সকাল সকাল তুমুল ঝ*গড়া শুরু করে দেয় আরিহা আর রিহান। ঝ*গড়ার মূল কারণ রিহানের অফিসের ড্রেস হতে মেয়েলি পারফিউমের সুগন্ধি আসছে। আর এটাই আরিহার মাথা খারাপ করার মূখ্য কারণ। এমনিতে কোনো কাজের বিষয় নিয়ে রিহান কোনো মেয়ে কলিগের সাথে কথা বললে আরিহা সেদিন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। ঝ*গড়া করতে করতে রিহান বের হয়ে যায়। আর আরিহা রুমে বসে কান্না করতে থাকে। আরিহা মেনে নিতে পারছে না যে রিহান অন্য কারো সাথে ছিল। বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো। আগে কখনো হারাম রিলেশনশিপে জড়াই নি আরিহা। একটু একটু করে ভালোবাসা জমিয়েছিলো ভবিষ্যত মানুষটার জন্য। কিন্তু আজকের ঘটনা নিয়ে খুবই ভেঙে পড়েছে আরিহা।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে আরিহা। সকাল হতে কিছু না খাওয়ার দরুন খিদের যন্ত্রণায় ঘুম ভেঙে যায় আরিহার। ঘুম থেকে উঠে ঢুলু ঢুলু পায়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না ঘরের দিকে যায়।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে খাওয়ার তেমন কিছু নেই। তাই তাড়াতাড়ি নুডলস বানিয়ে খেয়ে নিলো। এক নিমিষেই ভুলে গেলো সকালের ঘটনা। ঘরের সব কাজ শেষ করে রান্না করতে চলে যায়। রান্না শেষ করে শাওয়ার নিতে যায় আরিহা।
আধঘন্টার মধ্যে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসে। কাপড় গুলো বেলকনিতে বিলিয়ে দিতে যায়। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ কানে এসে লাগে আরিহার। তাই দ্রুত দরজা খুলতে চলে যায়।
দরজা খুলতেই চমকে যায় আরিহা। রিহান একটা মেয়ের সাথে তাও কাধে হাত দিয়ে। এমন অবস্থায় প্রিয় মানুষটা কে দেখে কেও ঠিক থাকতে পারে না। আরিহাও ঠিক থাকতে পারেনি। কিন্তু কোনো সিনক্রিয়েট করেনি। রিহানের হাতে আর কপালে বেন্ডেজ। হঠাৎ বেন্ডেজ দেখে আরিহা হন্তদন্ত হয়ে রিহানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
-আসলে হাই স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছিলাম সামনে একটা ছোট বাচ্চা চলে আসে তাই গাড়ি কে অন্য দিকে নিতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। আর অইখানে কপাল ফেটে যায় এবং হাতে কাচের টুকরো বিঁধে যায়।
এসব শুনে আরিহা ছোট্ট শব্দ করে ‘ওহহ’ বলে। কথাটা রিহানের হজম হলোনা। পাশেই বসে আছে এলিনা নামের মেয়েটা। এলিনা-ই কিছুক্ষণ আগে রিহানকে নিয়ে এসেছিলো।
আরিহা রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসে দু’জনকে দেয়। দু’জনে খাচ্ছে এমন সময় এলিনা জিজ্ঞেস করে,,
রিহানের কথা শুনে মেয়েটা চমকালো বেশ এবং বললো,,,
– তুমি বিয়ে করেছো? কিন্তু আমরা জানি না কেন?
– আমি বিবাহিত সেটা সবাই জানে। তুমি নতুন এসেছো তাই হয়তো জানো না। আর আমি বিয়ে করেছি তিন বছর আগে।
হঠাৎ রিহান এলিনাকে উদ্দেশ্য করে আরিহাকে বললো,,
– আরিহা ‘ও’ হচ্ছে এলিনা আমার অফিসের কলিগ।
এলিনা চলে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। রিহানকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়েছে। এখন রেস্টের প্রয়োজন তাই আরিহা কিছু বললো না।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত। রিহানের প্রচুর জ্বর এসেছে। এমনিতেই ছোট থেকে একটু ব্যাথা পেলেই জ্বর চলে আসে।
রিহানের মাথার কাছে বসে জ্বল পট্টি দিচ্ছিলো আরিহা। জ্বর অনেকটা কমেছে। রিহানকে রেখে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার নিয়ে এসেছে আরিহা।
রিহানকে হেলান দিয়ে বসিয়ে খাইয়ে দিতে চায়লে রিহান খেতে চায় না। জ্বর উঠলে এমন ছেলেমানুষি করে রিহান। আরিহা জোর করে খাইয়ে দিতে শুরু করলো। আর রিহান বাধ্য ছেলের মতো খেতে থাকলো। খাওয়ানো শেষ করে রিহানকে ওষুধ খাইয়ে দিলো।
এভাবে কাটছিলো দিন। কিন্তু এর মাঝে আবার শুরু হয় এক অভিমান। অভিমানের কারণ আজ সকালেই আরিহা ভার্সিটি গিয়েছিলো ক্লাস করতে। ক্লাস শেষে রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখলো ফুচকাওয়ালা। আর ভাবছিলো যদি রিহান থাকতো তাহলে গিয়ে মজা করে খাওয়া যেতো। এসব ভাবতেই হঠাৎই চোখ পড়ে দু’জন মানব মানবীর উপর যারা খুব আনন্দে বসে ফুচকা খাচ্ছিলো। এসব দেখে আরিহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তাড়াতাড়ি তাদের কয়েকটা ছবি তুলে বাসায় চলে আসে।
বাসায় এসেই রিহানকে ফোন দেই। যতবারই ফোন দিচ্ছে ততবার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে। প্রায় অনেকবার কল দেওয়ার পর কল রিসিভ করে রিহান। ওপাশ থেকে ভেসে আসে মেয়েলি কন্ঠ,,
– আপনি কে? আর রিহানের ফোন আপনার কাছে কেন?
মেয়েটা খুব সুন্দর করেই বললো,
– আসলে আমি আর রিহান ঘুরতে এসেছিলাম। হঠাৎ ফুচকার দোকান দেখে ফুচকা খেতে মন চায়। তাই দু’জনে ফুচকা খায় কিন্তু ফুচকা ঝাল হওয়াই রিহান পানি আনতে গিয়েছে। আর ফোন আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো।
এসব শুনে আরিহার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। খুব রাগ উঠে আরিহার। নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে না পেরে এক পর্যায়ে কান্না করতে শুরু করে দেয়। কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে আরিহা।
কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আরিহার। মনে পড়ে যায় ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো। খুব কষ্ট হচ্ছে আরিহার। অনিচ্ছা শর্তেও বিছানা ছেড়ে উঠলো। ঢুলু ঢুলু পায়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো।
দরজা খুলে দেখলো রিহান দাঁড়িয়ে আছে। আরিহা চলে যায় সেখান থেকে। আবারো রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রিহান ফ্রেশ হয়ে দেখে আরিহা ঘুম। তাকে আর না ডেকে রান্নাঘরে যায়। রান্নাঘরে গিয়ে দেখে খাওয়ার কিছুই নেই। সব কিছু যেমম ছিলো তেমনই আছে। রিহান ভাবলো আরিহার শরীর ভালো নেই তাই কিছু করে নি। রিহানও না খেয়ে আরিহার পাশে শুয়ে পড়ে।
ভোরে আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে আরিহার। উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াত করে।
ততক্ষণে রিহানেরও ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে রেডি হওয়া শুরু করে দেয়। আরিহা নাশতা তৈরি করতে যায়।
রিহান নাশতা করছিলো এমন সময় আরিহা বলে উঠে,,
এমন কথা শুনে খাবার গলায় আটকে যায়। আর গিলতে পারছে না রিহান। অনেক কষ্টে গিলে আরিহাকে বললো,,
– মানে? কি বলছো তুমি এসব? পাগল হয়ে গেছো?
– আমি ঠিক-ই বলছি। আমি এসব আর নিতে পারছি না। অসহ্য লাগছে সব। আপনাকেও আমার বিষের মতো লাগছে। আমি মুক্তি চায়।
এসব শুনে রিহান অনেক কষ্ট পায়। আর বলে,
– ঠিক আছে তুমি যা বলবে তা।
রিহান অফিস চলে যায়। আর আরিহাও তার বাপের বাড়ি চলে যায়। অফিস থেকে ফিরে আরিহা কে না দেখে রিহানের কলিজা ফে*টে গেছে এমন মনে হলো।
কেটে গেছে অনেক গুল দিন। যোগাযোগ নেই দু’জনের। কষ্ট পাচ্ছে দু’জনেই। আরিহা থাকতে পারছে রিহান কে ছাড়া। আর না পারতে আরিহা রিহানের কাছে চলে আসে।
রিহান আরিহাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে আরিহা বলে,
– আমি আর পারছি না আপনাকে ছাড়া থাকতে। তাই চলে এসেছি।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিহান বলে,,
– ডিভোর্স কি সবকিছুর সমাধান হয়? সব কিছু খুলে না বলে শুধু শুধু ডিভোর্স চায় ডিভোর্স চায় বললে। জানো কতো টা কষ্ট হয়েছে। আমি তোমার ফোনে সব ছবি এবং রেকর্ডিং শুনেছি ওসব অই মেয়ের মিথ্যাে কথা। সেইদিন আমরা অফিসের সবাই একটা কাজে যায় এবং অইখানে ফুচকা ও খায়। যাক গে ওসব। ডিভোর্স সবকিছুর সমাধান নয় প্রিয়তমা।
——————–
সমাপ্ত
—————————–
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply