1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

#নাম_না_জানা_এক_পাখি ### লেখা: সাহিয়া সুলতানা # পর্ব: ০১

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ২০৪ বার
১.
ভাতের থালা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসতেই নিতা আন্টি চেঁচিয়ে উঠলো,
—— বসেছেন নবাবজাদি তার রাজভোগ নিয়ে। খা খা, খেয়ে আমায় উদ্বার কর। তোর মা মরে গেল, তুই কেন মরলি না? দুনিয়ায় রেখে গেছে আমায় অত্যাচার করে জ্বালানোর জন্য। এই হারামজাদির জন্য আমার সংসারে আমি কখনো শান্তি পেলাম না।
নিতা আন্টির কথা শুনে তপসীর চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বেয়ে পড়লো। ভাতের থালাটা টেবিলে ঢেকে রাখলো। দুপুরের খাবার অনেক আগেই সবাই তাকে ছাড়া খেয়ে নিয়েছে। তার বাবাও তাকে ডাকে নি। এটা অবশ্য এখন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছলো সে । পা বাড়ালো বাবার ঘরের দিকে। কিছু কথা তাকে আজ বলতেই হবে। নিতা আন্টি তার বাবার দ্বিতীয় পক্ষ। তপসীর মা মারার যাওয়ার দেড় মাসের মাথায় তারা বিয়ে করেছে।
তপসী দরজায় নক না করেই বিনা সঙ্কোচে ঘরের ভিতর ঢুকলো। তার বাবা দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় আধা শোয়া হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। শুক্রবার হওয়ার দরুণ আজ নিরঞ্জন ধর সারাদিন বাসাতেই রয়েছেন।
তপসী বাবার দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,
—— তুমি যদি আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নাই নিতে পারো, আমায় তাহলে বিয়ে দিয়ে দাও বাবা। তোমাদের সংসারে আমি বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। অনাহারে থাকতে পারবো তাও নিতা আন্টির এমন খোঁটা শুনে গলা দিয়ে ভাত নামাতে পারবো না।
মেয়ের কথা শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হলো নিরঞ্জন ধর। ভারী অবাক কন্ঠে শুধালো,
—— আমি জানতাম আমার মেয়েটা লজ্জা পেতে জানে। এমন নির্লজ্জের মতো কথা বার্তা সে কদাচিৎ বলে না।
তপসীর হাসি পেল। কিন্তু হাসলো না। তার বাবা খাবারের কথাটা না শুনে শুধু বিয়ের কথাটাতেই কর্ণপাত করলো। সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—— কেন বাবা? আমি নির্লজ্জের মতো কথা কি বললাম?
—— বাবার কাছে বিয়ে করার আরজি জানানো টা কি তোমার কাছে নির্লজ্জতা মনে হয় না?
—— হয় না বাবা। তোমার যদি দুই বিয়ে করতে লজ্জা না লাগে তাহলে আমার কেন এক বিয়ের আরজি জানাতে লজ্জা লাগবে!
—— দ্বিতীয় বিয়ে আমি শখ করে করি নি। আর বিয়ের সময় তুমি কোনো নারাজি জানাও নি তো। বরং বিয়েটা আমি তোমার ভালোর জন্যই করেছিলাম।
—— হাসালে বাবা। আমার নারাজিতে কি আসে যায়? আর বয়সই বা কতোটুকু ছিল আমার? এগারো? বারো? সদ্য মৃত মায়ের শোক না কাটাতে কাটাতেই বাবা নতুন মা এনে দিবে বলে আশ্বাস দেয়। আমিও অবুঝ, নতুন মা যে কখনো সত্যি মা হয়ে উঠতে পারে না বুঝতে পারি নি।
—— আমি তোমার সুখের কথা চিন্তা করেই বিয়ে করেছিলাম। নয়তো হেমা কে আমি এখনো ভালোবাসি।
—— মেয়ের সামনে মিথ্যা বলতে একটু তো মুখে আটকাও। আর মায়ের নাম তুমি মুখে নিবে না। মা মারা গিয়েও শান্তি পাবে না তোমার জন্য নয়তো।
—— নিতা তোমায় কি এমন করেছে? তুমি নিজেই তোমার মা’কে সহ্য করতে পারো না।
তপসী অবাক হলো। বাবার মুখে এমন কথা শুনতে হবে তা সে ভাবে নি। কপট রাগ নিয়েই বললো,
—— আমার বয়স উনিশ হয়েছে বাবা। বিয়ের বয়স হয়েছে। এতোই যখন তোমাদের সহ্য করতে পারি না, তোমাদের শান্তিতে সংসার করতে দেই না, দয়া করে আমায় বিয়ে দাও। তোমাদের ও শান্তি আমারো শান্তি।
—— তপসী, আরেকটা কথা বললে আমি তোমায় চড়াবো।
—— অভ্যস্ত আমি এতে বাবা। মারো প্লিজ। তোমার হাতের মার এই সাত বছরে কম খাই নি।
—— মুখে বললেই তো বিয়ে দেওয়া যায় না। টাকা দরকার, নয়তো তোমার এই অভদ্রতার পরও তোমাকে এই বাড়িতে রাখার ইচ্ছা আমার নেই।
—— যে শুধু রেজিস্ট্রার ম্যারেজ করতেই রাজি হবে তাকেই বিয়ে করবো। কোনো সমস্যা নেই, হোক সে রিক্সা চালক, ভ্যান চালক বা অন্য কিছু। তাও আমি নিজের সংসার, নিজের ঘর বলে কিছু তো একটা পাবো।
নিরঞ্জন ধরের গলা জড়িয়ে এলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—— মা’গো আমি জানি তুমি খুব শান্তিতে নেই। দোষ কিছুটা তোমারও আছে তোমার মা’য়ের ও আছে।
—— সব দোষই আমার। তুমি কি করবে সিদ্ধান্ত নাও বাবা। হয়তো আমি নিজের অধিকারে এ বাড়িতে থাকবো, নয়তো বিদেয় দাও।
—— তুমি যা চাও তাই হবে। রোজ রোজ অশান্তি কারই বা ভালো লাগে?
তপসী বাবার ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। কেমন দম বন্ধ করা পরিস্থিতি। তার জীবনটাও বাকি সবার মতো সুন্দর ছিল। মা তাকে ভীষণ আদর করতো। ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে মা মারা গেল।
ইস, কী ভীষণ কষ্ট করলো মা শেষ কয়েকটা দিন। তপসীর এখনো কান্না পায় মনে পড়লে। মা মারা যাওয়ার পর দেড় মাস পড়ে তার বাবা বললো, তাকে নতুন মা এনে দিবে। নতুন মাও খুব আদর করবে। তপসী তখন খুশি মনেই সম্মতি জানায়।
২.
তপসীর বাবা যখন বিয়ে করে নিতা আন্টিকে নিয়ে আসে, তখন তার খুশির কোনো সীমা থাকে না। নিতা আন্টি মা’য়ের বান্ধবী ছিল। মাঝে মাঝে বাসায় আসতো, অনেক আদরো করতো।
কিন্তু কথায় আছে, “যার মা নেই, তার কেউ নেই।” তপসী কিছুদিন পরেই খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলো তারও কেউ নেই। বিয়ের পরই নিতা আন্টির ব্যবহার বদলে যায়।
দুইবছর পর নিতা আন্টির এক ছেলে হয়। তখন থেকে বাবাও বদলে যায়। ধীরে ধীরে সব সম্পর্কই তিক্ততায় পরিনত হয়। তপসীর চোখের সামনে সব সম্পর্কে জং ধরে যায়। এখন এই পরিবারে সে শুধুই সবার গলার কাটা হয়ে আটকে আছে।
তপসী ঘর থেকে বের হলো। আগের খাবারের থালা টা নিয়ে ভাত খেতে শুরু করলো। একটু পরই ছাদে যেতে হবে। সব গাছে জল দিতে হবে। আন্টির কটু দৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই নিতা আন্টি এসে তপসীর সামনে দাড়ালো।
—— তোর ভাইয়ের উঠার সময় হয়ে গেছে। ওর জন্য কিছু স্ন্যাক্স বানিয়ে দে তো।
তপসী কাঠ কাঠ গলায় বললো,
—— আমি ছাদে যাবো আন্টি। আমি কিছু বানাতে পারবো না।
—— ভাইয়ের খাবার টা নিয়েও এখন তোর সমস্যা? ভাই টা তো দি দি করতে করতে পাগল হয়ে যায়। সেই ভাইটার জন্যও মায়া দয়া লাগে না?
—— মায়া দয়া যার যার ব্যাপার আন্টি। আমার অবশ্যি তুষারের জন্য ভালোবাসা আছে। এবং ওর জন্য কি করা দরকার আমি নিজেই জানি।
—— কি জানিস তুই? বেশি কথা আর অভদ্রতা ছাড়া কিছুই জানিস না।
—— আন্টি প্লিজ, আমার মাথা খারাপ করো না। রান্নাঘরে স্ন্যাকস রেডি আছে। ফারদার তুমি না দেখে আন্দাজে চ্যাচাম্যাচী করবা না। করলে অবশ্যই খুব খারাপ হবে।
—— ছাগল রে ছাগল, এই কথা আগে বলা যায় নি? দুই কথার জায়গায় চার কথা লাগাবে। ফাজিল বেয়াদব।
—— স্ল্যাং কেনো ইউজ করো ?
—— না তোমায় পুজা দিবো এখন। স্ল্যাং কেন দাও! ছাদে যাবি ভালো কথা সন্ধ্যার আগে নামবি নিচে। সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাবি এসে।
তপসী খাওয়া শেষ করে ছাদে চলে গেল। ছাদে রাখা দোলনায় বসে আকাশ পানে তাকিয়ে রইলো। সে কি কখনোই সুখী হতে পারবে না? তার জীবন কি এমন রঙহীন, প্রাণহীন হয়ে থাকবে আজীবন?
তার এইটুকু জীবনে সহ্যের সীমা হারিয়ে গেছে। সবকিছু অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
চলবে………

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..