পতিতা একজন নারী। যিনি নোংরাব্যবসা করে। ব্যবসা তো আর একা হয়না ক্রেতাও লাগে। পন্য
বিক্রেতাকে আমরা পতিতা, মাগী বলি। কিন্তু কোনদিন ভেবে দেখেছেন কি ক্রেতার জন্য আলাদা কোন শব্দ আছে কিনা? একই নোংরামিতে একজন পতিতা নামে পরিচিত হলেও যে পুরুষটির পতিতালয়ে নিয়মিত যাতায়াত তার জন্য কোন শব্দ নেই। কিউরিয়াস মন জানতে চাই আপনারা আদর / ঘৃণা করে কি নামে ডাকেন তাকে প্লিজ একটু বলবেন কি?
রক্ষিতা শব্দটির অর্থ উপপত্নী যার কোন পুংলিঙ্গ নেই। ধরুন যে পুরুষটির রক্ষিতা থাকে সমাজ কি তাকে ভালো চোখে দেখে? দেখেনা। যে নারীটিকে ভোগ করা হচ্ছে তাকে একটা আলাদা শব্দ দিয়ে চিহ্নিত করা গেলেও ভোগকারীর জন্য কোন শব্দ আপনি দেখাতে পারবেন
না।
নারীদেরকে গালি দেবার জন্যও পতিতা, রক্ষিতা শব্দগুলির ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে বাংলাভাষার পুরুষদের মাঝে।
কিন্তু এর কোন পুংলিঙ্গ নেই।
আচ্ছা বাইজীবাড়ীতে যে পুরুষটি নিয়ত সফর করত তাকে কি নামে ডাকতেন আপনারা?
অসতী, সতী, অপয়া, কুটনি, কলঙ্কিনী, অলক্ষী, কুলটা, অসূর্যস্পশ্যা (যে সূর্যকে দেখতে পাইনি বা যাকে সূর্যও স্পর্শ করেনি),
অনাঘ্রাতা (যে নারীর কেউ ঘ্রাণ নেয়নি)
অচ্ছুত, অশুচি, ডাইনী, শাকচুন্নী
একটিরও পুংলিঙ্গ আছে? জানা থাকলে একটু দয়া করে বলবেন!
আমি ছুপাসুশীল কিংবা চতুর ব্যকরণবিদ না। আজ নারীব্যকরনবিদ নেই বলে এসবের কোন পুংলিঙ্গ নেই।
একচোখা আসলে কে আমি নাকী সেই পুরুষরা যারা আমাদের দমন করে রাখার জন্য নিজেদের কুকাজ গুলোকে সনাক্তের শব্দগুলো পর্যন্ত আবিস্কার করেনি! ভয়ে নাকি সেগুলো তাদের অপরাধের পর্যায়ে পড়েই না!
আমার #ডিভোর্স শিরোনামে লেখাটি নারীপাঠকের মাঝে যেমন সমাদৃত হয়েছে তেমনি পুরুষপাঠকদের মাঝে নিন্দিত হয়েছে। অনেকই মিষ্টিসুরে ইনবক্স বলেছে আপু এভাবে একচোখা, একপক্ষের হয়ে না বললে কি হতো না?
আমি আমার অবস্থান পরিস্কার করেছি। আমি নারী। আমরা নারী।
আমরা নির্যাতিত, আমরা নিপিরীত, আমরা রাস্তাতে নিজেকে মাল শুনতে শুনতে বেড়ে উঠি, আমরা বাসে উঠে বুকে ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরি।
আমরা কেরোসিন কিংবা এসিডে দগ্ধ, আমরা অভিবাবকের সামনে ধর্ষিত, আমরা পাড়ার মোরের ঐ পাগলী যার পেটে ছয় মাসের বাচ্চা, আমরা ৬ মাসের সেই ধর্ষিত শিশু অথবা সত্তরের বৃদ্ধ নারী।
এই বাংলার বুকে একটি নারীও নেই যে বলতে পারবেনা যৌবনে সে পুরুষের নোংরা কোন উক্তি শোনেনি!
সুতরাং আমি নির্যাতিতাদের জন্য সজ্ঞানে, স্বেচ্ছাই, স্বপ্রনোদিত হয়ে নারীদের পক্ষ নিয়ে ডিভোর্সে সব দোষ নারীদের না সেটার কারণ বর্ননা করেছি।সেখারে পুরুষপক্ষে বলার প্রশ্নই উঠেনা।
পরীক্ষার প্রশ্নে রচনাতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা আসলে গল্পের সেই অতিব চালাক শিক্ষার্থীর মত আমি কুমিরের রচনা লিখি না। এতোটা ও চালাক আমি নই।
একই পাঠ্যপুস্তক পাঠ করে, একই নোংরাকর্ম সম্পাদন করে, একই ভালোকাজ করে, একই সংসারে ডিভোর্স হলে পুরুষের জন্য এক ধরনের
প্রতিক্রিয়া আর নারীর জন্য ভিন্ন কেন?
একচোখা হতে এই সমাজ আমাকে শিখিয়েছে হাতে কলমে। যে পুরুষ জোর করে আমাদের নারীকে ধর্ষণ করলো সে দিব্যি বুক ফুলিয়ে রাস্তাতে আরেকজন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে ধর্ষনের জন্য আর আমার বোন, মেয়ে কিংবা কন্যা অসতী, অপয়া, অভাগিনী উপাধি নিয়ে মরার জন্য গলাতে দেবার জন্য দড়ি খুঁজছে।
তার জন্য কোন লজ্জা তো দূরের কথা কোন শব্দও নেই!
ধর্ষক বাদে কি নামে ডাকেন আপনি ঐ পিশাচটাকে?
একচোখা কারা? আমরা? নারীরা?
পতি শব্দের অর্থ স্বামী। অভিধানে
পতিব্রতা, পতিবত্নী,
পতিপ্রাণা (যে স্বামীর জন্য জীবন দিতে পারে এমন স্ত্রী) ,
পতিপরায়না (স্বামী সেবাতে যে নিমগ্ন) থাকলেও
পত্নীব্রতা, পত্নীবত্নী, পত্নীপ্রাণা, পত্নীপরায়না বলে কোন শব্দ আমাদের বাংলা ভাষাতে নেই! থাকবে কিভাবে বলেন! এ সমাজে পতিভক্তি নারীর গুন হিসেবে বিবেচিত হলেও স্ত্রীভক্তি বা পত্নীভক্তিকে একচোখা পুরুষেরা কটাক্ষ করে। টিটকারী করে, এই বউপাগল বলে লজ্জা দিয়ে সম্মানহানি করে!!
এদিকে আমি নাকি একচোখা!
ঐদিকে সুন্দর, আর মোহনীন শব্দগুলো সব আপনাদের দখলে। বীর, বীরপুরুষ, বীরশ্রেষ্ঠ, বিক্রমশীলী, প্রতাপশালী হ্যান ত্যান সাতসমুদ্র সব আপনাদের দখলে । আহা! বীর্যশালীপুরুষ শব্দটি শব্দসম্ভারে থাকলেও
ডিম্বশালীনারী অস্তিত্ব দেখাতে পারবেন না।
অনেকে বলতে আসবে আপা এই বীর্য আর শুক্রাশয় হতে আগত নয় আর
ডিম্বাশয় নিয়ে এতো গর্বের কি আছে!
আপনার জন্য কেবল জানিয়ে রাখি আরবি রেহেম শব্দের অর্থ জরায়ু /ডিম্বাশয়। রেহেম শব্দটি মহান আল্লাহ তার নিজের নাম রহমান হতে উৎপত্তি। আমি গর্বিত আমি নারী। আমার ভেতরে রেহেম আছে। যেখান থেকে আমি পুরুষকে জন্ম দেই। এতে গর্ব আছে।
Leave a Reply