ফেলে আসা দুঃখ স্মৃতি, আসে বার বার।
খুজিনি তাই হেথা সুখ,
কঠিন শ্রমের কাজে,
ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে,
কাটাই জীবন,
প্রবাসে এসে।
ক্লান্তি শেষে অবসরে বসে,
হৃদয়ের চোখ খুলে,
সদুর প্রান্ত হতে,
দূর পথে চেয়ে থাকা,
দুঃখ ক্লান্তি মাখা,
অসহায় মলিন বদন,
আমি দেখিয়াছি,
দেখিয়াছি তোমায় আমি,
শত কোটি বার।
পরবাসী হলে তুমি ভিন দেশে,
নিজ দেশে আমি পরবাসী।
প্রতি দিন শেষে আসে,
রাতের আধার,
তোমার স্মৃতিগুলি,
নানা রংএ আসে,
ফিরে যায় ঝড় তুলে,
ছিঁড়ে যায় হৃদয়ের,
সকল বাঁধন।
অন্তরে গাঁথা মোর চেনা তব মায়া ভরা স্বর্ণ বদন,
না পাওয়ার মোহে ভাবি,
কোথা তুমি?
প্রতিক্ষার শেষ কোথা?
কোথা তব হৃদয়ের টান?
কোথা আছ জান?
ধন-মান?
যাপিত জীবনের মোহে?
আমার জীবনের সব ঋতু,
ধীরে চলে যায়,
প্রকৃতির ঋতু সাথে মিশে,
ঘুরে ফিরে আসে আংগিনায়,
মধুর স্নেহ ডোরে বেঁধে,
শান্তনা দেয়।
সোহাগ ছড়ায়।
আমার অজান্তেই আমার গোপন কথা,
সব যন্ত্রণা,
সব অনুভূতি,
জেনে গেছ ষড়ঋতু,
মিশে গেছে হৃদয়ে হৃদয়।
গ্রীষ্মে উদাম হয়ে,
আলুথালু গায়ে,
পলোক দৃষ্টি ফেলে বসি,
ছায়া আংগিনায়,
চির চেনা ছোয়া পেতে,
ঝিরিঝিরি হাওয়া।
জানি না কবে পাব,
সাইক্লোন হাওয়া?
ঝড়ের বাতাসে,
কুড়াইব হরষে,
কাঁচা-পাকা আম।
পাব কি-না কাছে!
খাওয়াব আম,জাম, লিচু,কলা আর-ও কত,
তুমি যাহা চাও,
দিব তা,
উজার করে, প্রান।
বর্ষায় বৃষ্টি আসে,
ঝাপটা দাপটে ভেসে,
গায়ে পড়ে,
কি যে ভালো লাগে!
নদী চর খাল বিল ভরে যায়,
বর্ষার জল।
নদীর স্রোত ধারা হয় বেগবান।
পন্যে নৌকা ভরে,
মাল্লারা দাঁড় টানে,
সকাল বিকাল,
নানা রং বাদাম উরায়,
হৃদয়টা ঘরে ফেলে,
ভিন দেশে যায়।
মেঘের ভেলা গুলি,
বর্ষার শেষে খেলা করে,
ছুটে চলে আকাশে,
দিবা নিশি ভোরে।
আমার হৃদয়টা ছুটে চলে,
দিশেহারা হয়ে,
তোমাকে দেখিতে যাই,
মেঘের ভেলায়।
সারাদিন খুঁজে খুঁজে,
না পেয়ে তোমায়,
ফিরে আসি নিজ আংগিনায়।
শরতে শাপলা বিলে,
নানা রং ফুল,
শালুক,পদ্ম পাতা দোল খায়,
নৌকার ঢেউয়ে, বাতাসে বাতাসে।
রংগিনে ঝিলিমিলে, হৃদয় জুরায়।
নদী তীরে, বিল ধারে,
কাঁশবন সাদা ফুলে,
সুরভী ছড়ায়, হৃদয়টা মোহিত হয়।
দু:খ ভুলায়।
শরতে নদী মাঝে,
চর জাগে, মাঠ, ঘাট,বিল, ঝিল শরতে শুকায়।
বর্ষা শেষ হলে,
মাছেরা গভীর জল খুঁজে;
ছুটে চলে, নিরাপদ, বেশি পানি, নদী, বিল, ঝিল; ডোবা ও পুকুর।
ছেলে, বুড়ো,জেলে,চাষি, উৎসবমুখরে ভাসি,
মাছ ধরে রাশি রাশি, রাত জেগে ঘুম করে নাশ।
হেমন্ত ধান পাবে,
ফসলের মাঠ করে চাষ,
শরতেই খাটে,
নাই আরাম আয়াশ।
কজের ফাঁকে ফাঁকে ,
আশায় আশায়,
তোমাকে মনে করে,
দিন পার হয়।
হেমন্তে মৌ’রা, সদর্পে দল বেঁধে আসে,
হরিতের ক্ষেতে,মধু আহরোণে।
ভাল বেসে কোলাকুলি,
জরা জরি করে,
চুম্বনে লিপ্ত হয়,
চুষে চুষে মধু নেয়,
কি যে আহ্ ভালো লাগা নেশা।
আমার হৃদয়ের,
সপ্নীল আশা গুলি,
নব নব সৌরভে,
শিহরণ জাগে;
জোয়ারে ভাসে দুই কুল,
সাগরের তৃষায় তৃষায়।
শীতের আমেজ ভরা,
শাক, ফল, ফুল, এনে দেয় অনাবিল আনন্দ অতুল।
কুয়াশায় ছেয়ে যায়,
সারি সারি গাছ,পাতা, সাদা সাদা ফুল অভিভুত লাগে চারি দিক,
এ কুল ও কুল।
কুয়াশা শীতল হাওয়ায়,
জড়সড় শিশু কোলে নিয়ে,
অসহায় মা,
শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঢেকে,
উঠানের কাজ সেরে,
হেসেলে রান্নায় বসে।
কৃষক-শ্রমিক,ভ্যানওয়ালা, রিকসাচালক,খড়কুটা, লতাপাতা, ডাল-পালা দিয়ে, আগুন জ্বালায়ে করে শীত নিবারণ।
সকালটা হতে লাগে রোদের কিরণ।
খেজুরের গুরে পিঠা,
শীতে খেতে লাগে মিঠা,
তুমি ছাড়া খেতে মন করে যে বারণ।
সারা রাত, জারি,সারি, ঘাটু, পালা, মারফতি গান গাওয়া, মঞ্চ নাটক, মসজিদে, মাদ্রাসায় মাঠে-মাঠে ধর্ম বয়ান।
বসন্ত ডেকে আনে কোকিলের কুহু,
পৃথীবিটা মেতে উঠে,
জেগে উঠে মোহ।
ঝর ঝরে দেহ মন প্রফুল্ল ছড়ায়,
প্রবাসে বুঝিবে তা মনে যদি হয়।
ফুলে ফুলে ভরে যায়,
আমার আলয়, প্রজাপতি নেচে-গেয়ে গন্ধ বিলায়।
বসন্তের ঋতুতে বৃষ্টিতে ভিজে যায়,
ফসলের মাঠ সোনার ফসল হবে,
কৃষকের ঠাট।
ফাগুনেও যদি না,
হয় বর্ষণ,
বৃথা যাবে কৃষকের মাঠ কর্ষণ।
আমিও চেয়ে থাকি,
হয়ে পেরেশান,
তোমার প্রতিক্ষায় সারা দিনমান কবে আসিবে ফিরে?
বসন্তের শেষের বেলায়?
ভুলিতে চাই না তাই,
মনে পড়ে যায়!
তোমার আগমনে,
গাছপালা, তরু-লতা,চারিদিকে ছড়াইবে আগমনি সুর,
এ আলয় স্নিগ্ধতা হবে ভরপুর।
তুমি আসিবে,
মন বলে তাই অন্তর জ্বালায় হিয়া পুড়ে হয় ছাই।
মন কাঁদে,কাঁদে ঘর,কাঁশ ফুল, কোকিল কোকিলারা কাঁদে,
এক ঝাঁক কাক করে উথাল পাথাল,
চড়ুই পাখি করে কিচির মিচির,
তরু-লতা গাছপালা রয় স্থীর,
আমিতো ব্যাতিথ হয়ে তোমার ব্যাথায়,
খবর নিতে হই পুড়ে ছাড়খার।
ষড়ঋতু তাই ফিরে আসে, বার বার, সারাটি বছর।
হে মোর ভালোবাসা!
অগ্নি হরণ!
আমি জানি,
তুমি জান,
হয়নি মরণ।
আর কিছু সময় কি নাই তব কাছে?
আমাকে বাসিতে ভালো,
তোমার হৃদয় নিয়ে,
আসিবেনা কাছে?
আসিব তোমার কাছে,
তোমার আলয়,
প্রবাস ছেড়ে আমি তোমার পরশ পেতে ফিরিব নিকুঞ্জে তোমার।
স্নেহের পরশ পেয়ে তুমি ও ধন্য হবে,
আলোর আলেয়ায় আঁধার দু:খ তব শেষ হবে,
হৃদয়ের হাহাকার ক্রন্দন,
ধনিবেনা আর,
নিখিল ভুবনে,
জুড়াইবে প্রান।
১০/১২/২৩ ইং
Leave a Reply