গতকাল নিউ ইয়র্কের আবহাওয়া বেশ চমৎকার ছিলো। তুলনামূলকভাবে ঠান্ডাও ছিলো কম। দুবোন ভাবছিলাম কোথায় যাওয়া যায়। তারপর বেরিয়ে গেলাম লিটল আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
‘লিটল আইল্যান্ড পার্ক’; নিউ ইয়র্কে হাডসন নদীর ওপর প্রায় ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত একটি ভাসমান পার্ক। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্যে ভরপুর এই পার্কটি ম্যানহাটনের ১১তম স্ট্রিটের পাশে ১৩ এভিনিউ’র তীরে। ১৩২টি কংক্রিট টিউলিপ-এস্কো পোডের উপরে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ-শ্যামল এ পার্ক।
এখানে এলে দর্শনার্থীরা একটি স্নিগ্ধ ও ঝলমলে সবুজ পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন। পার্কটিতে বসার জায়গা রয়েছে। কেউ চাইলে ঘুরে বেড়াতেও পারবেন। হালকা সোনালী রোদ গায়ে মেখে সবুজ ঘাসে বসে গল্পও করা যাবে অবলিলায়।
নিজের শহরের মানুষকে এই অসাধারণ পার্কটি উপহার দিয়েছেন ‘হলিউড মুঘল’ নামে খ্যাত মার্কিন শিল্পোদ্যোগী ব্যারন বেরি ডিল্লর এবং তার ফ্যাশন ডিজাইনার স্ত্রী ডায়ান ফন ফার্স্টেনবার্গ ।
বেরি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নির্মিত উদ্যানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এ বছর ২১ মে ।
ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার সংস্থা এমএনএলএর সহযোগিতায় এর ডিজাইন করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইংরেজ স্থপতি টমাস হেথারউইক। মূলত ‘পানিতে ভাসমান একটি পাতার’ প্রতিচ্ছবিকে কল্পনা করে এ পার্কের ডিজাইন করা হয়েছে।
লিটল আইল্যান্ড পার্কে সাউথ ব্রিজ নামে একটি চমৎকার প্রশস্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে। পার্কের দক্ষিণে কংক্রিটের সেতুটি পশ্চিম দিক থেকে দর্শনার্থীদের পার্কে প্রবেশ করাবে।
নাম লিটল আইল্যান্ড হলেও এর পরিসর অনেক বড়। ২.৪ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই পার্কে ৬৮৭ আসনের একটি বিশাল অডিটোরিয়াম আছে। গ্রীষ্মে এখানে ফ্রি কনসার্ট, নৃত্য এবং শিশুদের জন্য নানা অনুষ্ঠান করা হয়। ছোটদের জন্য কিছু শিক্ষামূলক ইভেন্ট করার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের।
এ পার্কের মূল আকর্ষণ প্রায় ৪০০ প্রজাতির রঙিন ফুল গাছ, বহুবর্ষজীবী ৩৫ প্রজাতির গাছ, ৬৫ প্রজাতির গুল্ম, ২৭০ ধরণের ঘাস। এসব গাছগাছালি দেখে শুরুতে আপত্তি জানানো পরিবেশবাদীরাও চমকে গেছে। গাছগুলোর কারণে প্রযুক্তিগতভাবেও সমৃদ্ধ হয়েছে এই উদ্যান।
বেরি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতিমনা শিল্পোদ্যোক্তা। হলিউডের বিখ্যাত প্রোডাকশন হাউজ প্যারামাউন্ট পিকচার্স, টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স-এর সিইও ছিলেন তিনি। ৮ বছর আগে ম্যানহাটনের পশ্চিম দিকের এই ভাসমান উদ্যান তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
কিন্তু পরিকল্পনার পরপরই বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। লিটল আইল্যান্ড নির্মাণ নিয়ে মামলাও হয়। পরিবেশবাদীদের নানা রকম বাধার মুখে পড়েও পার্কটি নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান বেরি। তবে ২০১৭ সালে কাজটি শেষ করার ইচ্ছে চলে গিয়েছিল তার। একবার ভেবেছিলেন পিছিয়ে আসবেন। কারণ মামলা হওয়ায় আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছিল তাকে। অভিযোগ উঠেছিল, এই কাজ হলে নদীর বাস্তুতন্ত্র প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু শেষমেশ জয়ী হন তিনি। বেরি এটিকে পরিবেশ-বান্ধব হিসেবেই নির্মাণ করেছেন। কেবল উদ্ভিদের পিছনেই তিনি ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছেন।
পার্কটিতে প্রায় ১০০০ লোক একসাথে অবস্থান করতে পারে। পার্কে প্রবেশের সময় দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট কাটতে হয় না। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য লিটল আইল্যান্ড ভীষণ আকর্ষণীয় একটি জায়গা। এখানে এলে মিষ্টি-সুন্দর সময় উপভোগ করতে পারবে যে কেউ।
আইরীন নিয়াজী মান্না
জামাইকা, নিউ ইয়র্ক।
১৮.১১.২০২১
Leave a Reply