ছেলেটা পড়ে গিয়ে কপাল ফুলিয়েছে গনির সামনে, আর এ নিয়েই মাঝারি পর্যায়ের ঝগড়া হয়ে গেল সকাল বেলাইন অনুর সাথে গনির।
নাস্তা না করে বাজারে যেতে চাইলেও অনু যেতে দিলো না। ভাব করে নাস্তা করালো। কার কতটুকু দোষ খুঁটিয়ে দেখতে গেলে অনেক কিছুই উঠে আসবে। যাচাই বাছাই করতে গেল না অনু আর! ভাইকে সাথে করে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল গনি। ভাই তাঁর সওদা নিয়ে ফিরে এলো ঠিকই কিন্তু গনি এলো না। সে বাবু ভাইয়ের বাসায় গেছে। বাবু ভাইয়ের বউ খুব রসিক মানুষ। গনি গেছে রস খেতে। রস পেলে সব পুরুষ রসের হাঁড়ি হয় কি না জানে না অনু, তবে গনি হয়। ফোঁটায় ফোঁটায় ভরে নিচ্ছে নিজেকে। আর এদিকে অনুর অবস্থা আখের ছোবড়ার মতো। সংসারের সমস্ত কাজ অনুর একা করতে হয়। তার ওপর ছেলেটা বিচ্ছুর বাচ্চা। মাঝে মাঝেই অনুকে গোসল না করে থাকতে হয়। আজ দুদিন হলো অনু গোসল করেনি। চারটে খায় যে, তা খাওয়ার আগেই হজম হয়ে যায় ছেলের পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে। এত কিছুর পরেও মেয়েরা কেন যে সংসার সংসার করে বোঝে না অনু। তার উপর এটা নেই ওটা নেই, অভাব আর অভাব। অনু এ অভাবের সংসার থেকে পালাতে চায় কিন্তু পারে না। সে যে মা! মা বলে পঙ্গু। ছেলের কথা ভেবে দেহ তার চলে না শুধু মনটাই পালায়। কোনো অদৃশ্য সুতো তাকে বেঁধে রেখেছে। গনি বোঝে অনুর মন, অনু কী চায়। আর তাই
গনি তাঁকে সান্ত্বনা দেয়, এ অভাব থাকবে না। সে অনেক বড়ো হবে, ধনী হবে।
অনু মনে মনে ভাবে, এ যেন মরুভূমিতে গাছ লাগানোর মতো। গনি কল্পনা বিলাসী। তাঁর কল্পনা মরুভূমিতে বাগান করার মতন অবাস্তব। তবুও সে গাছের চারা পুঁতে। সেটা হতে পারে ফুলের কিংবা ফলের। সেই ছোট্ট চারাটি একটু একটু করে বড় হবে, পাতায় পাতায় ভরে যাবে শাখা। ফুলে ফেঁপে উঠবে গাছটি। তারপর ফুটবে ফুল অথবা ফল। সেই ফুল নিজ হাতে ছিড়ে ঘ্রাণ নেবে অথবা ফল পেড়ে খাবে। অনুকে প্রতিনিয়ত এ লোভ দিয়ে যায় গনি।
কিন্তু এটা লোভ না, এটাই আশা। অনু জানে মরুভূমিতে গাছ অসম্ভব। তার পরও বুকের কোথায় যেন উঁকি দেয় ‘যদি’ —-!
আল্লাহ্ চাইলে সবই সম্ভব। গনির ভাগ্য ফেরাও সম্ভব। অনু স্বপ্ন দেখে, আশায় বুক বাঁধে। তাঁর ভেতরের আমিটা বলে– আমরা মানুষ, মরুভূমি না। আল্লাহ্ সহায় থাকলে সঙ্কল্প আর কঠিন পরিশ্রম দ্বারা ভাগ্য বদলানো সম্ভব।
এ-ই আশা আর স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে অনু ,গনি। বেঁচে থাকে মানুষ জাতি।
Leave a Reply