1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# আমরা_কেন_বুঝি_না # ফাহমিদা_লাইজু

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৯৪ বার
প্রতিদিন একই টেস্ট, একটু অন্য রকম করে রাঁধতে পার না?
রিনু একটু অবাক হয়ে ওর চোখের মনি আমার দিকে স্থির করলো, এর পরে সেগুলো আস্তে আস্তে ছোট হতে লাগলো।
চোখের অভিব্যক্তি যাই হোক সে তার শীতল কণ্ঠে বলল-
–প্রতিদিন ভিন্ন আইটেম করার পরেও একই টেস্ট? গতকাল রুটির সাথে গরুর গোশত ছিলো, এর আগের দিন বুটের ডাল দিয়ে মুরগির গিলা কলিজা রান্না ছিলো, আজ করেছি রুটি, ডিম ভাজি আর সবজি। ভিন্ন খাবারে কিভাবে একই স্বাদ হয়?
আমি ভেবেছিলাম রিনু রেগে যাবে। ওর এত শান্ত করে বলা কথা শুনে আমার আর আমাদের ছেলে রামিনের মুখ থেকে একটু আগে ঠিকরে পড়া হাসি উধাও হয়ে গেলো।
প্রতিদিন টেবিলে বসে রামিনকে জোট করে ওর মায়ের নামে এটা সেটা বলা আমার অভ্যাস। হেসে হেসে দুষ্টুমি করে কঠিন আর রিনুর অপ্রিয় কথাগুলো বলতে বলতে হেসে গড়িয়ে পড়ি। যেমন বলি-তোমার মায়ের আজ মনে হয় অতিরিক্ত কাজের চাপ লবণ মনে হয় ভুলে দুইবার দিয়েছে, দেখ তোমার মা আজ চুলটাও আঁচড়ায়নি যদি মর্জিনা না থাকতো তবে তো তোমার মায়ের মাথায় পাখি বাসা করতো, সেখান থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসতো, ঐ দেখ তোমার মা হাঁপাতে হাঁপাতে ঘেমে অস্থির সে যেই হারে মোটা হচ্ছে কয়েকদিন পরে তো আমাদের তার পাশে চোখেই পড়বে না, এত বলি একটু মেইনটেন কর শোনে না, দেখ তোমার মায়ের এখন কিছুই মনে থাকে না সে মনে হয় বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ওকে বলি মর্জিনা থাকতেও কেন সে সময় পায় না তার এত কি কাজ, দৌড়ে দৌড়ে করতে হয় আবার ঠিকমতো হয়ও না। যাদের কোন হেলপিং হ্যান্ড নেই তারা কিভাবে সব করতে পারে?
সব কাজে রিনুর খুঁত ধরে কথা বলাটা আমার অভ্যাস।
ক্লাস ফোরের রামিন বুঝে হোক না বুঝে হোক আমার সাথে হাসতে থাকে। রিনু সেই সব দেখে আর চোখ গরম করে কিন্তু কথা বলে না। আমাদের কাছে এই সব খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে এখন।
আজ রিনু একটুও চোখ গরম করলো না, সে খুব শান্ত।
রামিনকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিস যাবো। আমরা চারজন অফিস স্টাফ অফিসের একটা গাড়িতে যাতায়াত করি। রামিনের স্কুল অফিসের রুটে হওয়াতেই ওকে নামিয়ে দেয়া সম্ভব হয়।
রামিনকে জড়িয়ে আদর করে দিলো রিনু। একটু বেশি সময় ধরেই জড়িয়ে রইলো। আমি অস্থির হয়ে তাড়া দিলাম, দেরি হয়ে যাচ্ছে, মা -ছেলের ভালোবাসা এবার রাখ।
আমার কথা শুনে ছেলে নিজেকে মায়ের আলিঙ্গন থেকে দ্রুত মুক্ত করতে চাইলে মা আলতো করে তার ডানা আলগা করলো।
আজ মনে হচ্ছে একটু বেশিই জ্যাম রাস্তায়। রিনুকে বলতে হবে আজ রামিনকে স্কুল থেকে আনার জন্য একটু তাড়াতাড়ি বের হতে।
অফিসে পৌঁছার দুই ঘণ্টা পরে রিনুর কল দেখে একটু অবাক হলাম, এই সময় তো ও কল করে না!
রিসিভ করতেই রিনু যা বললো, সেটা হলো-
আমার শাশুড়ির শরীর খারাপ রিনুকে জরুরিভাবে যেতে বলেছে, সম্পত্তির ব্যাপারেও কথাবার্তা হবে।
হঠাৎ করে এইভাবে রামিনকে রেখে ও ময়মনসিংহ রওনা হয়ে গেলো এটা শুনে অসম্ভব রাগ হলো আমার তবে এটা ভেবে শান্ত হলাম, যাক সম্পত্তির ভাগ পেলে ভালোই হবে, রিনু তো বেশ ভালোই একটা অংশ পাবে সেটার বর্তমান বাজার মূল্যও অনেক।
দুইদিন থাকার কথা বললো, দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে।
রিনু অবশ্য কিভাবে কি করতে হবে সব বলে দিলো-
রামিনকে স্কুল থেকে আনতে কখন যেতে হবে, কোন দিকটায় জ্যাম কোন দিকে রাস্তা একটু ক্লিয়ার থাকবে, রামিন কোন গেইটের কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে। মর্জিনাকে সে বলে গেছে রামিনের সাথে থাকার জন্য ,আমি অফিস থেকে ফেরার পর যেন মর্জিনা বাসায় থাকে , এই জন্য মর্জিনাকে এই মাসে অতিরিক্ত কত টাকা দিতে হবে সেটাও বললো। রাতে ছেলেকে নিয়ে ঘুমাতে বললো।
আরো কিছু বলতে চাইছিলো, আমি শুনলাম না, কাজের চাপ দেখিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
অফিস থেকে এই সময় বের হতে একটু ঝামেলাই হলো। ডিটেইলে ইমার্জেন্সির কথা বলাতেই যেন বসের মন গললো।
রিকশা নিলাম, গরমে যেন জান যাওয়ার অবস্থা হলো। আমি ঘেমে নেয়ে যখন রামিনের স্কুলে পৌঁছলাম তখন ওর ছুটির আধা ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। ও চুপচাপ বসে ছিলো, যদিও কিছু ছেলে মাঠে খেলছিলো। আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর চোখ দু’টো টলটল করছিলো। রিকশায় উঠেই জিজ্ঞেস করলো ওর মা কোথায়? রামিন ছুটির পর ওর মা’কে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়েছিলো, আন্টিরা ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করছিলো।
আধ ঘন্টার রাস্তা জ্যাম ঠেলে পৌঁছলাম দেড় ঘণ্টায়। এক অস্বস্তিকর অবস্থা! আমার আর অফিসে যাওয়ার মতো অবস্থা রইলো না। অফিসে জানিয়ে দিলাম আজ আর যেতে পারবো না, হাফডে ছুটি কাউন্ট হলো।
আমি অফিস যাবো না শুনে মর্জিনা চলে গেলো, বলে গেলো বাসার সব কাজ শেষ করে গেছে ও। আমিও ভাবলাম প্রতিদিন তো মর্জিনাই সব কাজ করে এটা আর নতুন কি?
আমার ট্রাউজার খুঁজে নিলাম। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পরে রিনু কাপড় বের করে দেন আর বলে নিজের কাপড়টাও নিয়ে নিতে পার না? ওর বলা ও বলে কিন্তু কে শোনে কার কথা!
শাওয়ার নিলাম। অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে। রামিনের রুমে গিয়ে দেখি ও ড্রেস চেঞ্জ না করেই বসে আছে ঘামে ভেজা কাপড় নিয়ে।
ওকে বার বার বলে গেছি ড্রেস চেঞ্জ করার কথা। কেন চেঞ্জ করেনি জানতে চাইলে বলল, ওর ঘরে পরার কাপড় কোথায় জানে না। আমি খুঁজে দিলাম।
রামিন মন খারাপ করে বললো-
আম্মু কেন আমাকে রেখে গেলো? আমি ছেলেকে চাঙ্গা করতে বললাম আমরা দু’জনে মিলে অনেক মজা করবো।
আসলে রিনু কখনো ছেলেকে ছাড়া কোথাও যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের জন্য খুব মন খারাপ করছে।
রামিন গোসল করবে, সে নিজেই করতে পারে কিন্তু চুলে শ্যাম্পু দেয়ার সময় মা’কে লাগে, ওর চোখ জ্বালা করে। আমি মহা বিপদে পড়লাম ওর চুলে শ্যাম্পু দিয়ে। ওর চোখ জ্বালা করছে আর ও চিৎকার জুড়ে দিলো।
রীতিমতো যুদ্ধ শেষে আমি পুরোপুরি ভিজে গেলাম। মনে মনে অসম্ভব রাগ হলাম, ছেলে বড় হয়েছে গোসলটাও শেখাতে পারেনি রিনু!
রামিন আরো ছোট থাকতে ছুটির দিনে রিনু বলতো রামিনকে গোসলটা করিয়ে দাও না, একটু এটা দেখ না একটু ঐটা দেখ না.. সন্তানদের অনেক কিছু বাবাকেও শেখাতে হয়। আমি কখনো ওর কথা কানে তুলিনি, এর পরে আস্তে আস্তে সব রিকোয়েস্ট বন্ধ করে দিলো রিনু।
যেন আমার কাছে ওর কোন চাইবারই নেই। বাজার করা থেকে শুরু করে সব কিছুই তো ও করে। আমি অফিস যাই, মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই, বাসায় ফিরি, সময় মতো টেবিলে খাবার পাই এই তো এভাবেই কেটে যাচ্ছে।
রামিন একটু খেয়ে হাত তুলে বসে রইলো, কিছুতেই খেতে চাইছে না, অনেক পীড়াপীড়ি করার পরে বললো, আমি কি এত ঝাল খাই? আম্মু আমাকে কম ঝাল দিয়ে রান্না করে দেয়।
ও কি খাবে, কিভাবে খেতে পছন্দ করে তেমন কিছুই তো আমি জানি না। আমি মুখে দিয়ে দেখি আসলেই ঝাল হয়েছে।মর্জিনা রান্না করে গেছে, ও কি জানে না কিভাবে রান্না করে?
আমি ওকে বললাম বাইরে থেকে অর্ডার করি কিছু , এটা শুনে খুশি হলো।
রামিনের টিচার এলো। আমি মনে হয় ঘুমিয়ে গেছিলাম, রামিন ডেকে বললো, টিচারকে নাস্তা দিতে। ওর আম্মু সব সময় চা নাস্তা দেয়।
আমি অনেক আগে চা বানাতে পারতাম এখন পারবো কিনা কে জানে। কোথায় কি আছে খুঁজে পাচ্ছি না। রিনুকে কল দিলাম। ওর মোবাইল বন্ধ। অবাক কান্ড ও পৌঁছেও তো কল দিলো না, আমারো মনে হয়নি কল করার কথা।
অবশেষে পেলাম সব কিছু, চা মনে হয় জঘন্য হলো, আসলে মেজাজ খিচরে ধরেছে ,মাথাটাও দপদপ করছে। চা নাস্তা দিয়ে কথা বললাম টিচারের সাথে। আজ রামিন টিচারের কোন পড়া করেনি। স্কুলের হোম ওয়ার্ক, পড়া কিছুই হয়নি।
কেন করেনি জিজ্ঞেস করতেই বললো, ওর আম্মু এই সব করায়।
আমি ভাবছি, ওর মা-ই যদি পড়া করাবে তাহলে টিচারের কি দরকার?
আবার আরবী পড়াতে হুজুর আসে তিনদিন। শুক্র, শনিবার আবার আর্ট শেখাতে নিয়ে যায়।
আমার শাশুড়ির নাম্বারে কল দিলাম, রিসিভ করলো না কেউ। একটু পরেই রিনুর নাম্বার থেকে কল এলো-
রিনু হসপিটালে ওর মায়ের সাথে আছে।
কি বলবো, বুঝতে পারলাম না। অনেক কিছুই বলতে চাইলাম, রাগ দেখাতে চাইলাম, অভিযোগ করতে চাইলাম কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না।
খুব সামান্য কথাবার্তা হওয়ার পরে মা ছেলে কথা বললো অনেক সময় ধরে। তখন মনে হলো আমি সেখানে নেই ই।
রামিন ঘুমিয়ে গেলো। সারাদিনের ক্লান্তিতে আমিও ঘুমিয়ে গেলাম মুহূর্তেই।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো ডোর বেলের শব্দে। মর্জিনা এসেছে। রামিনকে রেডি করে আমি রেডি হলাম। এত দিন সব কিছু রেডি অবস্থায় পেয়ে আজ বড্ড বেশি বোঝা মনে হলো এই সব। কোন টিফিন নেই আমার লাঞ্চ নেই। সকালে বের হওয়ার আগে রিনু দৌড়ে এসে হাতে ধরিয়ে দিতো। ছেলের খুব মন খারাপ। সকালে খাবার টেবিলে বসে ওর মায়ের নামে এটা সেটা বলে যে হাসতাম আজ কোন কথাই বের হলো না মুখ থেকে আর হাসি তো দূরের কথা। মর্জিনা শক্ত রুটি আর ডিম ভাজা দিলো। প্রথমবার মুখে দিতেই ডিমের খোসার উপস্থিতি টের পেলাম আর খেতে পারলাম না। মর্জিনাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো রুটি সে বানালেও রুটি ভাজে রিনু, সে গুছিয়ে দিলেও সব কিছু আবার চেক করে রান্না করে রিনু। রামিন দুধ দিয়ে কর্নফ্লেক্স খেলো অল্প একটু।
অনেকটাই এলোমেলো অবস্থায় রওনা হলাম। দোকান থেকে ছেলেকে জাঙ্ক ফুড কিনে দিলাম। আমি অফিস গিয়ে কিছু আনিয়ে খেয়ে নেবো। আমার অসম্ভব রাগ হচ্ছে রিনুর উপর। ছেলেকে নিয়ে গেলে হতো না, কি এমন হতো দুইদিন স্কুল না করলে?
সেই আবার ছেলের ছুটির পরে ওকে নিয়ে বাসায় এলাম, মর্জিনা কাজ শেষ করে টিভি দেখছিলো। বাসা খুব একটা গোছানো দেখলাম না। আমি আবার অফিস যাবো না শুনে বাসায় চলে গেলো মর্জিনা।
গতকালের সব তরকারি ওকে নিয়ে যেতে বললাম। আজকের রান্না খাওয়া যায় কিনা কে জানে।
রাতে আবার বাইরের খাবার অর্ডার করে খেলাম আমরা। রামিন ঘুমিয়ে গেলো। সারাদিনেও ওর মন ভালো হয়নি। চেষ্টা করেছি বিভিন্ন ভাবে তবুও ওর মন ভালো হয়নি। বুঝতে পারলাম মায়ের জন্য ওর মন খারাপ।
এতক্ষণ ঘুমানোর জন্য অপেক্ষায় থাকা আমি ঘুমাতে পারছি না। ঘুম যেন চোখ থেকে উধাও হয়ে গেছে। বারান্দায় গেলাম, কি একটা ফুলের ঘ্রাণ পেলাম, রিনু অনেক গাছ লাগিয়েছে। কখনো তো দেখতে চাইনি আলাদা করে কি কি গাছ, কি কি ফুল। বারান্দার লাইট অন করলাম। বারান্দাটা খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে অথচ আমার চোখে পড়েনি এই সৌন্দর্য, দেখি প্রতিদিন কিন্তু হয়তো মন দিয়ে দেখিনি। ঘ্রাণের উৎস পেলাম একটা ছোট বেলি গাছে ফুলে ফুলে ভরে আছে, কি সুন্দর লাগছে দেখতে! কয়েকটা গাছ নেতিয়ে গেছে, আজ তো পানি দেয়া হয়নি। পানি এনে দিলাম সবগুলো গাছে।
কত কত সময় মনে হয়েছে বাসায় এত কথা, এত শব্দ একটু নিড়িবিলি থাকার জো নেই অথচ আজ এই নীরবতা আমার ভালো লাগছে না। রিনুর গলা যেন ভেসে ভেসে আসছে- তোমাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আমি, এটা এখানে কেন, এটা এইভাবে রাখে কেউ, এখনো খেতে আসছ না কেন, এই রামিন পড়া শেষ কর, আর পারি না..।
মোবাইল নিয়ে দোলনাটায় বসলাম। রিনুর কোন পোস্ট সেইভাবে দেখাই হয় না, একে একে দেখতে লাগলাম। কত কিছু শেয়ার করেছে, মা ছেলের ছবি, খুব সাধারণ ছবি অথচ কি চমৎকার, হাস্যোজ্জ্বল আর দৃঢ় বন্ধনে ভরপুর। আমি অবাক হলাম আমি কি রিনুকে দেখি না, ওর দিকে মনোযোগ দেই না, ছবিতে অন্যরকম লাগছে ওকে।
টুং করে রিনুর একটা টেক্সট এলো-
–এখনো ঘুমাওনি?
–না, ঘুম আসছে না। তুমিও তো দেখি ঘুমাও নি।
–মা-মেয়ে গল্প করছিলাম। হসপিটাল থেকে ছেড়ে দিলো আজ। আম্মা এখন অনেক ভালো আছে। যা ভয় পেয়েছিলাম! একটু আগে আম্মা ঘুমিয়েছেন। তোমাদের তো কোন সমস্যা হচ্ছে না, তাই না?
রিনুকে বললাম এত ঝক্কি ঝামেলার কথামালা।
ও হাসির রিয়েক্ট দিলো। হেসে যেন গড়িয়ে পড়ছে।
এর পরে লিখলো –
–কেন ঝামেলা হবে? তুমি না বল, আমি কি এমন কাজ করি সব তো মর্জিনাই করে। তবে এখন কেন ওর রান্না খেতে পার না? আমার সব কাজে খুঁত ধর, রাগ কর,ফান কর। আমি ঠিক মতো কিছু করতে পারি না, শুয়ে বসে থেকে থেকে মোটা হয়ে যাচ্ছি, বুড়ি হয়ে যাচ্ছি, তবে কেন আমাকে ছাড়া সমস্যা হবে? একটা বার চিন্তাও কর না, তোমার করা আচরণ আমাকে কতটা কষ্ট দেয়? আচ্ছা এমন করে কি বুঝাতে চাও কিংবা কি লাভ হয়, বলতে পারবে? আচ্ছা কোন মানুষ কি সব দিক থেকে পারফেক্ট? দোষ, ত্রুটি থাকবেই কম বা বেশি।
সব সময় সব কিছু পারফেক্ট করা সম্ভব?
তুমি জান, ইদানিং রামিন তোমার কথাগুলো রিপিট করে, ওর মুখে তোমার কথাগুলো শুনে আমি থ হয়ে যাই, সহ্য হয় না, ওর ছোট্ট কাচা মস্তিষ্কে এই সব এমনভাবে ডুকছে যে আর বের হতে পারবে না। ও ভাবছে মা তো এমনই হাজারো ফল্ড মায়ের, মেয়েরা বুঝি এমনই হয়। এটা এখানেই শেষ নয়, চলতে থাকবে , ও ওর স্ত্রীর সঙ্গেও এই আচরণ করবে। ও তো এখন অনেক কিছুর অর্থই বোঝে না কিন্তু বড় হয়ে বুঝে শুনে কিংবা অজান্তেই ওর মধ্যে এমন আচরণ প্রকাশ পাবে।
তোমার আচরণ মেনে নিলেও ছেলেরটা মানা অসম্ভব। ভুল তো আমারই হয়েছে, প্রথম থেকেই তোমাকে থামিয়ে দেয়ার দরকার ছিলো। সমস্যা হলো সামনাসামনি এই সব মুখে বলতে পারি না।
এই যে তোমাকে লিখে এই সব জানাতে পারছি এটা বরং অনেক সহজ।
প্রথমে হাসি দিয়ে শুরু করলেও শেষের দিকে ওর কথাগুলো পেরেকের খোঁচার মতো শোনালো।
আমি কি রিপ্লাই দেবো বুঝতে পারলাম না।
রিনু আবার মেসেজ করলো-
–কি পড়া শেষ হয়নি?
সে কোন উত্তর শোনার অপেক্ষাও করলো না। নিজেই লিখলো, অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়। আমি আরেকটা দিন আম্মার সাথে থাকতে চাই।
ও অফ লাইনে চলে যাবার অনেক পরেও আমি মোবাইল চোখের সামনে ধরে রাখলাম।
রিনুর মনে এতটা কষ্ট এতটা ক্ষোভ বুঝতে চেষ্টাই করিনি কখনো। হঠাৎ মনে হলো রিনু কি আর আসবে না? ও কি ইচ্ছে করেই এভাবে চলে গেলো। হঠাৎ যেন আমাকে শূন্যতা ঘিরে ধরলো। প্রথম থেকে আমাদের সুন্দর সময়গুলো মনে করতে লাগলাম। কবে থেকে ওর মনে আমার প্রতি এত ক্ষোভ জমা শুরু হলো বের করতে পারলাম না। মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারে না, আমিও আমার ভুল খুঁজে পেলাম না। মানুষ তো নিজের দোষ নিজে বুঝে না বা বুঝতে চায় না। তবে নিজের কাছেই নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম, ওর দোষ ধরা বন্ধ করবো, ছেলেটাকে কাজ শেখাবো, যতটা পারি রিনুকে হেল্প করবো। জানি না পারবো কিনা, মানুষের স্বভাব কি এত সহজে বদলায় তবে চেষ্টা করতে দোষ কোথায়? চেষ্টা না করলে বুঝতে পারবো কি করে পারবো কি পারবো না?
সকাল আটটা পঁয়ত্রিশে আমাদের দরজার সামনে দেখে রিনু থ হয়ে গেলো।ঘুমে কাঁদা হয়ে থাকা ছেলেকে উঠিয়ে , এনার ফার্স্ট ট্রিপে রওনা হয়েছিলাম। বাসার সবাই মনে হয় এখনো ঘুমে। ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো ও।
হেসে বললাম- চলে এলাম। মনে হলো বোকার মতো হাসলাম।
রিনু ,আমার সেই বোকা বোকা হাসিতে তাল মেলালো। ওর এমন সুন্দর স্নিগ্ধ হাসি বহু দিন দেখি না।
(সমাপ্ত)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..