1. banglamailnews72@gmail.com : banglamailnews : Zakir Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
# আহারে # খোরশেদ ।। সমাজে নতুন অপরাধী চক্র তৈরী হচ্ছে কিন্তু ভবিষ‍্যতে এদের রক্ষা করবে কে??।। – – – আশিক ফারুকী “অতঃপর” __ সালমা আক্তার বীরাঙ্গনা নই আমি মুক্তিযোদ্ধা – – – শাহনাজ পারভীন মিতা জলপাই রঙের স্বাধীনতা – – – আরিফুল হাসান প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান – – – স্বাধীন আজম –   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি, স্বপ্নমায়া – – – – মাহজাবীন আহমেদ বুড়ি মরে গেল – – – মোঃ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন উন্নত জীবন গড়ার দারুণ সময়:– ————–টিপু সুলতান লেখক ও সমাজ চিন্তক ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই পারে ডায়াবেটিস রোগ নির্নয় ও রোগের চিকিৎসা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা – – – ডা: সাদিয়া আফরিন 

বিষ বাষ্প (১ম পর্ব) ### বন্দনা আমির

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২০
  • ২৯১ বার
রুম্পা থর থর কাঁপছে ।
কি বিশ্রী গালি গালাজ করছে ওকে রাকীবের বড় বোনেরা পাশের রুমে বসে !! এসব বিশ্রী কথা রুম্পা কখনো শোনেনি আগে, এসব গালি তো বস্তিবাসীরা দেয় ! অথচ সে সব কথা আজ ওকেই শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে তারা এবং অকারণে !!
কেন বলছে , কি তাদের উদ্দেশ্য এসব বুঝতে চাওয়ার চেয়ে রুম্পার এ বাসা থেকে বেড়িয়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে এ মুহুর্তেই । চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে আর রূম্পা ছোট একটা ব্যাগে সব গোছ গাছ করে নিচ্ছে । বড় ভাই তানভীরের বাড়িতেই যাবে এখন । তারপর ভাবা যাবে আর সব কিছু ।
টুকটাক কিছু জিনিস ব্যাগে গুছিয়ে বাসা থেকে বের হবার সময় স্বামী রাকিব রুম্পাকে একটি বারের জন্য ও থামতে বলল না । তার বিন্দুমাত্র কোনো ভূমিকা দেখা গেলনা । সাত বছর তো একদম কম সময় না ! মানুষ এত নির্লজ্জ আর দয়া মায়াহীন হয় রাকিবকে না দেখলে জানা হতো না রুম্পার।
সহজ সাধারণ নির্ঝঞ্ঝাট সুখী একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছে রুম্পা । বাবা সৎ সরকারী উর্ধতন কর্মকর্তা , মা গৃহিনী । দুই ভাইয়ের এক বোন রূম্পা । মা –বাবা দু’জনেরই অনেক আকাংখিত মেয়ে সন্তান বলে রূম্পার আদর বরাবরই একটু বেশীই ছিল ।তবে সে আদরে রূম্পা বখে যায়নি বরং মা বাবার আস্থা ও ভালবাসাকে সম্মান করা শিখেছে । আদরের অপব্যবহার করার শিক্ষা পায়নি সে পরিবারে , তেমন মন –মানসিকতাও তার ভেতর কখনই দানা বাঁধেনি ।বরং অপরিমেয় স্নেহ –মমতা আর মায়ার বাঁধনে ঘেরা পরিবারে বেড়ে ওঠা রূম্পা হয়েছে মায়াবী কিন্তু দৃঢ়চেতা স্বভাবের ।
কলেজে পড়বার দিন গুলোতে চয়ন যখন একনিষ্ঠ ভাবে ওর পেছনে লেগে ছিল তখন ওর দিকে ফিরেও দেখেনি একবার কেননা বাবা মা এর অনেক শখ তারা নিজেরা দেখেশুনে মেয়ের বিয়ে দিবেন । রুম্পাও তা খুশীমনেই মেনে নিয়েছিল ।কারণ তাদের নির্ভরতার জায়গা্টিতে কোনো খাদ ছিলনা কখনো!
ঠিক যখন অনার্স পরীক্ষা শেষ হবে , বিয়ের প্রস্তাব আসছে ঘন ঘন – দেখাশুনা হচ্ছে , বাবার ইচ্ছা মাস্টার্স শেষ করতে না করতেই বিয়ে দেবেন ,ঠিক তেমনই একটা সময় হঠাৎ মা ব্রেন স্ট্রোক করলেন । হাসপাতাল থেকে ফিরে এলেও মা শয্যাশায়ী হলেন । সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়লো রুম্পার ওপর। মা’র দেখাশুনা করবার পাশাপাশি সংসারের পুরো দেখাশোনা । বাবা ভাইদের কোনো অযত্ন না হয় সেই চেষ্টাই করে গেছে রূম্পা সবসময় । একদম হঠাৎ করে এত দায়িত্ব এসে পড়লেও সব কিছু খুব সুন্দর সামলে নিল রূম্পা । শুধু থমকে গেল ওর নিজের জীবনটা । দেখেশুনে মা ওর বিয়ে দেবেন সে আর হলোনা । সব কেমন ওলোট পালট হয়ে গেল । এত সবের মধ্যে দিয়েই একসময় মাস্টার্স শেষ হল । একটা চাকরী ও হয়ে গেল ওর হুট করে । নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শখ ওর সেই ছোটবেলা থেকে । এবং তা বাবা মায়ের উৎসাহের কারণেই ।
অফিস সংসার মায়ের যত্ন এ সব নিয়ে জীবনটা ব্যস্ততায় ডুবে গেল । তাতে আরো ডুব দিল নিজের এক রত্তি সংসারের স্বপ্ন । জীবনের পথ বাঁক নিল কোন পথে তা ভাববার এতটুকু সময় নেই হাতে !
উবারে বসে বসে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পড়ছে রুম্পার চোখ বেয়ে ………
রাকিব একবার ও বলল না ওকে “ তুমি যেও না” । বলবেই বা কেন ! স্বার্থের কারণে মেরুদন্ডহীন হয়ে বেঁচে থাকা একটা জীব মাত্র সে , মানুষ বলা ঠিক না তাকে । অথচ তার চেহারা দেখে তা বুঝবার একদম উপায় নেই । শান্ত-শিষ্ট মুখায়ব । কথা বার্তা ও বলে কম । রাকিবের সাথে বিয়ের প্রস্তাবটি খালার বান্ধবীর মাধ্যমে আসলে ও রাকিবেরা ওদের পূর্ব পরিচিতই ছিল ।শৈশবের চেনা । যদিও সেগুলো এ বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি কারণ রুম্পার বিয়ে হওয়াটা তখন একান্ত ভাবে সময়ের দাবী । দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে মা চলে গেলেন । সেই শোকে খুব অল্প দিনের মধ্যে বাবা ও । বড় ভাই নিজের সংসার নিয়ে আগে থেকেই দূরে থাকে । তানভীর আর রূম্পা দু’জনেই বিয়ের যোগ্য হয়েছে বহু আগেই । কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কারণে সেদিকটা নিয়ে কারোরই ভাববার অবকাশ হয়নি । বাবা-মা চলে যাওয়ার পর বড় ভাই তানভীরের বিয়ের জন্য জোর তলব লাগায় রূম্পা । পছন্দ মতো পাত্রী ও মিলে যায় বেশ চট করেই । কিন্তু ভাই তো বোন কে বিয়ে না দিয়ে বিয়ে করবে না কিছুতেই !! ভাইয়ের মন রক্ষার্থেই রূম্পা শেষে মত দেয় ঘটকের প্রস্তাবে । ভাইয়ের সংসারে বোঝা হতে চায়নি রূম্পা । নিজের পায়ে দাঁড়ানো রূম্পা নিজের মতো একটা হোস্টেলে চলে যেতে চেয়েছিল । চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে দোজবর কাউকে বিয়ে করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই বুঝেছিল সে । আর সেজন্যই একা কাটাতে চেয়েছিল সে বাকিটা জীবন । এ বয়সে এসে মা হবার সম্ভাবনাটা ও অনেকটাই কমে এসেছে ।সব চিন্তা করেই সে একা থাকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । কিন্তু বিধিবাম । ভাইয়ের মন রক্ষা আর সামাজিক সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতেই রূম্পা মত দিল রাকিবের সাথে বিয়েতে । তবে রাকিবের শান্ত –সৌম্য চেহারা আর কথাবার্তাও রুম্পার মনকে নাড়া দিয়েছিল । রাকিব ভালবেসে অনুকে বিয়ে করলেও সে সংসার তার টেকেনি । মেয়ে পূরবীকে নিয়ে অনু সংসার ছেড়ে চলে গেছে তার ডীষন বদ-মেজাজী স্বভাবের কারণে ।অনু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেনি এতটুকুও । রুম্পার কাছে রাকিবের এসব কথা গুলোর উপস্থাপনা অমূলক ঠেকেনি একেবারেই কারণ রুম্পার নিজের ভাবীকে দেখেছিল খুব কাছে থেকেই যে ছিল ঠিক তেমন স্বভাবের ।
কথা পাকা হবার আগে দু একদিন কফিশপে বসে রাকিবের সঙ্গে আলাপচারিতায় রূম্পা তাই রাকিবকে যতটুকু বুঝেছে তাতে সে বিয়েতে মত দিতে আর দ্বিধা করেনি । ভেবেছে জীবনটা সবার জন্য নিষ্কন্টক ফুলশয্যা নাই হতে পারে, না হয় কাঁটা সরিয়েই সে ভালবাসবে রাকিবকে । তার জীবনটা পাল্টে দেবে ………জীবনের বেসুরো তারটাকে আবার বাজতে সাহায্য করবে ।
বেজে উঠল বিয়ের সানাই । রুম্পার প্রথম বিয়ে কিন্তু রাকিবের দ্বিতীয় । অনেকটা ব্যবধান — কিন্তু ব্যবধান মিটবে , রুম্পার মনে শুধু সেই আশা ।
বড়বোনের বাড়ীর একটা ফ্ল্যাটে রাকিব থাকে । রুম্পাকে নিয়ে সে সেখানেই উঠালো । ছিম ছাম সাজানো গোছানো বাড়ি । রূম্পা নিজেও পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে । সব মিলে ভালই লাগে । জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসটা যেখানে মানুষের শুরু হয় বিশ – পঁচিশে , রুম্পার তা শুরু হলো প্রায় চল্লিশের কাছে ।তবু রূম্পা স্বপ্ন দেখে মা হবার, স্বপ্ন দেখে রাকিবকে নিয়ে একটা ছিমছাম সংসার করবার ।
“চলো আমরা কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন ঘুরে আসি”—বিছানায় হেলান দিতে দিতে রাকিব বল্লো ।
সত্যি ?-
হুম , অফিস থেকে পিকনিকে যাবে ।
এতদূরে পিকনিক ?
হু, তিন দিনের ট্রিপ ।
যাওয়া যায় , মন্দ না, ভালই লাগবে ।
রুম্পার খুশী খূশী লাগে – সমুদ্রে বেড়াতে যাওয়া ওর পছন্দের ।
তিনটা দিন নিমেষেই কেটে গেল । ফিরে এসে দু’জনেই ফিরে গেল কর্ম ব্যস্ত জীবনে । রাকিব ওর বাইকের পেছনে রুম্পাকে তুলে কিছুটা পথ এগিয়ে দেয় অফিসে যাবার সময়।যতটুকু এ পর্যন্ত দেখেছে রাকিবকে, তাতে রুম্পার ভালই লাগে রাকিব কে ।
মনটা ভীষণ বিষন্নতায় ভরে ওঠে একদিন বাড়ি ফেরার পথে রূম্পা খেয়াল করল বাড়ির কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক মহিলা । কেমন যেন উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে বাড়িটার দিকে । রুম্পার কেমন খটকা লাগে ।তবু তা এড়িয়ে যায় ও । এভাবে আরো দুই তিন দিন যখন তা চোখ পড়ল , রূম্পা তখন বোঝার চেষ্টা করে মহিলাটা কে ? খুব বেশী বেগ পেতে হয়না তা জানতে ওর , বাড়ীর দারোয়ানই কথার ফাঁকে জানিয়ে গেল আজকাল প্রায়ই রাকিব সাহেবের আগের স্ত্রী এসে দাঁড়িয়ে থাকে বাড়ীর কাছে । এ এক অস্বস্তিকর ব্যাপার রুম্পার জন্য । রাকীবকে জানালে রাকীব কিছুটা মেজাজ খিচড়ে বল্ল
“ দাঁড়িয়ে থাকলে আমি কি করবো ?”
তোমার সঙ্গে যদি তার সব সম্পর্ক চুকেই গিয়ে থাকে তাহলে সে দাঁড়িয়ে থাকে কেন ?
তা আমি জানি না ।- রাকিবের কঠিন উত্তর ।
রুম্পার মনটা খারাপ হলেও তা আমল না দেয়ার চেষ্টা করে সে………………
(চলবে)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..