” এই মেয়ে এদিকে তাকাও। এই চিঠিটা ওইখানে বসে থাকা ছেলেটাকে দিয়ে এসেছো।”
আচমকা অপরিচিত কিছু মেয়ে এসে পালককে উক্ত কথাগুলো বললো যা শুনে সে কিছু মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো।
” আপনি কি আমাকে বলছেন?” বেশ খানিকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো পালক।
” জ্বি আপনাকেই বলছি। এই মেয়ে আশেপাশে কি অন্যকাউকে দেখতে পাচ্ছো? না তো। তারমানে তোমাকেই বলছি। এখন এতো কথা না বলেই এই নাও কাগজ আর যাও।”
” কিন্তু আমি কেন আপনার কথা শুনবো?”
” এই মেয়ে চেনো আমাকে? দেখে তো মনে হচ্ছে ফার্স্ট ইয়ার। জানো আমি কোন ইয়ারে? সেকেন্ড ইয়ারে আমরা। বেশি কথা বললে ভার্সিটিতে শান্তি মতো থাকতে পারবেনা। তাই যা বলছি তাড়াতাড়ি করো।” হুকুমের সুরে বললো একটি মেয়ে।
পালক মেয়েটার হাত থেকে কাগজ নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো। বন্ধুদের সাথে ঘাসের উপর বসে বেশ আড্ডা দিচ্ছে। সে ছেলেটাকে একবার পরখ করে নিয়ে মুচকি হাসলো। তার উপর থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” আচ্ছা। আপনারা দাঁড়ান, আমি এখুনি দিয়ে আসছি। কোথাও যাবেন না কিন্তু।”
পালক হাসিমুখে ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
” এই বেগুনি টি-শার্ট পড়া ভাইয়া, একটু এদিকে ফিরে তাকাবেন।”
পালককে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো। বেগুনি টি-শার্ট পড়া ছেলেটি এতোক্ষণে হাসি মুখে থাকলেও পালককে দেখে তার সেই হাসি মূহুর্তেই উবে গেলো, দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। তার দেখাদেখি বাকিরাও উঠে দাঁড়ালো।
” এই নিন ভাইয়া, আপনার জন্য একজন বিশেষ বিশেষ মানুষ এই প্রেমপত্রটা পাঠিয়েছেন। এটা আপনাকে না দিলে নাকি সে আমার ভার্সিটি লাইফ হে’ল করে দেবে। কি করি বলুন জুনিয়ার মানুষ, সিনিয়রদের কথা না শুনলে কি হয় বলুন। তাই ভালো জুনিয়ারের মতো প্রেমপত্র আপনাকে দিলাম। এবার আপনি তাড়াতাড়ি পত্রটা পড়ে উওর বলুন। আমাকে আবার সিনিয়র আপুকে বলতে হবে।” বেশ হাসিমুখে বললো পালক। পালকের কথা শুনে ছেলেটার মুখ পুরো শুকিয়ে গিয়েছে। তা দেখে তার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলো,
” কিরে প্রত্যয় এরকম কাঁপছিস কেন? আর চিঠিটা কে দিয়েছে তোকে?”
” এটা? এতোটা ঈশিতা নামের এক বড় আপু আমাকে দিয়েছে, উনি নাকি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। আমার কত সিনিয়র, ওনার কথা কি না মেনে পারি?”
” কিরে প্রত্যয় মুখে আঠা লাগিয়েছিস নাকি? না প্রেমপত্র দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিস? চাইলে রাজি হয়ে যেতে পারিস। আন্টির সাথে না হয় আমরাই কথা বলে নেবো।”
” হুম প্রত্যয় চাইলে আমরা এখনই আন্টিকে ফোন করতে পারি। শুধু তুই রাজি হয়ে যা, বিয়ে পর্যন্ত না হয় আমরাই নিয়ে গেলাম।”
” চুপ কর গরুর দল, ভুল জায়গায় সবসময় তোরা ভুল কথাটাই বলিস।” ফিসফিস করে বললো প্রত্যয়।
” কিরে বেটা এরকম ফিসফিস করছিস কেন? নাকি এই চিঠি ওয়ালীকে পছন্দ হয়েছে? অবশ্য মেয়েটা দেখতে খারাপ না ভালোই। চাইলে আমরা এর সাথে তোর সেট করিয়ে দিতে পারি।” আরেক বন্ধু ফিসফিস করে বললো কথাগুলো। প্রত্যয় ধপ করে তার পাশে একটা পাড়া দিলো এবং ইশারায় চুপ থাকলে বললো।
” আপু আসলে….” হাতের ইশারায় পালক থামিয়ে দিলো তাকে এবং সামনে ইশারা করে হাঁটতে বললো। প্রত্যয়ও কথা না বাড়িয়ে মেয়েগুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। তাদের আসতে দেখে ঈশিতা বেশ খুশি হলো।
” চিঠিটা দিয়েছে কে?” গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো প্রত্যয়।
” আমি দিয়েছি। তুমি এসেছো, তার মানে তুমি রাজি তাই না? আমি জানতাম তুমি রাজি হবে।” বেশ খুশি হয়ে বললো সে। ” ওই মেয়েটা কোথায়? যে তোমাকে চিঠি দিয়েছে?”
” এইতো বড় আপু আমি এখানে।”
” এই শোন তোরা ওকে ক্যান্টিনে নিয়ে যা আর একটা প্লেট ফুসকা খাওয়া। শোন এটা হচ্ছে তোমার ট্রিট। এই যা যা ওকে নিয়ে যা।”
” চুপ করো স্টু’পিট মেয়ে। মা’থামো’টা, গা’ধা কোথাকার।” বেশ রে’গে চিৎকার করে কথাগুলো বললো প্রত্যয়। প্রত্যয়ের চিৎকার শুনে সবাই চমকে উঠলেও পালক ফিক করে হেসে ফেললো।
” এই মেয়ে তুমি হাসলে কেন? সাহস তো কম নয় তোমার।” বললো ঈশিতা।
” সরি সিনিয়র আপু। কি করবো বলুন উনি রে’গে গেলে বানরের মতো লাগে তাই না চাইতেও হেঁসে ফেললাম।” মুখ টিপে হেসে বললো পালক।
” তোমার সাহস তো দেখছি কম নয়। তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার বয়ফ্রেন্ডকে বানর বললে। তুমি জানো ও তোমার কত বড়? থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট সে।”
” সত্যি! ওমা আপনি না বললে তো জানতামও না।” মুখে হাত দিয়ে বললো পালক। ” সরি সরি ভাইয়া আমার ভু’ল হয়ে গিয়েছে, আমাকে প্লিজ ক্ষ’মা করে দিন। আপনি ক্ষ’মা না করলে আমার জীবন তো ধ্বং’স হয়ে যাবে।”
” এই গা’ধা মেয়ে তুমি একদম মুখ খুলবেনা, মা’থামো’টা মেয়ে একটা। আরে গাধা সে আমার আপন বড় বোন, শুধু আমার না তোমাদের সবার বড় সে। সে কোন ফার্স্ট ইয়ারে পড়েনা, সে মাস্টার্স করছে। গা’ধা কতগুলো।”
প্রত্যয় এর কথা শুনে সবার চোখ খুলে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা বিশেষ করে ঈশিতা এবং তার বান্ধবীদের। তারা এতোই অবাক হয়েছে যে মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। তাদের অবস্থা দেখে পালক অনেক কষ্ট করে নিজের হাসি আটকে রেখে।
” আপনি মাস্টার্সে পড়েন!” অবাক হয়ে বললো ঈশিতা।
” জ্বি সিনিয়র আপু আমি মাস্টার্সে পড়ি আর আমিই আপনার বয়ফ্রেন্ড এর বড় বোন।”
” সরি আপু। আমি তো এমনিতেই কথাগুলো বলেছিলাম। কিছু মনে করবেন না, সরি।”
ঈশিতা এবং তার বান্ধবীরা একপ্রকার দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। প্রত্যয় এর বন্ধুরাও আস্তে করে সরে পড়লো।
” আপু বিশ্বাস করে আমি এসবে কিছু জানতাম না। তুমি তো জানো আমি কত ভালো ছেলে। এসব প্রেম-টেম আমি করিনা।”
ভাইয়ের কথায় কান দিয়ে পালক আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো,
” আজ থেকে দুধ, কমপ্লেন, হরলিক্স, মিল্ক শেক সব তোর বন্ধ শুধু রং চা খাবি। আর সাথে সাইকেল চালানো, জীম ইত্যাদি ইত্যাদি সব বন্ধ। এসব করে করে ইয়া বড় লম্বা হয়ে গিয়েছেন উনি আর আমি….। ওনার বড় আমি কিন্তু মানুষে দেখলে মনে করে আমি ওনার ছোট। উনি আমার বড় ভাই আর আমি মাত্র কলেজের গন্ডি পেরিয়েছি।”
” আরে আমি লম্বা এতে আমার দোষ কোথায়? আপু শোন তো আমার কথা। এই আপু।”
” কিছু শুনবোনা, বন্ধ মানে বন্ধ। এর থেকে বেশি লম্বা হলে তোর পা কে’টে আঠা দিয়ে আমি নিজের সাথে লাগিয়ে নেবো।”
বেশ রেগে পালক হাঁটছে অন্যদিকে প্রত্যয় আপু আপু বলে তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে। অবশ্য এটা তাদের কাছে নতুন না। বলতে গেলে বেশ চেনা একটা পরিস্থিতি।
__________________ সমাপ্ত ___________________
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply