আসুন, আজ এমন একজনের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই এবং তাঁর কাজগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই যাঁকে হয়তো এই বাংলাদেশের একজন ব্যক্তি চিনে কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আসলে এভাবে বলাটাও ঠিক না, ছোট্ট একটি শহরের ছোট্ট একটি গলিতে বসে পুরো দেশকে ও দেশের মানুষদের এভাবে জাজ্ করা মোটেও শোভনীয় নয়। এই দেশের এমনও গলি কিংবা জায়গা আছে যেখানে উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম হয়েছে এবং আমি এখন এটাই বিশ্বাস করি যে, এই দেশের কোনো না কোনো জায়গায় এতো দূর্দান্ত প্রতিভাধর ব্যক্তি আছেন যাঁরা পুরো পৃথিবীতে আলোড়ন ফেলতে পারে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তাহলে আসুন জেনে নিই এমনই একজন ব্যক্তি যিনি গত কয়েক দশক ধরে পুরো রাশিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এবং করে চলেছেন৷ তিনি ইতিমধ্যে পাশ্চাত্যের সকল রাষ্ট্রে তাঁর ধ্বজা উত্তোলন করে চলেছেন।
পোনোমারেভ গ্রিগরি আনাতোলিয়েভিচ (জন্ম 27 এপ্রিল, 1974)
তিনি একজন পাথর শিল্পের মাস্টার। পাথর কাটার দক্ষ শৈল্পিক গুরু। এ কে ডেনিসভ-উরালস্কির ক্রিয়েটিভ ইউনিয়ন অফ স্টোনকিউটারের সদস্য, স্বেয়াতোগর কর্মশালার শৈল্পিক পরিচালক। রাশিয়ার
ইয়েকাটারিনবুর্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
সারাবিশ্বে পাথরশিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণে ডেনিসভ -উরালস্কির ক্রিয়েটিভ ইউনিয়ন পশ্চিমা রাষ্ট্রে আর দ্বিতীয় নেই। মূলত এরাই সারাবিশ্বে পাথরশিল্প রপ্তানি করে থাকে৷
১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
১৯৯৪ সালে তিনি সার্ভারড্লভস্ক আর্কিটেকচারাল ইনস্টিটিউট (পরে ইউরাল স্টেট একাডেমি অফ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আর্ট), শৈল্পিক পাথর প্রক্রিয়াজাতকরণ বিশেষজ্ঞ, শিল্প ও কারুশিল্প বিভাগে প্রবেশ করেন। পড়াশোনার সময় চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের খুব পছন্দ ছিল তাঁর। ⠀
১৯৯৭ সাল থেকে তিনি পাথর কাটা শিল্পের প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত অংশ নিয়েছেন। পড়াশোনার সময় তিনি ফ্লোরেনটাইন ফ্ল্যাট মোজাইক কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন, তবে মূলত ক্যামোমের শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। যেখান থেকে তিনি শিল্পের অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
২০০০ সালে তিনি স্নাতক পাশ করেন । আর তারপরই তিনি নিজস্ব অর্থে খুলে বসেন পাথর শিল্পের কারখানা। যেখানে বিশ্বের সর্বাধিক দক্ষ ভাস্কর্যশিল্পীরা কাজ করেন। বর্তমানে তাঁদেরই সহযোগিতায় সারাবিশ্বে বছরের অসংখ্য ভাস্কর্য রপ্তানি করে থাকেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তিনি ২০০৪ সালে নিজেরই নামে একটি যাদুঘর খুলে বসেন। তিনি ঘোষণা করেন, তাঁর সর্বাধিক পছন্দ ও জনপ্রিয় ভাস্কর্যগুলি এখানেই সংরক্ষিত থাকবে। মানুষ কত সৃজনশীল ও মননশীল হলে এমন চিন্তা করেন ভাবা যায়! জীবনে সকল কিছু ত্যাগ করে ভাস্কর্য তৈরির পেশাকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কি আশ্চর্য দেখুন, তিনি নিজেও জানেন, যুগ যত আধুনিক হচ্ছে ততই ভাস্কর্যের চাহিদা কমে আসছে। এতে কোনো লাভ বা ফায়দা নেই। এতোবড়ো সংস্থা তিনি পরিচালনা করেন, নিশ্চয়ই সেখানে উন্নত মেশিন ও দক্ষ শ্রমিক আছে। সেসবের খরচ বহন করে ভাস্কর্য তৈরির তার সংস্থা কি চালানো সম্ভব!
আসলে আমরা তো বাংলাদেশী, এসবের মর্ম আমরা কোনোদিন বুঝবো না এবং তার এসব কার্যকলাপ কারো কাছে আশ্চর্য লাগবে,আর কারো কাছে পাগলামি। যাকে গ্রাম্য ভাষায় বলে, কাজ নাই তো খই ভাজ। কিন্তু একটা কথা বাঙালিরা ভুলে যান যে, বিদেশিরা যা কিছু করে তার পিছনে থাকে বৃহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। যার কারণে এশিয়া উপমহাদেশ থেকে ইউরোপ উপমহাদেশের ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্রিয়েটিভ এবং সেটা আদি সভ্যতা থেকেই ক্রিয়েটিভ। উন্নতর চেয়ে অধিক উন্নত।
নিচে তাঁর ছবি ও তাঁর তৈরি ভাস্কর্যগুলোর ছবি দেয়া হলোঃ
Leave a Reply