১০ই মে ছিল এক বীর শহীদের মৃত্যু বার্ষিকী। জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করছে তোমায়।
৭১’এর বীর শহিদ :
নামঃ শহীদ মো: জিয়াউজ্জামান,
বাবাঃ ডা: মতিয়ার রহমান তালুকদার।
মাতা: আখতারুন্নেছা বেগম
জন্মঃ ১ জানুয়ারী ১৯৫০ সাল, শহিদ হনঃ ১০ই মে ১৯৭১ সাল
বাড়ি : মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর ।
১৯৭১ সালের ৫ মে রাজাকার কর্তৃক গ্রেফতার হন ।
৮ মে তাঁকে পিরোজপুরে পাকিস্তানী আর্মিদের হাতে তুলে দেয়। ৯ মে পাক-মেজর এজাজ কর্তৃক ফায়ারিং স্কোয়াডে তাঁকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে ।
তাঁর দোষ ছিল :কলেজ ছাত্রলীগের ছাত্র নেতা, মেধাবী, সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংঘটক।
একজন বীর শহিদের কথা বলছি:
(৭১’র বীর শহিদ জিয়াউজ্জামান)
ওই দেখো…তোমার শোণিতে খচিত
লাল বৃত্তে সবুজের পতাকা
পৎ পৎ করে উড়ছে শ্যামল বাংলার
আকাশে বাতাসে।
লাল-সাদায় শাপলা শালুকেরা
ফুটে আছে ঝিল পুকুরে
৭১,এর মার্চ ভয়াল উত্তাল মাস
স্বাধীনতার স্বপ্নেরা উড়ে বেড়ায় প্রজাপতির
ডানায় টগবগে তরুনেরা পথে-ঘাটে ব্যারিকেড
৭ই মার্চ বংগবন্ধুর ভাষনে ছুটে গেলে কলেজ
ছেড়ে নিজ শহরতলীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবে।
সেদিন তুমি জীবনকে দেখেছ তুচ্ছ করে
শুধু একটি স্বাধীন মানচিত্রের প্রত্যাশায়
মঠবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধার কন্ট্রোল রুমের
গুরু দায়িত্ব তোমার ঘাড়ে।
মে মাসের পড়ন্ত বিকেলে তখনো ঐ
নীলাকাশে শকুনেরা উড়ে বেড়ায়
ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে প্রস্তুতি সুন্দর বনের
গহীন বনে অপেক্ষা করছে সহমুক্তি যোদ্ধারা।
সূর্য্যমনি নানা বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কন্ট্রোল রুম,
পথে রাজাকার বজলু কমান্ডার ধরিয়ে দেয়
সহোদর ভাইদের, অমানুষিক নির্যাতন শেষে
পিরোজপুরে পাক সেনার কাছে তুলে দিলো।
খুলনা আজম খান কমার্স কলেজের
সি,এ অধ্যয়ণরত, তুমি ছিলে একজন চৌকস
ছাত্র নেতা।
মে মাসের ভোরের সোনালি আলোয়
পিরোজপুরে ৬ জনের সাথে তোমাকেও
নিয়ে গেলো পাক সেনার ছাউনীতে টর্চার সেলে
১০ ‘মে সেদিন ছিল ঝড়-বৃষ্টির দাপট,
প্রচন্ড তান্ডবে মেতে ছিল প্রকৃতি,
যেন তোমার হাত-পা,চোখ বাঁধাকে
প্রকৃতি মেনে নিতে চাইল না।
বধ্যভূমির পাশে দামোদর নদীর তীরে
সারি করে লাইন করল কতগুলো মেধাবী যুবক
তারা জানেনা যে বাকিটা ইতিহাস….
পাক দোসর ক্যাপ্টেন এজাজের ষ্টেন গান
ঠা-ঠা-ঠা গর্জন হঠাৎ
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির মত ডানা ঝাঁপ্টানো আর
গোংরানি শব্দ নদীর বুকে টেনে নিল
পরম আদর স্নেহে তোমাদেরকে
শুনেছি তাদের উচ্চ কান্নার প্রতিধবনি
ভেসে আসছে প্রচন্ড ঝড়ের মাঝে কণ্ঠ
ষ্টেনের গুলিতে ঝাঁঝরা হোল বুক,
রক্তে খচিত দেহটা শীতল করে দিলো
প্রবাহমান দামোদর নদীর খড়স্রোতে।
স্রোতের ধারায় টেনে নিল পদ্মা,মেঘনা যমুনায়।
তোমার লাশটি আজো খুঁজে পায়নি
আজো বলেশ্বর নদী প্রবাহিত হোয়ে
পদ্মা,মেঘনায় বয়ে যায় তোমার রক্ত বিন্দু
তুমি চির অম্লান,চিরঞ্জীব এই বাংলায়।
আজো তাকিয়ে আছি তোমার প্রতিক্ষায়
তুমি আসবে বলে ।
পূবাকাশে হাজারো নক্ষত্রের ভীড়ে তোমায়
খুঁজেপাই বিজয়ের বেশে তুমি ফিরে এসেছো
তোমার বুকের রক্ত আর তোমার বাবা-মায়ের
চোখের গড়ানো অশ্রু দিয়ে
লিখেছো একটি নাম বাংলাদেশ
হে বিজয়ী বীর শহিদ জিয়াউজ্জামান ।
( ৭১’ এর এই বীর শহিদ আমার আপন মামা)
জাহিদুল ইসলাম জামি,
প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক,সমালোচক,আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply