আলহামদুলিল্লাহ্, কোনো এক নাম না জানা কারণে আমার হুমায়রাকে সব বাচ্চারা ভীষণ পছন্দ করে। সে যেখানেই যায় আশেপাশে কিছু বন্ধু জুটিয়ে নেয়। তারা হুমায়রার জন্য সব কিছু করতে পারে। নিজের বসার জায়গা ছেড়ে দেয়া, পছন্দের উপহার নিয়ে আসা, হুমায়রার পাশে বসার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করা, আরও অনেক কিছু।
এটা দাদার বাড়ি হোক, নানার বাড়ি হোক বা স্কুল।
এবার বাবার বাড়ি যাওয়ার পর জানতে পারলাম, চারবছর বয়সী এক মেয়ের মা (যার সাথে হুমায়রার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে) আহ্লাদে ডগমগ হয়ে বলল,
” নাফিসা হুমায়রাকে ভীষণ পছন্দ করে। ওর আব্বুকে বলেছে হুমায়রার জন্য খেলনা আনতে, চকলেট আনতে। সে বিয়ে করলে না-কি হুমায়রাকেই করবে।”
হুমায়রাকে পছন্দ করে, হুমায়রার জন্য চকলেট, চিপস আনতে বলছে এতটুকু পর্যন্ত শুনতে আমারও বেশ ভালোই লেগেছে।
‘হুমায়রাকে বিয়ে করতে চায়’ একথাটা শুনে আমার কেমন যেন অস্বস্তিবোধ হলো। যদিও ওরা দুজনেই মেয়ে, বাচ্চাটার বয়সও মাত্র চার বছর। আমার হুমায়রাও নেহাৎই শিশু। তারপরও বিষয়টা আমার মোটেও ভালো লাগেনি।
দুঃখজনক হচ্ছে আমি আমার এই ভালো না লাগা, এই অস্বস্তিবোধ কারো কাছে শেয়ার করতে পারিনি।
উল্টো আমার নিজেকে অসুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানুষ মনে হয়েছে। অকারণে অস্বস্তি হওয়ায় আমি নিজেকে মৃদু ভৎসনাও করেছি।
যদিও নারী-পুরুষের সম্পর্কগুলো প্রাকৃতিক। একজন সুস্থ মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময় পর নিজ থেকেই এগুলো শিখে যায়। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকে কষ্ট করে মুখ ফোটার আগেই শিখাতে হয় না তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে।
বা উদ্ভট কাউকে বলতে হয় না বড় হলে তুমি আমার বউ হবে। অথবা, তোমার ছেলেকে আমার মেয়েকে বিয়ে করাব।
এসব কথা অনেক শিক্ষিত সচেতন মানুষও আহ্লাদ করে নিজের সন্তানকে নিয়ে বলে বা কেউ বললেও প্রতিবাদ করে না।
আমার কেন জানি না কোমলমতি কোনো শিশুর সাথে কেউ এই ধরনের কথাবার্তা বললে ভীষণ রাগ লাগে। বাচ্চাদের শিখানোর মতো এই জগৎ সংসারে আরও অনেক কথা আছে, আরও অনেক কাজ আছে সেসব শেখাও না বাপু! অযথা এসব শিখিয়ে তাকে ইচড়ে পাকা কেন করছ?
একটা ছেলের সাথে আরেকটা ছেলের সম্পর্ক, আন্তরিকতা, ঘনিষ্ঠতা একটা মেয়ের সাথে আরেকটা মেয়ের সম্পর্ক, অান্তরিকতা, ঘনিষ্ঠতা পৃথিবীর আট দশটা স্বাভাবিক ঘটনা, যেমন সূর্য ওঠা, বৃষ্টি হওয়া, রাত হওয়ার মতোই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল বা হয়েই আসছে।
কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে একটা মেয়ে আরেকটা মেয়ের সাথেই বিছানা শেয়ার করে। কোনো মেয়ে তার মেয়ে বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা বললে, কোথাও বেড়াতে গেলে বাবা-মা ছেলে বন্ধুর চেয়ে বেশি স্বস্তিবোধ করেন। মনে করেন একটা মেয়ে তার ছেলে বন্ধুর চেয়ে মেয়ে বন্ধুর কাছেই বেশি নিরাপদে আছে।
অথচ কী শুরু হয়েছে চারপাশে! ভাবতেই কেমন যেন ভয়ে বুক কেঁপে উঠে।
কিছুদিনের মধ্যে এই অসুস্থ সম্পর্কগুলো বেশ ঘটা করে সংবাদ মাধ্যেমে প্রচার, প্রচারনা করা হচ্ছে। আগে এসব অন্য দেশে, অন্য সংস্কৃতিতে শোনা যেত। বাংলাদেশে এসব ছিল না। বা থাকলেও কেউ মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি।
কেউ জানতে পারলে তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হতো। সমাজচ্যুত করা হতো। অথচ এখন মনে হচ্ছে অন্য আট দশটা স্বাভাবিক ঘটনার মতোই এটাও একটা স্বাভাবিক ঘটনা।
আচ্ছা এরকম ঘটনাগুলো প্রচার করে আপনি অন্যদেরকেও উসকে দিচ্ছেন না তো! এদেরকে শাস্তি না দিয়ে অন্যদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না তো!
দয়া করে আপনার সন্তানের মাঝে কোনো অস্বাভাবিবতা লক্ষ্য করলে সাথে সাথে তাকে সংশোধন করুন। হোক তার এক বছর বা দশ বছর।
আমরা নিশ্চয় অনেকেই লূত (আঃ) কথা এবং তাদের উপর বর্ষিত হওয়া গজবের কথা জানি।
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে এই কঠিন অপরাধ থেকে হেফাজত করুন।আমিন।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply