আব্বা আমি সামনে ফেব্রুয়ারিতে দেশে যাবো। কতদিন হলো আপনাদের দে…
– না বাজান তুমি এহন আইলে ঘরের বাকি কাজটা কেমনে হইবো? আর তোমার ছোট বইনডারে বিয়া দিতে হইবো না? বাড়িডার কাজ পুরাপুরি শ্যাষ হইলে তায়েবার বিয়া দিমু৷ পাত্রও দেহা হইছে।
আব্বার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। আমার বাকি কথাটুকু আর শেষ করতে দিলেন না আব্বা। পাঁচ বছরের ছোটো ভাইটাও বিয়ে করে মেয়ের বাপ হয়েছে। সাত বছরের ছোটো বোনটারও বিয়ের কথা চলছে। কিন্তু আমার বিয়ের বয়স নাকি এখনও হয়নি। কারণ আমি প্রবাসী। আমি তাদের টাকা গড়ার মেশিন।
আমি সবই বুঝি, শুধু এটা বুঝি না আমার মতো করে আমায় কি তাদের একবারও দেখার ইচ্ছে হয় না?
– সামনের মাসে টাকা বেশি করে পাঠাবে। লিমনের বিয়েতে ওর বউকে গয়না দিতে হবে। সবাই ছোটো-খাটো কিছু দিলেও আমিতো তা দিতে পারি না। আমার জামাই বিদেশ থাকে। বিদেশি পয়সাওয়ালার বউ আমি যা তা দেওয়া আমার শোভা পায় না। আর হ্যাঁ শোনো আমার জন্যও কানের ছোটো একজোড়া দুল দেখেছি৷ খুব পচ্ছন্দ হয়েছে। তুমি টাকা পাঠালেই কিনবো।
বউয়ের কথায় মুচকি হেসে ফোনটা রেখে দিলাম। গলায় যতটুকু খাবার আটকে ছিল তার কথা শুনে কষ্টের বড় দলার সাথে গিলে ফেললাম।
দুপুরের খাবার খাওয়ার ফাঁকে ছেলেটার সাথে কথা বলার জন্য বউকে কল দিয়েছিলাম। ওপাশ থেকে কেউ বলে না আমি খেয়েছি কি না। শুধু তাদের প্রয়োজনের তালিকাগুলো নিরবে শুনে যাই। এইতো গত মাসেও নিজের খাওয়ার খরচ কম রেখে টাকা পাঠিয়েছিলাম শাশুড়ির টিউমার অপারেশনের জন্য। অথচ ওদিকে আমার বৃদ্ধা বাবা-মায়ের জন্য টাকার পরিমাণ গুনে গুনে হিসেব কষে পাঠাতে হয়। আমি প্রবাসে বসে শুধু নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আমার কিছু বলা বারণ। কারণ আমি প্রবাসী৷ আমি শুধুই টাকা কামানোর বোবা মেশিন। এত কথা আমার সাজে না।
(ভালো মানুষের ভীড় কতটুকু জানি না। তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগই প্রবাসীর পরিবার এইরকম হয়। বলতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য। প্রবাসীরা একেকজন তাদের পরিবারের কাছে বোধহয় টাকা তৈরির মেশিন।
তবে আমি বলি কি, টাকার মেশিন হলেওতো আপনাদের দূর থেকে তাদের যথাসম্ভব যত্ন-আত্তি নেওয়া উচিত। নয়তো অযত্ন-অবহেলায় মেশিনটা যে চিরতরে অচল হয়ে যাবে।)
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply