রায়ার সাথেই পড়ে। নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাড়িতেও খরচ পাঠাতে হয় ওর। আঁকার হাতও দারুণ। নিজের প্রয়োজনের তাগিদে এই শহর চষে বেড়ানো রিজভী নিজের কমিউনিকেশন স্কিলে নিজেই চমকিত। সহজেই সকলের সাথে মিশে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা রিজভীর এই কঠিন শহরে বেঁচে থাকার রসদ। মনে মনে রায়াকে পচ্ছন্দ করে রিজভী। মেয়েটার প্রতি এক ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আছে রিজভীর মনে। একবার খুব বড় বিপদ থেকে বাচিয়েছিলো রায়া তাকে নিজের জীবন তুচ্ছ করে। সেসব মনে করেই রিজভীর মনটা ব্যাথাতুর হয়। ও সবসময় চেষ্টা করে যে কোন ভাবে রায়াকে সাহায্য করতে।
ওর যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে অবশ্যই এই মেয়েটার জন্য কিছু করবে রিজভী। রায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর বলে-
“আচ্ছা, এখন বল কেন খোঁজ করছিলি?”
“বড় কোনো কাজের খোঁজ আছে তোর কাছে? একসাথে অনেক টাকা পাওয়া যাবে এমন কাজ। আমার খুব টাকার দরকার রে।”
রিজভী অবাক হলো। রায়া সচরাচরই এমন কথা বলে। তারমানে, এবার সত্যি হয়তো ইমার্জেন্সি।
“তোকে তো সব কাজ দিতে পারিনা আর তুইও করতে চাস না। আমি কি করবো বল?”
“এবার বলে দেখ করবো।”
“তাহলে ঐ চুলের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে যা। ওরা এখনো ভালো মডেল খুঁজে পায়নি। বেশ ভালো এমাউন্ট পাবি। আর যদি তোর বিজ্ঞাপন হিট হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। তোর আর কাজ খুঁজতে হবে না কাজই তোকে খুঁজে নেবে।”
মিডিয়ায় কাজ করবে না বলে বারবার মানা করা রায়া এবার আর মানা করলো না। গত কয়েকদিন ধরে সে কেবল ভাবছে। এভাবে আর কতোদিন চলবে? এরকম ছোট খাটো কাজ করে আর হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা গতদিনের চড়টা ওর গালে নয় যেন ওর অন্তরে লেগেছে। চোখ বন্ধ করলেই চড়টা কানে বাজে। আহ! সময়টা দ্রুত কেটে যায় না কেন? স্মৃতিগুলো ধুসর হয়ে যায় না কেন? রায়া হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো-
“তুই আমাকে জানা কবে কাজ থেকে হবে, আমি করবো। শুধু এই কাজ না এরকম আরো কাজ পেলেও করবো। তুই আমাকে ফোন করিস।”
রিজভী অবাক হয়ে রায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ও এতোটাই অবাক হয়েছে যে চায়ে চুমুক দিতে ভুলে গেছে। মিডিয়ায় কাজ করবে না বলে পন করা মেয়েটার আজ কি হলো? রায়া কি কারো উপর রাগ করে এমন সিদ্ধান্ত নিলো? অবাক রিজভীকে পেছনে ফেলে রায়া কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হেঁটে চলে গেলো।
বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার কাজটা শেষ পর্যন্ত হতে হতেও হলো না। কি জন্য হলো না তা আর রিজভী বলতে পারলো না। এমনকি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ থেকেও ডাক পাচ্ছে না। ওর জন্য নাকি এখন কোনো কাজ নেই। গত তিনটে দিন হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছে রায়া। সেদিনের পাওয়া টাকাতো বাজার করেই শেষ। বাজার ও প্রায় শেষ। টিউশনির থেকে আগেই এ্যাডভান্স পেমেন্ট নিয়েছে। আজ যদি কোনো কাজ না পায় তাহলে দারুণ প্রবলেমে পরে যাবে। এদিকে টিয়ার স্কুলের ফিস দেওয়ার ডেডলাইন মাথার উপর ঝুলছে। উফফ, চিন্তায় চিন্তায় রায়ার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রিজভীকে ফোন দিচ্ছে সেই সকাল থেকে কিন্তু রিজভীর কোনো খবর নাই। রিজভীকে আবার ফোন দিলো, রায়া মনেপ্রাণে চাইছে যেন রিজভী ফোনটা তোলে।
“হ্যালো।”
রায়া যেন দেহে প্রান ফিরে পেলো।
“রিজভী, কই ছিলি সারাদিন? এতবার ফোন দিলাম ধরলি না যে?”
“সরি রে আজ একটু বিজি ছিলাম সারাদিন এজন্যই ফোনটা ধরতে পারিনি। বল কি বলবি?”
রিজভীর নিরুত্তাপ কন্ঠস্বর শোনা গেলো।
“দোস্ত, একটা কাজও পাচ্ছি না। অথচ তুই বললি মডেলিং এর কাজটা নাকি আমি পাবো? আজ তিনদিন হলো কোনো কাজেরই খবর নাই। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর ওরাও তো ডাকছে না। আমি দোলার কাছে খোঁজ নিলাম, ওদের তো গত দু’দিনই কাজ ছিলো। আমাকে যেতে মানা করেছে। কেন করেছে কিছুই জানি না। তুই কি জানিস কিছু?”
রিজভী চুপ করে রইলো কিছু সময়। রায়া অস্থির হয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো-
“কি হইলো দোস্ত, চুপ কেন? আমাকে বলতো কি সমস্যা?”
“দেখ নেগেটিভলি নিস না ব্যাপারটা। তোরে নাকি কাজে নিতে মানা করা হইছে। মার্কেটে তোর দূর্নাম ছড়ানো হইছে। তুই নাকি যথেষ্ট প্রফেশনাল না। মন উড়ু উড়ু থাকে তোর। আর তাছাড়া তুই নাকি অফার পেলেও কাজ করিস না। এই জন্য কেউ তোকে ডাকতেছে না। আমি অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু কিছু করতে পারলাম না। সরি রে!”
“কি বলিস, আমি আবার কার কাজ করলাম না?
মিডিয়ায় তো আমি কাজই করিনাই। তাহলে কে এমন কথা ছড়াবে?”
“জানি না। আমার যে সব জায়গায় পরিচিত আছে তোর কথা বললাম কিন্তু কেউ রাজি হয় না। আর যেসব কাজ পাওয়া যাচ্ছে তা করে তোর কোনো লাভ হবে না। খুবই অল্প টাকা, এর চাইতে দিনমজুরও বেশি পায়।”
রায়া একবার বলতে চাইলো, যেটাই হোক না কেন আমাকে দে। কিন্তু কোথায় যেন বাঁধো বাঁধো ঠেকলো।
“ঠিক আছে ভালো থাক” বলে ফোন কেটে দিলো।
কালকে কিভাবে চলবে সেই ভাবনায় রায়ার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনটা কোনোরকমে পার হয়েছে। মাকে বলে রেখেছে কাল আবার বাজার করবে। রায়া মন খারাপ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ভাবছে, কে ওর কাজের দুর্নাম করবে? ওকে চেনেই বা কয়জন? হঠাৎ ফোনটা বাজতেই ভাবনার জাল ছিন্ন হলো। একটা আননোন নাম্বার।
“হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। “
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। ম্যাডাম, আপনি চাইলে কিন্তু এখনো তেলের বিজ্ঞাপনের মডেল হতে পারেন। শুধু শুধু একটা সুযোগ মিস করবেন কেন?”
অপরিচিত কন্ঠ বলে উঠলো।
“আপনি কে বলছেন?”
“আমার পরিচয় দিয়ে আপনার কি কাজ ম্যাডাম? আপনার তো কাজ পেলেই হলো। আমি জানি কাজটা আপনার জন্য কতটা জরুরি।”
“তাই, তাহলে দিচ্ছেন না কেন? আমি তো করতেই চাইছিলাম। তা কাজ পাওয়ার জন্য আমাকে কি করতে হবে শুনি?”
কন্ঠে ব্যঙ্গের সুর ফুটিয়ে রায়া বলে।
“ইহান স্যারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান ম্যাডাম। আপনার কাজের অভাব হবে না।”
কথাগুলো যেন রায়ার সর্বাঙ্গে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। ওহ, তবে এসব কান্ড কীর্তি ওই বদ লোকটার! তাইতো ভাবছে, কে এসবের পেছনে। রায়ার ইচ্ছে হলো, কাছে যেয়ে লোকটার গালে সপাটে চড় মারতে।
“আচ্ছা! তা আপনার স্যারকে বলুন না একজন নায়িকা ফায়িকাকে বিয়ে করে নিতে? আমার মতো চুনোপুঁটির সাথে তার কি মিলবে? আমি তার দয়া চাইনা, মিস্টার সাবের।”
রায়ার মুখে নিজের নাম শুনে চমকে গেলো সাবের। তাকে চিনে ফেললো? এইজন্যই বুঝি স্যার একে নিজের কাজে চাইছে। বুদ্ধি আছে মেয়েটার। দাদীমা যে চালাক, তাকে সামলাতে একেই দরকার। সাবের নিজেকে সামলে নিয়ে বললো-
“ম্যাডাম, এসব ছোট খাটো ব্যাপারে স্যার কখনো ডিল করে না। নেহাত স্যার প্রবলেমে পড়ে আমাকে জানালো। দাদীমার ব্যাপার না হলে কখনোই এসব করতাম না ম্যাডাম। আমি অনুরোধ করছি রাজি হয়ে যান। আর হ্যা, আপনি ভাববেন না যে এসব স্যার করিয়েছে। উনি এসব কিছুই জানে না। প্লিজ ম্যাডাম, একটু কনসিডার করুন।”
রায়া ফোন কেটে দিলো। মেজাজ তার এতোই খারাপ যে হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। দু’মিনিটের ভেতর তার ফোনে ম্যাসেজ এলো-
“কেন জেদ করছেন। আপাতত আপনি কোনো ভদ্র গোছের কাজ পাবেন না যত চেষ্টাই করুন না কেন। তাই বলছি সময় নষ্ট না করে স্যারের প্রস্তাব মেনে নিন। কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার।”
“আপু, এই আপুনি, ও আপু, কি এতো ভাবছো বলোতো? কখন থেকে ডাকছি তোমায়। আজ কাজে যাবে না?”
রায়া চমকে উঠলো টিয়ার ঝাঁকুনিতে। মাথা নেড়ে জানালো আজ কাজে যাবে না। টিয়ার মুখটা একটু চুপসে গেলো সে কথা শুনে। সে শুকনো মুখে রায়াকে জিজ্ঞেস করলো-
“তুমি কি টাকা এরেন্জ করতে পেরেছো? কাল টাকা না জমা দিলে আবার জরিমানা দিতে হবে।”
রায়া দু’মিনিট বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আহারে, কতো অসহায় লাগছে ছোট্ট মুখটা। রায়ার বুকটা মায়ায় আদ্রতায় কেঁপে উঠলো। কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললো-
“ভাবিস না, কাল এ্যারেন্জ করে ফেলবো টাকা। যা পড়তে বয়।”
টিয়া খুশি মনে চলে বেনী দুলাতে দুলাতে চলে গেলো। রায়া সাবেরের নাম্বার ডায়াল করলো। কিছু শর্ত ওর তরফ থেকেও দেয়া হোক নায়ক সাহেবকে!
সুর্যাস্ত দেখার জন্য সমুদ্রের ধারে আসতেই চমকে গেলো রায়া। দূর থেকেই ইহানকে চিনতে পারছে। প্যান্টের দু পকেটে হাত দিয়ে সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রায়া ভাবলো, ছেলেটা অদ্ভুত, নিজের খেয়ালে চলে। সেদিন নিজ থেকে কথা বললো অথচ এরপর এই দু’দিন চুপচাপ কাজ করলো। ওর সাথে একটা কথাও বলেনি। এমন ভাব যেন ওকে চেনেই না। রায়া কিছুক্ষণ ইহানকে দেখলো। চেহারা দেখা যাচ্ছে না কিন্তু কেন যেন রায়ার মনে হলো ইহানের মন খারাপ। রায়া তো ভেবেছিলো ইহান ঢাকায় ফেরত চলে গেছে। এতো ব্যস্ত মানুষের তো এভাবে সময় নষ্ট করার কথা নয়? যাগগে, যা খুশি করুক ওর কি? রায়া নিজের ভাবনার রাশ টেনে ধরলো। একবার মনেহলো না হেঁটে ফেরত চলে যায় হোটেলে। পরে আবার নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে হাঁটতে শুরু করলো। এ দিকটায় লোকজন কম, ভীড়ও কম। তাই সচেতন ভাবেই রায়া এখানে এসেছিলো। শুটিং শেষ। রাতের গাড়িতে ঢাকা ফিরবে। যাওয়ার আগে ভাবলো একটু সাগরের পানিতে পা ভিজিয়ে যায়। রায়া ইহানের চোখ এড়িয়ে একটু দূরত্ব রেখে হাঁটতে লাগলো। আর কিছুক্ষণের ভেতরে সূর্য ডুবে যাবে। আকাশ লাল আকার ধারন করেছে। সাগরের জল আর আকাশের লাল মিলে পরিবেশটা একেবারে মোহনীয় লাগছে। রায়া থমকে দাঁড়ায়, একদম নিবিড় হয়ে এই সৌন্দর্য্যটুকু উপভোগ করে। এতো সুন্দর দৃশ্য সামনে থাকলে পৃথিবী থমকে যায়। রায়ার মনেহলো, এই মুহুর্তে ওর চাইতে সুখী আর কেউ নেই। এতো সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করাও ভাগ্যের ব্যাপার। আরো দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে রায়া হোটেলের দিকে হাঁটতে শুরু করে। হালকা হিমেল বাতাসে মনটা খুব ঝরঝরে লাগছিলো রায়ার। শীত পরতে শুরু করেছে, ঠান্ডা লাগছে রায়ার তাই শাড়ির আঁচলটা ভালো মতো গায়ে জড়িয়ে নিলো। হোটেলে ফিরেই শাড়িটা পাল্টে ফেলতে হবে মনে মনে ভাবলো রায়া।
“মিস তাসনিম!”
পেছনে থেকে নিজের ভালো নাম শুনে থমকে গেলো রায়া। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো ওর একহাত দূরত্বে ইহান দাঁড়িয়ে।
“জ্বী! “
“চলে যাচ্ছেন?”
“হুম। হোটেল ফিরে সব গোছগাছ করবো। আপনি এখানে যে? আমি তো ভেবেছি আপনি ঢাকায় চলে গেছেন?”
“না একটা জরুরি কাজ আছে তাই থেকে গেলাম। আজ রাতে ফ্লাইট আমার। আপনার
সমস্যা না হলে আমার সাথে একটু হাঁটবেন?”
ইহানের এতো মোলায়েম স্বরে দেওয়া প্রস্তাব শুনে রায়া অবাক হলো। এর আবার কি হলো? কিছুটা হতবিহ্বল রায়া ইহানকে অনুসরণ করে হাঁটতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ হেঁটে একটু আরো একটু নির্জন জায়গায় এসে থামলো ইহান। রায়া একবার তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ইহানকে। অন্ধকার বলে কিছু বোঝা গেলো ন, শুধু ওর সবুজ চোখেদুটো জ্বলজ্বল করছিল। রায়ার মনে অজানা অনুভূতির জন্ম নেয়। ইহান যখনই ওর দিকে তাকায় মনেহয় যেন চোখ ভরা মায়া। নাকি অন্যকিছু? রায়া বুঝতে পারে না। রায়াই কথা বললো-
“কিছু বলবেন?”
“আমার প্রস্তাবটা আপনার কাছে উদ্ভট লাগতে পারে তবুও বলি, আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
রায়া যেন কিছু বুঝতে পারলো না তাই আবার জিজ্ঞেস করলো-
“কি বললেন?”
“আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। শুনেছেন?”
“আর ইউ ম্যাড?”
রায়া চেচিয়ে ওঠে।
“নোপ।”
নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দেয় ইহান।
“তাহলে এ ধরনের অসভ্যতার মানে কি?”
“এখানে অসভ্যতার কি হলো? আমি তো আপনাকে বাজে প্রস্তাব দেইনি, বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি! বিয়ের প্রস্তাব হলো সমাজ স্বীকৃত সবচাইতে ভদ্র প্রস্তাব, এতে কি অসভ্যতা হলো?”
অবাক কন্ঠে ইহান জানতে চায়।
“আশ্চর্য! চিনি না জানি না অথচ আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেবেন সেটা অসভ্যতা নয়?”
“এ্যারেন্জ ম্যারেজে কি চেনাজানার অপশন থাকে? ধরে নিন এটা এ্যারেন্জ ম্যারেজ।”
“ধরে নেবো কেন? কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ একজনকে ডেকে বললেন, তোমায় বিয়ে করতে চাই। বলি, বিয়েটা কি ছেলেখেলা আপনার কাছে?”
“ছেলেখেলা কেন হবে? আপনারা মেয়েরা এতো পেচুক কেন বলুন তো? আমি তো খুব সাধারণ একটা কথা বলেছি এতে এতো রিয়্যাক্ট করার কি আছে বুঝলাম না? আমি প্রস্তাব দিলাম আপনি ভেবে উওর দেবেন, ব্যস!”
ইহান কাঁধ ঝাঁকালো বিরক্ত হয়ে। ইহানের এতো নিস্পৃহ আচরণে রায়ার রাগ দ্বিগুণ হলো। লোকটা কি ওর সাথে ফাজলামো করছে? ও শুনেছে যারা খুব সাকসেসফুল হয় তাদের মধ্যে নানারকম পাগলামি থাকে। তারা হুটহাট যে কোনো কাজ করে মানুষকে অবাক করতে চায়। ইহান কি সেরকম কিছু করতে চাচ্ছে? এই মুহূর্তে বিয়ে তো দূরে থাকুক নিজের জীবন নিয়েই ভাবছে না রায়া। তার উপর কতো দায়িত্ব। তারচেয়ে বড় কথা, নিজের সাথে করা কমিটমেন্টটাই বাই কম নাকি? পরিবারকে নিয়ে সমাজে মাথা উচু করে চলতে চায় রায়া। মায়ের যে সম্মান ছিলো তা মাকে ফিরিয়ে দিতে চায়। ছোট বোনটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে চায়। আর নিজেরও তো কতো কিছু করা বাকি। এখনো পড়ালেখাই শেষ হয়নি? একটা চাকরি করার ইচ্ছা বহুদিনের। মাত্রই জীবনটা গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, সেখানে কোনো ভাবেই এখন বিয়েটা আসে না। চরম বিরক্ত রায়া কিছু না বলে ইহানের দিকে তাকালো।
“দেখুন এটা সম্ভব না। “
” কেন সম্ভব না? আমি জনপ্রিয় নায়ক বলে? নাকি মিডিয়া পারসন বলে?”
রায়া দ্বিধাবোধ করে। কি বলবে এই লোককে?
“আসলে আমি এখন বিয়ে নিয়ে মোটেও ভাবছি না। আমার এখন অনেক কাজ করতে হবে।”
“তো করবেন কাজ, কে আপনাকে বাঁধা দেবে?”
“দেখুন ব্যাপারটা তা নয়। আমি আমি আসলে..”
রায়া খুব অসস্তি ফিল করে। এতো বড় একজন মানুষ এরকম ছেলেমানুষী কেন করছে?
“আমাকে ঘেন্না করেন না তো মিস তাসনিম? রঙিন পর্দার মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষ অনেক ফ্যান্টাসিতে ভুগলেও কেন যেন শিক্ষিতরা তাদের নিজেদের জীবনের সাথে জড়াতে চায় না। আপনিও তেমন নন তো?”
ইহান খুব ধীরে ধীরে কেটে কেটে প্রতিটা কথা উচ্চারণ করে। রায়া অসহায় ফিল করে। আসলেও তো সে এদের নিয়ে ভালো ধারণা পোষন করতো না। এখন বাধ্য হয়ে নিজে এ পেশায় এসেছে এটা সত্যি কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা অনীহা তো আছেই। ইহান একাগ্রচিত্তে রায়াকে দেখে। ওর মনের টানাপোড়েন যেন স্পষ্ট বুঝতে পারছে ইহান। নিজেকে আড়াল করতেই রায়া মুখ খোলে-
“দেখুন ব্যাপারটা আসলে তা না। আসলে আমিই আপনার যোগ্য না।”
রায়ার কথা শুনে ইহান হেঁসে দিলো।
“ভালো বলেছেন। তা কারনটা জানতে পারি?”
রায়া নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে –
“কারনটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত। নিজের ব্যাক্তিগত কথা কারো সাথে শেয়ার করি না আমি। আর তাছাড়া, আপনার এই প্রস্তাব আমার কাছে পাগলামি ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না। আপনি নামি-দামি মানুষ, তাই এসব হয়তো আপনার কাছে ছেলেখেলার মতো ব্যাপার।”
রায়ার জবাব ইহানকে পাথর বানিয়ে দিলো। তার সিরিয়াস বিয়ে ভাবনা নাকি পাগলামি? সে হাসবে না কাঁদবে? মেয়েটা কি একটুও বুঝতে পারছে না যে ইহান সত্যিই ইন্টারেস্টেড? তা না হলে সে কেন শুধু শুধু ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে?
“দেখুন মিস তাসনিম, আপনি আমার সম্পর্কে ভুল ভাবছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে একটু খোঁজ নিলেই বুজবেন আমি মোটেও কোনো বিষয়ে এরকম পাগলামি করার মানুষ না। আমি সত্যিই আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
“কিন্তু আমি চাই না। সবে জীবন গোছানোর পথ খুঁজে পেয়েছি, এখনই কোনো বাঁধনে জড়াতে চাই না।”
“কিন্তু বিয়ে কি আপনার জীবন গোছানোর পথে বাঁধা? কাজ তো আপনি বিয়ের পরও করতে পারবেন? বরং আমার সাথে বিয়ে হলে আপনি কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাবেন।”
“কিরকম?”
রায়া না বুঝে জিজ্ঞেস করে ইহানকে। ইহান একটু হাসলো-
“এই সেক্টরে মাথার উপর কেউ থাকলে আপনি কত ধরনের প্রেশার থেকে বেঁচে যাবেন এটা আমি ঠিক আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। উমমম, ব্যাপারটা অনেকটা ধরে নিন যে, আমি কোম্পানির মালিক আর আপনি এমডি, আমার ওয়াইফ। কেউ আপনাকে কিছু বলার সাহস পাবে না।”
রায়া ইহানের কথায় চরম অপমানিত বোধ করলো। ইহান কি ভাবে নিজেকে? লোকেপ্রিয় হয়ে মাথা কিনে নিয়েছে? চ্যারিটি করবে রায়ার জন্য? ও এটা ভাবলো কি করে যে রায়া ওর হেল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে ওর লক্ষে? রাগে লাল রায়া নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে দাঁত চেপে বললো-
“তা আমার প্রতি আপনার এতো সদয় হওয়ার কারন কি? এই প্রফেশনে আমিই তো একমাত্র নতুন না? আরো মেয়ে আছে আপনি বরং তাদের হেল্প করুন। তারা হয়তো আপনার হেল্প পেয়ে বিগলিত হবে?”
“রাগ করছেন নাকি মিস তাসনিম? আমি কিন্তু এভাবে বলতে চাইনি আপনাকে। জাস্ট আপনাকে বোঝানোর জন্য উদাহরণ দিলাম। তবে সত্যি বলতে বাস্তবতা এর চাইতে ওরস।”
“ওওহহ, প্লিজ! ডোন্ট ডু দ্যাট। আপনার জ্ঞান আপনার কাছেই রাখুন। কেউ অকারন জ্ঞান বিতরণ করতে চাইলে আমি খুব বিরক্ত হই। আমি এডাল্ট মেয়ে, ঢাকা ভার্সিটির মতো জায়গায় পড়ছি। নিজের ভালো মন্দ বোঝার মতো যথেষ্ট জ্ঞান আমার আছে। আর জীবনে কিছু করার জন্য আমার কাউকে সিড়ি হিসেবে ইউজ করার দরকার নেই। হ্যা, এতে হয়তো আমার কষ্ট বেশি করতে হবে সেটা করতে আমি রাজি আছি। তাই বলে কারু হেল্প নিয়ে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বড় হতে হবে এরকম মেয়ে আমি না। আপনি ভুল জায়গায় ট্রাই করছেন মিস্টার রিজওনাল খান ওরফে ইহান। “
“দেখুন আপনি ব্যাপারটা সম্পুর্ন অন্যরকম ভাবছেন। আমি মোটেও এতোকিছু মিন করে কথাটা বলিনি। আপনি প্লিজ ঠান্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখুন। ইউ নিড টু আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই মিন।”
“ঠিক এসব কারনে আমি পুরুষদের সহ্য করতে পারি না, বুঝলেন? অলওয়েজ ডমিনেটিং, নিজেরা যেটা বোঝে সেটাই ফাইনাল। বাকী দুনিয়া জাহান্নামে যাক কিন্তু তালগাছ আমার এরকম মনোভাব আপনাদের। আপনার আজকে ইচ্ছে হলো আপনি একজনকে বিয়ে করলেন, তাকে এবং তার পরিবারকে সাপোর্ট দিলেন তারপর সুযোগ বুঝে কোনো একদিন তাকে বুঝিয়ে দিলেন, তুমি আজ যা কিছু তার সবই আমার দান। আবার কাউকে ভালোবাসলেন, আশা ভরসা দিলেন তারপর মেয়েটার যখন বিপদ, আপনাকে প্রয়োজন হবে খুব বেশি তখন তাকে ছেড়ে দিলেন। বিশ্বাস, ভালোবাসা, কমিটমেন্ট এসব আপনাদের কাছ থেকে আশা করাই ভুল। আপনারা মেয়েদের শুরু পাপেট ভাবেন যাকে যেমন খুশি যখন খুশি নাচাবেন। কিন্তু শুনুন, আমি পাপেট না। আপনাদের মতো পুরুষদের আমি কখনো নিজের জীবনে জড়ানোতো দূরে থাক তার আশেপাশে থাকাও পচ্ছন্দ করবো না। “
রায়ার কথার তোড়ে ইহান যেন খেই হারিয়ে ফেলে। প্রতিটা কথা তীরের মতো বিধছে ইহানের বুকে। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের সাথে যেচে কথা বলার জন্য এতোটা অপমান হতে হবে ভাবেনি ইহান। সারাজীবন মেয়েদের থেকে দূরে থেকেছে। দাদির পরে কাউকে ওর আপন মনে হয়নি জীবনে। কি বললো রায়া? ঘেন্না করে পুরুষদের। কিন্তু সেও তো মেয়েদের ঘেন্না করে, তাই বলে রায়ার উপর তো সে তার সেই ঘেন্নার ভার চাপিয়ে দেয়নি? ইহান বড্ড বেশি অপমান বোধ করলো। লজ্জা অপমানে ইহানের আর কোন কথাই বলতে ইচ্ছে করলো না। সে আসলে ঠিকই ভাবে মেয়েদের নিয়ে। এরা কেবল টাকা বোঝে। ভালো ব্যবহারে এদের এলার্জি আছে। সম্মান পাওয়ার এরা যোগ্য না। একটু আহলাদ দিলে এরা মাথায় চড়ে নাচতে চায়। ইহানের মুখটা যেন করলার মতো তেতো হয়ে গেলো। সে আর কিছু না বলে রায়াকে রেখেই উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করলো। রায়া নামের যে ভুত এতোদিন তার মাথায় চড়েছিলো তা যেন এক নিমিষে গায়েব হয়ে গেলো। পরিবর্তে এখন রায়ার জন্য একরাশ ঘৃনা উথলে উঠছে। পেছন থেকে রায়া ফোড়ন কাটলো-
“কি? এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের ভুত নেমে গেলো মাথা থেকে?”
ইহান তার সবুজ চোখ জোড়া মেলে ঘুরে তাকালো রায়ার দিকে। বুকটা ধক করে উঠলো রায়ার। চোখ দুটো রং পরিবর্তন হয়েছে। এই ক’দিন ধরে ইহানের চোখে তার জন্য যে অন্যকিছু টের পেতো তা দেখলো না। ইহান বিদ্রুপের হাসি দিলো-
“মিস তাসনিম, আপনি আসলে আমার প্রস্তাবের যোগ্য না। আমি আপনাকে নিয়ে ভুল ভেবেছিলাম। আপনিও গতানুগতিক অন্য দশটা মেয়ের মতোই। সরি, আমি ভুল করে আপনাকে সম্মানিত করতে চাইছিলাম। অথচ সম্মান তো আপনার দরকার নেই, তাই না? তাই আমি আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলাম। ভালো থাকবেন।”
ইহান খুব দ্রুত হেঁটে রায়ার চোখের আড়ালে চলে গেলো। ইহানের কথাগুলো রায়ার বুকে নতুন করে আগুন জ্ালালো। আগের আগুনই তো এখনো নেভেনি, ইহান সেই আগুনে ঘি ঢাললো যেন। রায়া জ্বলজ্বলে চোখে ইহানের চলে যাওয়া দেখলো-
“তোমার সম্মান পেতে আমার বয়েই গেছে মিস্টার রিজওয়ান খান। ওটা তুমি তোমার কাছেই রাখো। যথাসময়ে তোমার কাছ থেকে তা আদায় করে নেবো, দেখে নিয়ো।”
বিরবির করে নিজের বুকের আগুনে তুশ ছিটালো রায়া। তারপর নিজের হোটেলের দিকে রওনা দিলো।
Leave a Reply