আমি বিভিন্ন সাহিত্য প্রোগ্রামগুলোতে যাই মনের টানে। প্রায় প্রতিটা সংগঠন থেকেই আমি দাওয়াত পাই। ইচ্ছে থাকলেও প্রায়ই পারিপার্শ্বিকতার জন্য যাওয়া হয়ে উঠেনা। সাধারণত আমরা প্রোগ্রামগুলোতে যাই সাহিত্যকে ভালবেসে। তার উপর উপরি পাওনা স্বজনদের সাথে সাক্ষাত। আসলে করোনা কালীন সময়টাতে আমরা সাহিত্যানুরাগীরা পুরো একটা পরিবারে পরিণত হয়েছি। তাই যে কোন অনুষ্ঠানে যেতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করি। খুব সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে আমার দেখা কিছু কথা বলার জন্যই এতকিছুর অবতারণা করলাম।
আমি প্রায়ই দেখি,নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর জন্যই কী না জানিনা একগাদা অতিথিকে মঞ্চে বসানো হয়। তারপর তাঁদের বক্তব্য শোনার ধৈর্য কারো থাকেনা। আর আয়োজক কমিটি ডায়াসের সামনে গিয়ে তাঁদের তাড়া দিতে থাকেন বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার জন্য। সেদিন তো এক অনুষ্ঠানে অতিথির হাত থেকে রীতিমতো মাইক নিয়ে যাওয়ার অবস্থা! আমি বুঝিনা, এতো অতিথি আনার দরকারই কী আর তাঁদের সবার সামনে অপমান করার অপচেষ্টা ই বা কেন! এটা খুবই দৃষ্টিকটু। অতিথিকে সম্মান দেয়া আয়োজকদের নৈতিক দায়িত্ব। মঞ্চ ভরে অতিথি বসালেই কোন আয়োজন সার্থক হয়না, সার্থক তখনই হয় যখন অনুষ্ঠান শৃংখলিত থাকে। অতিথিদের সামনে মঞ্চের উপরে,সামনে সেল্ফি নাটকগুলো খুবই অস্বস্তিকর। আয়োজকদের এই দিকটি কঠোর হাতে হ্যান্ডেল করা উচিত।
আরেকটি ব্যাপারে না বলে পারছি না, খাবার বিতরণ।
আমার মনে হয় আয়োজক কমিটি এটাই ভাবেন যে দর্শকেরা কেবলমাত্র খাবারের জন্যই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তাই খাবারের লোভ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত বসিয়ে রাখতে চান। এটা খুবই বাজে ব্যাপার। অনুষ্ঠান শুরু হয় ২/৩ টা থেকে। স্বাভাবিকভাবেই লাঞ্চ খেয়ে সবাই বের হন। আর লাঞ্চও তখন স্বাভাবিক সময় থেকে অন্তত এক ঘন্টা আগে খেতে হয়। অনুষ্ঠানও কমপক্ষে সাড়ে নয় থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে। তো এই দীর্ঘ সময়ে অনেকে আসেন, থাকেন আবার চলে যান। কোন কোন প্রোগ্রাম এমন জায়গায় হয় যে এক কাপ চা খাওয়ারও জায়গা থাকেনা। তো খাবারটা যদি সন্ধ্যার পরপরই সার্ভ করা যায় তাহলে কিন্তু বেশ হয়। পেট ভরা থাকলে পরবর্তী অংশটুকু দেখতেও ভালো লাগবে, বিরক্তিকর মনে হবে না। আগে দেখতাম শুকনো খাবার সার্ভ করা হতো, এনাউন্স করা হতো প্যাকেট যাঁর যাঁর হাতে রাখতে।আয়োজক কমিটি পরে তা সংগ্রহ করে নিতেন। আর এখন খাবার দেয়া হয় রিচ ফুড আর এনাউন্স করে দেয়া হয় এখানে খাওয়া যাবে না। কেন ভাই, এমন খাবার কেন দেন যা খাওয়া যাবে না, আর মানুষকে ডেকে এনে ক্ষুধায় কাতর কেন করেন? তাহলে কি আয়োজক কমিটি এটাই ভেবে নেন, যাঁরা প্রাণের টানে অনুষ্ঠানটির শেষ পর্যন্ত অবস্থান করেন, তাঁরা খাওয়ার লোভে বসে থাকেন!
আর সাজসজ্জার কথা কী বলবো! মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধনে যখন কিম্ভূতকিমাকার পোষাকে চলে আসি, তখন অতিথিরা তো কিছু বলতেই পারেন! আমরা আসলে জানিই না কোথায় কোন ড্রেসটা মানানসই। মরার বাড়ি, বিয়ে বাড়ি, সাহিত্যানুষ্ঠান, জন্মদিনের পার্টি সব জায়গায় যে এক পোশাক মানানসই নয়, সেটা আমরা ভুলে যাই।
সকল আয়োজক কমিটির প্রতি অনুরোধ, আমার এই কথাগুলোকে নেগেটিভ সেন্সে না নিয়ে পজেটিভলি চিন্তা করুন। ধন্যবাদান্তে,
Leave a Reply