বিয়ের আগে ছেলেদের চলচাতুরিতে ভুলে বিয়ে করছেন তো মরছেন।
আমার ডাস্ট এলার্জি আছে। একটু ধূলা দেখলেও আমার নাকের পানি, চোখের পানি, কানের পানি একাকার হয়ে যায়।
একটা সময় ভেবেছি ধূলা-বিজড়িত বাংলাদেশে হয়তো বেশিদিন থাকতে পারব না। মধ্যপ্রাচ্যে থাকে এমন কোনো ছেলে বয়স যাই হোক, যোগ্যতা যেমনই হোক বিয়ে করে নিয়ে গেলেই অন্তত মৃত্যুর আগে হ্যাচ -প্যাচ করার হাত থেকে বেঁচে যাব।
বারো মাসের মধ্যে ১১মাস ১১দিনই হাঁচি দিতে দিতে বছর পার করতে হয়। দেখাদেখির পর্ব শেষ হয়ে, মোটামুটি বিয়েটা ফাইনাল হওয়ার পর, একদিন একগাাদা সর্দি নিয়ে তার সাথে দেখা করতে গেলাম।তার মুখ বরাবার হাঁচি দিয়ে বিস্তারিত সমস্যা খুলে বললাম। সে তাড়াহুড়ো করে পাঞ্জাবির পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার চোখ, নাক, কান, মুখ মুছে সুন্দর করে রুমালটা সর্দিসহ সযতনে বুক পকেটে রেখে দিল। আমি তো খুশিতে আত্মহারা!
আমি সূর করে গাইতে থাকলাম “আমি পাইলাম ইহাকেই পাইলাম।”
কীসের বিদেশি পাত্র! আমার জন্য এর চেয়ে ভালো, যোগ্য পাত্র আর হতেই পারে না। যেখানে বাবা মা পর্যন্ত আমার সর্দির যন্ত্রণায় হাঁফিয়ে গেছেন। সেখানে এছেলে দেখি সানন্দে সর্দি, হাঁচি সব গ্রহন করছে!
ভাবলাম যাক সর্দির সমস্যার সমাধান হয়েছে। বমিরটা কী করব! এনগেজমেন্ট হওয়ার পর কবুল বলার আগে গেলাম লং ড্রাইভে। উদ্দেশ্য বমি করে তার গা ভাসাব।
যেই ভাবা সেই কাজ। ফুরফুরে মেজাজে জেন্টস পার্লার থেকে ফেসিয়াল করে ভদ্রলোক আমার পছন্দের কালারের ব্লেজার পরে সেজেগুজে রওনা হলো। মাইল খানেক যাওয়ার পর ভুস করে, ডিম দিয়ে ভাত খাওয়া বমি তার সারা গায়ে একাকার করে ঢেলে দিলাম ইচ্ছে করেই।
ওমা তার সারা গায়ে বমি সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আমার বমি মুছে, মুখ মুছে, মাথায় পানি দেয়। ব্লেজার খুলে গাড়ির সিট মুছে।
আমি আনন্দে আত্মহারা! এটাকেই বলে পার্ফেক্ট ম্যাচ।
এর জন্যই হয়তো এতগুলো বছর প্রতিক্ষায় ছিলাম।
এবার গেলাম টিএসসিতে ঘুরতে। ইচ্ছে করেই বললাম ‘টয়লেটে যাব।’
আমার উদ্দেশ্য তার এক্সপ্রেশান দেখার। তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো। তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো সে এমন মধুর বাক্য মনে হয় এক জীবনে আর শুনেনি। একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে কোনো লজ্জা দ্বিধা না রেখে বলছে ‘ টয়লেটে যাব।’
আমি বাবলাম এর জন্যই হয়তো, এতগুলো বসন্ত, শীত, গ্রীষ্ম আমি একাএকা কাটিয়ে দিয়েছি।
যাক এমন অসাধারণ ছেলেকে আর দূরে রাখিনি। তাড়াতাড়ি করে চৈত্রের কাঠফাটা গরমে বিয়েটা করে ফেললাম। ফুলশয্যার রাতে ভ্রমণ করে, বমি করে টায়ার্ড হয়ে এবার আমার জ্বর।
ভদ্রলোক ফ্যান বন্ধ করে সারারাত হাত পাখা দিয়ে বাতাস করলেন। তারপরও ফ্যান ছাড়েননি।
আমি এক মহামানব আমার পাশে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললাম।
বিয়ের দশবছর পর সেই দিনের বমির ভয়ে আর কোথাও আমার যাওয়া হলো না। সর্দির ভয়ে আমার ঠাণ্ডা পানি ধরা নিষিদ্ধ হলো। টয়েলেটে যাওয়ার ভয়ে….
যাই হোক আজ আমার সর্দি, জানি না কপালে কী আছে!
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply