পর্ব ১,
ধারণা করা হয়, ধর্মীয় কুসংস্কার, অর্থনৈতিক প্রতিহিংসা ও সামাজিক বিদ্বেষ- এই তিনটি কারণে ইহুদিরা ইতিহাসজুড়ে বহু নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করুক আর না-ই করুক, নিছক ধর্মীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে জ্যান্টাইলরা কখনো তাদের বিরুদ্ধে মারমুখি হয়ে ওঠেনি। তবে অর্থনৈতিক প্রতিহিংসাকে একটি কারণ বলা যেতে পারে। কারণ, অর্থ-সম্পদ না চাইলেও অনেক সময় শত্রুর জন্ম দিয়ে ফেলে । তা ছাড়া এত ছোট্ট একটি জাতি এত ধন-সম্পদের মালিক কীভাবে হয়ে উঠল, তাও অনেকের চিন্তার কারণ হয়েছিল। তারা যদিও এ ব্যাপারে নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলে— সৃষ্টিকর্তা আপন হাতে তাদের অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিয়ে দিয়েছে। মূলত এসব তাদের বানানো গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইহুদিরা অর্থ-সম্পদকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে সমাজকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছে তা হলো- উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত।
এই বিভাজন তারা এত সূক্ষ্ম উপায়ে করেছে, তাতে সবাই ধরেই নিয়েছে- যাদের প্রচুর সম্পদ আছে, কেবল তারাই সমাজের উচ্চশ্রেণির। তারা যা-ই বলে, তা-ই সমাজের আইনকানুনে পরিণত হয়। বিষয়টা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে এখন আর কোনো তর্ক- বিতর্ক হয় না। এই অর্থ-সম্পদের উৎস কী, তা নিয়েও যেন কারও কোনো চিন্তা নেই ।
বাইবেল অনুযায়ী- মোজেস যখন সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কথা বলতে সিনাই পাহাড়ে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর অবর্তমানে ইজরাইলবাসী স্বর্ণের বাছুর তৈরি করে পূজা শুরু করে, যা Golden Calf নামে পরিচিত। তারা বোঝাতে চেয়েছে- অর্থই ঈশ্বর। সকল উপাসনা কেবল তার নিমিত্তে। যারা এই অর্থ-সম্পদকে গুরুত্ব দেবে, কেবল তারাই হবে সমাজের উচ্চশ্রেণির জনগোষ্ঠী।
এ কারণে দেখা যায়— ইহুদিরা যখন কোনো নতুন দেশে প্রবেশ করত, তখন কেউ পাত্তাই দিত না। কারণ, তাদের অবস্থা ছিল ভিখারির মতো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই যখন তারা অর্থ-সম্পদে এতটা ফুলে উঠত, রাজা-বাদশাহরাও তাদের নিকট ধরনা দিত
ইহুদিরা নিজেদের সুবিধার্থে নতুন সব আইনকানুন তৈরি করে সর্বসাধারণের ওপর চাপিয়ে দিত। তারা চাইলে অর্থবাজারে ধ্বস নামে। আবার তাদের মর্জিতেই বাজার চাঙা হয়ে ওঠে এবং লাখো মানুষের জীবিকা চলে। ওয়ালস্ট্রিটসহ পৃথিবীর সব বড়ো বড়ো শেয়ার বাজারের চাবি তো এখন তাদের হাতেই জিম্মি!
সামাজিক বিদ্বেষ নিয়ে বলতে গেলে- সব যুগেই জ্যান্টাইলদের সঙ্গে ইহুদিদের আপত্তিকর কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা যেত, তবে তা আহামরি কিছু ছিল না। এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে একজন খ্রিষ্টান ও নাস্তিক পাশাপাশি বড়ো হয়েছে; সম্পর্কে তারা প্রতিবেশী। ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রায়ই তাদের মাঝে তর্কাতর্কি হতো, কিন্তু তা কখনো রক্তারক্তিতে রূপ নেয়নি।
এ তিনটি বিষয় ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে, যা তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। আগের অধ্যায়গুলোতে এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। যেমন : পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি, দেশপ্রেমহীনতা, সামাজিক অনুশাসন ভঙ্গ করা, তথ্য পাচার করা ইত্যাদি। এবার ষড়যন্ত্রময় বিশ্ব রাজনীতিতে ইহুদিরা কীভাবে দাবার গুটি চালছে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ইহুদি হলেন Theodor Herzl। তাকে বর্তমান ইজরাইলের অন্যতম রূপকারও বলা হয়। তার একটি বিখ্যাত উক্তি- ‘We are a people- One people।’ তিনি পরিষ্কার করে বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতির কোনো বিকল্প নেই। ১৮৯৭ সালের প্রথম জায়োনিস্ট সম্মেলনে তিনি বলেন- ‘যখন আমরা কোনো বিপদে পতিত হই, তখন অদম্য এক শক্তিকে সঙ্গে করে বিপ্লবী প্রলেতারিয়েটরূপে জেগে উঠি। তখন আর আমাদের পরাজিত করা সম্ভব নয়। আমরা হয়ে উঠি অতুলনীয়-অদম্য শক্তির আধার।’
The Jewish State গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি উল্লেখ করেন-
‘আমিও বিশ্বাস করি, অ্যান্টি-সেমিটিজম সত্যি একটি বড়ো আন্দোলন ৷ এই কুরুচিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক প্রতিহিংসা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। এটি এমন এক জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে, যার সমাধান করতে সভ্য দেশের সব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে একত্রিত করা প্রয়োজন।’
১৯০২ সালে British Royal Commission-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মেজর Evans Gordon-এর প্রশ্নের জবাবে Dr. Herzl বলেন-
‘আমি আপনাদের এমন এক রাষ্ট্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো, যার বর্তমানে কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে দ্রুতই তা বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক কারণে এই রাষ্ট্রের বংশধরদের অসংখ্য শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়েছে। আপনারা চাইলে রাষ্ট্রটির পূর্বে বিশেষণ হিসেবে ‘ইহুদি’ যোগ করতে পারেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এই রাষ্ট্রটির পূর্ণরূপ কী হতে পারে!’
Lord Eustace Percy একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক ও রাজনীতিবিদ। সে সময় তিনি এই বিশেষ জাতিগোষ্ঠীটিকে নিয়ে একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করেন, যা পরবর্তী সময় Canadian Jewish Chronicle দ্বারা সমর্থিত হয়। লেখাটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
“উদারপন্থি ও জাতীয়তাবাদ (Libaralism and Nationalism) এ দুটি নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরোপিয়ান অধিবাসীগণ নিজ নিজ দেশে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের অধিকারও এ যাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা প্রশাসনিক পদগুলোতে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ইহুদিরা প্রচণ্ড প্রতাপের সাথে বেরিয়ে আসে। কীভাবে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদগুলো নিজেদের করে নেওয়া যায়, তা নিয়ে উঠেপড়ে লাগে । এভাবে ক্ষমতা যখন হাতে চলে আসে, তখন তারাই আবার নীতি দুটির বিরোধিতা করে। একসময় নীতি দুটির পক্ষে-বিপক্ষে দুটি দলের জন্ম হয়, যা একত্রিত হতে যাওয়া ইউরোপকে পুনরায় দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে।
যেকোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ চালাতে ইহুদিদের সচারাচর দুটি কাজ করতে দেখা যেত। উক্ত রাষ্ট্রের পুরো সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া এবং সেখানে নিজেদের মনোনীত সমাজব্যবস্থা কায়েম করা ।
আজ ইউরোপের আকাশ জায়োনিজম ও বলশেভিজমের মেঘে আচ্ছন্ন। জায়োনিজম হলো ইহুদিদের রাজনৈতিক ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, যা বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে প্রজাতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদ দুটি ব্যবহার করে ইহুদিরা যেভাবে কনস্টান্টিনোপল দখল করে এবং তুর্কি বিপ্লবের জন্ম দেয়, ঠিক সেভাবে ইউরোপ দখল করতে আজ তারা বলশেভিক বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে।”
নিজেদের দাপট কায়েম করতে ইহুদিরা বারবার জ্যান্টাইল রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমণ করেছে এবং শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। যেমন : তারা রাজতন্ত্র সরিয়ে প্রজাতন্ত্র, প্রজাতন্ত্রকে সরিয়ে সমাজতন্ত্র এবং অনেক জায়গায় প্রজাতন্ত্র সরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। পুরো পৃথিবীর শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে একদিন নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করবে এবং সবাইকে গোলাম বানিয়ে ছাড়বে- এটাই ইহুদিদের বিশ্বাস। এর প্রথম ধাপ হিসেবে তারা গণতন্ত্রকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
অনৈতিক ও সন্ত্রাসী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দরুন একসময় তাদের একঘরে করে রাখা হতো। তাই তারা নিজেদের জন্য ঘেটোভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে। ইহুদিদের সংস্পর্শে এসে সমাজ যেন কলুষিত না হয়, সে জন্য তাদের কার্যক্রম নির্দিষ্ট করা ছিল। অর্থাৎ তারা চাইলেই প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কাজে অংশ নিতে পারত না। ইহুদিরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, যা সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী শান্তি আলোচনা এমনই একটি উদাহরণ।
তারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি যুদ্ধ নতুন সব শান্তি- আলোচনার দ্বার খুলে দেয়, যার উঁচু পদগুলো সব সময়ই ইহুদিদের জন্য বরাদ্দ থাকে। আর সেখান থেকেই হাতের ছড়ি ঘুরিয়ে তৈরি করে নতুন আইন-কানুন। এ সম্পর্কে জানতে Sixth Zionist Conference-১৯০৩ নিয়ে যে কেউই গবেষণা করতে পারেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অটোমানদের হটিয়ে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের হাতে প্যালেস্টাইনের চাবি তুলে দেয়। তারপরও বহু প্রতিক্ষিত ইজরাইল প্রতিষ্ঠা করতে তাদের আরও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। এখনও ইহুদিদের অনেক সদস্যই প্যালেস্টাইনে ফিরে আসেনি। নিরাপত্তা ও আবাসন সংকটের দরুন তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
২৫ জুন ১৯২০, American Hebrew ম্যাগাজিনের মুখপাত্র Herman Bernstein তার একটি আর্টিকেলে প্রকাশ করেন-
‘কিছুদিন আগে আমেরিকান বিচার বিভাগের এক প্রতিনিধি ‘The Jewish Peril’ শিরোনামে লেখা একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে আমার কাছে আসেন। পাণ্ডুলিপিটি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হওয়া রাশিয়ান কোনো একটি বইয়ের অনূদিত অংশ-বিশেষ, যা অনেক আগেই বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিশ্বের পুরো জ্যান্টাইল জনগোষ্ঠীকে কীভাবে ইহুদিরা নিজেদের কবজায় নিয়ে আসবে, সে সম্পর্কে বহু নির্দেশনা পাণ্ডুলিপিটিতে দেওয়া হয়েছে।’
(আমাদের শহরগুলোতে প্রায়ই বড়ো বড়ো বস্তি দেখা যায়, যেখান প্রচুর মানুষ একত্রে গাদাগাদি করে বসবাস করে। ফরাসি বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ইহুদিরা এ রকম একটি সমাজব্যবস্থায় বসবাস করত। তবে ঘেটো শব্দের আক্ষরিক অর্থ বস্তি নয়। ইহুদিরা নিজেদের প্রয়োজনে এরূপ সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব করেছিল, যেন নিজেদের মাঝে সম্পর্কের দৃঢ়তা অটুট রাখতে পারে। ধনি-গরিব সকল শ্রেণির ইহুদিরা একত্রে এখানে বসবাস করত।)
১৮৯৬ সালে Dr. Herzl এই সব নির্দেশনার একটি প্রথমিক খসড়া তৈরি করেন, যা ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের শহর বাসেলে অনুষ্ঠিত হওয়া জায়োনিস্ট সম্মেলনে প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হয়। পরে ১৯০৩ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত অসংখ্য ছোটো ছোটো খণ্ডে এই সম্পূর্ণ খসড়াটি বাজারে আসতে থাকে, যা একসময় পূর্ণ গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। রাশিয়ার বাজারে এ নিয়ে প্রচণ্ড হইচই শুরু হওয়ায় গ্রন্থটিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু তত দিনে এর অসংখ্য কপি সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। এর দরুন এটিকে একেবারে গায়েব করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সম্পূর্ণ খসড়াটির একটা কপি এখনও ব্রিটিশ জাদুঘরে জমা আছে, যার ওপর লেখা আছে— ‘১০ আগস্ট, ১৯০৬’।
যে পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে এত হইচই, তার নাম হলো- Protocols of the Learned Elder Zion। এর ওপর ভিত্তি করে ১৯২০ সালে লন্ডনের Kare and Spottiswoode ম্যাগাজিন একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করে, যা নিয়ে লন্ডনে থাকা ইহুদিরাও হইচই শুরু করে। নিজেদের কলঙ্ক ঢাকতে বিকল্প হিসেবে তারা London Times ম্যাগাজিনকে ব্যবহার করে। তারা Kzre and Spottiswoode-এর প্রকাশিত আর্টিক্যালটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত এবং এ জাতীয় কাজকে পাগলামির অংশ বলেও অভিহিত করে।
কিন্তু এটাই ছিল সেই নীলনকশা, যার ভিত্তিতে ইহুদিরা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্ম দিয়েছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করেছে। অপসংস্কৃতিতে চারদিক ভরিয়ে তুলেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় নাস্তিকতার জন্ম দিয়েছে। অর্থব্যবস্থাকে কুক্ষিগত এবং বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী শান্তি আলোচনাগুলোতে কেবল নিজেদের স্বার্থই হাসিল করেছে। ইহুদিদের সংগঠনগুলো আজ পর্যন্ত এই দলিলটির সঙ্গে কোনো রকম সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি; বরং এটিকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কিছু চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডার অংশ বলে দাবি করে আসছে।
ইহুদিদের পক্ষ থেকে কোনো স্বীকারোক্তি আসুক বা না আসুক, এই সম্পূর্ণ দলিলটি আজ পর্যন্ত তাদের অন্তিম উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সঙ্গে যেভাবে মিলে যাচ্ছে, তা নিছক কোনো কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে না। পরবর্তী বেশ কয়েকটি অধ্যায়জুড়ে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
১৯ জুন, ১৯২০ ‘Trotsky Leads Jew Radicals to World Rule. Bolshevism Only a Tool for His Scheme’ শিরোনামে Chicago Tribune একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করে। বলশেভিক বিপ্লব যে ইহুদি গুপ্তচরদের সুদীর্ঘ পরিকল্পনার একটি অংশ, তা এই লেখায় সবিস্তারে তুলে ধরা হয়। তা ছাড়া খুব দ্রুতই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তজুড়ে আরও অনেক ধ্বংসাত্মক আন্দোলন দানা বাঁধতে যাচ্ছে- এমন কড়া হুঁশিয়ারিও সেই লেখনীতে উপস্থাপন করা হয়। ইতঃপূর্বে বহু পত্রিকা প্রতিষ্ঠান ঠিক এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। এমনও হয়েছে, সংবাদ প্রকাশের কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা সেই কলামটি সরিয়ে নিয়েছে এবং ভুল তথ্য প্রকাশের বিবৃতি দিয়ে মাফও চেয়েছে।
১৯ তারিখে প্রকাশিত আর্টিক্যালটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী তুলে ধরা হলো-
‘গত দুই বছরে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অনেক মূল্যবান তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে- বলশেভিকের মতো আরও অনেক বিপ্লব খুব দ্রুতই পৃথিবীর বুকে আঘাত হানতে যাচ্ছে। যারা নিরন্তর এর পেছনে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের পরিচয় দেরিতে হলেও আমাদের নিকট পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই তাদের এই ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরেছে।’
কমিউনিজম তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের অন্যতম বড়ো হাতিয়ার। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা যে আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে, তার উদ্দেশ্য সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা নয়। ধীরে ধীরে তাদের এই আক্রমণ প্রতিচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও ধেয়ে আসবে। তাদের সমকক্ষ এমন একটি রাষ্ট্রকেও তারা বাঁচতে দেবে না। প্রয়োজনে ইংল্যান্ডের ওপর ইসলামি বিপ্লব, ভারতের ওপর জাপানি বিপ্লব এবং আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিতেও তারা পিছপা হবে না। তাদের উসকে দেওয়া সকল আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- পৃথিবীর বিদ্যমান সমস্ত শাসনব্যবস্থা উপড়ে ফেলা এবং তার স্থানে নিজেদের শাসনব্যবস্থা কায়েম; শান্তি প্রতিষ্ঠা করা নয়।
২১ জুন, ১৯২০ World Mischief শিরোনামে Chicago Tribune আরও একটি আর্টিক্যাল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের কুকর্মের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রথম দিকে তারা এই তথ্যগুলোকে মিথ্যা, গুজব ও বানোয়াট গল্প বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষ যখন প্রমাণ উপস্থাপন করতে শুরু করে, তখন তারাই আবার কণ্ঠ পরিবর্তন করে বলে-
‘ছোট্ট যে জাতিটি বহুকাল পৃথিবীর অসংখ্য নির্যাতন সহ্য করেছে, তারা যদি শত্রুদের ক্ষমতাচ্যুত করে বিশ্ব শাসন করার স্বপ্ন দেখে, তাতে এমন আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?’
Jewish Encyclopedia হতে জানা যায়, খ্রিষ্টযুগ শুরুর আগ পর্যন্ত তাদের কোনো রাজা ছিল না। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলন সেনাপতি নেবুচাদ নেজার জেরুজালেম আক্রমণ করে সেখানকার অসংখ্য অধিবাসীকে হত্যা করে এবং ৬০-৭০ হাজার ইজরাইলিকে বন্দি করে নিয়ে যায়; অবশ্য পরে তাদের অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
৭০ খ্রিষ্টাব্দে সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বে রোমানরা আবারও এই পবিত্র ভূমি আক্রমণ করে এবং সবাইকে নির্বাসিত করে। ঠিক তখন থেকে বেলফোর ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা আর কখনো সামষ্টিকভাবে জেরুজালেমে ফিরে যেতে পারেনি। তারা ছিল যাযাবর জাতি। এই কথাগুলো পুনরায় বলার বিশেষ কিছু তাৎপর্য আছে।
ব্যাবিলনদের আক্রমণে প্রথমবারের মতো নির্বাসিত হওয়ার পর তারা এক অদৃশ্য শাসনব্যবস্থার জন্ম দেয়, যাতে নির্বাসিত অবস্থাতেও একতাবদ্ধ থাকা যায়। তবে এই ব্যবস্থাটি তখন পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। কারণ, কিছুদিন পর তারা আবারও জেরুজালেমে ফিরে আসে। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন রোমানদের দ্বারা নির্বাসিত হয়, তখন ইহুদিরা শাসনব্যবস্থায় রাজার সংযোজন করে। ইহুদিরা পৃথিবীর যতদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ুক না কেন, রাজার নির্দেশ মেনে চলা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি ছিলেন তাদের অভিভাবক। এ পর্যন্ত তারা যতজন রাজা নির্বাচিত করেছে, তাদের সবাইকে বলা হয় ‘Exilarch’। এই অদৃশ্য রাষ্ট্রের নামও ছিল ইজরাইল।
ইহুদিরা যতদিন না নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারছে, ততদিন এই শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে তারা ছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । তাদের পৃথক আদালত ও আইনব্যবস্থাও ছিল। পৃথিবীর যে রাষ্ট্রেই বসবাস করুক না কেন- হোক তা খ্রিষ্টান বা মুসলিমদের দেশ, তারা মনে- প্রাণে এই রাষ্ট্রের সব নিয়মকানুন মেনে চলত। কিন্তু এই রাষ্ট্রটি আজ কোথায়? এটি কি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে? না, হারিয়ে যায়নি; বরং তা নতুন খোলস ধারণ করেছে।
প্রাচীন সেই রাষ্ট্রটির একটি পার্লামেন্টও ছিল, যার নাম ‘সেনহাড্রিন’। এ সম্পর্কে পূর্বের একটি অধ্যায়ে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে।
৭১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত এই পার্লামেন্ট ব্যবস্থার প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। তবে কোত্থেকে এবং কী উপায়ে এই সদস্যগণ নির্বাচিত হতো, তা কখনো প্রকাশ করা হতো না। তবে তা গণতান্ত্রিক উপায়ে হতো না। একজন রাজা যোগ্যতার ভিত্তিতে সংসদ সদস্যদের নির্বাচন করতেন। এখানে রাজা বলতে তাদের প্রধান ধর্মীয় গুরুকে বোঝানো হয়েছে, যার পরিচয় খুব গোপন রাখা হতো।
জনসাধারণের জান-মাল ও সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া এই সংসদীয় ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল না; বরং সাম্রাজ্যবাদ আরও শক্তিশালী করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। Jewish Encyclopedia হতে জানা যায়- এই সদস্যরা নির্বাচিত হতো সম্পদ, প্রতিপত্তি ও ধর্মীয় জ্ঞানের মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে। তাদের সাম্রাজ্যবাদ শুধু প্যালেস্টাইনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং এর বিস্তৃত ঘটেছিল পুরো বিশ্বজুড়ে। কারণ, যদি ইজরাইল প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে প্রতিটি দেশকে ধ্বংস করেই তা করতে হবে।
১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে অবস্থানরত ইহুদিদের বিভিন্ন কাজের দরুন ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি একটি সংসদীয় সভার আহ্বান এবং সেখানে এই জাতিগোষ্ঠীর কিছু সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সেইসঙ্গে এই ঘোষণা দেন- যতদিন না তারা এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবে, ততদিন তাদের একঘরে করে রাখা হবে।
৯ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৮০৭ জ্ঞাতি ভাইদের সমর্থনে সেনহাড্রিনের সদস্যরা প্যারিসে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। তারা ঠিক প্রাচীন কায়দায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে। সেখান থেকে ঘোষণা করে- ইজরাইলের মঙ্গল ও উন্নয়নের স্বার্থে যেকোনো কিছু করার অধিকার তাদের আছে। তাই নেপোলিয়ন কী জানতে চাইল আর না চাইল, তা নিয়ে তাদের কিছুই আসে যায় না।
ইহুদিরা নিজেদের ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে সংসদীয় কাঠামোকে আজ অবধি একই রকম রেখেছে। তবে এটা ঠিক, সময়ের সাথে সাথে এই ব্যবস্থায়ও সামান্য পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে সেনহাড্রিনের আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ১০টি। সময়ের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবছর একটি পূর্বনির্ধারিত সময়ে এই সম্মেলনের আহ্বান করা হতো। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে তাদের সদস্যগণ এই সম্মেলনে বাধ্যতামূলক অংশ গ্রহণ করত। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, উৎসাহ প্রদানকারী বক্তা, ধনী ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় গুরু সবাই এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হতো, তবে সদস্যদের অধিকাংশই হতো ‘রাবাই’।
রাবাই হওয়ার পাশাপাশি অনেকে ব্যাবসা, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করত। আর এই সদস্যরাই মূলত সেনহাড্রিনের নিয়মিত সভায় আমন্ত্রণ পেত। ব্যাপারটি এমন নয়, শুধু গুপ্ত সদস্যরাই এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেত । আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু মাপকাঠি অনুসরণ করা হতো। যারা এই মাপকাঠিতে অধিক নম্বর পেত, পরের বছর তাদের এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হতো। এই মাপকাঠিতে কী কী বিষয় থাকত তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও কিছুটা অনুমান করা যায় ।
হতে পারে অন্যান্য দেশের প্রশাসনিক গভীরতায় কে কতটুকু প্রবেশ করতে পরেছে, জ্যান্টাইলদের ফাঁদে ফেলতে অর্থনীতির নতুন সূত্রটি কে আবিষ্কার করেছে, সমাজ বিভাজনকারী নতুন মতবাদটি কে আবিষ্কার করেছে, ইজরাইলের খুঁটি মজবুত করতে নতুন পরিকল্পনাটি কে তৈরি করেছে ইত্যাদি।
তবে তারা যে সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত একটি জাতি, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। এমন একটি শৃঙ্খল জাতি কিন্তু এক দিনে প্রতিষ্ঠা পায়নি। তাদের আছে চৌকশ অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিমান গুপ্তচর। তারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে গোপন আলোচনাসভার আয়োজন করে এবং কাজ শেষে গোপনেই সরে পড়ে।
প্রশ্ন হতে পারে, তাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন? উত্তর অনেকটা এ রকম- তারা জ্যান্টাইলদের সর্ববস্থায় শত্রু গণ্য করে। তাদের বিশ্বাস, পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে জ্যান্টাইল সম্প্রদায়ের মোকাবিলা করেই টিকতে হবে। ফলে তাদের পররাষ্ট্রনীতি যে মোটেও বন্ধু সুলভ নয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তারা বর্তমানে দাঁড়িয়ে দূর-ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং সম্মিলিতভাবে এই পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণ করে।
সাধারণ সদস্যদের অনেকেই জানে না, কে তাদের রাজা। সত্যি বলতে, সেনহাড্রিনের সদস্যগণ ব্যতীত অন্য কারও কাছে রাজার পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। খুব সূক্ষ্ম গবেষণার মাধ্যমে সেনহাড্রিনের কিছু সদস্যের পরিচয় অনুমান করা সম্ভব হলেও প্রকৃত রাজার পরিচয় অনুমান করা একেবারেই অসম্ভব।
তাদের এই অদৃশ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার নিয়মকানুন এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে Protocols of the Learned Elders of Zion নামে প্রকাশিত বইটির ২৪ তম প্রটোকলে উল্লেখ আছে-
*এখন বলব কীভাবে পৃথিবীর সব শক্তিশালী রাজ্যের পর্দা ভেদ করে আমরা রাজা ডেভিডের (নবি দাউদ) সিংহাসন পুনরুদ্ধার করব। পৃথিবীর বুকে এই রাজবংশের ধারা আজও বিদ্যমান। বিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও শিক্ষিত প্রতিটি ব্যক্তিই এই রাজবংশের উত্তরাধিকারী, যাদের ওপর পুরো বিশ্বের শাসনভার অর্পণ করা হয়েছে।
বিষয়টি একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে- আমরা তাদের বিরুদ্ধে যত ধরনের প্রতিরোধই গড়ে তুলি না কেন, তারা নিজেদের সিংহাসন পুনরূদ্ধার করবেই। বিশ্বব্যাপী তাদের সাম্রাজ্যবাদ অবশ্যই প্রতিষ্ঠা পাবে- এমন প্রতিজ্ঞা হতে তারা কখনো সরে আসবে না। শুধু যে রাজনীতির মাঠে তারা এই প্রভাব বিস্তার করেছে তা নয়; বরং শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা- দিক্ষা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সমরাস্ত্র কূটনীতির মতো প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনেও নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করেছে।
: স্যার হেনরি ফোর্ডের লিখা ‘সিক্রেট অব জায়োনিজম’ বই থেকে নেওয়া, আন্তর্জাতিক ইহুদি ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব৷
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply