1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# অনুধাবন ### কামরুন নাহার মিশু

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৪৯ বার
২০০৪ সালে আমাদের পরের জেনারেশানের প্রথম সন্তান জন্ম নিলো, আমার বোনের ছেলে। তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মাত্র মাস খানিক হবে মায়ের আঁচল ছেড়ে বাড়ির বাইরে পা রেখেছিলাম। একদিন সন্ধ্যায় মামা কল করে বলেছিলেন ‘ সুমির ছেলে হয়েছে’।
গাড়ির নাম শুনলে, গাড়ির ছবি দেখলে, গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনলে বমি করা আমি ছুটে গেলাম। মাইজদী থেকে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্য। একদিন আগেও আসা যাওয়ার পথে আমার একজন স্থায়ী সফর সঙ্গী লাগত। সেই আমি ঠিক সন্ধ্যার কয়েক মিনিট পূর্বে কোনো সফর সঙ্গী ছাড়া বাড়ির অভিমুখে ছুটলাম, উদ্দেশ্য পরের প্রজন্মের প্রথম সন্তানের মুখ দর্শন।
এর পর আর আমাকে কেউ মাইজদী আটকে রাখতে পারেনি। একদিন ছুটি পেলেও আমি বাড়ি ছুঁটে যেতাম।সারা সপ্তাহব্যাপি চলত আমার নানান ধরনের পরিকল্পনা। কীভাবে, কত সুন্দরভাবে, কত আয়োজন করে ছোট্ট বাবু সোনার সাথে সময় কাটানো যায়। কলিজার পুরো জায়গা জুড়ে সে এমন স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল, ওকে ভালোবেসে টিনএজে একটা প্রেম পর্যন্ত করা হলো না।
বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বিরাট লিস্ট নিয়ে যেতাম, ওর পছন্দের জিনিসের, বেশিরভাগ সময়ই আমার মনের মতো কিছু কিনে আনতে পারতাম না। বাড়ির বাইরে থাকতাম, খরচ একটু বেশিই হয়ে যেত প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে। সাথে মোবাইল একটা ছিল, যেটার হাতির খোরাক। প্রতি ২১ দিনে ৩০০ টাকা কার্ডের পিছনে করচ করতে হতো।
অথচ একটা চকলেট নিলেও সে খুশি হয়ে যেত। ছোট বাচ্চাদের মতো শুক্রবার সকালে তার সাথে বসে ৯টার সময় সিসিমপুর দেখতাম। সারাদির ব্যাপি সেই সিসিমপুর নিয়ে বাচ্চাদের মতো মজা করতাম, আনন্দ করতাম। সেই এক স্বপ্নময় জীবন ছিল।
ওর নাকের সর্দিও ঘেন্না লাগত না, প্রশ্রাব-পায়খানাও না। কতদিন নিজ হাতে শৌচ করে দিয়েছি। সর্দি মুছে দিয়েছি। একটা মশা কামড়ালেও বুকে লাগত।
সে এক অবর্ণনীয় আদিম আকর্ষনীয় ভালোবাসা। ওরা যেদিন ঢাকা চলে গিয়েছিল, সোদিন চিৎকার দিয়ে শিশুর মতো কান্না করেছি।
আমার জীবনের প্রথম প্রেম, প্রথম বালোবাসা প্রথম আকর্ষণ আরিয়ান মনি, বোনের ছেলে।
খালামনি হিসাবে পরের প্রজন্মের প্রথম সন্তান বোনের ছেলের প্রতি আমার বালোবাসার মাত্র ০.০০০১ শতাংশ প্রকাশ করেছি।
হাতে গোনা ঠিক দশবছর পর আমি সন্তানের মা হয়েছি ২০১৪ সালে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, সে অাদিম আকর্ষণ হয়তো আমার সন্তানোর প্রতি আমার নেই। রাতের পর রাত, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি আমার সন্তানদের জন্য। কত শত দিন দুপুর একটার পর পেটের ভেতর রাক্ষুসে ক্ষুদা মোচড় দিলে মনে পড়তো আজ সকালের নাস্তাই করিনি ওদের জন্য। মনে ছিল না।
অথচ আজ সন্ধ্যায় পড়ার জন্য হুমাইরাকে বকছিলাম। মেয়েটা শোকে মূহ্যমান হয়ে কাঁদতে কাঁদতে ১১১১টা অভিযোগ করেছে আমার উপর। আমার মেজাজ না-কি চরম খারাপ, আমি না-কি তাকে সবসময়ই মারি,বকা দেই, কস্ট দেই। সে এই পৃথিবীতে আমার মতো এতবেশি ভয় আর কাউকে পায় না। এত বেশি অপছন্দও কাউকে করে না। আবার এতবেশি ভালোও কাউকে বাসেনা।
সত্যি কথা বলতে কি ও যদি মুখ ফুটে আজ না বলত, আমার এক জীবনেও জানা হতো না এমন অসংখ্য অভিযোগ আছে মেয়ের আমার উপর। চোখ ভর্তি কষ্টের জল, বাঁকানো মুখের মেয়ের অভাযোগ দেখে বুকের ভেতরের সব বাতাস বেরিয়ে কেমন যেন বড্ড শূন্য আর হালকা মনে হচ্ছিল নিজেকে একদম অবাঞ্চিত ভাসমান তুলোর মতো।
এবার দুজনকে অষ্টেপৃষ্টে বুকে জড়িয়ে বললাম সব বইপুস্তক বন্ধ করো। আজ মা কেবল তোমাদের সাথে খলব
অন্ত্যন্ত দুঃখের সাথে, লজ্জাবনত মস্তিষ্কে স্বীকার করছি ওদের সাথে কী খেলব সেটাই যেন আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
“কী খেলব বাবা মা তো বুঝতেছি না। ঠিক আছে তোমরা ড্রইং করো।”
সূর্যের মতো ঝলঝলকরে উঠা ওদের চোখের কোণে মেঘ ঝমতে শুরু করল
” কেন মা? তিন জনে মিলে মজার কিছু একটা খেলি চলো!”
আমি হার স্বীকার করে নিলাম।কী খেলব বুঝতে না পেরে,মোবাইল নিয়ে ইউটিউবে সার্চ দিলাম
“কীভাবে বাচ্চাদের সাথে খেলতে হয়।”
সেখানেও আশানুরুপ কিছু না পেয়ে, ওদেরকে নিয়ে মোবাইলে ফানি ভিডিও দেখছিলাম।। অনেক অনিচ্ছায় ঔরা মায়ের সাথে সামিল হলো।
একবার কি কেউ ভেবে দেখেছেন আমি হয়তো আমার কথা বর্ণনা করেছি। শতের মধ্যে ৯৫ শতাংশ পরিবারের সন্তানরা প্রিয়জন বিশেষবাবে বাবা মা সানিধ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটা সুন্দর কোয়ালিটি টাইম একটা সন্তানও তাদের প্রিয়জনের সাথে কাটাতে পারছে না। সবাই স্ক্রীন আসক্ত হয়ে আছে। আচ্ছা পরবর্তী প্রজন্ম জানি কেমন হবে? মায়া মমতাহীন ভালোবাসাহীন এক একটা যন্ত্র মানবে পরিনত হবে না তো।
আমাকে আজ ইউটিউব সার্চ দিয়ে বের করতে হচ্ছে বাচ্চাদের সাথে খেলার পদ্ধতি, নিয়ম।
এই ছুড়ে ফেললাম মোবাইল। আজ থেকে পুরো পনেরো দিন মোবাইলের বাইরে থাকব। আমার জীবনের পুরো আনন্দ, শখ, ভালোবাসা, সফলতা সব আমার সন্তানদের ঘিরে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..