1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

# মা – – – কামরুন নাহার মিশু 

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২
  • ১৩২ বার
♠♠
“দাদা নতুন ডিজাইনের আর কোনো শাড়ি নেই?
দোকানি বিড়বিড় করতে লাগল,
” আরো নতুন ডিজাইনের শাড়ি! “
” প্লিজ দাদা, আপনি এমন কিছু দেখান, যেটা সম্পুর্ণ লেটেস্ট। সব বয়সী রমণীকে তার বিশেষ দিনে পরলে ভালো লাগবে।”
” আসলে আপনি কী চাচ্ছেন? আমি বুঝতে পারছি না, না-কি আপনি বোঝাতে পারছেন না বুঝলাম না। আমাদের তিন পুরুষের কাপড়ের ব্যবসা। ছোটবেলা থেকে একবেলা স্কুলে পড়তাম, বাকি সময় দোকানে বসতাম। কাপড়ের ব্যবসা, কাপড় এসব আমাদের রক্তে মিশে আছে। আপনি সেই তিন ঘণ্টা ভালো মানের, নতুন ডিজাইনের শাড়ি চাচ্ছেন। ভালো মানের, খারাপ মানের, নতুন ডিজাইনের, পুরাতন ডিজাইনের সব শাড়িই আপনাকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কার জন্য শাড়ি নিবেন, তার বয়স কত? বা কয়টা শাড়ি নেবেন কিছুই বলছেন না। আপনি দোকানে আসার পর থেকে একটা সূতাও আমি বিক্রি করতে পারিনি।”
সায়মন লজ্জা পেয়ে গেল। পুরো দোকানের অবস্থা যে একটা স্ট্রোর রুমের মতো করে ফেলেছে এতক্ষণ বুঝতে পারেনি।
“সরি দাদা, আমার আসলে আপনাকে আগেই বলা উচিত ছিল। আমি আমার মায়ের জন্য শাড়ি নেব।আমার মায়ের বয়স ষাট।”
“ও আচ্ছা, আগে বলবেন তো। আমাদের আজকে বিরাট লস হয়ে যাবে। আপনি যদি একথাটা আগে বলতেন, আমি এসব শাড়ি নামাতাম না। মধ্য বয়স্ক নারীদের জন্য আলাদা শাড়ী আছে।”
দোকানির চোখেমুখে বিরক্তি, কিন্তু ঠিকমতো প্রকাশও করতে পারছে না। ক্রেতা যে একজন কেতাদুরস্ত ব্যক্তি, দামি গাড়ি, দামি স্যুট সাথে বডিগার্ড নিয়ে এসেছে।
প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সোমনাথ বাবু কাপড়ের ব্যবসার সাথে জড়িত। এই কাপড়ের ব্যবসাই তার পরিবারের রুটি রোজগার সব। এরকম অদ্ভুত কোনো ক্রেতা তার চোখে পড়েনি।
এই লোকটা নিশ্চয়ই তার মায়ের জন্য ১০/২০ টা শাড়ি নিবে না। সাত, আটজন কর্মচারী তিন ঘণ্টা ধরে শাড়ি দেখানোর পর বলছে, ৬০ বছর বয়সী মায়ের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানে পরার জন্য শাড়ি নেবে।
এটা কোন ধরনের রসিকতা!
“দাদা আপনি মন খারাপ করবেন না। আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না, কোন বয়সী নারী কী ধরনের শাড়ি পরে? শাড়ি পরিহিতা নারী কাছে থেকে খুব একটা দেখা হয়নি। আপনি এক কাজ করেন, সব ধরনের শাড়ি থেকে বেছে বেছে ভালোগুলো প্যাকেট করে দিন। মোট টাকা যাই হোক কোনো সমস্যা নেই। হিসাব করে বললে আমি আপনাকে চেক লিখে দিয়ে যাব। আমি ব্যারিস্টার সায়মন চৌধুরী। এটা আমার কার্ড। আশা করি চেনার কথা। আসলে আমার মা যে শাড়ি পরতে চান, এটাই আমি এতদিন জানতাম না। আজ জানতে পারলাম। তাই তাঁর পছন্দের সব শাড়ি কিনে দিতে চাচ্ছি।”
দোকানির বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা একটা ইমোশনাল কেস। এখানে সব অসম্ভবই সম্ভব হবে। সমাজের উচ্চ প্রতিষ্ঠিত ছেলে, যার দৈনিক ইনকাম কয়েক লাখ টাকা। তার মা শাড়ি পরতে চেয়েছেন, তাই ছেলে পুরো শো-রুম কিনে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে আজ থেকে বিশ বছর আগে। এক আমেরিকান প্রবাসী তার বিয়ের জন্য শাড়ি কিনবেন। পছন্দ না করতে পেরে অবশেষে পুরো শো-রুমের সব শাড়িই কিনে নিলেন। তখন অবশ্য শো-রুমটা এত বড় ছিল না।
সোমনাথ বাবু দুই হাত কাচুমাচু করে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন
” স্যার আপনি চলে যান আমি বুঝতে পেরেছি। বয়স তো আর কম হলো না আমার কর্মচারী এক ঘন্টার মধ্যে আপনার বাসায় সব শাড়িই পৌঁছে দেবে। টাকা পয়সা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আগে শাড়ি পৌঁছে দেই তারপর বলব কত টাকা হয়েছে।”
” ধন্যবাদ দাদা, আপনি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন, আমি এতেই খুশি হয়েছি। হিসাব-নিকাশ করে আমাকে জানিয়ে দিলেই হবে। আমার আরো কিছু কেনাকাটা করার বাকি আছে মায়ের জন্য। আজকে দিনটা পুরোটাই মায়ের জন্য, আজ তাঁর বহু বছরের পুরানো স্বপ্ন পূরণের দিন।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সায়মন আবারও বললেন
” আচ্ছা দাদা, আসছি, আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।”
সোমনাথ বাবুর এই মহীয়সী রমণীকে দেখার ভীষণ ইচ্ছে জাগল। কোন মায়ের গর্ভে এমন রত্নের জন্ম হলো। তারও তো মা আছে, তার বাবারও তো মা ছিল, তার ছেলেরও তো মা আছে। কই কখনো তো বিশেষভাবে পাঁচ টাকার পান কিনেও মাকে দেয়া হয়নি।টাকা পয়সা হয়তো বেশি নেই, কমও তো নেই। এদের কাছে সত্যি সমাজের অনেক কিছু শেখার আছে।
♠♠
শায়লা বেগম বাড়ির সামনে বাগানে পায়চারি করছেন। আসরের নামাজ পড়ে তিনি প্রতিদিনই এভাবে বাগানে হাঁটতে আসেন। এটা এখন দৈনিক রুটিন হয়ে গেছে। এখন আর ইচ্ছে না করলেও হাঁটতে হয়। কারণ ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্টের সমস্যাসহ অনেকগুলো ক্রিটিক্যাল শারীরিক সমস্যা বিনা দাওয়াতে শরীরে এসে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে। ডাক্তার বলেছেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে, প্রতিদিন সকাল- বিকাল দুই ঘন্টা হাঁটতে হবে। একটা সময় ঘুরে বেড়ানোর কত ইচ্ছে ছিল শায়লা বেগমের। ঘরে, বাইরে ছাদে, বাগানে, মার্কেটে, রেস্টুরেন্টে, পার্কে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এসব ভাবতে ভাবতে শায়লা বেগমের বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। এ দীর্ঘশ্বাসের শব্দ দশহাত দূরে থেকেও রমজান শুনতে পেল।
রমজান হলো এবাড়ির মালি কাম দারোয়ান। পুরো বাগান পরিষ্কার করা, গাছে পানি দেয়া, কেউ আসলে গেট খুলে দেয়া এসব টুকিটাকি কাজ করে। বয়স প্রায় ২৫ বছর। ছেলেটা ভালো। মালিকের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। প্রায় পাঁচ বছর এবাড়িতে আছে, এখন পর্যন্ত খারাপ কিছু চোখে পড়েনি। ছেলেটা কাজ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না।
রমজান হাত থেকে কাস্তে ছুঁড়ে ফেলে দৌঁড়ে এসে শায়লা বেগমের সামনে দাঁড়াল
“ম্যাডাম কোনো সমস্যা? সাপ জোঁক নয় তো!”
“সমস্যা তো বটেই। “
“কী সমস্যা ম্যাডাম? “
“তোমাকে না বলেছিলাম ম্যাডাম, ম্যাডাম করবে না! এসব সাহেবি ব্যাপার-স্যাপার আমার ভালো লাগে না। আমাকে খালাম্মা ডাকবে। মনে থাকবে?”
রমজান দুই হাত কাচুমাচু করে বলল
” না মানে বড় স্যার বলেছিলেন।”
শায়লা বেগম দুই চোয়াল শক্ত করে অনেকটা শাসনের সুরে বললেন
“খালাম্মা বলতে আমি বলছি।”
রমজান ভয় পেয়ে যায়। বড় ম্যাডামের এরকম অগ্নিমূর্তি সে কখনো দেখেনি। সব সময় হেসে হেসে কর্মচারীদের সাথে কথা বলেন। তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান করেন। অনেক সময় বাড়ি যাওয়ার সময় বেতনের বাইরেও বাড়তি টাকা দেন। বাবা- মার খোঁজ-খবর নেন।
আজ আবার কী হলো?
কী জানি! বড়লোকের ব্যাপার-স্যাপার বুঝা যায় না সবসময়। কখনো কখনো ভালো, কখনো কখনো খারাপ।
কাস্তে হাতে নিয়ে রমজান আবার নিজের কাজে ফিরে গেল।
স্যার বলেছেন, এ কথাটা শায়লা বেগম মানতে পারলেন না। এই বয়সেও তাঁর নিজের কোনো পছন্দ-অপছন্দ থাকবে না! ইচ্ছে অনিচ্ছে থাকবে না!
শাশুড়ি বলেছেন, ননদ বলেছে,জা বলেছে, স্বামী বলেছে, বাড়ির পুরনো হেল্পিং হ্যান্ড বলেছে। তাদের এটা পছন্দ, এটা পছন্দ না ইত্যাদি, ইত্যাদি। নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো অন্যের পছন্দ অপছন্দের, ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্যায়ন করতে করতে কাটিয়ে দিয়েছেন। এতগুলো বছর মেরুদণ্ডহীন প্রাণী হয়ে বেঁচে ছিলেন।
এবয়সে এসেও শায়লা বেগমকে ছেলে পুলে ম্যাডাম ডাকবে না-কি খালাম্মা ডাকবে সেটাও স্যারের পছন্দ!
এই বয়সেও কি তার মতামত প্রকাশের কোনো অধিকার থাকতে নেই?”
♠♠
“সুমন আমাকে ডায়েরিটা বের করে দাও। “
“কোন ডায়েরি স্যার? “
সায়মন অগ্নিমূর্তিতে সুমনের দিকে তাকাল। তার দৃষ্টিতে তীব্র বিরক্তি।
” সরি স্যার, আমি ভেবেছি….। “
“একদম চুপ যা বলছি তাই কর।”
ছেলেটা এত বেশি কথা বলে। সারাক্ষণই সুযোগ খোঁজে কথা বলার জন্য। একটা সুযোগ পেলেই আধাঘন্টা বিরক্তিকর লেকচার দেয়। তার বাবার বাড়িতে কী হয়েছে, নানার বাড়িতে কী হয়েছে ব্লা ব্লা ব্লা।
এখন ডায়েরি নিয়ে মিনিয়াম দশ মিনিট জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতো।
ধমক দেয়ায় চুপ হয়েছে। এই ছেলেটাকে ব্যক্তিগত এসিস্টেন্ট হিসেবে আর রাখা যাবে না। শুধু মায়ের দিকে তাকিয়ে রাখা হয়েছে। এরা কিভাবে যে তার সহজ সরল মাকে পটিয়ে ফেলেছে।
সুমন ডায়েরীটা হাতে দিলো সায়মনের।
ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সাইমন বুকের সাথে লাগিয়ে চুমু খেলো। এই ডায়েরিটা তার মায়ের হাতে লেখা। গতকাল বুক সেলফ এর পিছনের তাকে পুরনো খাতা পুস্তকের সাথে খুঁজে পেয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে প্রায় ২০ বছর এই ডায়েরিতে কেউ হাত দেয়নি। মা তাঁর বিয়ের পরের জীবনের সুখ- দুঃখগুলো ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন। অব্যক্ত সব ব্যথা, যন্ত্রণা, চাওয়া-পাওয়া সবে ডায়েরি পড়েই সায়মন জানতে পেরেছে। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছে ছিল, লাল বেনারসি শাড়ি পরে, গা ভর্তি গয়না পরে, টকটকে লাল মেহেদি পরে, চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াবেন। সায়মনের মায়ের হাসির শব্দে এবাড়ির দেয়ালে প্রতিধ্বনি হবে। অথচ তার মা সবার ইচ্ছে অনিচ্ছের মূল্যায়ন করতে গিয়ে নিজের কোনো স্বপ্নই পুরন করতে পরেননি।
ওহ! এত কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছেন সায়মনের মা। এত কাছে থেকেও সায়মন সেটা বুঝতে পারেনি।
সায়মনের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে মনে মনে বলছে
” মা আমি তোমার কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখব না। তোমাকে নিয়ে আমি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াব।”
সুমন স্যারের চোখের পানি দেখে অবাক হয়ে গেল।কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। আজকে সারাদিন স্যার অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। একবার শাড়ীর দোকানে, একবার গয়নার দোকানে, একবার কসমেটিকসের দোকানে।
বোঝা যাচ্ছে ম্যাডামের জন্য এসব কেনাকাটা।
কিন্তু হঠাৎ কেন? আজ ম্যাডামের বিশেষ কোনো দিন কি-না কে জানে!
প্রায় দশ বছর ধরে এই বাড়িতে আছে সুমন। আগে ঘরে কাজ করত, এখন বাইরে করে। বড় ম্যাডামকে সবসময় একই রকম দেখছে।
কখনও বাড়াবাড়ি ধরনের সাজগোজ চোখে পড়েনি। কাল থেকে রোজ ম্যাডাম লাল বেনারসি শাড়ি পরে হাঁটবেন। ভাবতেই হাসি পেল সুমনের। সে পিক করে হেসে উঠল।
♥♥
শায়লা বেগম লজ্জায় মরে যাচ্ছেন। ছেলেটা হঠাৎ করে এটা কী ধরনের পাগলামী শুরু করেছে। লাল টকটকে রঙিন শাড়ি পরিয়ে, সারা শরীরে সোনার গয়না পরিয়ে এবার নিয়ে এসেছে মাকে পাড়ার মোড়ের চটপটির দোকানে। নির্ঘাত বাড়ির সবার সাথে সাথে, পথে ঘাটের লোকজনও সবাই পাগল ভাবছে।
শায়লা বেগম বুঝে উঠতে পারছেন না, কোথায় যে নিজেকে লুকাবেন?
রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে পড়ে থাকা সূচ পর্যন্ত দেখা যায়।
অথচ কেন জানি খারাপও লাগছে না। পঁয়ত্রিশ বছর আগে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। যখন খুব ইচ্ছে করতো নতুন বরের পাশে দাঁড়িয়ে পাড়ার মোড়ে চটপটি খেতে।
” মা সত্যি করে বলো তো তোমার ভালো লাগছে না?”
“না।”
“বাবাকে আসতে বলব?”
শায়লা বেগম দ্বিগুণ চিৎকার দিয়ে বললেন,
” একদম না!”
” আসলে আমিও চাই না বাবা আসুক। যে মানুষটা পঁয়ত্রিশ বছর তোমার সাথে একই ছাদের নিচে থেকেও আবিষ্কার করতে পারেনি, তোমার কী পছন্দ? তাঁর এখানে আসার কোনো দরকার নেই। আমি তোমাকে সারা পৃথিবী ঘুরিয়ে দেখাব।
আজ প্রথমদিন চটপটির দোকানে নিয়ে আসলাম। পাড়ার মোড়ের দোকানে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোয় চটপটি খাওয়ার তোমার খুব শখ আমি জানি। আজ থেকে তুমি একদিন একটা শাড়ি পরবে , একদিন একসেট গয়না পরবে। আমি তোমাকে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাব। আমি তোমার কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখবো না। “
“না-রে বাবা আমাকে ছেড়ে দে। সকালের সোনা রোদের আনন্দ দুপুরের কড়কড়ে রোদে পাওয়া যায় না। আমার তো এখন গোধুলি লগণ। এসব আর আমাকে মানবে না। তার চাইতে আমার জীবনের না পাওয়া বুঝে, তুই তোর জীবনের ভুলগুলো শুধরে নিস। আজ সারাদিন যা যা করেছিস সেটাই এখন আমার জন্য অনেক। শেষ প্রহরে নতুন স্বপ্ন আর মনে না জাগুক।”
সায়মন মাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। শায়লা বেগমের দু চোখে তখন অশ্রুর বন্যা। আনন্দের না-কি বেদনার তিনি নিজেও জানেন না। শুধু জানেন, তাঁর চোখে আজ এক অন্যরকম সন্ধ্যা নেমেছে, তাতে এক সমুদ্র পরিতৃপ্তি আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..