1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
# মাহমুদা সুলতানা একা # কালো_মানিক বেসিনে গরম পানি ঢালার পূর্বে সতর্ক হোন!! ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ———————————– অভিনন্দন – শুভ জন্মদিন অবন্তী দেব সিঁথি ————————— — মেসবা খান ঢাকায় অবস্থানরত জামিয়া গহরপুর সিলেট’র ফুযালা ও প্রাক্তনদের আয়োজনে ❝মাহফিলে নূর❞ অনুষ্ঠিত —— হজ্জ ২০২৫ ও ওমরাহ বুকিং চলছে – – মক্কা হুজুর হজ্জ কাফেলা সাউথ বাংলা ট্যুরিজম ————————— প্যারাডাইজ ইন্টারন্যাশনাল হাই স্কুল রম্য কবিতা – অবশেষে হেডমাস্টার – – কলমে – – – – – চৈতালী দাসমজুমদার আলহামদুলিল্লাহ বহু প্রতিক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ, মানব সেবার লক্ষ্য ……. প্রস্তাবিত “জেড ওয়েল মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল লি:”

আমার আতিয়া ( ছোট গল্প) ### মমতাজ পারভিন

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩০১ বার
বউয়ের হাত ধরে এম্বুল্যান্সে বসে আছি। চোখের পানিতে মহাসমুদ্র হয়ে যাচ্ছে। চোখে সব ঝাপসা দেখছি। আজ সকালেই আতিয়া চৌদ্দ পনের বছর বয়সের মতো করে রিনিঝিনি গলায় বললো, তুমি কি আমার সাথে হাঁটতে যাবা? রহিমার ডায়বেটিস থাকায় প্রতিদিন হাঁটে। আমার ডায়বেটিস না থাকায় ওর সাথে তেমন যাওয়া হতো না। ইদানীং মেয়েদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে খুব ঝগড়া করতো।তাই বিরক্ত হয়ে কথা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।আতিয়া বলার পর আর রাগ করে থাকতে পারলাম না দুইজনে হাঁটতে বের হলাম। হাঁটা শেষ করে রাস্তা পার হয়ে বাসার দিকে আসতেছি কোথা থেকে যেন দ্রুতগামী এক হোন্ডা এসে আতিয়া কে ধাক্কা দেওয়াতে বোরখা হোন্ডার সাথে কিভাবে যেন পেঁচিয়ে যায়। তারপর হোন্ডা আতিয়াকে রাস্তা দিয়ে টেনে হেছড়ে নিয়ে যেতে থাকে। আর আমি দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে হোন্ডার পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকি। আশপাশের মানুষ জড় হয়ে যায়। হোন্ডা দ্রুত পালিয়ে যায়। আর এদিকে আতিয়ার হাত দুই টুকরা পা তিনটুকরা যায় মাথা ফেটে যেয়ে কান দিয়ে প্রচুর রক্ত পরতে থাকে। এই ফাঁকে মেয়েরা চলে আসে। আতিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তাররা ঢাকায় বদলি করে দেয়। এম্বুলেন্সে আতিয়ার হাত ধরে আছি। । হালকা নিশ্বাস পড়তেছে। আমার হাতে হাত রেখে আমার আতিয়া জ্ঞানহীন দেশে চলে যাচ্ছে। আমি ডাকছি আতিয়া আতিয়া।
আমার স্ত্রীর নাম আতিয়া। বয়স পন্চান্ন। পাঁচ মেয়ে দুই ছেলে। সবারি বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে দুটো চাকরির জন্য নিজ নিজ কর্ম ক্ষেত্রে থাকে। দুই মেয়ে আমার বাসার আশপাশ থাকে। তিন মেয়ে দুরে থাকে। বাসায় আমরা স্বামী স্ত্রী থাকতাম।
আমি রহমান বয়স সাতষট্টি। ব্যবসা করতাম। এখন বাসা ভাড়ার টাকা দিয়ে সংসার চালাই। আমার স্ত্রীর বাবার বাড়ি সম্পত্তি ওয়ারিশ হিসেব যা পেয়েছিলো সব বিক্রি করে শহরের বাসা করার জায়গা টা কিনি। আর আমার যা টাকা ছিলো সেই টাকা দিয়ে পাঁচ তলা দুই ইউনিটের বাসা করি।
আমার বউর যখন চোদ্দ বছর ওর সাথে আমার বিয়ে হয়। বউর বাবার খুব স্বচ্ছল পরিবার ছিলো। আমার ওদের চেয়ে অবস্হা খারাপ ছিলো। ওদের পাশের গ্রামে থাকতাম। বাবা নাই। সাত ভাইবোনের বড় সংসার। কোনোরকমে বি এ পাশ করে চাকরি না পেয়ে টুকটাক ব্যবসা শুরু করি। ভাইবোনদের নিয়ে কোনোরকমে চলি। আমার শশুরের দুই মেয়ে ছেলে নেই। তার বড় মেয়ের জন্য আমাকে পছন্দ করে। কেন পছন্দ করলো হিসেব মিলাতে পারি না। আমার চেয়ে ভালো পাত্র পেত। তবে এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে সুনাম ছিলো। দেখতেও সুন্দর ছিলাম।বংশ মর্যাদা ভালো ছিলো। সেই সুবাধে আমার বউ আতিয়ার সাথে বিয়ে টা হয়ে যায়। ।
বিয়ের পর আমার ভাগ্য খুলে যায়। শশুর আমাকে উপজেলায় রড সিমেন্টের দোকান করে দেয়। তা থেকেই অবস্হা ঘুরে যায় আমার। দোকান আর ভাইবোনের দেখাশোনার চাপে বউর দিকে নজর দিতে পারতাম না। বাবার আহলাদি মেয়ে আমার বউ সিনেমা দে্খতে চাইতো। এদিক ওদিক বেড়াতে নিয়ে যেতে বলতো। বউ ছটফটে ছিলো। আমার সময় হতো না। ব্যবসা দাড়ানোর সময় তখন। আর আমার মাকে দেখে ভয় পেতাম। আমার মা খালি নালিশ করতো বউ কে নিয়ে। মা বলতো, তোর বউর সংসারে মন নেই। খালি লাফায়। এসব শুনতে শুনতে একদিন বউরে মাইর দিলাম আর বললাম মা কেন তোমার কথা এতো নালিশ দেয়। মায়ের মন মতো চলতে পারো না। সকাল বেলা ঘুমে আছি। মা চিল্লাইয়া ডাকতেছে আমাকে। রহমান উঠ তোর বউ বাবার বাড়ি চলে গেছে কাউকে না বলে। তখন মনে হলো, রাতে বউকে মাইর দিয়েছি। মায়ের নালিশ আর বউর তর্ক সহ্য হলো না। আমার রাগ অনেক বেশি। আমার ভাইবোন আমার হাতে অনেক মাইর খেয়েছে। দ্রুত রাগ উঠে যায় আমার। দ্রুত তৈরি হয়ে শশুর বাড়ির উদ্দ্যেশে বের হলাম।
আমার শশুর আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর সে চোখে শুধুু রাগ ঝরে পরছে।আমাকে মারবে না কাটবে বুঝতে পারছে না। আমাকে বলে, এতো দুঃসাহস কি করে হলো তোমার? আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলো।এখন বের হও আমার বাড়ি থেকে তোমার কাছে মেয়ে দিবো না। আমি শশুরের সামনে কানেধরে উঠবস করে হাতে পায়ে ধরে। আমার বউ আতিয়াকে নিয়ে আসি।
তারপর দোকানে একজন ম্যানেজার রাখি। আমার মাকে বুঝালাম। বউকে বুঝালাম। তিড়িংবিড়িং লম্প জম্প বউকে যতটুকু সম্ভব চাহিদা মিটিয়ে আস্তে আস্তে আদর ভালোবাসা দিয়ে সংসারি করি।আমাদের সংসারে পাঁচ মেয়ে দুই ছেলে আসে। মনের ভুলেও আর ঝগড়া হতো না। আমার শশুর জীবিত কালে শান্তি দেখে গেছে।
ছেলেমেয়ে গুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে আতিয়ার মধ্যে ভারিক্কি চলে আসে আমিও দোকান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি। বড় ছেলেটা চাকরি পেলে আমি নিজে পছন্দ করে বিয়ে দেই। মেয়ে গুলোর আস্তে আস্তে সব বিয়ে হয়ে যায়। এদিকে আতিয়ার ছেলের বউর সাথে খিটিমিটি লেগেই থাকতো। আমি ছেলের বউর পক্ষ নিতাম। আমার বউকে দেখতাম ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ভালোবাসতো বেশি। আমি ছেলেদের বেশি ভালোবাসতাম। শেষ জীবনে এসে আতিয়া আমার প্রতিপক্ষ হয়ে গেল। আমিও বেপরোয়া হতে থাকলাম।
মেয়েরা বাসায় আসলে তেমন বাজার করতাম না। আতিয়ার সাথেও তেমন কথা হতো না। ঝগড়া লেগে থাকতো। ছেলে ছেলের বউ বেড়াতে আসলে বাজারের বন্যা হয়ে যেত। আতিয়া সেই সব রান্না করলে খেতো না। কান্না কাটি করতো। ছেলেরাও মায়ের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে লাগলো। আর মেয়েরা বাবার কাছ থেকে দুরে যেতে লাগলো। আমি নিজেকে নিয়ে হিসাব মেলাতে পারি না। আজকাল আতিয়ার গায়ে হাত তুলি। রাগ উঠেই থাকে। এইতো সেদিন দরজা খুলতে দেরি হওয়াতে। গায়ে হাত তুলছি
অনেক বছর পর। আতিয়া হতবাক হয়ে চেয়ে ছিলো।
এখন আমরা দুইজন দুই রুমে ঘুমাই। প্রয়োজন ছাড়া আতিয়া কথা বলে না। তার প্রধান রাগ ছেলের বউকে আমি এতো প্রাধান্য কেন দেই? ছেলের বউ আমার অত্যন্ত অমায়িক। কেন যে শাশুরির মন গলাতে পারছে না। বাসার আশপাশে দুই মেয়ের বাসা। তাদের আসা যাওয়া অবারিত। আমার মেয়ে গুলো বাসার আশপাশ না হলে আতিয়া ছেলের বউকে বুঝতে পারতো। মেয়েদের শলা পরামর্শে আরো বিগড়ে যায়।তাদের ধারনা ছেলের বউ আমাকে যাদু করে সব সম্পত্তি লিখে নিবে। এটা আর এক অশান্তি শুরু হয়েছে।
আতিয়ার বায়না যেহেতু তার বাবার বাড়ির ওয়ারিশ বিক্রি করে শহরে বাসা তৈরি করেছি সেইহেতু তাকে ফ্লাট লিখে দিতে হবে। আতিয়ার নামে ব্যাংকে দশ লাখ টাকা রেখে দিয়েছি। তারপরও সে বুঝে না। ঝগড়া করতেই থাকে। মেয়েরা যা বলে ওটাই সত্যি ভাবে। আমারও জেদ চেপে চায় ধরে ধরে মাইর দেই এখন। পরে অনুতপ্তে চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু আতিয়া মুখরায় পরিনত হয়ে গেছে।আতিয়ার সাথে আমার সাপে নেউলের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আতিয়া বলে, আমাকে এখুনি ফ্লাট লিখে দিলে আর ঝগড়া করবো না। আমার মনের মধ্যে আছে দিবো লিখে । জেদের বসে প্রকাশ করি না।
মেয়ে বলে, বাবা হাসপাতাল এসে গেছে। পেছনের কথা থেকে ফিরে আসি। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর তারা রাখে না। প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাই। মাথা অপারেশন করে খুলিটা ফ্রীজে রাখে। জ্ঞান ফিরলে হাত পা অপারেশন করবে।কিন্তূ ডাক্তার রা বলে আতিয়া কোমায় চলে গেছে। কৃত্তিম শ্বাস দিয়ে রেখেছে। ডাক্তার বলেছে কোমা থেকে ফিরে আসতে পারে।সেই আশায় আছি।
টাকার দরকারে নিজের বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতে থাকি আর বলি আতিয়া দরজা খোলো । তারপর আমার সম্বিত ফিরে। সেতো কোমায়। আমি রুমে প্রবেশ করে অঝোরে কাঁদতে থাকি আর বলতে থাকি আতিয়া তোমার ছাড়া কেমনে বাঁচবো। আর তোমার সাথে রাগারাগি করবো না। তুমি যা চাও তাই দিবো। পুরা বাসায়ই তোমার নামে লিখে দিবো। প্রথম জীবনের মতো তোমার মনমতো চলবো। কে আমার সকালের চা বানিয়ে দিবে? ঔষধ খাওয়ার জন্য পানি এগিয়ে দিবে। গোসল করার জন্য কে গরম পানি দিবে? আমি আতিয়ার পান খাওয়ার বাক্স, ঔষধ খাওয়ার বাক্স আলমারিতে আতিয়ার কাপড় আতিয়ার পানি খাওয়ার গ্লাস আতিয়ার সংসার ছুয়েছুয়ে দেখছি আর কাদঁতেছি আর বলতেছি আতিয়া তুমি ফিরে এসো এই আমার কাছে এই সংসারে। ফোন বেজেই যাচ্ছে। কম্পিত মনে ফোন ধরি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..