1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# ভালোবাসি_প্রিয় # পর্ব_১,পর্ব_২,পর্ব_৩,পর্ব_৪,পর্ব_৫,পর্ব_৬,পর্ব_৭,পর্ব_৮,পর্ব_৯ এবং পর্ব_১০, ### সুলতানা_সিমা

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১১৪২ বার
_আমাকে বিয়ে করবেন?
অচেনা অজানা একটা মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে ৪৪০ ভোল্টের শকড খায় দিহান।
হা হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তাকে সে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। শ্যামলাবর্ণ গায়ের রং মেয়েটার গুলাপি সেলোয়ার-কামিজ পড়া। সাদা একটা ওড়না সিঁথির অর্ধেক পর্যন্ত মাথায় টেনে রাখছে। এক গুচ্ছ চুল বাম গালের পাশে ছড়িয়ে পরছে। যতবার মেয়েটা কানে গুজে দিচ্ছে ততবার ঝরঝর করে আবার মুখে এসে পড়ছে। মেয়েটার চোখ দুটো টানা টানা চোখের পাপড়ি গুলা খুব ঘন। নেশা ধরে যাওয়ার মতো চাহনি। কাজল পরেনি তবুও চোখ দুটো সম্ভব সুন্দর লাগছে। শ্যামলা মেয়েদের চোখ সুন্দর হয় সেটা দিহান জানত কিন্তু এতোটা সুন্দর হয় এটা তার জানা ছিলোনা। সরু নাক,পাতলা ঠোঁট লিপিস্টিক ছাড়াই গোলাপি রঙের।
_করবেন আমায় বিয়ে?
মেয়েটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো দিহান। তখনই মেয়েটার কথায় ধ্যান ভাঙে দিহানের। হতভম্ব হয়ে আবারও তাকিয়ে তাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার মুখের দিকে। সে বুঝতে পারছে না মেয়েটাকে কি বলবে। মাত্রই দেখা হলো মেয়েটার সাথে। এইতো একটু আগে তার গাড়ি খাদে পড়ে গেছিল। মেয়েটা কতো কষ্ট করে তাকে টেনে টুনে উদ্ধার করেছে।
(একটু আগে যা ঘটেছে)
দিহান গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছে। তার বন্ধুদের সাথে একটা পার্টিতে গেছিলো। ওরা জোর করে তাকে দু এক ঢোক ড্রিংক গিলিয়ে দিছে। এখন তার কাছে সব কিছু ডাবল লাগছে। রাস্তার পাশের গাছ গুলা মনে হচ্ছে সব রাস্তার মাঝকানে সারি বেধে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ বিকট শব্দ করে তার গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা খায়। তার সব নেশা উড়ে যায় কিন্তু ততক্ষণে তার গাড়ি খাদে পড়ে যায়। দিহানের মাথা সিটের সাথে বারি খেয়ে ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরা শুরু হয়েছে। কপালের পাশে অনেকটা কেটে গেছে।সেদিকে তার খেয়াল নেই। সে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। গাড়ির সাথে সেও উল্টে আছে। গাড়ির দরজা খুলার কোনো উপায় নেই। গাড়ি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দিহানের মনে বাঁচার আশা নিবে গেল। মনে মনে কালেমা পরতে লাগল। জীবনের সব পাপ কাজ গুলা মনে পরতে লাগল।
মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনই একটা মেয়ে দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। অনেক কষ্ট করে মেয়েটা তাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করল। দিহানকে গাড়ি থেকে বের করে দাঁড় করালো। মেয়েটার কাধে ভর দিয়ে দাঁড়ালো দিহান। তাকে ধরে ধরে নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো মেয়েটা। দিহান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল।
_ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না আপনার কাছে আজীবন ঋণী থাকবো। আজ আপনি না থাকলে আমি মরেই যেতাম।
_ধন্যবাদ লাগবে না। একটা সাহায্য করলেই চলবে।
দিহান একটু অবাক হয়ে থাকালো। তার অবাক হওয়ার কারণ হলো। মাত্রই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আসা মানুষের কাছে কেউ সাহায্য চায় বলে তার জানা নেই।
নিজেকে স্বাভাবিক করে দিহান বললো।
_ আপনার কি সাহায্য লাগবে বলতে পারেন। আপনার জন্য কিছু করতে পারলে অনেক শান্তি লাগবে।
_হুম আমার একটা সাহায্য লাগবে। আপনি প্রমিজ করুন আপনি আমায় সাহায্য করবেন। এবং আপনি আমায় এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না।
_অবশ্যই প্রমিজ। বলুন কি করতে পারি।
_কিছু করতে হবেনা একটা জিনিস চাইবো। তবে সেটা পরে চেয়ে নিবো আগে আসুন আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
_আরে না আমি ঠিক আছি।
_আমি দেখতে পারছি তা আসুন।
দিহানকে নিয়ে মেয়েটা একটা ডাক্তারের কাছে যায়। মাথায় ব্যান্ডেজ করে কিছু অষুধপত্র নিয়ে রিকশা করে একটা কাজি অফিসের সামনে এসে নামে। দিহান চারিদিকে তাকিয়ে জায়গাটা দেখছিলো তখনি মেয়েটি বলে উঠলো” আমাকে বিয়ে করবেন?”
(এখন)
_কি হলো কিছু বলছেন না যে?
মেয়েটির কথায় আবারও ভাবাচ্ছেদ হয় দিহানের। দু’কয়েক শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজাতে চায়।তবুও গলা ভিজেনা। তার গলা শুকিয়ে চৌকির হয়ে গেছে।জ্বীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে”
_আপনি হয়তো কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব ডিপ্রেশনে ভুগছেন তাই কি বলছেন নিজেই বুঝতে পারছেন না।
_আমি সম্পুর্ণ ঠিক আছি। আর হ্যাঁ আপনি আমাকে প্রমিজ করেছেন আমি যা চাইব আপনি তা দিবেন। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
_আপনি আমাকে চিনেন?
_চেনার কি কথা নাকি? যতদূর জানি আজ প্রথম আপনাকে দেখেছি।
_তাহলে বিয়ের মতো সিরিয়াস একটা বিষয়ে এত বড় ডিসিশন নিচ্ছেন কি করে?
_আপনি কিন্তু এটাও প্রমিজ করেছেন আপনি আমায় কোনো রকম প্রশ্ন করবেন না।
দিহান বুঝতে পারছেনা কি করবে। এভাবে মেয়েটা তাকে ফাসিয়ে দিবে বুঝতেই পারেনি সে। রাগে নাক লাল হয়ে গেছে তার। রাগটা তার নিজের প্রতি হচ্ছে। এরকম একটা গাইয়্যা টাইপ মেয়ের জালে সে ফেসে গেলো?
_কি হলো চলেন কাজি অফিসে।
দিহান রাগি লুকে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা বললো “”দেখুন আমি একটা মেয়ে এখন যদি আমি লোক জড়ো করে বলি আপনি আমায় বিয়ে করবেন বলে এখানে এনে আমায় বিয়ে না করে ফেলে যাচ্ছেন তাহলে কিন্তু পাবলিক আপনাকে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিবে। এমন একটা বিনোদন কিন্তু পাবলিক হাত ছাড়া করবে না। ভিডিও করে সাথে সাথে সেটা ভাইরাল করে দিবে। এতে মানসম্মানেরও লস নিজের আত্মীয় স্বজনের সাথেও সম্পর্ক খারাপ। এর থেকে কি ভালো নয় আপনি ভদ্র ভাবে আমায় বিয়ে করতে আসেন।
অবশেষে দিহান বিয়ে করে নিলো। দিহানের ইচ্ছে করছে নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়ে দিতে। কি দরকার ছিলো এভাবে মেয়েটিকে প্রমিজ করার? তন্দ্রা যখন জানতে পারবে এসব তখন কি হবে আল্লাহই জানে। তন্দ্রা দিহানের গার্লফ্রেন্ড। গত দুই বছর ধরে তাদের রিলেশন চলছে। তন্দ্রার বাবা মার্ডারের আসামি ছিলেন। দিহানের বাবা একজন পুলিশ অফিসার তাই কিছুতেই ওই পরিবারের সাথে এই পরিবারের সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি নয় তার বাবা। অনেক কষ্ট অনেক ঝড়,বাধা পেরিয়ে মাত্র দুইদিন আগে তাদের সম্পর্ক সবাই মেনে নিয়ে তাদের বিয়ের আলাপে বসেছে। আর আজ কিনা সে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেললো?
কটকট শব্দ করে সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে মেয়েটা। দিহানের কানে শব্দগুলা বিকট ভাবে লাগছে। কপাল কুঁচকে তাকাল সে। ইচ্ছে করছে এই বিরক্তিকর মেয়েটাকে গলা টিপে খুন করতে। দিহানের মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে। বাসায় উঠবে কিভাবে গিয়ে? বাসার সবাই যখন দেখবে সে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় উঠছে তখন যে কি হবে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়ালো। দিহান বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিছুক্ষন পরে দিহান একটা সিএনজি নিয়ে আসলো। এসে মেয়েটাকে ঝাড়ি স্বরে বললো “ওঠেন এসে গাড়িতে”। মেয়েটা হাসি মুখে বললো” একটা কাবিননামার দরকার ছিল পেয়ে গেছি। আর কিছুর দরকার নেই। আপনি এবার আসতে পারেন।
মেয়েটির কথায় দিহান আবারও শকড হল। মাত্র একটা কাবিননামার জন্য তাকে এভাবে বিয়ে করল? একটা কাবিননামা কি এমন প্রয়োজনীয় জিনিস? কোনো ভাবে মেয়েটা থাকে ফাসাতে চাচ্ছে না তো? এমন তো নয় মেয়েটা তাদের বিরুধী দলের কেউ? অথবা তাদের কোনো শত্রু মেয়েটাকে পাঠিয়েছে? দিহানের মাথায় হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিয়ে পড়ানোর সময় কি যেন মেয়েটার নাম বলছিলো কাজি? অরিন। হ্যাঁ অরিন। অরিন নামটা আগে শুনছে বলে ওতো মনে হচ্ছে না।
চলবে…..।
উৎসাহ পেলে নেক্সট দিব।❤
Image may contain: 2 people, people standing
পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবেছে মাত্র মিনিট দু’য়েক হবে। সন্ধে নেমেছে পুরো শহর জুড়ে। দক্ষিণা বাতাস বইছে চারিদিকে। মসজিদে মসজিদে আজানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। বিশাল বড় পাচঁতলা বিল্ডিংয়ের তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাতক পাখির মতো ছেলের পথ চেয়ে আছেন সুমনা চৌধুরী। এই বড় বাড়িটার নাম শান্তি নীড়। এটা উনার শশুরের দেওয়া নাম। শান্তি নীড় নাম দেওয়ার পেছনে একটা কারন আছে। সেটা হলো এই বাড়িতে কখনো ঝগড়াঝাটি হয়না। উনাদের যৌথপরিবার। উনার দেবর বাশুড় সবাই সবার বউ বাচ্চা নিয়ে এক সাথে থাকে। এতে নাকি সুখ আছে। সুমনা নিজেও এতে সুখ পান। নিজের স্বামীর পরিবার নিয়ে গর্ববোধ করেন। কিন্তু উনার মনে হয় এই বাড়ির নাম শান্তি নীড় না হয়ে আইনজীবী ভিল্লা হওয়া উচিত ছিল। এটা মনে হওয়ারও একটা কারন আছে। সেটা হলো এই বাড়ির সবাই আইনের লোক।
উনার শাশুড় ছিলেন একজন সেনাবাহিনী। উনার স্বামী হচ্ছেন পুলিশ অফিসার। উনি নিজেও পুলিশে চাকরি করতেন। বাচ্চা কাচ্চার জন্য চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়েছে অনেক আগে। উনার দেবর ভাশুর দুজনই পুলিশে চাকরি করেন। উনার বাশুরের ছেলে সি আই ডি পুলিশ। উনার বড় জা একজন উকিল। এক কথায় এই বাড়িতে শুধু আইনজীবী দিয়ে ভরপুর।
উনার দুই মেয়ে আর এক ছেলে। বড় মেয়ে দিশা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। ছোট মেয়ে দিয়া ক্লাস টেনে পড়ে। আর উনার একমাত্র ছেলে দিহান সে এইবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।
এতোক্ষন ধরে এই দিহানেরই পথ চেয়ে আছেন তিনি। কাল সন্ধ্যায় দিহান গিয়েছিল বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। আজ আরেক সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো দিহান বাড়ি ফিরেনি। ফোনটাও বন্ধ কল যাচ্ছেনা। সুমনার মনে বার বার কুঁ ডাকছে। উনার ছেলে ঠিক নেই বলে বার বার মনে হচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ উনার কাধে হাত দিল। চোখের কোনে জমে থাকা জলটা মুছে পিছন ঘুরে তাকালেন তিনি। উনার স্বামী হানিফ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন।
_নামাজ পড়বে না?
_হুম পড়ব তো। [একটু থেমে] বলছিলাম কি। ছেলেটা কই গেল একটু খুঁজে দেখনা। সারাদিন পেরিয়ে গেলো এখনো আসলো না। চারিদিকে শত্রুর ভিড় আমার ছেলেটা নিরাপদে আছে কিনা আল্লাহই জানে।
_তোমরা মায়েদের এই কারণে আমার বিরক্ত লাগে। সব কিছু এত নেগেটিভ মাইন্ডে ভাবো কেন? পজিটিভলি ভাবো। হতে পারে তার ফোনে চার্জ নেই। বন্ধুরা ছাড়ছেনা বলে আসতে পারছে না। তোমার ছেলে কি ছোট রয়েছে? ও এখন যথেষ্ট বড় চিন্তা করনা চলে আসবে।
সুমনা চৌধুরী কিছুই বললেন না শুধু বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সন্তানের অনুপস্থিতি ভিতরটা কিভাবে খোঁড়ে খোঁড়ে খায় সেটা মা ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারেনা। স্বয়ং বাবাও না। চোখ থেকে চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে রুমে চলে আসলেন। তিনি।
_____________
_কি গো বারো বেটার বউ? শুধু শুয়ে ঘুমিয়ে দিন পার করলে চলব? কাজ কাম কিছু করন লাগব নাকি? রান্নাবান্না কে করবো? তর বারো জামাই আইসা কইরা দিবো?
সৎ মায়ের মুখে এমন তীক্ষ্ণ কথা শুনেও কিছু বললো না অরিন। বইয়ে মুখ গুজে বসে থাকল। রোজ রোজ এমন কথা শুনতে শুনতে সে অভস্ত্য হয়ে গেছে। তার মা যখন তাকে চার বছরের রেখে মারা যান। তারপর তার বাবা এই মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন। সেই থেকে এই পর্যন্ত উনি এক দিনও অরিনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন নি। ওর বাবা থাকতে কিছুটা কম বকাঝকা করতেন। উনি মারা গেছেন থেকে উনার বকাঝকা অত্যাচার বেড়ে গেছে। ওর বাবা মারা গেছেন তখন সে ক্লাস টেনে পড়ে। উনি মারা গেছেন থেকে তাকে লেখাপড়ার খরচ দেয়না তার সৎ মা।
এই তিন বছর ধরে অরিন নিজের টাকা দিয়ে চলে। টিউশনি করিয়ে কিছু টাকা পায় সেগুলা দিয়ে ওর লেখা পড়া চালায়। মাঝে মাঝে কম দাম দিয়ে কিছু জামা কাপড় কিনে। প্রতিদিন কলেজে যেতে হয় জামা তো লাগবেই। ওর সৎ দুইটা বোন একটা ভাই। তার আর তার সৎ ভাই বোনদের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। ওদের পোশাকে আভিজাত্য আছে। চেহারায় সুখি ভাব আছে। আর সে? ভাবতেই তাচ্ছিল্য হাসলে অরিন।
অরিনের পড়তে ভালো লাগছে না মন খারাপ হয়ে গেছে তার। এখন একমাত্র লুপার সাথে কথা বললে মনটা ভালো হবে। অরিন ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। লুপাকে ফোন দিতে হবে। লুপা তার বেস্টফ্রেন্ড। খুব অভিমানী মেয়েটা। অল্পতেই অভিমান করে বসে। আবার অল্প কিছুতেই তার অভিমান ভেঙে যায়। তিন চারবার কল দেওয়ার পরে রিসিভ করলো লুপা।
লুপা কল রিসিভ করেই ঝাঝালো গলায় বললো”
_ওই কুত্তি তুই আমারে কল দিলি কেন?
_সরি ইয়ার ভুল হয়ে গেছে।
অরিনকে ভ্যাঙ্গ করে লুপা বললো “”সরি ইয়ার ভুল হয়ে গেছে। ফোন রাখ তুই আর কোনোদিন আমাকে ফোন দিবিনা।
_বললাম তো সরি। দেখ তুই শুধু শুধু রাগ করছিস। এটা রাগের কোনো কারন হলো বল?
_অবশ্যই রাগের কারন আছে। আমি প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার সময় তর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করি। আর তুই কলেজ শেষেই ফুড়ুৎ করে উড়াল দিস। বুঝলাম প্রতিদিন তর টিউশনি থাকে তাই আমাকে ফেলে চলে যাস। আজ তো তর টিউশনি ছিলনা। তাহলে আজ কেন আমায় ফেলে আসলি?
_আজ বাসায় অনেক কাজ ছিল ইয়ার।
_তুই থাক তর কাজ নিয়ে আমি রাখলাম।
রাখলাম বলেই ফোন কেটে দিলো লুপা। কিছুক্ষণ পরে আবার অরিনকে কল দিবে দিয়ে সরি বলবে। এটাই এই মেয়েটার সভ্বাব। অরিন রুমে আসতেই দেখলো তার সৎ বোন তানভি টেবিলের উপর পা তুলে পায়ে নেইল পলিশ দিচ্ছে। তানভির পা বার বার বইয়ের সাথে লাগছে। অরিন বড় বড় পা ফেলে দ্রুত হেটে এসে তার বইটা হাতে নিয়ে কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরে বললো
“” তানভি তুই কি দিন দিন ছোট হচ্ছিস? বইয়ে যে তর পা লাগছে সেদিকে খেয়াল নেই তর? আর সারা বাড়ির জায়গা থাকতে আমার টেবিলের উপর এসে কেন তোকে নেইল পলিশ লাগাতে হবে?
“” অরিনের মা চেচিয়ে তেড়ে আসলেন “” কার টেবিল? কার টেবিল বলছিস? এটা তর টেবিল? আমার বাবা আমাকে সব মালামাল দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। এটা আমার বিয়েতে এসেছে। তর মায়ের মতো ফকিন্নি বেশে আসিনি আমি।
_মা তুলে একটা কথা বলবা না। আমার মা এখানে কি করছে যে আমার মাকে টানছো?
_একদম মুখে মুখে তর্ক করবি না। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।
_করব তর্ক। কি করবা? কি করবা তুমি? “”” বলতে না বলতেই অরিনকে টাস টাস করে থাপ্পড় দিতে শুরু করলেন জহুরা (অরিনের সৎ মা)। একটু আগে যে অরিন রান্না করতে যায়নি সেই রাগটা এই সুযোগে ঝেড়ে দিচ্ছেন তিনি। অরিনের চুলে মুঠি ধরে বললেন “বলছিলাম না তর্ক করবি না। খেয়েদেয়ে যে বেঁচে আছিস এই শুকরিয়া আদায় কর। ” অরিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেয়েকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায় অরিন। কপাল টা গিয়ে খাটের সাথে বারি খায়। কপাল থেকে হাত এনে সামনে তুলে ধরতেই দেখে পুরো হাত রক্তে লাল হয়ে আছে।
চলবে……..।
রিচেক করিনি ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
রক্ত দেখে কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে অরিন। ওড়না দিয়ে তারাতাড়ি রক্ত মুছে নেয়। মুছার সাথে সাথে আবার কপাল লাল হয়ে যাচ্ছে রক্তে। কিছুতেই রক্ত পরা বন্ধ হচ্ছেনা। দৌড়ে গিয়ে তার পুরাতন একটা ওড়না খুঁজে বের করে ছিড়ে মাথা বাধে। গায়ের ওড়নাটা ধুয়ে নেয় নয়তো রক্তের দাগ বসে যাবে। অরিনের খুব খারাপ লাগছে মাথা ফেটে যাওয়ায়। দুদিন পরে সে লুপার বার্থডেতে তাদের বাসায় যাবে। এই প্রথম অরিন রাজি হয়েছিল যাওয়ার জন্য,আর এরই মাঝে মাথা ফাটিয়ে সে বসে আছে। লুপাকে নাও বলতে পারবেনা নয়তো তার সব চুল ছিড়ে হাতে নিয়ে নিবে। দুইদিনে তো কাটা জায়গা ভালও হবেনা। ডাক্তারের কাছে গেলে অবশ্য তারাতাড়ি ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু হাতে মাত্র পাঁচ’শ টাকা আছে। এই পাঁচ’শ টাকা এখন খরচ করে ফেললে লুপাকে কি দিয়ে গিফট দিবে সে? মাথা খুব ব্যথা করছে কাটা জায়গায় খুব জ্বালাপোড়া করছে। খাটে বসে কাঁদতে লাগলো অরিন। কেন সেই ছোট থেকে তাকে এতো অত্যাচার করেন উনি? উনার কি একটুও মায়া হয়না তার জন্য? আল্লাহরও কি মায়া হয়না? ছোট বেলায় মাকে হারালো বড় হয়ে বাবাকে। বাবা যদি থাকতো অন্তত একবার কান্নারত মুখটার দিকে তো তাকাত। কিন্তু ওরা? ওরা মা মেয়ে মিলে তো মারতে মারতে মেরে ফেললেও একবার মুখের দিকে তাকায় না।
_________________
দিহান বাসায় ফিরলো রাত ৮টায়। ফিরতেই পুরো বাসায় হইচই শুরু হয়ে গেছে। তার মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে সবাই অস্থির হয়ে গেছে। সবাই তাকে ঘিরে ধরেছে। কি হইছিলো? কিভাবে ফাটছে? কই ছিল কাল? ফিরতে দেরি হল কেন? একের পর এক প্রশ্ন করতে করতে তার অবস্থা কাহিল করে দিচ্ছে। তার মা তো একেবারে কান্না জুড়ে দেন। দিহানের বিরক্ত লাগছে সবকিছু। বিরক্ত হয়ে চেচিয়ে উঠে “” স্টপ””। সাথে সাথে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায় দিহান চেচিয়ে বলে “” আমি একটা কথা বুঝতে পারি না তোমরা সব কিছুতে এতো হাইপার হও কেন? কমন সেন্স বলতে কিছু নেই নাকি?আমি যখন এসেছি আমি তো এমনিতেই বলবো কই ছিলাম না ছিলাম। এভাবে প্রশ্ন করতে করতে আমাকে পাগল করে দিচ্ছ৷ আমিও তো মানুষ তাইনা যখন যার যা কিছু মন চায় তখন সে সেটা করে উদাও হয়ে যায়। ব**র জীবন আর ভাল্লাগেনা।”” দিহান রাগে উপরে চলে যায়। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো দিহানের বিহেভে। সে কখনোই এভাবে রাগে না। আজ এমন কি হলো যে এভাবে রাগল? ভেবে পায়না তারা।
নিজের রুমে গিয়ে টাস করে দরজা লাগিয়ে খাটে বসে দিহান। কাল ওই মেয়েটা বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই উদাও হয়ে গেলো। দিহান এখনো ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেনা তার সাথে হচ্ছে টা কি। তাকে বোকা বানিয়ে একটা মেয়ে বিয়ে করে চলে গেলো? তাও এমন ক্ষেত মার্কা একটা মেয়ে? কাবিননামার প্রয়োজনে বিয়ে করছে শুনে দিহান ৪৪০ ভোল্টের শকড খেয়ে মস্তিষ্ক শুন্য হয়ে গেছিলো। হুস আসতেই দেখলো মেয়েটা নাই। মেয়েটাকে খুঁজতে খুঁজতে কাল সারারাত চলে গেছে। দিনে তার এক বন্ধুর বাসায় ঘুমিয়ে ছিলো। সারারাত না ঘুমানোর কারণে ঘুম ভাংতে অনেক সময় লেগেছে। দিহান এখন এমন একটা অবস্থার মাঝে আছে কাউকে বলতেও পারছে না আবার নিজেও কিছু করতে পারছে না। তার বন্ধু সাওনকে বলছিল,সাওন এসব শুনে তাকে পাগল বলেছে। পাগল তো যে কেউই বলবে৷ তন্দ্রার সাথে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করছে। দিহান রুহানের রুমে গেলো, রুহান তার ছোট চাচ্চুর ছেলে এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। দিহান রুহানের রুমে গিয়ে দেখলো রুহান বসে বসে ফোন টিপছে। দিহান ধমকের স্বরে বললো “” ওই মোবাইল দে তো।”” দিহানের গলা শুনে কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে রুহান। ভিতু চোখে একবার দিহানের দিকে একবার ফোনের দিকে তাকালো। দিহান ছুঁ মেরে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে আসলো। রুহান একটা মেয়ের সাথে চ্যাট করছিল। দিহান আপাতত এসবে পাত্তা দিলো না। তন্দ্রার নাম্বারে ডায়েল করল। দুইবার রিং হওয়ার পরে তিনবারের বেলায় ফোন রিসিভ করল তন্দ্রা।
_ হ্যালো কে বলছেন?
_তন্দ্রা আমি দিহান।
_ দিহান তুমি? কই ছিলা তুমি? জানো কত কল দিয়েছি তোমায়? তোমার ফোন বন্ধ দেখে আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে। আমি তো ভেবেই নিয়েছি সকালে তোমার বাসায় যাব।
_ সরি! আমার ফোন ভেঙে গেছে। আর তোমাকে আসতে হবে না দুইদিন পরে লুপার বার্থডে তখন আইসো।
_ ওকে।
অনেকক্ষণ হলো তন্দ্রার সাথে দিহান কথা বলছে। এরই মাঝে রুহান বেশ কয়েকবার দরজার পাশ দিয়ে হেটে গেছে আড়চোখে বার বার দিহানের রুমের দিকে তাকিয়েছে। দিহান বুঝতে পারছে রুহানের এই ছটফট করার কারণ এই মোবাইল ফোন। দিহান ফোন টা রেখে নাম্বার কেটে তার বোন দিয়াকে ডাক দেয়। দিয়া এসে ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। দিহান দিয়াকে বললো “
_ লেখাপড়া কেমন চলছে তোর?
_ভালোই চলছে।
_ আম্মুকে বলে দিস লুপার বার্থডে তে তন্দ্রা আসবে।
_আচ্ছা।
_ এই ফোনটা রুহানের কাছে দিয়ে যাবি।
_ আচ্ছা।
দিয়া চলে যাওয়ার পরে দিহান চিৎ হয়ে খাটের মাঝামাঝি শুয়ে পরলো। তার মনের অস্থিরতা এখনো কমেনি। ভেবেছিল তন্দ্রার সাথে কথা বললে মনটা শান্ত হবে। কিন্তু না তার মন এখনো অস্থির। বার বার ওই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। আকস্মিক ভাবে তার বিয়ে হয়ে গেলো আবার বিয়ের পরে বউ কাবিননামা নিয়ে উদাও। এটা অস্থিরতার জন্য যথেষ্ট কারণ।
কিছুক্ষণ পরে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো দিশা,লুপা,ইশি তিনজন এসে তাকে ঘিরে বসে। ইশি তার বড় চাচ্চুর মেয়ে আর লুপা তার ছোট চাচ্চুর মেয়ে।
দিশা বলে,,,
_ভাইয়া তুই তন্দ্রা আপুকে আসতে বলছিস? জানিস বাবা কি করবে? তোদের বিয়েটা যে মেনে নিছে এটাই অনেক বুঝলি? এখন বিয়ের আগে বাড়িতে এন ঝামেলা করতে চাস?
_বিয়ের আগে হবে কেন আমি তো বিয়ে করে ফেলছি।
“ইশি কপালে চোখ তুলে বললো”
_কিইইইইই তুই বিয়ে করে ফেলছিস? দেখেছিস তোরা? আমি আগেই বলেছিলাম এই তন্দ্রা মেয়েটাকে আমার বেশি সুবিধের মনে হয়না।
_ওই চুপ কর তুই সব সময় শুধু তন্দ্রাকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করবি না। আমি তোরে বলছি আমি তন্দ্রাকে বিয়ে করছি?
_তোরা ফাজলামো করছিস আর আমার টেনশন হচ্ছে আব্বু জানলে কি যে হবে। [দিশা]
_তোর এতো টেনশন কিসের শুনি? আর শুন কিছুদিন পরে তন্দ্রা এ বাড়ির বউ হবে তাই তন্দ্রার পুরো হক আছে এই বাড়িতে আসার।
ওদের কথার মাঝে লুপা বললো “
_আমি অতশত বুঝিনা বাবা। আমি আমার বেস্টুকে কত কষ্ট করে আমার বার্থডেতে আসার জন্য রাজি করিয়েছি। এখন যদি তোমাদের তন্দ্রা চন্দ্রার কারণে আমার বার্থডে পার্টি দিতে মেজো আব্বু না বলে দেয় তাহলে কিন্তু আমি সবগুলার চুলে আগুন ধরিয়ে দিবো।
_তুই খোটা দিলি? তর বার্থডে বলে আমায় খোটা দিলি? ঠিক আছে আমি কালই একটা পার্টি দিচ্ছি।
_তুই কি উপলক্ষে পার্টি দিবি? [ইশি]
_আমার বিয়ের খুশিতে। (কিঞ্চিত রেগে বললো দিহান)
_আচ্ছা ওই তন্দ্রা বুচিকে বিয়ে করার জন্য এতো খুশি?
_Don’t call তন্দ্রা বুচি she is pretty!
_ওরে ইশি লুপা আমাকে কেউ একটু নীল রংয়ের মদ দে বইন খেয়ে মাতাল হই। [দিশা]
বোনের কথায় দিহান কিঞ্চিত রাগি স্বরে বললো”
_দেখ তোরা কিন্তু আমাকে নিয়ে মজা করছিস। আমি এমনিতেই টেনশনে আছি।
_তর আবার কিসের টেনশন? [দিশা]
_বউয়ের টেনশন। টুপ করে যে আকাশ থেকে পড়ে আমাকে বিয়ে করে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো তার টেনশন।
দিহানের এমন কথায় হো হো করে হেসে উঠে ইশি দিশা ও লুপা। কথাটা সত্যি হলেও কেউ কথাটা সিরিয়াসলি নেয়নি।
চলবে…..।
Image may contain: 1 person, close-up
একটা ক্লাস করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে আসলো লুপা। আজ অরিন আসেনি অনেকবার কল দেওয়ার পরেও কল ধরেনি। লুপার কাছে সবকিছু ঠিক লাগছে না। মনটা ছটফট করছে অরিনের খবর জানতে। কাল তার বাসায় অরিনের যাওয়ার কথা অরিন যদি কাল না যায়? ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো লুপার। খিদে লাগছে কিন্তু কিছু খেতেই মন চাচ্ছে না। একটা রিকশা নিয়ে অরিনদের বাসার সামনে চলে আসল লুপা। এটা অবশ্য অরিনদের বাসা না ওরা ভাড়া বাসায় থাকে। রিকশা থেকে নেমে লুপা বাসার দিকে একবার তাকালো। দুইতলার একটা বিল্ডিং। ভূতের বাড়ির মত লাগে লুপার কাছে। বাড়ির মালিক কি এতই কিপটা রং টং করলে কি হয়? রিকশা বাড়া দিয়ে গেটের ভিতর গেলো সে। কলিং বেল দিতেই দরজা খুলে দিল তানভি। মনে হয় দরজার কাছেই ছিল। লুপা বললো”
_তানভি অরিনকে একটু ডেকে দিবে প্লিজ।
_ভেতরে আস না আপু।
_হুম। “লুপা ভেতরে ঢুকলো। তানভি বললো অরিন তার রুমে আছে লুপা অরিনের রুমে গেলো। অরিন বসে বসে বই পড়ছিল লুপাকে দেখে অবাক হয়ে বললো”” “লুপা তুই? কলেজ যাসনি?” অরিনের মাথায় কাপড়ের পট্টি বাঁধা দেখে লুপা অরিনের জবাব না দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বললো।
_তোর মাথায় কি হইছে? এভাবে বেঁধে রাখছিস কেন? তুই ঠিক আছিস তো?
_মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলাম কপালের দিকে একটু চিলে গেছে। আর কিছু না।
_মাথা ঘুরে পরিস কেমনে তুই?
_আচ্ছা বাদ দে। কলেজ যাসনি?
খাটের উপর বসতে বসতে লুপা বললো “গিয়েছিলাম তুই নাই তাই ভালো লাগছিল না চলে আইছি। এবার যা আমার জন্য এক কাপ গরম চা বানিয়ে নিয়ে আয়। সাথে বিস্কুটও আনবি।
_ওকে তুই বস আমি পাচঁ মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসছি।
অরিন কিচেনে গেল চা বানাতে। সে কিচেনে ঢুকার সাথে সাথেই জহুরা বেগমও (অরিনের সৎ মা) ঢুকলেন কিচেনে। উনি অরিনকে বললেন “
_একটু চিনি রইছে আজকে বাজার করতে পারব না। এই চিনি দিয়ে আজ চলতে হবে। এক গ্লাস পানি খাইয়ে বিদায় কর।
_যতটুকু চিনি এখন লাগাব পরে আমি বাজার থেকে এনে দিব। “বলতে বলতে চায়ের পাত্রে পানি নিয়ে চুলায় বসায় অরিন। জহুরা বেগম এসে চুলা বন্ধ করে পাত্র থেকে পানি ফেলে পাত্র টা আবার জায়গা মতো রেখে বললেন”
_গ্যাস কিনতেও টাকা লাগে চিনি কিনতেও টাকা লাগে। দুদিন পর পর সতিনদের এনে খাওয়াবা নিজে রোজগার করে খাওয়াও আমার টাকায় না। এক টাকা দিয়ে তো আর সংসারে হেল্প করছ না। শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খাচ্ছ” বলে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। যেতে যেতে বলে গেলেন। “”রান্না করতে বললে মাথা ব্যথা, কিচেনে আসা যায়না। এখন মাথা ব্যথা নাই? অন্যের ঘাড়ে চড়ে ঘোড়া দৌড়ালে মজা লাগে।”
অরিন কান্না করে দিল। লুপা যতদিন তার বাসায় আসে একদিনও কিছু খেতে দিতে পারেনা। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। লুপাকে গিয়ে কি বলবে? খালি হাতে গিয়ে কিভাবে সামনে দাঁড়াবে? অরিনের লজ্জা করছে লুপার সামনে যেতে। অনেকক্ষণ পরে চোখের পানিটা মুছে অরিন ধীর পায়ে রুমে আসলো। আসতেই লুপা বললো”
_কই রে চা কই? “” অরিন শুকনো হাসলো। আলমারি খুলে পাঁচ’শ টাকার নোট বের করে এসে বললো”
_আমার সাথে আয়।
_কই যাবো?
_আগে আয় তো।
_বলনা কই যাবো।
_ঘরে গ্যাস নাই ইয়ার চল।
“”” লুপাকে নিয়ে অরিন একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। তাদের দুই বছরের বন্ধুত্বে এই প্রথম অরিন লুপাকে কিছু খাওয়াবে। লুপা সব সময় দামি দামি জিনিস গুলাই তাকে খাইয়েছে যেগুলার অনেক নাম সে জানে ও না। পাঁচ’শ টাকা দিয়ে সে আর কি খাওয়াবে। অরিন লুপাকে বললো “”
_কি খাবি বল? “বলতে দেরি হলেও লুপার অর্ডার করতে দেরি হয়নি। মেয়েটার প্রচন্ড খিদে লেগেছে বুঝাই যাচ্ছে। লুপার খাওয়ার মাঝকানে কল আসল তার বাসা থেকে অরিনকে আসছি বলে সে অর্ধেক খাবার রেখে সে চলে গেল। এটা অবশ্য লুপার জন্য কিছুই না কিন্তু অরিনের জন্য অনেক কিছু। বিলের কাগজ হাতে নিয়ে অরিন চোখ কপালে তুলে বলে “”দুই হাজার টাকা?”” অরিন শুকনো একটা ঢোক গিলে ওয়েটারকে বললো “”
_ বিল এতো বেশি আসল কেন?
_বেশি কই মেম সঠিক বিল ওতো এসেছে।” অরিন চিন্তায় পরে গেল কি করবে সে। ওয়েটার তাকে চিনে কারণ লুপা তাকে নিয়ে রোজ এই রেস্টুরেন্টেই আসে। অরিন ওয়েটার কে বললো “
_আসলে আমি তো পাঁচ’শ টাকা নিয়ে বের হইছি। আর টাকা নেই আমার কাছে। আজ পাঁঁচ’শ রাখুন আস্তে আস্তে আমি পরিশোধ করে দিব।
_না মেম আমাদের এখানে এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি টাকা পরিশোধ করে তারপরেই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন।
_আমি সত্যি দিয়ে দিব পরে। আমাকে তো আপনারা চিনেন।
_আমাদের এখানে চেনা ছিনির কোনো নিয়ম নাই মেম। আপনি টাকা দিয়ে তারপরেই এখান থেকে যাবেন।
_আমি একটু ওয়াসরুম থেকে আসতে পারি।
_সিয়র।
অরিন ওয়াসরুমে চলে গেলো। বেদিশার মতো পুরুষদের ওয়াসরুমে ঢুকে গেছে। কেউ একজন দাঁড়িয়ে হিসু করছে। অরিন নাক ছিটকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। দু কদম গিয়ে থেমে গেল। এ কাকে দেখলো সে? পিছনে তাকিয়ে আয়নার দিকে তাকালো। দিহান চোখ বন্ধ মুখে শিস বাজাচ্ছে আর হিসু করছে। অরিন দু’য়েক না ভেবেই প্রশ্ন ছুড়ে মারলো “হাই কেমন আছেন?” আচমকা কার কথা কানে আসতেই ধচমছিয়ে উঠল দিহান। তারাতাড়ি চেইন লাগিয়ে পিছনে তাকিয়ে অরিনকে দেখে ভূত দেখার মতো চিৎকার দিয়ে উঠে”
_আহহহহহহ।
_আরে আস্তে বাইরে থেকে মানুষ চলে আসবে।
_এই বেটি আপনি এখানে করেন?
_what is বেটি?
_এখানে মেয়েদের আসা নিষেধ। আপনি এখানে এসেছেন কেন? (কপাল কুঁচকে একটু ভেবে) এক মিনিট আপনি ওই মেয়েটা না সেদিন আমাকে বলির পাটা বানিয়েছিলেন?
_ওমা মনে আছে? আবার মাত্র তিন চার দিনে ভুলেও গেলেন?
দিহান শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে অরিনের দিকে এগুতে এগুতে বললো”
_আজকে তোমাকে পেয়েছি মেয়ে আজকে তোমাকে আমি ছাড়ব না। বল তোমাকে কে পাঠিয়েছে এমন টা করার জন্য।
_ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে জবরদস্তি করছেন। চিল্লিয়ে লোক জড়ো করব? সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার খুব শখ তাইনা? ওকে ঠিক আছে চিল্লাচ্ছি আমি।” অরিন চিল্লাতে যাবে তার আগেই দিহান অরিনের মুখ চেপে ধরে। এই মেয়েটাকে দিয়ে তার একটুও বিশ্বাস নেই।
_এই মেয়ে কথায় কথায় হুকমি দাও কেন? আমি ধরলে তুমি নড়তে পারবা? অরিন মুখ ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে। দিহান বললো ” মুখ খুলে দিলে চিল্লাবা না তো?” অরিন মাথা নেড়ে না বুঝাল। দিহান ছেড়ে দিলো। অরিন বড় বড় কয়েকটি শ্বাস ছেড়ে হাপাতে হাপাতে বলল “
_আপনি কি মানুষ? এভাবে কেউ কাউকে ধরে?
_জ্বি না সবাই তো আপনার মতো ধরে একেবারে বিয়ে করে ছাড়ে।
_একবার আপনি একবার তুমি অশিক্ষিত নাকি?
_ও হ্যালো আমার চৌদ্দ গুষ্ঠির মাঝে কেউ অশিক্ষিত না। আর হ্যা নিজের ড্রেসাপ দেখ। গাইয়্যা টাইপ লাগছে। আর মাথায় এটা কি বাঁধছো? কাপড়ের পট্টি? দেখে তো মনে বস্তিতে থাকো আর এসেছ দিহান চৌধুরীর শিক্ষা মাপতে?
কথা গুলায় অরিন অনেক আঘাত পেলো কিন্তু প্রকাশ করল না। স্বাভাবিক স্বরেই বলল
_আচ্ছা বাদ দিন। আমাকে দু হাজার টাকা দিন তো।
_কিইইইইইইই? তুমি এখন দেনমোহর দাবি করছো?
_ওওওওও আচ্ছা আমি তো ভুলেই গেছিলাম
ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি তো আপনার কাছে এমনিতেই টাকা পাই এটা আমার হক। তবে আপাতত আমাকে দুহাজার টাকা ধার দিলেই হবে।
_এই মেয়ে সত্যি করে বলত তুমি কে? কে তোমায় পাঠিয়েছে? তুমি কার দলে কাজ কর বল?
_দু’হাজার টাকা চেয়েছি বলে এত প্রশ্ন করছেন? আমি তো কাবিনের টাকা চাইনাই। পাবলিকের পিঠানি খেতে মন চায়? চিল্লিয়ে লোক জড়ো করে বলি আপনি আমায় জোর করে বিয়ে করে এখন বউয়ের অধিকার দিচ্ছেন না?
_ওরে কি স্বাংগাতিক মেয়ে। এই মেয়ে আমি তোমায় জোর করে বিয়ে করছি নাকি তুমি আমায় জোর করে বিয়ে করছো?
_দেখেন আপনি আমায় দু’হাজার টাকা দেন আমি বিদায় হই এখান থেকে।
_মামার বাড়ির আবদার? দেবনা টাকা। আগে বল তুমি কার দলে কাজ কর?
_ওয়েট বলছি।” বলেই অরিন দিহানের দিকে পা বাড়াল। দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে পিছাতে লাগলো। পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো। অরিন গিয়ে দিহানের একদম পাশে দাঁড়াল। দিহান ভিতু স্বরে বলল “দে দে দেখ। আমার একটা জি জি জিএফ আছে। প্লিজ আমার ই ই ইজ্জতহানী করনা।” অরিন দিহানের ভিতু চোখে চোখ রেখে বাকা ঠোঁটে হাসছে। দিহানের পেন্টে হাত রাখতেই দিহান চোখ খিঁচে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে বিরবির করে কি সব বলছে আর ভয়ে কাচুমাচু হয়ে কাঁপছে। অরিন দিহানের পকেট থেকে ওয়ালেট টা বের করে সেখান থেকে দু’হাজার টাকা নিয়ে ওয়ালেট টা আবার পকেটে রেখে বেরিয়ে গেলো। অরিন যাওয়ার পরে দিহান কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে এক চোখ বন্ধ রেখে এক চোখ মেলে তাকালো। অরিন নাই। ভিতুর মত দাঁড়িয়ে গলা বারিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোনো দিকে না দেখে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো। ওয়াসরুমে একটা মেয়ের সাথে পাবলিক দেখলে শুধু সে জুতা পিঠা খেতনা তার পরিবারের সম্মানও নষ্ট হতো। অরিন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দিহান দৌড়ে আসলো। সে বেরুতে যাবে তখনই ওয়েটার তাকে আটকে ফেলে।
_স্যার টাকা দিয়ে যান।” দিহান তারাতাড়ি পকেট থেকে টাকা বের করে পাঁচ’শ টাকার জায়গায় একহাজার টাকা দিয়ে এক দৌড় মারলো। ওয়েটার পিছন থেকে ঢেকে বললো “স্যার আপনার বাকি টাকা নিয়ে যান।” দিহানের কানে গিয়ে সে কথা পৌচাচ্ছে না। সে অরিনের খুঁজে চলে গেলো। কিছু করতে পারুক আর না পারুক মেয়েটা কই যায় সেটা তো সে দেখতে পারবে। দিহান রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কারো সাথে অনেক জোরে ধাক্কা খেলো। এতো জোরে যে সে পরেই গেলো। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো তার বেস্টফ্রেন্ড নীল দাঁড়িয়ে আছে। তারাতাড়ি উঠে হন্তদন্ত হয়ে বললো “
_দোস্ত এদিকে একটা মেয়েকে যেতে দেখেছিস?
_হ্যা দেখেছি তো। একটা না শতশত দেখছি। রাস্তায় একবার তাকা কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে ইয়ার। না দেখে তাকা যায়?
_শালা সব সময় শুধু মেয়েদের দিকে তাকাস।
_আমি তো শুধু তাকাচ্ছি তুই তো দৌড়াচ্ছিস।
দিহান এদিক ওদিক তাকালো। কোথাও মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। দিহানের মন খারাপ হয়ে গেলো। নীল দিহানের পিঠ চাপড়ে বললো
_মাম্মা সিরিয়াস কেস মনে হচ্ছে ব্যাপার কি?
দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “” নারে কিছু না। তুই আসবি তো কাল?
_কোথায়?
_বললাম না লুপার বার্থডে?
_অবশ্যই যাবো। আগে বল তর লাইলীর কি খবর?
_ভালই আছে।
_ভাল তো থাকারই কথা। দুদিন পর পর ফোন করে বলল বাবু আমার টাকা লাগবে আর বাবুও টাকা পাঠিয়ে দিলো। তোদের এসব বুঝিনা ভাই। প্রেমটা টাকার উপর দাঁড়িয়ে আছে।
_ওর হক আছে আমার টাকার উপর। দুদিন পরে আমাদের বিয়ে হবে। টাকা চাইতেই পারে এতো খারাপ করে দেখছিস কেন?
_বিয়ে হলে ভালো। অন্য মেয়ের সাথে হলে তো তোমার অনেক টাকার লস মাম্মা।
_বিয়ে হবে অবশ্যই হবে। আমি তন্দ্রাকে ছাড়া কোনো মেয়ে বিয়েই করবো না।
চলবে…..।
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। আপনার একটা মন্তব্য আমার লেখার আগ্রহ জাগায়।
সকাল নয়টায় শাওন আর নীল চলে আসলো দিহানদের বাসায়। কলিং বেল দিয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছে কেউ এসে দরজা খুলে দিচ্ছে না। নীল শাওন দুজন ব্লাক টি’শার্ট পড়েছে,ব্লাক জিন্স। সিক্স প্যাক ফর্সা বডিতে এমন ড্রেসাপে দুজনকে হিরো লাগছে।চিল্কি চুল গুলা উপরের দিকে তুলে খাড়া খাড়া করে রাখছে। হাতে ব্লাক ওয়াচ। দুজনের কাধে ব্যাগ। দেখে মনে হচ্ছে দুজন যমজ ভাই শুধু ফিগারটা আলাদা। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শাওন বিরক্ত হয়ে নীলকে বললো”
_হারামি দেখলি তো এখনো সবাই ঘুমে আছে। আমি আগেই তোকে বলেছিলাম দুপুরের দিকে যাই।
_তুই বিরক্ত হলে তুই চলে যা।
_সত্যিই কিন্তু চলে যাবো।
_ওকে যা গা বাগ।” শাওনকে সরিয়ে নীল এসে একের পর এক কলিং বেল দিতে লাগলো। শাওন বললো”
_নীল এটা কিন্তু ভদ্রতার মাঝে পরেনা। ওদের ডিস্ট্রাব হবেনা?
_come on ইয়ার সব কিছু ভাবলে চলে?
নীল আবরও কলিং বাজাতে লাগলো। লুপা এসে দরজা খুলে দিলো। কুকড়া চুলগুলা এলোমেলো। চোখে মোটা ফেমের চশমা। কালো রংয়ের একটা টপস পড়া সাদা রংয়ের একটা লেগিংস। কেমন যেন পিচ্চি পিচ্চি লাগছে। নীল লুপার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সদ্য ঘুম থেকে উঠে আসা মেয়েটাকে দেখতে কিউটের ডিব্বা লাগছে। লুপা দাঁতে দাঁত চেপে বললো “
_কলিং বেজ বাজাচ্ছেন কেন? এটার ভেতর ঢুকে গেলেই পারেন।
নীল বললো “কলিং বেলের ভেতর বুঝি ঢুকা যায়? আমার না জানা ছিলনা।
_সকাল সকাল মানুষের বাড়িতে আসেন লজ্জা করেনা?
_আমার না একটুও লজ্জা করে না। এই শাওন তোর করে?
ঘরের ভিতর উঁকিঝুঁকি করছিল শাওন নীলের ধাক্কায় হুস আসে তার। হতভম্ব হয়ে নীলের দিকে তাকায় সে। সত্যি বলতে এতক্ষণ এরা দু’জন কি কথা বলছিলো তার কান দিয়ে ঢুকেনি। ইতস্তত হয়ে লুপাকে বললো”
_হ্যাপি বার্থডে কিউটি। “” লুপার গরম চোখ শীতল হয়ে এলো। কপালের কুঁচকানো বিলিন হয়ে গেলো। মুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠলো। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টেনে বললো “thank you so much!” নীল বললো “শাওন তোর ওকে কোন দিক থেকে কিউট মনে হয় রে? তাকিয়ে দেখ ওর তো নাক বুচা।” লুপা নীলের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো। নীল শাওন ভিতরে ঢুকলো। আসলে তারা যা ভাবছিলো তাই। সবাই এখনো ঘুমে আছে। দিহানের রুমে গেলো দু’জন। শাওন গিয়ে দিহানকে জাগালো দিহান উঠেনি। নীল বললো “এভাবে নয় মাম্মা ভালো ভাবে জাগানো লাগব।” বলেই ওয়াসরুম থেকে মগ ভর্তি পানি এনে দিহানের উপরে ঢেলে দিলো। দিহান লাফ দিয়ে উঠলো। নীল বললো “
_কিরে বিছানায় হিশু করা এখনো ছাড়িস নি?
নীলের উপর একটা বালিশ ছুড়ে মেরে দিহান বললো”
_হারামি তোর কারনে এই দুই দুইবার আমি মেয়েটাকে ধরতে পারিনি।
_কোন মেয়েটা তোর ললিপপ?
_তোর খালাম্মা। “রাগে হনহন করে দিহান ওয়াসরুমে চলে গেলো।
নীল আর শাওন হাসতে লাগলো। দিহান নিশ্চয়ই কোনো মেয়েকে স্বপ্নে দেখেছে আর তারা এসে তার স্বপ্নে পানি ঢেলে দিলো। অনেকক্ষন পরে দিহান,শাওন ও নীলের ডাক আসে নিচে যাওয়ার জন্য। শাওন নিচে নামার সময় চারিদিকে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজল। মনটা তার তৃষ্ণার্ত কাউকে একটা পলক দেখার জন্য। নিচে নামতেই দিহানের বড় মা এগিয়ে এসে বললেন “” কি ব্যাপার তোমরা একা কেন তোমাদের আব্বু আম্মু কই?” শাওন বললো ” উনারা সময় পেলে আসবেন সন্ধ্যার দিকে।” লুপা তখন টেবিলে বসে ছিলো। নীল লুপাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো ” আন্টি আমরা যে এতো সকাল সকাল এসেছি আমার না লজ্জা করছে। আচ্ছা সকাল সকাল কোথাও গেলে আপনারও কি লজ্জা করে? ” লুপা নীলের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। নীল একবার আড়চোখে তাকিয়ে আর তাকায়নি।
নাস্তার টেবিলে বসলো তারা। রুহান দিয়া এসে বসলো লুপার দু পাশে। দিহান,নীল,শাওন তারা এক পাশে। দিহান বললো।” বাবা আর চাচ্চুরা কই?” লুপা মা টেবিলের উপর ডিম ভাজার প্লেট রাখতে রাখতে বললেন “সবাই তাদের কাজে চলে গেছে।” নীল চোখ তুলে তাকালো লুপার মায়ের দিকে। উনি সবুজ রংয়ের সেলুয়ার কামিজ পড়েছেন। বড় চুল গুলায় বেণি করা। চেহারায় বয়সের কোনো চাপ নেই। উনাকে দেখে লুপার মা বলে মনে হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে লুপার বোন। উনি খুব ছটফটে স্বভাবের। নিজের প্রশংসা শুনতে উনার অনেক ভালো লাগে। শাওন ও নীলকে প্লেটে ডিম ভাজা তুলে দিয়ে চেয়ার টেনে তিনিও বসলেন। শাওন মুখে তুলতেই উনি প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন “ডিম ভাজা কেমন হয়েছে? একদম পার্ফেক্ট তাইনা? আমি ভাজছি। ছোট ভাবি ভাজলে তো কেউ মুখে দিতে পারেনা। কি তিতা বাবা গ।” দিহানের মা রাগি লুকে তাকালেন। একদিন একটু লবন বেশি হয়েছে বলে প্রতিদিন এভাবে বলবে? শাওনের গলা দিয়ে খাবার নামছে না। মনে হচ্ছে সে ডিম ভাজা নয় ডিরেক্ট লবন খাচ্ছে। উনি নিজেই তিতা বানান আবার অন্যের দুষ দিচ্ছেন। নীল একটু মুখে নিয়ে তারও একই অবস্থা। চোখ বড় বড় করে দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে লুপার মায়ের দিকে তাকালো। উনি বেশ আগ্রহ নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। নীল এক গ্লাস পানি ঢেলে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে খাবার নিচে নামালো। তারপর লুপার আম্মুকে বললো “”
_ওয়াও এতো মজার ডিম ভাজা আমার চৌদ্দ গুষ্ঠির মধ্যে কেউ জীবনে খায়নাই। আমিও আমার বাপের জন্মে এমন ডিম ভাজা খাইনাই। এত্ত মজা হইছে যে এই মজাটা খেয়ে আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করছে।
লুপার আম্মু অবাক হয়ে বললেন”ওমা সুইসাইড করতে ইচ্ছে করছে কেন?
_এই যে এমন খাবার আমার বাপের জন্মে খাইনাই। আজ খেলাম সেই খুশির টেলায় আরকি।” লুপার আম্মু খুশিতে গদগদ হয়ে সব ডিম গুলা তার প্লেটে তুলে দিলেন। নীল এবার কেঁদেই দিবে এমন একটা অবস্থা। দিহানের আম্মু এসে নীলের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন “লজ্জার কিছু নেই বাবা তোমার ভালো লেগেছে খাও”। নীল বললো ” না আন্টি আসলে আমার পেট ভরে গেছে।” দিহানের বড় মা এসে বললেন “ওই ছেলে চুপচাপ খাও। মাত্রই তো খেতে বসলা এখন পেট ভরলো কেমনে?” নীল বললো “আসলে ডক্টর আমাকে ডিম খেতে নিষেধ করেছে।” লুপা বললো “নীল ভাইয়া একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না খেয়ে নিন।” লুপার মা মুখ মলিন করে বললেন “ও বুঝেছি মজা হয়নি তাইনা?” নীল এবার মহা বিপদে পড়লো। একটু পরোটা ছিড়ে মুখে নিলো। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে তাই একটু ডিম ভাজাও নিলো। নীল গিলতে পারছে না বার বার কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে শাওনের দিকে তাকাচ্ছে। নীলের এমন কান্ডে দিহান বুঝে গেলো ব্যাপারটা কি।তাই সে লুপার আম্মুকে বললো” ছোট আম্মু তুমি এতো কষ্ট করে বানালা তুমি খাবানা?” পুরো একটা ডিম ভাজা হাতে নিয়ে বললো “এই নাও হা কর।” বলেই উনার মুখে ডিম ভাজা ঢুকিয়ে দিলো। উনি মুখে নিয়েই মারবেলের মতো চোখ বানিয়ে মূর্তির মতো বসে থাকলেন। রুহান বললো “আম্মু সব পার্ফেক্ট তো?” উনি মুখ চেপে উঠে দৌড় মারলেন। দিহানের মা ও তার বড় মা কিছুই বুঝলেন না। লুপা হাসতে হাসতে বললো “এখন আব্বু থাকলে আম্মুকে ইচ্ছামত পঁচাতো।আমি তো আম্মু বানিয়েছে শুনেই আর খাইনি। একমাত্র বড় আম্মু ছাড়া কেউ ভালো ভাবে ডিম ভাজতে পারেনা।
নাস্তা করে তিনজন বাইরে বেরিয়ে গেলো। আর বিকালে আসলো বাসায়। ততক্ষণে পুরো বাসা ভরে গেছে মেহমানে। তিন বন্ধু মিলে বসলো বাগানে। দিহান চোখ বন্ধ করে দুলনায় বসে আছে। শাওন একটা বল নিয়ে পিলারে মারছে আবার বেক করছে তো আবার মারছে। আর নীল গান গাইছে। দিহান একবার বিরক্ত হয়ে বলল “তোর গানের থেকে কুত্তার ঘেউ ঘেউ শুনতে ভালো লাগে।” নীল এসব কথা কানে নিলনা সে তার মত গান করেই যাচ্ছে।
চুমকি চলেছে একা পথে …..দিহান তর বউ আসছে।
গানের মাঝকানে নীলের এমন কথায় দিহান ধড়ফড়িয়ে উঠে কই কই বলে চারিদিকে তাকায়। যেন সে আসামি আর তাকে তাড়া করতে পুলিশ এসেছে। গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো তন্দ্রা হেলেদুলে হেটে আসছে। পিংক কালারের একটা গাউন পড়ছে এটা কাল দিহান নিজেই কিনে দিছে। তাদের বাসার সব মেয়েরা পিংক গাউন কিনেছে তাই সেও তন্দ্রাকে দিলো। ৮০কেজি মেকাপ মুখে। তন্দ্রাকে দেখে দিহান একটা সস্থির নিশ্বাস নেয়। নীলের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বললো।”
_এটা কি নীল? সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করার মানে কি?
_আমি তো সব সময় এভাবে বলি আজ নতুন নাকি?
_আগে বলতি এখন আর বলবি না নিষেধ করে দিলাম।
তন্দ্রা এসে দাঁড়ালো তাদের সামনে। ন্যাকামি করে বললো “” বেবি তুমি ওকে বকছো কেন?
_না ভাবি বকছে না। আর বকলেও তোমার এমন কথা শুনে কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
নীলের কথায় তন্দ্রা হেসে বললো ” নীল ভাইয়া তুমিও না অনেক দুষ্টু।
_হ্যাঁ ভাবি আর তুমি একদম আমার কিটক্যাট ভাতিজির মতো ও না একদম তোমার মতো করে নাকে নাকে কথা বলে।
_নাকে নাকে কথা কেমনে বলে?
_এই যে বড়রা যখন বাচ্চাদের মতো কথা বলতে চায় তখন যেভাবে কথার স্বর হয়ে যায় আরকি।
_মানে?””” দিহান নীলকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললো ওই যা তো তোরা। নীল শাওন চলে গেলো। তন্দ্রা দিহানের গলা জড়িয়ে ধরলো। দিহান নিজেকে ছাড়িয়ে বললো “
_তন্দ্রা সব সময় ঘেঁষে লেপ্টে থাকতে চাও কেন এগুলা আমার পছন্দ না।
_হুহ্। নিরামিষ। মাঝে মাঝে আমার কি মনে হয় জানো? আমার প্রতি তোমার কোনো ফিলিংস ই নাই। ফিলিংস থাকলে এভাবে আমার ছোঁয়াতে বিরক্ত হতানা।
_চুপ কর। অলওয়েজ ঝগড়া করনা। ফিলিংস না থাকলে কি বিয়ে করতে চাইতাম?
_ ওকে বাদ দাও। এখন আস আমার সাথে আমার একটা কাজ আছে।
_কি কাজ? আর কই যাবো?
_বাবু আমি তো হোস্টেলে থাকি জানই তো। আমি বাসায় যেতে পারিনি। দেখ গায়ে কোনো অলংকার নেই। এভাবে ফকিন্নি বেশে অনুষ্ঠানে থাকব কেমনে? সবাই কি বলবে?
_গলায় এতো বড় একটা হার, হাতে এতো গুলা চুড়ি, কানে ইয়া মোটা ঝুমকা তারপরও বলছো কোনো অলংকার নেই?
_এগুলা তো নরমাল সব সময় পরি বাবু। পার্টিতেও এগুলা পরবো? তুমি কিপ্টামি করছো?
_ওকে আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি তুমি কিনে নিয়ে আস।
_তুমি যাবা না?
_দেখ বাসায় অনেক কাজ আছে বাবাও বাসায়। এখন কোথাও যেতে পারবো না। আমি টাকা বিকাশ করছি তুমি চলে যাও। “তন্দ্রা চলে গেলো। দিহান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। পিছন ঘুরতেই দেখলো দিশা আর ইশি কমরে হাত বেঁধে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে। দিহান পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে দুজন পথ আটকে ফেলে।
_কি পিলারের মতো দুইটা সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
_কাল বলেছিলাম আমায় শপিংয়ের জন্য কিছু টাকা দে। কি বলছিলি? হাতে টাকা নাই। আজ বলতে না বলতেই টাকা বেরিয়ে গেলো? (দিশা)
_টাকা আমাদের দেবে কেমনে রে? ওর তো একটা সংসার আছে বউ চালাতে হয়। আমাদের টাকা দিলে ওটারে চালাবে কেমনে? (ইশি)
_ওই তুই বউ বললি কেন? তন্দ্রা কি বউয়ের মতো স্বাংগাতিক মেয়ে?
_দেখেছিস দিশা আমি বলেছিলাম না এই মেয়েটা আমাদের দিলদারকে পাগল বানিয়ে দেবে? শুন কিসব বলছে। অলরেডি ও পাগল হয়ে গেছে।
“দিহান একবার একটা মেয়েকে পঠাতে চেয়ে ছিলো মেয়েটা দিহানের নাম ভুলে যেতো তাই দিহান না বলে দিলদার বলে ডাকতো। সেই থেকে ইশি দিশা তাকে দিলদার বলে ক্ষেপায়। দিহান দিলদার শুনেই তেজি গলায় বললো”
_ওই কংকাল,কুকুরের হাড্ডি আমারে আরেকবার দিলদার বলে ডাকবি তাহলে তর নাক কেটে কানে ঝুলিয়ে দিবো।
_ইশি চুপ কর তুই আমার কুত্তার মতো পেচা গন্ডার ভাইটাকে মোটেও দিলদার বলবি না। একবার তাকিয়ে দেখ ওরে একদম পাশের বাসার আন্টির বিড়ালের মতো লাগছে। আর তুই কিনা দিলদার বলছিস” দিহান দিশা ও ইশির দিকে তেড়ে আসলো। ওরা দুজন দু দিকে দৌড় দিলো। দিহান রুহানকে ডাক দিয়ে বললো “রুহান দিশাকে ধর” রুহান দিলো দিশার পিছনে দৌড়। দিহান দিলো ইশির পিছনে দৌড়। ইশি দৌড়ে আসলো তার মায়ের কাছে। উনি জিজ্ঞেস করলেন “কিরে কি হইছে দৌড়াস কেন?” ইশি শুধু দিলদার বললো বাকিটা বলতে পারলো না দিহান দৌড়ে কাছে চলে আইছে দেখে দৌড় মারলো। দিহান বললো “বড়মা ওরে ধর।” ইশি ততক্ষণে দূর চলে গেছে দিহানও পিছু নিল। দিহানের বড় মা ইশিকে উদ্দেশ্য করে চিল্লিয়ে বললেন “ওই দিলদার কি বললি বুঝিনি।” কথাটা এমন শুনালো যেন দিহান কি বলছে তিনি বুঝেন নি। দিহান দৌড় তামিয়ে তার বড়মার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে গজগজ করতে লাগলো। তিনি আবারও বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলেন “কিরে দিলদার কি হইছে বুঝিনি?” রাগে গিজগিজ করতে করতে দিহান উপরে চলে গেলো। একবার ইশিকে হাতে পেয়ে যাক ওকে বুঝাবে মজা।
সন্ধ্যার দিকে সবাই রেডি হতে লাগলো। তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। কেউ নিজের কাজ, গল্প, সাজগোছ ছেড়ে উঠল না। দুবার কলিং বাজতেই দিহান গিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলেই দেখল অরিন দাঁড়িয়ে আছে। দুজন দুজনকে দেখে একসাথে আহহহহহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।
চলবে….।
দিহানদের এসব ঝগড়া আপনার কাছে যদি ন্যাকামি মনে হয় তাহলে দয়া করে ইগনোর করবেন। আমরা সব কাজিনরা মিলে অলওয়েজ এমন ঝগড়া করি তাই এগুলা আমার কাছে নরমাল বিষয়।
Image may contain: 1 person, shoes and text
_তুমিইইইইই?
_আপনিইইইইই? আপনি এখানে কি করছেন?
_আগে বল তুমি এখানে কেন? এখন বউয়ের অধিকার চাইতে আমার বাসা পর্যন্ত চলে এসেছো?
_আপনার বাসা মানে এটা আপনার বাসা?
_এই মেয়ে একদম ড্রামা করবে না। তোমাকে আমি হারে হারে চিনি। তুমি জেনে শুনেই এখানে এসেছো।
_কি হয়েছে?” পিছন থেকে লুপার গলা শুনে পিছন ঘুরে তাকালো দিহান। দিহান একটু সরায় দরজার ওপাশে দাঁড়ানো অরিনকে দেখতে পেল লুপা। অরিনকে দেখা মাত্রই দৌড়ে এসে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো “দোস্ত তুই এসেছিস? জানিস আমার কতটা মন খারাপ হয়েছিল তুই আসবি না শুনে?” লুপার কথায় কিঞ্চিৎ হাসে অরিন। দিহান হা হয়ে লুপা আর অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। লুপা দিহানকে বলল “ভাইয়া বলেছিলাম না আমার একটা ফ্রেন্ড আসবে এটাই সে।” লুপার কথায় দিহান আবারও শকড খেল। তাহলে তো এই মেয়ে আগে থেকেই দিহানকে চিনত? লুপা অরিনকে ভেতরে নিয়ে আসলো। দিহান এখনো শকডের উপর আছে। এই মেয়েটা কোনো বড়সড় জাল পাতছে যার ফাঁদে তারা সবাই পড়বে। দিহানের মাথায় এখন একটাই বিষয় ঘুরছে। কি কারণে এই মেয়েটা তাকে বিয়ে করছে?
লুপা অরিনকে নিয়ে আসলো উপরে। দিশা, দিয়া,ইশি রেডি হচ্ছিলো। লুপা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো”
_হাই গাইজ শি ইজ মাই বেস্টফ্রেন্ড অরিন” লুপার কথায় সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে অরিনকে। অরিন গ্রিন কালার একটা ড্রেস পড়েছে। ড্রেসটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা একেবারে কম দামি কিন্তু নতুন। পায়ে দু’শটাকা দামের একটা জুতা। হাতে গলায় কানে কিছুই নেই। হাতে একটা শপিং ব্যাগ। মনে হয় লুপার জন্য কিছু আনছে। দিশা কিঞ্চিৎ হেসে বললো”
_ভালো আছ অরিন?
_ জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
_আমিও ভালো।
_বস এসে এখানে। তোমার কপালে রক্ত জমে আছে মনে হচ্ছে কি হয়েছে? [ইশি]
_মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম।” সবার সাথে পরিচয় করিয়ে লুপা অরিনকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তার বড় আম্মু মেজো আম্মু ও তার আম্মু সবাই একটা রুমে সোফায় বসে ছিল। সাথে অনেক মহিলাও ছিলেন। লুপা অরিনকে নিয়ে সেখানে আসলো। ওরা এসে দাঁড়াতেই সবাই তাদের দিকে তাকালো। লুপা বললো”
_আম্মু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অরিন।
_ ভালো আছ অরিন?
_জ্বি খালা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো তো?
পাশ থেকে একজন মহিলা জোরে হেসে উঠলেন। অরিন বোকা ভনে গেল। হঠাৎ করে এভাবে হাসার কারণ কি হতে পারে তার মাথায় আসেনা। হাসি থামিয়ে মহিলা বললেন”
_খালা বলে বেশির ভাগ বুয়ারা ডাকে তাই এই ডাক টা যে কারও মুখে শুনলে আমার তাকে বুয়া বুয়া লাগে।” দিহানের আম্মু উনাকে কিছু বলতে চান তার আগে লুপার আম্মু হাত চেপে ধরে ইশারায় বাঁধা দেন। ঝামেলা করে লাভ নেই এদের সাথে। দিহানের আম্মু লুপার আম্মুকে কানেকানে কি যেন বললেন। লুপার আম্মু দাঁড়িয়ে বললেন “আপনারা বসেন আমি একটু আসছি। লুপা তুই আমার সাথে আয়। অরিন তুমি একটু এখানে থাক মা লুপার সাথে আমার কথা আছে।” অরিন দাঁড়িয়ে থাকলো। লুপাকে নিয়ে তার আম্মু চলে গেলেন। অরিনকে দিহানের আম্মু বসতে বললেন অরিন বসলো না। টি-টেবিলের ওপর নাস্তার বাটি রাখা। মনে হয় উনাদের নাস্তা দেওয়া হইছিলো। মুরুব্বি টাইপ একজন মহিলা অরিনকে বললেন “এই মেয়ে এগুলা একটু কিচেনে রেখে আস তো।” দিহানের আম্মু ও তার বড়মা বাঁধা দিলেন। অরিন বললো “জ্বি না আন্টি। ঠিক আছে আমি রেখে আসতে পারবো।”
অরিন বাটির ট্রে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। এসে পড়লো মহা বিপদে। কিচেন কোন দিকে সে জানে না। অরিন চারিদিকে চোখ বুলালো। সব দিকে চোখ বুলিয়ে অরিন একটা জিনিস আবিষ্কার করলো। এখানে একটা মানুষও গরিব নাই। সেটা তাদের পোশাক দেখেই বুঝা যাচ্ছে। অরিন একবার নিজের জামার দিকে তাকালো। তারপর আবার সবার দিকে তাকালো। সবাই কতো দামি দামি জামা পড়েছে আর সে? ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটু এগুয় । কাকে জিজ্ঞেস করবে কিচেন কোন দিকে। নার্ভাস ফিল করছে সে।
_তুমি আসবা বলে শপিং করতে গেলা। আর এখন বলছ তুমি আসতে পারবা না?” এমন কথা কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকাল অরিন। কেউ একজন দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। অরিন একটু এগিয়ে গিয়ে বললো “এক্সকিউজ মি”। দিহান পিছন ঘুরে তাকাল। অরিনকে দেখে সাথে সাথে ফোন টা কেটে দেয়। অরিন এসেছে থেকে টেনশনে তার জান বেরিয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ ধরে সে অরিনেকে হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছে। অরিনের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে তার পাশে চেয়ারের ওপর রেখে অরিনের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে একটু আড়ালে গেলো। অরিনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো ” সত্যি করে বল এবাড়িতে আসার উদ্দেশ্য কি?কার লোক তুমি? কে পাঠিয়েছে তোমায়?” অরিন নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করছে। ছটফট করতে করতে বললো “ছাড়ুন আমায় নয়তো চিল্লিয়ে সবাইকে জড়ো করবো।” দিহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো “অনেক হুমকি দিয়েছ আমায়। আর না। কি ভাবো তুমি আমি বুঝিনা? তুমি যে অনেক বড় একটা প্ল্যান করে আছ আমাদের পরিবারকে বরবাদ করতে তা আমি বুঝে গেছি। বল কার হয়ে কাজ করছো?
_ছাড়ুন আমায় নয়তো সত্যি সত্যি চিল্লাব।
_চিল্লাও যত খুশি চিল্লাও। মান সম্মানের ভয় করে আমি আমার নিজের পরিবারকে বরবাদ করতে পারব না।
_ছেড়ে দিন প্লিজ হাতে খুব লাগছে বিশ্বাস করুন।
_ তোমার মতো স্বাংগাতিক মেয়েকে বিশ্বাস করতে বলছো?
_আমি মিথ্যে বলছি না।
দিহান অরিনের হাত আরও জোরে চেপে ধরলো। অরিন ব্যথায় “আহহহ” বলে আর্তনাদ করে উঠলো।
দিহান বললো ” এসব নাটক আমার সামনে করবা না। ভালই ভালই বল কার হয়ে তুমি কাজ করছ? আমার পরিবারের সাথে তোমার কিসের শত্রুতা?
_আগে ছাড়ুন তারপর বলছি।
_আমায় বোকা পাইছ? তোমায় ছেড়ে দেই আর তুমি দৌড়ে পালাও?
_আপনি তো বোকাই। বোকা না হলে এতো বড় ছেলের পেন্টের চেইন খোলা থাকে?” দিহান তৎক্ষনাৎ অরিনকে ছেড়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে অণ্ডকোষ বরাবর চেপে ধরলো। অরিন ভোঁ মেরে দৌড়ে পালাল। দিহান হাত সরিয়ে তাকিয়ে দেখল তার চেইন লাগানোই আছে খোলা নয়। দিহান বিরবির করে বলল “এতো সহজে আমাকে বোকা বানিয়ে গেল? এর বদলা তো আমি নিবই নিব?
লুপার খুব গর্ব হচ্ছে নিজের মায়ের প্রতি। ওর মা ওকে ঢেকে এনে কত সুন্দর করে বলে গেলেন। অরিনকে তোর একটা ভালো ড্রেস পড়তে দে। সাথে একটু সাজিয়েও দিবি। মানুষজন কেউ কিছু বলে ফেললে পরে মেয়েটা লজ্জা পাবে।” লুপা অরিনকে খুঁজে পাচ্ছে না অরিন কই গেল কে জানে। অরিনকে খুঁজতে এসে তার চোখ আটকে গেল নীল পাঞ্জাবী পড়া শাওনের দিকে। কত সুন্দর লাগছে তাকে। লুপা এমন ভাবে শাওনের দিকে তাকাচ্ছে যেন চোখ দিয়ে শাওনকে গিলে খেতে পারলে খেয়ে ফেলত। শাওনের ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। লুপার ইচ্ছে করছে শাওনকে ধরে গিয়ে দু’য়েকটা চুমু দিয়ে আসতে। লুপা এক ধ্যানে শাওনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কল্পনায় হারিয়ে গেছে। শাওনের সাথে নদীতে নৌকায় চড়ছে সে। শাওন বৈঠা বাইছে লুপা তার কোলে বসে সেও বৈঠা ধরে আছে। শাওন মাঝে মাঝে তার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করছে।
শাওনকে নিয়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিল লুপা হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে সে পড়ে যেতে লাগে কিন্তু পড়ে না তার আগেই তাকে ধরে ফেলে অরিন। অরিনের ধাক্কা খেয়ে হুস আসে তার। সামনে তাকিয়ে দেখল শাওন নাই চলে গেছে। অরিনকে বলল”
_কুত্তি সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছি কই ছিলি তুই?
_এইতো একটু এদিকেই ছিলাম। তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি অথচ তুই শুনছিস না।
_খেয়াল করিনি চল আমার সাথে।
_কই?
_আগে আয়।” ” লুপা অরিনকে টেনে নিয়ে গেল তার রুমে। অরিনের হাতে একটা ড্রেস ও কিছু গহনা দিয়ে বলল। “এগুলা পরে আয় তারাতাড়ি একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে ।” অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। সে অপমান বোধ করছে। চোখের কোনে জল জমে গেল। লুপা বুঝে গেল অরিন বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি তাই সে অরিনের হাতে হাত রেখে বলল “তুই কি ভাবছিস? এই যে এত এত মেয়ে এসেছে এখানে সবাই ওদের জামা পড়ে আছে? উহু। অর্ধেক মেয়েদের আমি গিফট করেছি।(মিথ্যে বলল) তুই না পড়লে কিন্তু আমি সত্যি কষ্ট পাব।” লুপা অরিনকে টেনে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পরে অরিন ওয়াসরুম থেকে বের হল। মেরুন রঙের লং ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে অরিনকে। লুপা অরিনকে সাজিয়ে দিল। সাজানোর পরে লুপা অরিনের দিকে হা করে তাকিয়ে তাকল। অরিনকে চিনাই যাচ্ছে না। অবাকের স্বরে লুপা বলল
“ওরে অরিন তোরে ত একদম পরি লাগছে রে। কি সুন্দর টানা টানা চোখ তোর। পাতলা ঠোঁট,সরু নাক,তোকে একদম নাইকাদের মত লাগছে।” অরিন বলল “তোর গ্যাস দেওয়া শেষ হলে আমায় ছাড় এবার।” লুপা অরিনকে নিয়ে বাইরে চলে আসলো। একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হল। দিশা ইশি লুপাকে টেনে নিয়ে গেলো। অরিন একা একটা কোনে দাঁড়িয়ে থাকলো। দূর থেকে দেখতে লাগলো কতো সুন্দর একটা পরিবার। সবার মুখে খুশির ঝলমলে ঝিলিক। লুপা কেক কেটে সবার আগে তার বড় আব্বু ও বড় আম্মুকে খাওয়াল। তারপর একে একে তার পরিবারের সবাইকে। লুপা অরিনকে ডাক দিল অরিন মাথা নেড়ে বুঝাল সে এখানেই ঠিক আছে। সবাইকে কেক দেওয়া হল । লুপা অরিনের জন্য একপিচ কেক এনে বললো “নে হা কর।” অরিন ছোট এক বাইট খেল। তারপর লুপার দিকে বারিয়ে দিল লুপা এক বাইট নিল। লুপা কেক মুখে ঢুকাতেই শাওন বলল “আমার নজর লাগছে তোমার ডাইরিয়া হবে লুপা।” লুপা বমির মত করে বলল “ওয়াক”। নীল শাওনকে বললো ” দোস্ত তুই বললি ডাইরিয়া হবে এখন তো প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে” লুপা রাগে হাতের অবশিষ্ট কেক টুকু নীলের মুখে মাখিয়ে দিয়ে অরিনকে নিয়ে কটকট করে চলে গেল। নীলের চোখ মুখ সব কেক দিয়ে লেপে আছে কেক ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শাওন তারাতাড়ি ক্যামেরা অন করে ভিডিও করছে আর হাসছে। দিহান এসে নীলকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে “আহহহহহহ” শাওন আরও জোরে হেসে উঠে। দিহান বলে “এইটা কে?” বলেই জোরে সেও হেসে উঠে। তারপর নীলকে বলে “নীল তোকে একদম বিলাইর মত লাগছে ভাই বিশ্বাস কর।” শাওন হাসতে হাসতে বলল “কেক এর হলুদ অংশ টুকু দেখে মনে হচ্ছে কেউ এর মুখে টয়লেট সেরে দিছে।” নীল এবার ক্ষেপে গেলো। শাওনকে ধরে তার মুখ থেকে শাওনের মুখে মুখ লাগিয়ে ঘঁষে ঘঁষে কেক লাগাতে লাগলো। শাওন বার বার মুখ সরিয়ে নিচ্ছে নীল দুহাতে চেপে শাওনের মুখ এনে তার মুখ লাগিয়ে ঘঁষা দিচ্ছে। দিশা আর ইশি এসে জিজ্ঞেস করল “ভাইয়া কি হইছে?” দিহান বলল “নীল শাওনকে লিপকিস দিতে চাচ্ছে।” দিহানের কথা শুনে দিশা আর ইশির চোখ কপালে উঠে গেল। ইশি মুখ বাকিয়ে বলল “ছিঃ নীল ভাইয়া একজন গে?” কথাটা নীলের কানে যেতেই নীল থেমে গেল। রক্তিম চোখে ইশির দিকে তাকাল। দিশা বলল “নীল ভাইয়া তুমি শাওন ভাইয়াকে রেপ করতে চাইছ? ছিঃ।” দিশা কথাটা জোরে জোরে বলছিল সেটা তাদের বড়মার কান পর্যন্ত পৌছায়। উনি এসে বলেন “কিরে কে কাকে কি করতে চাইছে?” ইশি বলল ” আম্মু নীল ভাইয়া শাওন ভাইয়াকে রেপ করার চেষ্টা করছে।” উনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। নীলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন নীল তার রক্তিম চোখে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করছে। উনি ইশিকে বললেন “
_এসব কি বলছিস এসব হয় নাকি?
_আম্মু নীল ভাইয়া গে।
_গে কি?
শাওন আর দিহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দিশা তার বড় মাকে নিয়ে চলে আসল। নীলকে সে কিছুতেই তার পরিবারের কাছে খারাপ করে তুলে ধরতে পারবে না। নীল যেমনই হোক নীলের সম্মান টা তার কাছে অনেক। সে যে সেই ছোট থেকে নীল কে ভালোবাসে। শুধু বলতে পারেনা নীলের সামনে দাঁড়িয়ে। কারন নীল তার ভাইয়ের বন্ধু।
কিছুক্ষণ পরে সব মেহমান রা একে একে চলে যায়। অরিন লুপার থেকে বিদায় নেয়। লুপা কিছুতেই তাকে ছাড়বে না। অনেক বুঝিয়ে লুপাকে মানাল। আজ না গেলে তার সৎ মা তাকে কেটে ফেলবে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসল। গেটের বাইরে পা রাখতেই তার কানে এল,,,,,,,,,,,,।
চলবে….।
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
Image may contain: 2 people
মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে পেট পুড়ে খেয়েও গেলা আবার ফ্রিতে একটা জামাও পেলা।” এমন তীক্ষ্ণ কথা কানে আসতেই পা থেমে গেল অরিনের। পিছনে থাকিয়ে দেখল দিহান পকেটে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটায় অরিন শুধু অপমানবোধ করল না কষ্টও পেল অনেক। ভিতর ফেটে কান্না আসছে তার। সত্যিই তো মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে দাওয়াত খেল আবার সাথে জামাও একটা নিল। কতবার করে লুপাকে বলছিল আমি নিবনা ড্রেস টা। লুপা রাগ কান্না করে দেয় তাই বাধ্য হয়ে সে ড্রেসটা নেয়। দিহান এগিয়ে এসে অরিনের সামনে দাঁড়াল। তারপর অরিনকে বলল”
_তোমাকে কেন জানি আমার কাছে এরকম ড্রেসেও ক্ষেত ক্ষেত লাগছে। আচ্ছা তুমি কি বস্তিতে থাক?
_,,,,,,,(নিশ্চুপ)
_যাক ভাল হয়েছে দিপা তোমাকে একটা ভাল ড্রেস পড়তে দিয়েছে। নয়তো অনুষ্ঠানের সুন্দর্যই নষ্ট হয়ে যেত। যা পড়ে আসছিলা।”
দিহানের সব কথা গিয়ে অরিনের কলিজায় বিষাক্ত তীরের মতো লাগছে। অরিন ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চেষ্টা করছে। দিহানের খুব মজা লাগছে অরিনের এমন বিষাদময় চেহারা দেখতে। তার প্রতিশোধ নিতে পারছে ভেবে আরও শান্তি লাগছে। অরিন নিজেকে অনেক কষ্ট করে সামলিয়ে বলল”
_কে বলেছে আমি ফ্রিতে ড্রেস পেয়েছি? এটা আমার শশুড় বাড়ি না? এই বাড়ির সব কিছুর উপর আমার হক আছে। এই ড্রেসটার উপরও আমার হক ছিল।
_হা হা হা তোমার মত একটা বস্তির মেয়েকে এই বাড়ির বউ বানাব আমরা?
_অলরেডি তো বানিয়েই দিছেন। এখন যদি আমি আপনার বাড়ির মানুষদের বলি, আপনি আমায় বিয়ে করে বউ বলে অশিকার করছেন, তাহলে কিন্তু,,,
_ওয়েট ওয়েট তুমি কি এখন আমাকে এই ভয় দেখাচ্ছ যে আমার বাড়ির সবাইকে এবিষয়ে বলে দিয়ে আমার ঘরে উঠবে? হা হা হা তাহলে শুনে নাও। তোমাকে আমার পরিবারের কেউই মানবে না। কজ তুমি কোনো দিকেই আমার যোগ্য নও। না তোমার ফ্যামিলি স্টাটাস না তোমার সুন্দর্য না তোমার চলাফেরা। কোনো কিছুই আমার ধারে কাছেও আসে না। তুমি জান আমি যাকে ভালবাসি তার ফ্যামিলি স্টাটাস কেমন? অনেক ভালো পরিবারের মেয়ে সে। তোমার মতো মিডেল ক্লাস না। আর সে দেখতেও অনেক সুন্দর সমাজে কিভাবে চলতে হয় সেটাও তার জানা আছে। তোমার মতো ফকিন্নি বেশে কোথাও যায়না।”
অরিনের চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলো না। গাল বেয়ে দু’ফুটা জল গড়িয়ে পরলো। মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। অরিনের কান্না দেখে দিহানের বুকের ভেতর মুচড় দিয়ে উঠে। অরিনের কান্না দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন? সে তো এটাই চেয়েছিল। অরিনকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো এতটা কথা বলল। অরিন কষ্ট পেয়েছে তাহলে সে কেন খুশি নয়? অরিন চোখের পানিটা মুছে চলে যেতে লাগে। দু এক কদম গিয়ে থেমে যায়। পিছন ঘুরে দিহানকে বলে “
_তিনটা জিনিস কখনো ধরে রাখা যায়না। টাকা,সুন্দর্য,সম্মান। এই তিনটা জিনিস তুচ্ছ কারনেও হারিয়ে যায়। আজ আছে তো কাল নেই। তাই অহংকার করবেন না। অহংকার সৃষ্টিকর্তার চাদর। উনার চাদর নিয়ে টানাটানি করলে উনি বরদাশ করেননা সব পতন করে দেন।”
কথাগুলা বলেই অরিন চলে যেতে গিয়ে আবারও থেমে যায়। তবে এবার চোখগুলা মারবেলের মতো করে বড় বড় করে থামছে। তৎক্ষনাৎ পিছন ঘুরে তাকাল দিহান এখনো দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। অরিন বলল
_আপনি দেখছি সত্যি সত্যি বোকা। পেন্টের চেইন খোলা কেন?” দিহান রেগে গেল। এই মেয়েটা পেয়েছে কি সব সময় শুধু এই কথা বলে তাকে বোকা বানাতে চায়। রাগে নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো “
_হ্যা খুলে রাখছি তুমি দেখবা বলে।
_ছিঃ কি জঘন্য কথাবার্তা বলেন আপনি। চেইন লাগান। না জানি কার কার সামনে এভাবে ঘুরে বেড়াইছেন।
_তুমি একটা সেই লেবেলের স্বাংগাতিক মেয়ে তোমাকে আমি হারে হারে চিনি। তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে কর তাইনা? তাহলে তোমার থেকে দ্বীগুন চালাক আমি। এসব বলে বোকা বানাতে পারবা না আর।
_আপনি চালাক। আপনার দাদা চালাক। দাদার দাদাও চালাক। এবার প্লিজ চেইন টা লাগান।
_বললাম না খুলে রাখছি। আমি ইচ্ছে করে এভাবে রাখছি। আমার শখ লাগে খুলে রাখতে তাই রাখছি। তাতে তোমার কিছু আসে যায়?
অরিন ফোনটা বের করে বলল ” আমি কিন্তু আপনার ছবি তুলে নেটে ছেড়ে দিব” দিহান দু পা ফাক করে,দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল তুল না তুল আমি ভয় পাই নাকি?” অরিন একটা ছবি তুলল। তারপর চলে গেল। দিহান পিছন থেকে চেচিয়ে বলল “আরে যাও যাও তোমার মত মেয়েকে আমার চিনা আছে। একবার ধোকা দিছ এটাই অনেক। দিহান চৌধুরীকে বার বার ধোকা দেওয়া সহজ কথা নয়।”
দিহান রুমে চলে আসল। রুমে আসতেই তন্দ্রার কল এল। তন্দ্রার সাথে কথা বলে বলে জামা চেঞ্জ করে খাটে শুয়ে পরল। সে খেয়ালই করেনি যে সত্যি সত্যি তার চেইন খুলা ছিল।
দিশা, ইশি, শাওন,নীল,লুপা ছাদে বসে গল্প করছে। রুহান আর দিয়াও ছিল ওরা চলে গেছে একটু আগে। এখানে এই পাচঁটা মানুষের মধ্যে কেউই ভেতর থেকে সুখি নয়। সবারই ভেতরে ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণা। নীল লুপাকে,লুপা শাওনকে,শাওন দিশাকে,দিশা নীলকে ভালোবাসে।
এরা কেউ জানেনা তারা যাকে ভালোবাসে সে মানুষটা কাকে ভালোবাসে। শুধু ইশি জানে সে যে মানুষটাকে ভালোবাসে সেই মানুষটা কাকে ভালোবাসে। কারণ ইশি যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ নয়। তারই আপন চাচাতো ভাই দিহান। সেই ছোট্ট থেকে ভালোবাসে দিহানকে শুধু মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি কারন দিহান তাকে সবসময় বোনের চোখে দেখেছে। দিহান আর তন্দ্রার সম্পর্ক যখন সবাই মেনে নেয়নি তখন দিহান এসে দিশা আর ইশির হেল্প চেয়েছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ের ঘটকালি নিজে করা কতটা বেদনাদায়ক সেটা সে তখন বুঝেছিল।
সবাই চুপচাপ বসে ছিল। সবার নিরবতা ভেঙে লুপা বলল “শাওন ভাইয়া আমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা গান গেয়ে শুনান না প্লিজ।” শাওন কিছু বলার আগেই নীল বলল “আমি শুনাচ্ছি”।
লুপা বলল “আমার না হার্টঅ্যাটাক করার কোনো শখ নেই। আপনি চুপচাপ বসে থাকুন। শাওন ভাইয়া প্লিজ একটা গান গান্না প্লিজ।
_ওকে গাইব তবে আমার সাথে যে কাউকে গাইতে হবে।
_আমি আছি আমি আছি চিন্তা করিস না। [নীল]
_আপনাকে না আমি নিষেধ করছি তারপরও আপনি বেহায়ার মত গাইতে চান কেন?
_তুমিই বা বেহায়ার মতো বারবার নিষেধ করেছো কেন?
_কারণ আপনার কাউকা গান শুনে আমি অজ্ঞান হতে চাইনা।
_লুপা চুপ কর তুই। নীল ভাইয়া তুমিও গাও ওর কথা কানে নিওনা।[দিশা]
_ওরে দিশা উম্মম্মমা।(নীল ফ্লাইং কিস দিল। দিশা লজ্জায় লাল হয়ে গেল)
_ওকে ওকে স্টার্ট কর। [দিশা]
_ওয়েট আগে দিহান আসুক। আমি দিহানকে কল দিচ্ছি।”ইশি ফোন হাতে নিয়ে দিহানের নাম্বারে ডায়েল করল। দিহানের নাম্বার ওয়েটিং দেখাচ্ছে। ইশি রাগে নাক ফুলিয়ে বলল ” ফালতু একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে আমাদের দিহানও ফালতু হয়ে যাচ্ছে। এখানে আমরা সবাই এখানে আছি আর ও ওর ন্যাকা জিএফয়ের জন্য এসবের ধারে কাছেও আসছেনা।
_একটা ভালো মেয়ে পেতাম তাহলে ভাইয়াকে জোর করে ধরিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম। এই ন্যাকা তন্দ্রাকে আমার মোটেও ভালো লাগেনা। [দিশা]
_আপু ওই যে আমার ফ্রেন্ড অরিন আছে না? ও কিন্তু খুব ভালো মেয়ে। ওকে নিয়ে আসি।
_দূর! পাগল নাকি? একদম ক্ষেত একটা মেয়ে। তারপর অতটা সুন্দরও না।ভাইয়ার সাথে একদম মানাবে না। আমাদের বাড়িতে এই প্রথম আসল। কিভাবে এসেছে দেখছিস? আমাদের পরিবারে এমন মেয়েকে বউ করে আনলে লোকে কি বলবে? এই মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়া সমাজে চলবে কি করে?[দিশা]”
“দিশার কথা শুনে লুপার মুখ কালো হয়ে যায়। অরিনকে নিয়ে এরকম কথা শুনতে তার খারাপ লাগছে। লুপার গোমড়া মুখ দেখে নীলের খারাপ লাগলো তাই সে দিশাকে বলল”
_দিশা কাউকে নিয়ে এভাবে কিছু বলা ঠিক না। হ্যা বাড়ির বউ দেখতে অসুন্দর হলে লোকে নানান কথা বলে। কিন্তু বাড়িতে যখন একটা খারাপ বউয়ের কারণে অশান্তি নেমে আসে তখন কিন্তু সমাজ সেই অশান্তির ভাগ নিতে এগিয়ে আসবে না। আর রইল ক্ষেত কথাটা। আমি দেখেছি মেয়েটাকে। মেয়েটা মোটেও ক্ষেত নয় শুধু গায়ের রংটা একটু চাপা। আর টাকা না হলে কিন্তু তোমাকে আমাকে সবাইকেই ক্ষেত লাগবে। কারন মানুষের সুন্দর্য আর স্মার্টতা ফুটিয়ে তুলে একমাত্র জামা কাপড় আর কিছুই না। আরেকটা জিনিস আছে সেটা হল মানুষের সুন্দর ব্যবহার। তুমি যতই সুন্দর হও তোমার ব্যবহার ভাল না থাকলে তুমি কারও কাছে মনের মত সুন্দর নও।
নীলের কথা শুনে দিশা মাথা নিচু করে বসে থাকে। নীল আর বসে থাকেনা উঠে চলে যায় সাথে শাওন ও উঠে যায়। নীল ও শাওনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে দিশা।
চলবে….।
Image may contain: one or more people and people standing
তন্দ্রার সাথে ফোনে কথা বলছিল দিহান তখনই রুমে শাওন আর নীলের আগমন ঘটে। ওদের দেখে দিহান তন্দ্রাকে বিদায় জানিয়ে ফোন কেটে দেয়। নীল খাটের এক পাশে শাওন অন্য পাশে এসে বসল। নীল মুখটা গোমড়া করে বসে আছে দেখে দিহান তার পিঠে চাপড় দিয়ে বলল “কি ব্যাপার আমাদের নীল দরিয়ার কি হল?” নীল রাগি লুকে তাকাল। দিহান নীলের পিঠ থেকে হাত সরিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তালা দিল। শাওনকে ইশারায় বলল কি হইছে। শাওন কিছু বলল না। দিহান এবার নীলের হাতের উপর নিজের হাত রেখে বলল” দোস্ত কি হইছে? কেউ কিছু বলছে?” নীল এখনও চুপ। দিহান আরও দু’একবার জিজ্ঞেস করল। নীল দিহানকে বলল”
_আচ্ছা দিহান তুই একটা কথা বল তো তোর বোন এত অহংকারী হল কি করে? তুই আন্টি বা আংকেল তো এমন না। তাহলে ও এমন হলো কেন?
_কেন কি করছে কিছু বলছে তোকে?
_আমাকে বলেনি অন্য কাউকে বলছে। আচ্ছা দিহান তুই বল তো একটা মানুষের যদি সমর্থ থাকেনা ভাল কিছু গিফট করার বা ভাল কিছু পরার তাহলে কি সেটা তার দুষ? উপরওয়ালা তাকে গরিব দিছে সে কি করবে?
_আমি ত তোর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতেছি না বুঝিয়ে বল।
_আচ্ছা বলতো লুপার ফ্রেন্ড যে এসেছিল ও দেখতে কেমন?
_অরিনের কথা বলছিস?
_নাম জানিনা। আজ যেটা মেরুন ড্রেস পরেছিল ওইটা। বল ও দেখতে কেমন?
_ভালই তবে চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর।
_ও কি দেখতে ক্ষেত?” দিহান এবার নীলের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল”
_তু তুই হঠাৎ এসব কে কেন জিজ্ঞেস করছিস?
_আগে বল মেয়েটা কি দেখতে ক্ষেত?
_আমি কি জানি। আমি ওসব খেয়াল করিনা।
_আচ্ছা এটা বল ও তর বউ হলে তুই কি ওকে নিয়ে সমাজে চলতে পারবি না? মানলাম মেয়েটা দেখতে তন্দ্রার মতো সুন্দরী না। তাই বলে সে খারাপ? সে তর বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা?” নীলের কথা শুনে দিহানের গলা শুকিয়ে গেছে। তাহলে কি অরিন সবাইকে বলে দিছে তাদের বিয়ের কথা? দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল “
_বিশ্বাস কর নীল আমার কোনো দুষ নাই। সব দুষ ওর।
_দুষ যারই হোক কাউকে নিয়ে এভাবে কথা বলা ঠিক না। মানুষ যেমনই হয় সে মানুষ। তাই তাকে ছোট করে দেখার কিছুই নেই।
_ছোট করার জন্য এসব বলা হয়নি নীল এগুলা কষ্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
_তাই বলে এসব কথা বলবে?
_যদি তোর সাথে কেউ এমন করত তুই কি তার উপর ক্ষেপে থাকতি না।
_কেমন যদি করত?
_ও যা করছে?
_হ্যা সেটাই ত আমি বলছি ও কেন এটা করল। ও কি ছোট ওর মাথায় কি বুদ্ধি নাই?
_জানিস দুইবার বলেছে আমার পেন্টের চেইন খোলা। এবার বুঝ মেয়েটা কেমন নোংরা কথা বলে।
_দিশা তর সাথে এমন ফাজলামো করে?
_দিশা কি ওর মত ফাজিল?
_ওর মত মানে? কার মত?
_অ…এক মিনিট তুই কার কথা বলছিস?
_এটা তো আমার প্রশ্ন। তুই কার কথা বলছিস?
নীল দিহান দু’জন দুজনার দিকে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে। শাওন এসবের আগামাথা কিছুই বুঝতেছে না। সে দিহানকে বলল “দিহান কে তোকে দুইবার পেন্টের চেইন খোলা বলছে?” দিহান শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো “
_ক ক কই কে কে কে কেউ বলেনি।” শাওন নীল এবার দিহানের দিকে সন্দেহের চোখে তাকাল। শাওন এসে দিহানের পাশে বসল। এক পাশে নীল এক পাশে শাওন। দিহান লাফ দিয়ে উঠে বলল “দি দি দিশাকে নিয়ে আসছি আ আজ না আমাদের ট্রুথ এ এ এ এন্ড ডেয়ার খেলার কথা।” বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল দিহান। এক কথায় পালালো।
__________________
লুপাদের বাসা থেকে এসেছে দু’দিন হলো। এখন অরিনের মন থেকে মুছতে পারছে না দিহানের বলা কথা গুলা। কিভাবে লোকটা চোখে চোখ রেখে কথাগুলা বলে দিল। মনে দয়া মায়া নাই? আচ্ছা উনার জিএফ দেখতে কেমন? নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী। উনি মানুষটাই তো এত সুন্দর যে উনার সামনে সুন্দরী কারই প্রয়োজন। করুক উনি যে কাউকে বিয়ে। তাতে কি সে কি উনাকে ভালোবাসে? যে কাজটার জন্য বিয়ে করছে সেটা শেষ হয়ে গেলে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। এসব ভেবে ভেবে আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছিল অরিন। হটাৎ একটা মেয়েকে দেখে থেমে যায় সে। বয়স ৮-৯ হবে। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। পরনে হলুদ একটা ফ্রক। ফ্রকটা ময়লা হয়ে আছে। এক ধ্যানে মেয়েটা শপের দিকে তাকিয়ে আছে। অরিন একটু এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার সামনে দাঁড়াল। লাল একটা ফ্রক টাঙানো শপের ভিতর। ওই ফ্রকটার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। অরিন মেয়েটাকে বলল “এই পিচ্চি কি দেখিস এখানে?” অরিনের কথায় চমকে ওঠে মেয়েটা। তারপর হাসি মুখে বলে “আমাগো তো দেইকাই মন ভরতে অয়। আমাগো ত আপনাগো মত টাকা নাই যে কিন্না পইড়া মন ভরমু।” মেয়েটার কথা শুনে অরিনের বুকটা ছেৎ করে উঠল। অরিনের ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে কিনে দিতে কিন্তু তার হাতে মাত্র ২৮০ টাকা আছে। আর এই ড্রেসটা কম হলেও চার হাজার হবে। মেয়েটা চলে যেতে লাগল। এরই মাঝে ওই দোকানে দিহান ঢুকল। অরিন সেটা দেখে পিছন থেকে মেয়েটাকে ডাক দিল। “ওই ফুল কলি পিচ্চি।” মেয়েটা পিছন ঘুরে তাকাল। অরিন বলল “আমার সাথে আয় আমি তোকে ড্রেস কিনে দিব।” মেয়েটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো “সত্যিইইইইই।” অরিন হাতে ধরে তাকে নিয়ে শপে ঢুকল। দিহান শাড়ি দেখছে মনে হয় উনার জিএফকে গিফট দিবেন। অরিন যে দিহানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তা দিহান খেয়াল করেনি। অরিন লাল ড্রেসটা প্যাক করাল। দামও জিজ্ঞেস করল না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল”
_কত হইছে?
_পাচঁ হাজার টাকা।
_পা পাচঁ হাজার(চোখ বড় বড় করে)। ওকে ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমার স্বামীর অনেক টাকা আছে সে দিয়ে দিবে।
_উনাকে ডাক দিন। “” অরিন দিহানের হাত জড়িয়ে বলল “ডাক দিব কেন এইত আমার স্বামী”। হঠাৎ কেউ দিহানের হাত জড়িয়ে এমন কথা বলায় তাকিয়ে অরিনকে দেখে টাশকি খেল। শুকনো একটা ঢোক গিলে দোকানদারের দিকে তাকাল দোকানদার ইয়া মোটা হা করে তাকিয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে ৪৪০ এর উপরে শকড খেয়েছে দোকানদার। অরিন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল ” আমার স্বামী এক্ষনি আপনার সব টাকা পরিশোধ করে দিবে। এই উনাকে পাচঁ হাজার টাকা দাওতো।” দোকানদার দিহানকে বলল” দিহান তুই বিয়ে করে ফেলছিস?” দিহান রাগি লুকে তাকিয়ে অরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে ওখান থেকে সরে একটু আড়ালে আসল। তারপর টাস করে অরিনের গালে একটা থাপ্পড় দিল, দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল”
_ওই মেয়ে পেয়েছিস কি তুই? যখন যা খুশি তাই করবি? আমি আজই তর নামে মামলা করব। এবং আজও তোকে আমি পুলিশে ধরিয়ে,,,,,বাকিটা বলতে পারেনি দিহান তার আগেই অরিন সেদিনের তুলা পিক টা দিহানের সামনে তুলে ধরল। দিহান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সত্যি সত্যি তার চেইন খোলা ছিল। দিহান ফোন ধরতে যাবে তার আগেই অরিন ফোনটা সরিয়ে নিল। তারপর হাতে একটু থু থু নিয়ে দিহানের থেকে তিন গুন জোরে সে একটা চর মারল। মেরে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল ” উফফফ জ্বলে কেন? আপনার গাল জ্বলতেছে তো? এবার আসেন সুন্দর করে টাকা টা দিয়ে যান। নয়তো ছবিটা নেটে ছেড়ে দিতে এক মিনিটও লেট হবেনা।” বলে অরিন হাটা ধরল। দিহান তৎক্ষনাৎ অরিনের এক পা জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল “আপা। আপা গো আপনে আমার আপা লাগেন। পিকটা ডিলিট করে দেন প্লিজ। মামলা করা তো দূরের কথা আর জিবনে আপনারে মারব না আপা। আর জীবনে আপনারে তুই বলব না। পিকচার টা ডিলিট করে দেন প্লিজ।” অরিন দিহানের মাথায় হাত দিয়ে বলল। “বেঁচে থাকেন স্বোয়ামি আমার বেঁচে থাকেন। আমার সাথে উল্টা পাল্টা না করলে আমি নেটে ছাড়ব না। এবার উঠেন কেউ দেখে ফেলবে।” দিহান উঠল। অরিন আবার হাটা ধরল। দিহান খপ করে অরিনের হাত ধরে মিনতির স্বরে বলল”
_আপা দোকানদার আমার আপন মামা লাগে। উনার সামনে এমন কিছু কইরেন না প্লিজ। আমি আপনার সব কথা শুনব। যা বলবেন তাই করব।
_আপা ডাকেন কেন? আমি আপনার বইন লাগি?”” দিহান দ্রুত কয়েকবার না সূচক মাথা নাড়াল। অরিন বলল
_আমি আপনার কি লাগি?
_যম।
_কিইইইই?
_না না না আমার বোনের বান্ধবী।
_আমি জিজ্ঞেস করছি আপনার কি লাগি?
দিহান মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো হয়ে কিঞ্চিৎ স্বরে বলল “বউ”।
_হুমমমমম। এইতো বুদ্ধিমান ছেলে(দিহানের বাহুতে চাপড় দিয়ে)। মনে থাকবে তো আমি আপনার কি লাগি?
_জি।
_আজ থেকে আমি যা বলব তাই শুনবেন। আমার সাথে কোনো ধরনের বেয়াদবি চলবে না। আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলা যাবেনা। নয়তো ছবিটা এমন ভাইরাল হবে। আর হ্যা আমাকে দেখেই সালাম দিতে হবে।
_জি আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
চলবে…..।
নেক্সট না বললেও আমি নেক্সট দিব। তাই গঠনমূলক মন্তব্য করে উৎসাহ দিন।
দোকান থেকে বেরিয়ে দিহান হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তার মামাকে অরিন বলেছে সে মজা করছিল। ভাগ্যিস এটা তার ছোট মামা। যদি বড় টা হত তাহলে অক্ষরে অক্ষরে চালাকি বুঝাত। দোকান থেকে বেরিয়ে অরিন কই যেন গেছে। তাকে বলে গেছে এই ব্রিজের সামনে দাঁড়াতে তাই সে তীব্র রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পরে অরিন আসল। আজ টিউশনির টাকা দেওয়ার কথা। সেটাই নিয়ে আসল। অরিন একটা গাছের নিচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে দিহানকে ডাক দিল। দিহান ভিতুর মত হেটে অরিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।
অরিন বলল “পাচঁ হাজার টাকার জন্য খারাপ লাগছে রাইট? এবার বুঝেছেন নিশ্চয়ই? কাউকে কিছু দিতে হলে নিজের সামর্থ অনুযায়ী দিতে হয়। আমার টাকা কম ছিল তাই কম দামের জিনিস গিফট করেছিলাম। আপনার তো অনেক টাকা। আপনি নিশ্চয়ই কম দামের জিনিস কাউকে গিফট করবেন না। তাই দামি টা করালাম। এটা আপনি প্রতিশোধও বলতে পারেন। আবার এটা আপনি দান হিসাবেও ধরে নিতে পারেন। কাউকে কিছু বলতে তো আপনার মুখে বাধেনা। আপনি নিশ্চয়ই এটাও বলে দিবেন এই মেয়েটা এই ড্রেস পরার যোগ্যতা রাখে না। তাহলে বলে দেই। সে গরিব হতে পারে তার ইচ্ছে ছোট নয়। এই ড্রেসটা পড়তে তার ইচ্ছে হয়েছে। এখন যদি এটার বদলে হাজার টা ড্রেসও পায় এটার জন্য তার একটা আক্ষেপ থেকে যাবে। হ্যা এই টাকা দিয়ে তাকে অনেক কিছু দেওয়া যেত। কিন্তু সেটা কতদিনের জন্য? বড় জোর পাচঁ ছয় মাস সে সেটা ইউজ করত। কিন্তু এই যে এই ড্রেস টা এটার কথা তার আজীবন মনে থাকবে। কারন এটা তার স্বপ্নের ড্রেস ছিল। শখের জিনিস যতটা আনন্দ দেয় ততটা কিন্তু অন্যটা দেয়না আমাদের। যদি কোনোদিন পারি তো আপনার টাকা টা দিয়ে দিব। আপাতত এটা রাখেন।
অরিন এক হাজার টাকার দুইটা নোট বারিয়ে দিল দিহানের সামনে। দিহান বলল “
_এটা কি?
_আপনার থেকে দু’হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম সেটা।
_থাক লাগবে না। ওটা আপনি নিয়ে নিন।
_জি না আমি অন্যের টাকায় চলিনা। যদি চলতাম তাহলে মানুষের বাড়িতে ফকিন্নি বেশে যেতাম না।
কথাটা শুনে দিহানের খারাপ লাগল। মেয়েটাকে সেদিন এতোগুলা কথা বলা ঠিক হয়নি। মেয়েটার গলা অন্য রকম শুনাচ্ছে। মনে হচ্ছে কথাটা বলতে গিয়ে তার কান্না পাচ্ছে। দিহান বলল “
_আসলে হঠাৎ করে আপনি আমার সাথে যা করলেন সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তাই মনে জমা রাগ আপনার উপর ঝাড়তে গিয়ে আপনাকে এত গুলা কথা বলে দিছি। আমি এগুলা আপনাকে মন থেকে বলিনি। কষ্ট দিতে বলছি।
_জি জানি। এবার টাকা টা নিন।
_থাক ওটা লাগবে না।
_আপনি কি আমার সাথে বেয়াদবি করছেন?
দিহান তৎক্ষনাৎ টাকা টা হাতে নিয়ে বলল “
_না না না নিচ্ছি তো। আমি কেন আমার দাদাও আপনার সাথে বেয়াদবি করবে না।
_গুড বয়। আমি যদি আপনার উপর অধিকার কাটাতাম। বউয়ের দাবি করতাম। তাহলে আপনি যা করতেন সয্য করে নিতাম। এভাবে কিছু করলে তো আমি সয্য করব না। অবশ্যই তার শাস্তি দিব। কখনো বেয়াদবি করার চেষ্টা করবেন না। বেয়াদবি করবেন তো আজ যা হল তার থেকে দ্বীগুন কিছু হবে।আমি এখন যাচ্ছি। গুড বাই।
অরিন যাওয়া ধরল। দু’কদম এগুতেই কানে এল”
_অসভ্য মেয়ে একটা যা না। তরে ধরে রাখছে কিডা?
অরিন রক্তিম চোখে পিছন ফিরে তাকাল। দিহান কথাটা বিরবির করে বলেছে। অরিন শুনে ফেলবে বুঝেনি। শুকনো একটা ঢোক গিলে দিল এক দৌড়। দৌড়ে পালিয়ে গেল। আর জীবনে এই মেয়ের সামনে আসবে না সে। নয়ত তার অবস্থা শেষ করে দিবে।
অনেক জায়গা দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে হাটুতে ভড় দিয়ে হাপাতে লাগল। তার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা মেয়ে তাকে বিয়ে করল। অথচ কখনো বউয়ের অধিকার চাইল না? কি চায় এই মেয়েটা? নিশ্চয়ই এই বিয়ের পেছনে কোনো বড়সড় কারণ আছে। সেদিনের কথা গুলার প্রতিশোধ আজ কিভাবে নিল। কি স্বাংঘাতিক মেয়ে বাবা প্রতিশোধ নেওয়ার কি স্টাইল। তন্দ্রার জন্য একটা শাড়ি কিনতে আসছিল আর পারল না কিনতে। তার মামার দোকান হলেও সে ফ্রিতে কিছু নেয়না নয়ত নিতে পারত। হাতেও আর টাকা নাই। তন্দ্রা বলেছে শাড়ি না দিলে সে রাগ করবে। আজ নিশ্চয়ই তন্দ্রার সাথে ঝগড়া হবে। কিন্তু তার খারাপ লাগছে না তার শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে সে অনেক ভাল একটা কাজ করেছে। সত্যিই তো মানুষ গরিব হলে তো আর ইচ্ছে ছোট হয় না। তারও ইচ্ছে থাকে তারও স্বপ্ন থাকে। মেয়েটা কত ভাল। হ্যা একটু ডেঞ্জারাস টাইপ তবে খুব বুঝদার। অনেক বুঝে। তন্দ্রা হলে হয়ত বলত এই পথের মেয়েটাকে এত দামে ড্রেস দিয়ে শুধু শুধু কেন টাকা টা নষ্ট করবে? অথচ এই মেয়েটা? তন্দ্রার আর এই মেয়েটার মাঝে কত পার্থক্য। ভাবতেই বুক ছিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল দিহানের।
__________________________________
পরের দিন দিহান নীল আর শাওন মিলে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকা মাত্রই দিহানের চোখে পরল অরিন আর লুপা বসে আছে। অরিনকে দেখে দিহান উল্টা দিকে দৌড় দিল। আকস্মিক ঘটনায় নীল আর শাওন হতভম্ব হয়ে গেল। শাওন আর নীল দিহানের পিছনে দৌড় দিল। দু’জন গিয়ে দিহানের দু’হাত ধরে দিহানকে আটকাল। দিহান নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করতে করতে বলল। “ভাই দোহাই লাগে প্লিজ আমাকে ছাড়।” নীল বলল “
_আরে তুই এভাবে হঠাৎ দৌড় মারলি কেন? কই যাচ্ছিস?
_ছাড় ভাই তোদের আল্লাহর দোহাই লাগে।
_দিহান পাবলিক প্লেস এটা। পাগলামি করছিস কেন?[শাওন]
_আমায় ছেড়ে দে ভাই। আমি টয়লেটে যাব।[কাঁদো কাঁদো হয়ে]
_টয়লেটে যাবি তো ওইদিকে কই যাচ্ছিস রেস্টুরেন্টের ভিতরেই তো ওয়াসরুম আছে।[নীল]
_দেখ দিহান সবাই তাকিয়ে আছে চুপচাপ ভিতরে চল।[শাওন]
বাধ্য হয়ে দিহান ভিতরে গেল। ভিতরে গিয়ে লুপা আর অরিনকে বসা দেখে নীলের মনটা খুশিতে নেচে উঠল।দিহান কে বলল “ওই দেখ লুপা এখানে। চল ওদের পাশে বসি।” নীলের কথা লুপার কান পর্যন্ত পৌছাল। পাশ ফিরে তাকাতেই শাওনকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নীল শাওন দিহান এসে তাদের টেবিলে বসল। দিহান কাচুমাচু হয়ে বসল। তার হাত পা কাঁপছে।ভিতু চোখে বার বার অরিনের দিকে তাকাচ্ছে। অরিন এটা খুব ইঞ্জয় করছে। দিহানের দৌড়ে যাওয়াটা তার চোখ এড়ায়নি। অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রেখেছে সে। লুপা শাওন কে উদ্দেশ্য করে বলল”
_ভালো আছেন শাওন ভাইয়া?
_হ্যা খুব ভাল তুমি? দিশা ইশি সবাই ভাল আছে তো।
_জি সবাই ভাল।
_আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি কেমন আছি। [নীল]
_কেমন আছেন। [দাঁতে দাঁত চেপে]
_হেএএএএএ খুউউউউউব ভাল। একদম ফাটাফাটি। তুমি ভাল তো?
_জি। [দাঁতে দাঁত চেপে ]
_হাই তুমি অরিন রাইট। [শাওন]
_জি ভাইয়া কেমন আছেন?
_অনেক ভালো। তুমি?
_জি আমিও ভাল।
_হ্যা হ্যা আমিও ভাল। [নীল]
_আপনাকে কি ও জিজ্ঞেস করছে আপনি কেমন আছেন। [দাঁতে দাঁত চেপে লুপা]
_এমনিতেই তো জিগাইত তাই আগে বলে দিলাম।
লুপা নীলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে অনেক গুলা গালি দিল। দিহান সামনে না হলে তাকে আচ্ছা করে কথা শুনাতো। দিহান বার বার আড়চোখে অরিনের দিকে তাকাচ্ছে। একবার অরিনের চোখে চোখ পরল। চোখ পড়তেই সোজা হয়ে বলে উঠল “
_আসসালামু আলাইকুম।” হঠাৎ দিহানের এভাবে সালাম দেওয়া দেখে সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। দিহান ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সত্যি সে কোনো বাঘের সামনে বসে আছে।
_এই দিহান বসে আছিস কেন যা [নীল]
_কই যাবে? [লুপা]
_টয়লেটে যাবে ওর হাগু পাইছে। [নীল]
দিহান বড় বড় চোখ করে নীলের দিকে তাকাল। নীল তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে। নীলের কথায় সবাই কিঞ্চিৎ আওয়াজে হেসে উঠল। লুপা বলল”
_ছিঃ আপনি দেখি কোথায় কি বলতে হয় সেটাও জানেন না। এটা রেস্টুরেন্ট এখানে এসব বলছেন? ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
_আমার কি দুষ বল? শাওনকে জিজ্ঞেস কর। তোমার ভাইয়ের এতো বেশি চাপ দিছিল যে ও রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ির দিকে দৌড় দিছিল টয়লেট যাবে বলে।
দিহান নীলের দিকে রক্তিম চোখে তাকাল। চোখ দিয়ে নীলকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। অরিন অনেক কষ্ট করে নিজের হাসিটা চেপে রেখে বলল”
_আমার মনে হয় উনার তারাতাড়ি যাওয়া উচিত। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব কষ্টে আছেন।
শাওন আর নীল আর হাসি আটকাতে পারল না। দিহান যেন এবার ওদের খুন করেই ফেলবে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে ভয়ে তার অবস্থা শেষ। সেদিন অরিন তাকে হাতে পায়নি আজ যদি ওয়াসরুমে যায় অরিন যে গিয়ে খপ করে তার কলার চেপে ধরবে না এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
চলবে….।
বিঃদ্রঃ যারা বলেন অরিন খুব বারাবাড়ি করছে। অরিনের আত্মসম্মান নেই। অরিন গায়ে পড়া স্বভাবের। তারা প্লিজ একটু ধর্য্য ধরুন। গল্পটায় কিন্তু রহস্য আছে সেটা খুলাসা হলে আপনাদের ভুল ধারনা ভেঙে যাবে।
Image may contain: one or more people and indoor, text that says "AVNEIL99"
দিহানের ইচ্ছে করছে নীলকে গলা টিপে খুন করতে। এই ছেলেটা নাম্বার ওয়ান ফাজিল। এভাবে লাগামহীনের মত তাকে অরিনের সামনে লজ্জা দিল? দিহান চুপচাপ বসে থাকল। কিছুক্ষণ পরে লুপা বিদায় নিয়ে চলে গেল। লুপা যাওয়ার একটু পরেই নীল শাওন চলে গেল। দিহানকে যেতে বলছে সবাই কিন্তু দিহান “তোরা যা আমি আসছি” বলে বসে থাকল। বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিলনা। অরিন তার পা অরিনের পা দিয়ে চেপে রাখছে। সবাই চলে যাওয়ার পরে দিহানের ভয় টা আরও বেড়ে গেল। আজ যে অরিন তার কি অবস্থা করে ছাড়বে সেটা একমাত্র আল্লাহই জানে। দিহান অরিনের দিকে তাকিয়ে দু’কয়েক শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজাতে চায়। কিন্তু তার গলা ভিজেনা গলা শুকিয়ে চৌকির হয়ে আছে। দিহান অরিনকে বলল “
_বি বি বিশ্বাস করেন আ আ আমি আপনাকে অ অ অসভ্য বলিনাই আ আ আমি আমাকে অসভ্য বলছি।
অরিন কিছু বলল না। ব্যাগে হাত দিতে যাবে তার আগেই দিহান খপ করে অরিনের হাত ধরে ফেলল। অনুরোধের স্বরে বলল”
_আর জীবনে বেয়াদবি করব না প্লিজ মাফ করে দেন। আপনি যা শাস্তি দিবেন মেনে নিব প্লিজ এমনটা করবেন না প্লিজ।
অরিন ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা টেনে বলল”
_হাত ছাড়ুন। একটা দরকারি জিনিস বের করছি ফোন নয়।” দিহান হাত ছেড়ে দিল। কিন্তু তার ভয় এখনো কাটেনি মনে হচ্ছে এই বুঝি অরিন ফোন বের করে তার ছবিটা নেটে ছেড়ে দিবে। অরিন ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে দিহানকে বলল”
_ভালোই হল আপনার সাথে দেখা হয়ে। এই কাগজটায় একটা সাইন করুন।
_এ এ এটা কিকি কিসের কাগজ?
_আগে সাইন করুন তারপর বলছি।
দিহান চুপচাপ সাইন করে নিল। এক কথায় অরিনকে ভয় পেয়ে সে দ্বিতীয় প্রশ্ন করেনি। দিহান একটু সাহস জুগিয়ে বললো”
_সাইন টা কেন নিলেন?
_জেনে যাবেন কোনো একদিন। বাই” বলেই অরিন উঠে দাঁড়িয়ে চলে গেলো। দিহানের কাছে অরিন ধাঁধার মত কঠিন। বার বার সে বুঝতে চায় কিন্তু যত বুঝতে যায় ততই কঠিন হয়ে যায়। ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসল সে।
বাসায় আসার পরে দেখল তার পরিবারের সবাই সোফাতে বসে টিভি দেখছে। দিহান উপরের দিকে পা বাড়ায় তখন তার কানে ইশি ও দিশার চাপা হাসির স্বর আসে। দিহান পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তার দিকে তাকিয়ে সবাই হাসছে। দিহান স্বাভাবিক স্বরে বলল”
_কিরে হাসছিস কেন তোরা?” দিহানের প্রশ্নে ইশি হাসি থামিয়ে বলে।
_না না হাসছি না তুই টয়লেট সেড়ে নিচে আয়। তর অপেক্ষায় আমরা বসে আছি। জরুরি একটা আলাপ আছে।” ইশির কথায় সবাই হেসে উঠে। দিহান রাগি লুকে লুপার দিকে তাকাল। লুপা তার চশমা ঠিক করে কাচুমাচু হয়ে তার বড় মায়ের হাত আঁকড়ে ধরল।
_ভাইয়া ওর দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ওর কি দুষ তুই যদি ওর বন্ধুদের সামনে ওকে লজ্জায় ফেলিস তাহলে ও কি করবে?[দিশা]
_ওই চুপ কর তোরা। এই কুপার বাচ্চা লুপা আমি তরে বলছিলাম যে আমি টয়লেট যাব? বাসায় এসে একদম ঢুল বাজিয়ে দিলি।
_আহা দিহান ওরা ফাজলামো করছে তুই সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন?[দিহানের মা]
_তুমি জাননা আম্মু তোমাদের এই একেকটা মেয়ে হচ্ছে বদের হাড্ডি। সবগুলাকে একদিনে বিয়ে দেওয়া উচিত।
_হ্যা হ্যা আমাদের বিদায় করে তুই শান্তি ভিল্লায় বসে শান্তি মতো হাগু কর।[ইশি]
ইশির কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠল। দিহান রাগে গিজগিজ করতে করতে উপরে চলে গেল। রুমে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসে পরল। তার মাথায় কিছুই আসছে না। কি করবে সে। এভাবে কি চুপ করে থাকাটা তার ঠিক হচ্ছে? এটা ছোট খাটো কোনো বিষয় নয়। কয়েকদিন পরে যখন তন্দ্রাকে বিয়ে করতে যাবে তখন যদি বিয়ের দিন এসে মেয়েটা কাবিননামা দেখিয়ে ঝামেলা করে? তখন পুরো মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পরবে পুলিশ অফিসার হানিফ চৌধুরীর ছেলের কর্মকান্ড দেখুন গোপনে বিয়ে করে তাকে রেখে এখন প্রেমিকাকে বিয়ে। এরকম হাজারও নিউজ বেরুবে। তাদের পরিবারের মান সম্মান ডুবানোর জন্য এর থেকে বেশি আর কি লাগে। তাদের শত্রু পক্ষের জন্য এটা যথেষ্ট খুশির খবর হবে। হঠাৎ করে একটা মেয়ে এভাবে বিয়ে করল অবশ্যই কোনো কারণ ছাড়া করেনি। এভাবে চুপ থেকে থেকে পরে যদি বিষয়টা বড়সড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায় তখন? ভাবতেই বুকটা ভয়ে কেঁপে ওঠে দিহানের। শাওন আর নীলকে সব কিছু জানাতে হবে। অবশ্য শাওনকে একবার বলেছে। এখন আবার বলতে হবে। ওরা যদি কোনো সলিউশন দিতে পারে। দিহান নীলকে আর শাওন কে ফোন দিয়ে বাসায় ডাকল। এভাবে আর চলা যাবেনা এর একটা বিহিত করা দরকার।
_________________
সৎ মা শব্দটা ছোট হলেও তার অবহেলা,অত্যাচার গুলা ছোট নয়। গর্ভধারীনি মায়ের মত কি আর সবাই হতে পারে? কখনোই পারেনা। প্রতিদিন কলেজ শেষে টিউশনিতে যায়। সন্ধ্যা হলে ক্লান্ত শরির নিয়ে বাসায় ফিরে। তবুও তার বিশ্রাম নেই। এসে রাতের জন্য রান্না করে একটু সময় পড়তে বসে। সামনে তার এইচএসসি এক্সাম। লেখাপড়ার প্রচুর চাপ। এদিকে টিউশনি না করলে তার হাতে টাকা আসবে না। টাকা না আসলে সে পরিক্ষার ফি দিবে কেমনে? কাল তিন হাজার টাকা পেয়ে দিহানকে দু’হাজার দিয়ে দিল। বাকি এক হাজার উকিলকে দিয়ে কাগজ লেখাল। এখন হাতে একটা টাকাও নাই। আরেক মাস না হলে টাকা হাতে আসবে না। রুমে ঢুকে ক্লান্ত শরিরটা বিছানায় এলিয়ে দেয়। দিন দিন শরির দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অসুস্থতা ঝেকে বসেছে। ডাক্তার দেখানো উচিত। কিন্তু টাকা? ডাক্তার না হয় অন্য সময় দেখাবে। আপাতত কিছু টাকা টাকা দরকার পরিক্ষার ফি দিতে হবে। আজ টেউশনিতে যায়নি তার এক’শ টাকা কেটে যাবে বেতন থেকে। কলেজ থেকে বেরিয়ে লুপার সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। ওখানে দিহানের সাথে দেখা হল। দিহান নামক মানুষটার জন্য খুব খারাপ লাগছে তার। বার বার মনে হচ্ছে উনার সাথে এমন করা ঠিক হচ্ছে না। তাই আর মন চায়নি টিউশনিতে যেতে।
অরিন শুয়া থেকে উঠে বুক ছিড়ে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জহুরা বেগমের রুমে যায়। আজ কয়েকদিন ধরে উনি তার সাথে ভালো ভাবে কথা বলছেন না। সেদিন লুপাদের বাসা থেকে ফিরতে রাত ১টা বেজে গেছিল। রাত করে আসায় অনেক কথা শুনিয়েছেন তাকে। তার গায়ে নতুন ড্রেস দেখে আরও বেশি কথা শুনান। এক সময় অরিন রেগে যায় আর উনার সাথে তর্ক ধরে। ব্যস হয়ে গেল উনার মারামারি শুরু।
একজন মহিলার সাথে কথা বলছিলেন জহুরা বেগম অরিনের উপস্থিতি তে দুজনই কেঁপে ওঠেন। অরিনের বুঝতে দেরি হয়নি তাকে নিয়েই কথা হচ্ছিল।
রুমে ঢুকে মাথা নিচু করে জহুরা সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
_মা কিছু কথা ছিল।
_কি কথা?(কপাল কুঁচকে) “অরিন জহুরার পাশে বসে থাকা মহিলার দিকে তাকাল। তারপর বলল ” একটু বাইরে আস।” জহুরা গম্ভীর গলায় বললেন “যা বলার এখানে বল। আমি কোথাও যেতে পারব না।” অরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল “
_আমার কিছু টাকা লাগবে মা।
_কেন টাকা দিয়ে তুই কি করবি টিউশনি যে করছ একটা টাকা সংসারে লাগাছ? (পাশের মহিলার দিকে তাকিয়ে) আচ্ছা আপনি বলেন আপা। আমার তিনটা বাচ্চা আছে। জামাই নাই। এগুলারে আমি কেমনে চালাব? এই সংসার সব কিছু আমি কেমনে চালাব? আমার যে বড় মেয়েটা আছে থাকে ত আমি একটা টাকাও দেইনা সে তার টাকায় চলে। তাহলে একে দিতে হবে কেন সে নিজে চলতে পারেনা? এই যে খাচ্ছে দাচ্ছে এসব কেমনে কি আনা হচ্ছে এই হিসাবটা কি মেয়েটা রাখে? এই তিন বছর ধরে যে টাকা কামাই করে একটা টাকা আমার হাতে দিয়ে বলছে যে এই নাও এটা সংসারে লাগাও? বুঝলেন আপা সবই আমার কপাল।”
অরিনের আর দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হলনা। চলে আসল ওখান থেকে। রুমে এসে দরজা বেজিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকে কাঁদতে লাগল। একটা কথার বদলে এতগুলা কথা শুনিয়ে দিলেন? নিজের মায়ের কাছে আবদার করলে কি তিনি এমন করতেন? চোখের পানিটা মুছে নিজেকে শক্ত করে উঠে দাঁড়াল অরিন। আলমারি থেকে এক জুড়া স্বর্নের দুল বের করল। সেদিন বিক্রি করতে গেছিল। ২০হাজার দাম বলেছে। দামে তার হয়নি তাই আর বিক্রি করেনি। আজ মনে হচ্ছে এটা বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। শেষমেষ তার মায়ের শেষ স্মৃতিটাও ধরে রাখতে পারবে না। দুল জোড়া বুকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে অরিন। এটাতে তার মায়ের গন্ধ লেগে আছে কিন্তু এটা ধরে রাখার শক্তি তার নেই। ফোনের রিংটোন শুনে চোখের পানিটা মুছে দুল জোড়া জায়গা মতো রেখে এসে ফোন তুলল “
_আসসালামু আলাইকুম আপু। কেমন আছিস?[ভেজা গলায়]
_ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই?
_আমি? আমিও খুব ভালো আছি আপু।(কিঞ্চিৎ কাপা গলায়)
_তোর গলা এমন শুনাচ্ছে কেন রে অরি? তুই সত্যি ভালো আছিস তো?
_হ্যা রে আপু আমি খুউউউউব আছি। অনেক বেশি ভালো। (কেঁদে কেঁদে)
_অরি কাঁদছিস কেন? ওই মহিলা তোকে আবার মারছে?
_আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই কেন রে আপু? কেন আমি এত নিঃস্ব? এই বিশাল পৃথিবীতে আমার একটা আশ্রয়স্থল নাই কেন বলবি?” বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে অরিন।
_কাঁদবিনা একদম কাঁদবি না। কে বলেছে তর কেউ নাই? আমি আছি তো।
_তুই তো আমার থেকেও অসহায় রে আপু।
_না রে ভালই আছি আমি। এবার বল কি খবর ওইটার? (কান্নাজড়িত কণ্ঠে)
_আপু একটা ভুল করে ফেলছি রে।
_কি করছিস?
_ওই লোকটা লুপার কাজিন।
_কিইইইইই? লু লুপার কাজিন মানে? আমাকে আগে বলিসনি কেন?
_হ্যা রে আপু আমি আগে জানতাম না। লুপার বার্থডে তে গিয়ে জানছি। তোকে ফোন দিতে চাইছিলাম আমার ব্যালেন্স ছিলনা। তুইও ফোন দিসনি এই কয়দিন তাই আর বলা হয়নি তোকে।
_একটা বিপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেকটা বিপদ ডেকে আনলাম?
_জানিস আপু উনি আমার সাথে খুব খারাপ বিহেভ করেন। আমার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কিছু বলতে পারিনা।
_কেন বলবি না ও তোর সাথে খারাপ বিহেভ করবে কেন? তুই চুপ থাকবি কেন তুই প্রতিবাদ করবি।
_দুষ তো আমার আপু আমিই তো উনার জীবনে গেছি। আমার তো বুঝতে হবে উনার সাথে যা হয়েছে সেটা উনি মেনে নিতে পারছেন না তাই উনি এমন করছেন। উনার সব রাগ ঝাড়ছেন। কিন্তু মন কে বুঝাতে পারিনা আপু কষ্ট হয়। তবে জানিস আপু আমি মুখে কিছু বলিনা ঠিক আছে কিন্তু আমি শাস্তি দিয়ে বদলা নেই।
_ওমা কিভাবে?
অরিন চোখের পানিটা মুছে একে একে সব কিছু বলল। সব শুনে ফোনের ওপাশের জন বলল”
_তোর এসব ঠিক হচ্ছেনা অরি। আর ওর টাকা এভাবে খরচ করানো এটা মোটেও ঠিক হয়নি অরি।
_একদম উচিত হয়েছে। আরও হবে। আমাকে এত এত কথা বলার শাস্তি আমি এভাবেই দিব।
_আমি তোকে পাচঁ হাজার টাকা দিয়ে দিব তুই তার টাকা টা ফিরিয়ে দিবি।
_মোটেও না। আমি শুধু দু’হাজার টাকা ধার নিছিলাম সেটা ফিরিয়ে দিছি। আর তুই কেন আমাকে টাকা দিবি? নিজেই চলছিস টানাহেঁচড়া করে আবার আমায় দিবি। আমার কাছে যেটা পায় সেটা দিয়ে দিছি। আর ওই পাঁচ হাজার দিয়ে তো উনি দান করছে। আমারে তো দেয়নাই। উনি তো খুব বড়লোক মানুষ। অনেক বড় বড় কথা বলে। তাই উনাকে বুঝিয়ে দিলাম। কাউকে কিছু দিলে নিজের সামর্থ বুঝে দিতে হয়।
_ভালো করছিস।
_হুম। আপু আমার খারাপ লাগছে উনার জন্য।
_মাঝে মাঝে নিজের কথাটাও ভাবা উচিত অরি। ভুলে যাবিনা সেদিনের কথা।
_হুম।
_ভাল থাকিস পরে কথা হবে।
_হুম।
চলবে…..।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..